ওয়াহাবী আন্দোলন কি এবং কে??
লিখেছেন লিখেছেন নাদিম মাহদী ১৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:৫৬:৪৮ রাত
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, গোলাম আহমদ মোর্তজা রচিত "চেপে রাখা ইতিহাস" ১৮০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে 'প্রথমে ওহাবী জিনিসটা কি সে সম্পর্কে সামান্য
আলোচনা করছি।
আরবদেশে ১৭০৩ খ্রীষ্টাব্দে আব্দুল ওহাবের ছেলে মুহাম্মদের জন্ম হয়। আরব দেশের নিয়মানুযায়ী এ নাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব বলে বর্ণিত হয়।
জন্মস্থানের নাম ছিল নজদ। এ ওহাবী আন্দোলনের নায়কের নাম আসলে মুহাম্মদ।
ইংরেজদের কারসাজিতে ছেলেদের পরিবর্তে বাপের নামেই ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তাঁদের রাখা এ নাম হল ওহাব।
'তিনি ১৭৯ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন 'ওহাবি নেতাদের "ওহাবী" বলা মানে তাঁদের
শ্রদ্ধা করা তো নয়ই বরং নিশ্চিতভাবে গালি দেয়াই হয়, যেহেতু সে মহান বিপ্লবীরাই
তাঁদেরকে "ওহাবী" নামে আখ্যায়িত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।'
তিনি ১৮০ নং পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন 'আরবদেশ যখন শিরিক, বিদয়াত ও অধর্মীয়
আচরণে ছেয়ে গিয়েছিল তখন তা রুখতে এ ওহাবের পুত্র মুহাম্মদ প্রতিবাদী দল গড়ে তোলেন।
ক্রমে ক্রমে তা রাজনৈতিক সংঘর্ষের রূপ নেয়। ১৭৪৭ সনে রিয়াদের শেখের সাথে সংঘর্ষ হয়।
১৭৭৩ সনে রিয়াদের শাসন দাহহাম আব্দুল ওহাবের পুত্র মুহাম্মদের কাছে ভীষণভাবে পরাজিত হন। আরববাসীরা এ ঘটনার পর দলে দলে তাঁর পতাকা তলে সমবেত হয়।
অবশেষে ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি মারা যান।
'জাস্টিস আব্দুল মওদূদ "ওহাবী আন্দোলন" পুস্তকের ১১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন 'ইবনে আব্দুল ওহাবের ধর্মীয় শিক্ষা ও মতবাদের আলোচনায় প্রথমেই বলে রাখা ভাল, আরবদেশে ওহাবী নামাঙ্কিত কোনো মাযহাব বা অস্তিত্ত নেই।
এ সংজ্ঞাটির প্রচলন আরবদেশের বাহিরে এবং এ মতানুসারীদের বিদেশী দুশমন, বিশেষত তুর্কীদের ও ইউরোপিয়দের দ্বারা 'ওহাবী' কথাটির অর্থ এবং তাদের মধ্যেই প্রচলিত।
কোনো কোনো ইউরোপীয় লেখক, যেমন নীবর Neibuhr আব্দুল ওহাবকে পয়গম্বর বলেছেন। এসব উদ্ভট চিন্তারও কোনো যুক্তি নেই।
' জাস্টিস আঃ মওদূদ আরো লিখেছেন 'প্রকৃতপক্ষে ইবনে আব্দূল ওহাব কোনো মাজহাবও সৃষ্টি করেননি, চার ইমামের অন্যতম ইমাম হাম্বলের মতানুসারী ছিলেন তিনি।
তাঁর প্রযত্ম ছিল, বিশ্বনবী এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে ইসলামের যে রূপ ছিল সে আদিম সহজ সরল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করা।' {প্রগুক্ত ১১৬, চেপে রাখা ইতিহাস ১৮০}।
ভারত উপমহাদেশে ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দের পূর্বে 'ওহাবী' নামটির কোনো অস্তিত্তই ছিল না। সর্বপ্রথম এটি ইংরেজদের প্ররোচনায় এ দেশে আমদানী হয়। যাতে লোহা দিয়ে লোহা কাটার পথ সুগম হয়ে যায়।
গোলাম মোর্তজা লিখেছেন 'ব্রেলভীরসৈয়দ আহমদ শহীদ রহঃ নিহত হওয়ার
পর যেসব আন্দোলন, বিদ্রোহ বা সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলোকে বিকৃত করে তাঁদের নাম পাল্টে কোনোটাকে বলা হয়েছে সিপাহী বিদ্রোহ, কোনোটাকে বলা হয়েছে ওহাবী আন্দোলন, ফারায়েজী আন্দোলন, মুহাম্মদী আন্দোলন, আবার কোনোটাকে হিন্দু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।' পৃষ্ঠা নং ১৭৯।
গোলাম মোর্তজা আরো লিখেন 'দিল্লীর শাহ ওলীউল্লাহ থেকে শুরু করে তাঁর পুত্র, শিষ্য ও ছাত্রগণ এমনকি শহীদ সৈয়দ আহমদ এবং তাঁর অনুগামীদের সকলেই মুসলমানদেরকে শরীয়তের ওপর প্রত্যাবর্তন করার তাগিদ দিয়েছিলেন।
ফলে কবর বাঁধান বা কবরের ওপর সৌধ নির্মাণ করা থেকে ক্রমে মুসলমানরা বিরত
হতে থাকে। ইংরেজরা মুসলমান বিপ্লবীদের মতিগতি লক্ষ্য করে এবং এ আন্দোলন যে তাঁদের বিরুদ্ধে অব্যর্থ আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি করছে তা বুঝতে পেরেছিল। তাই তারা কতকগুলো দরিদ্র ও দুর্বলমনা আলেমকে টাকা দিয়ে ঘুরিয়ে তাদের মুখ দিয়ে বলিয়ে নিল-তোমরা যুগ যুগ ধরে যা করে আসছো, তাহা করতে থাকো।
এ বিপ্লবীরা আসলে ওহাবী; নবী, সাহাবী ও ওলীদের কবর ভাঙ্গার দল। ইংরেজ তাদের প্রচারে যোগ দিয়ে বলল, ১৮২২ সালে সৈয়দ আহমদ মক্কায় যান, ওখানে গিয়েইতিনি ওহাবী মতে দীক্ষা গ্রহণ করেন। অথচ এটা একেবারেই মিথ্যা কথা।
প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের জীবনে একবার মক্কায় গিয়ে হজ্ব করা অবশ্য কর্তব্য হিসেবেই
তিনি গিয়েছিলেন। তাঁর হজ্বে যাওয়ার পূর্বের এবং পরের কার্যাবলীর সাথে আরবের 'ওহাবী' আন্দোলনের কোনো যোগাযোগই ছিলনা।'
"চেপে রাখা ইতিহাস" গ্রন্থের ১৮০ নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে 'তারিখ হিসেব করলে দেখা যায়, আরবের মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাবের যখন মৃত্যু হচ্ছে তখন সৈয়দ আহমদ ব্রেলবীর বয়স মাত্র এক বছর। তাঁর সাথে এঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না, তা সুস্পষ্টই প্রমাণ হয়।'
অবশেষে বলতে পারি, আরবের "মুহাম্মদী আন্দোলন" এর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা সেটির নাম পাল্টিয়ে "ওহাবী আন্দোলন" বলে প্রচার করার পেছনে যে অসৎ
উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে, সে একই উদ্দেশ্য রয়েছে এদেশের বিপ্লবী আলেমদের ওহাবী নামে আখ্যায়িত করার পেছনেও।
ধন্যবাদঃ Principal NurunNabi
বিষয়: বিবিধ
১১৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন