তাকলীদ করা ওয়াজিব কেন?
লিখেছেন লিখেছেন নাদিম মাহদী ১৩ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:২৬:৪৫ বিকাল
তাকলীদ করা ওয়াজিব কিভাবে?
তাকলীদ যে ওয়াজিব, এটা কুরআনের আয়াত, সহীহ হাদীছ, উম্মতের কর্মপন্থা ও তাফসীরকারকদের উক্তি সমূহ থেকে প্রমাণিত। সাধারণ তাকলীদ হোক বা মুজতাহিদের তাকলীদ হোক উভয়ের প্রমাণ মওজুদ রয়েছে। (নিম্নে ওগুলো উপস্থাপন করা হল।)
(১) اِهْدِ نَاالصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ-صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
অর্থাৎ আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত কর। ওনাদের পথে যাঁদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ। এখানে সোজা পথ বলতে ওই পথকে বোঝানো হয়েছে, যে পথে আল্লাহর নেক বান্দাগণ চলেছেন। সমস্ত তাফসীর কারক, মুহাদ্দিছ, ফিকহবিদ ওলীউল্লাহ গাউছ কুতুব ও আবদাল হচ্ছেন আল্লাহর নেক বান্দা। তারা সকলেই মুকাল্লিদ বা অনুসারী ছিলেন। সুতরাং তাকলীদই হলো সোজা পথ। কোন মুহাদ্দিছ, মুফাসসির ও ওলী লা-মাযহাবী ছিলেন না। লা-মাযহাবী হলো ঐ ব্যক্তি যে মুজতাহিদ না হয়েও কারো অনুসারী নয়। অবশ্য মুজতাহিদ হয়ে কারো অনুসরণ না করলে তাকে লা- মাযহাবী বলা যাবে না। কেননা মুজতাহিদের জন্য তাকলীদ নিষিদ্ধ।
(২) لَايُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا
(আল্লাহ তা’আলা কারো উপর ক্ষমতার অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পন করেন না) এ আয়াত থেকে বোঝা গেল, আল্লাহ তা’আলা কারো উপর সাধ্যাতীত কার্যভার চাপিয়ে দেন না। সুতরাং যে ব্যক্তি ইজতিহাদ করতে পারে না, কুরআন থেকে মাসাইল বের করতে পারে না, তার দ্বারা তাকলীদ না করিয়ে প্রয়োজনী সমস্যার সমাধান বের করানো তার উপর ক্ষমতা বহির্ভূত কার্যভার চাপানোর নামান্তর। যখন গরীবের উপর যাকাত ও হজ্জ ফরয নয়, তখন অজ্ঞ লোকের মাসাইল বের করার কোন প্রয়োজন থাকতে পারে কি?
(৩) وَالسَّابِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالْاَنْصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبِعُهُمْ بِاِحْسَانٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْاعَنْهُ
(যে সকল মুহাজির এবং আনসার অগ্রগামি যারা প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক পথে অগ্রসর হয়েছেন এবং পরবর্তী পর্যায়ে যারা সৎ উদ্দেশ্যে পূর্ববর্তীদের অনুগামী হয়েছেন, আল্লাহ তা’আলা তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তার (আল্লাহর) প্রতি সন্তুষ্ট।) বোঝা গেল যে, যারা মুহাজির ও আনসারগণের অনুসরণ বা তাকলীদ করেন, আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট। এখানেও তাকলীদের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।
(৪) اَطِيْعُوا للهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ
(আল্লাহর আনুগত্য কর, তাঁর রসুলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা আদেশ প্রদানকারী রয়েছে, তাদেরও।) এ আয়াতে তিনটি সত্বার আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে- (১) আল্লাহর (কুরআনের) আনুগত্য, (২) রসুলের (হাদীছের) আনুগত্য এবং (৩) আদেশ দাতাগণের (ফিকহাবিদ মুজতাহিদ আলিমগণ) আনুগত্য। লক্ষ্যণীয় যে, উক্ত আয়াতে- اَطِيْعُوْا (আতীউ) শব্দটি দু’বার ব্যবহৃত হয়েছে আল্লাহর জন্য একবার এবং রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও আদেশ প্রদানকারীদের জন্য একবার। এর রহস্য হলো আল্লাহ যা হুকুম করবেন, শুধু তাই পালন করা হবে, তার কর্ম কিংবা নীরবতার ক্ষেত্রে আনুগত্য করা যাবে না। তিনি কাফিরদেরকে আহার দেন, কখনও কখনও তাদেরকে বাহ্যিকভাবে যুদ্ধে জয়ী করান। তারা কুফরী করলেও সাথে সাথে শাস্তি দেন না। এ সব ব্যাপারে আমরা আল্লাহকে অনুসরণ করতে পারি না। কেননা এতে কাফিরদেরকে সাহায্য করা হয়। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও মুজতাহিদ ইমামের প্রত্যেকটি হুকুমে, প্রত্যেকটি কাজে, এমন কি যে সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁরা নীরবতা অবলম্বন করেন, সে সমস্ত ক্ষেত্রেও তাদের আনুগত্য করা যায়। এ পার্থক্যের জন্য اَطِيْعُوْا শব্দটি দু’বার ব্যবহৃত হয়েছে। যদি কেউ বলে اُوْلِى الْاَمْرِ (উলীল আমর) দ্বারা ইসলামী শাসন কর্তাকে বোঝানো হয়েছে, এতে উপরোক্ত বক্তব্যে কোন রূপ তারতম্য ঘটবে না। কেননা শুধু শরীয়ত সম্মত নির্দেশাবলীতেই শাসনকর্তার আনুগত্য করা হবে, শরীয়ত বিরোধী নির্দেশাবলীর ক্ষেত্রে আনুগত্য করা হবে না। ইসলামী শাসনকর্তা হচ্ছেন কেবল হুকুম প্রয়োগকারী। তাঁকে শরীয়তের যাবতীয় আহকাম মুজতাহিদ আলিমগণের নিকট থেকে জেনে নিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, আসল আদেশ প্রদানকারী হচ্ছেন ফিকহবিদ। ইসলামী সুলতান ফিকহবিদ আলিমের বর্ণিত অনুশাসন জারী করেন মাত্র। সমস্ত প্রজাদের হাকিম বাদশাহ হলেও বাদশাহের হাকিম হচ্ছেন মুজতাহিদ আলিম। শেষ পর্যন্ত اُوْلِى الْاَمْرِ (উলিল আমর) হলেন মুজতাহিদ আলিমগণই। اُوْلِى الْاَمْرِ (উলীল আমর) বলতে যদি কেবল ইসলামী বাদশাহ ধরে নেয়া হয়, তাতেও তাকলীদ প্রমাণিত হয়। আলিমের না হলেও অন্ততঃ বাদশাহের তাকলীদতো প্রমাণিত হয়। মনে রাখতে হবে যে, এ আয়াতে আনুগত্য বলতে শরীয়তের আনুগত্য বোঝানো হয়েছে। এ আয়াতে এ বিষয়ের প্রতিও পরোক্ষ ইঙ্গিত রয়েছে যে অনুশাসন তিন রকমের আছে, কতগুলো সরাসরি কুরআন থেকে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত। যেমন অন্তঃসত্ত্বা নয়, এমন মহিলার স্বামী মারা গেলে, তাকে চার মাস দশদিন ‘ইদ্দত’ পালন করতে হয়, এদের প্রতি আল্লার নির্দেশ اَطِيْعُوْا اللهَ (আতীউল্লাহ) থেকে এ অনুশাসন গৃহীত হয়েছে। আর কতগুলো অনুশাসন সরাসরি হাদীছ থেকে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত। উদাহরণ স্বরূপ, সোনা-রূপা নির্মিত অলংকার ব্যবহার পুরুষের জন্য হারাম। এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য اَطِيْعُوْا الرَّسُوْلُ (আতীউর রসুল) বলা হয়েছে। আর কতকগুলো অনুশাসন আছে যেগুলো স্পষ্টভাবে কুরআন বা হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় না। যেমন স্ত্রীর সঙ্গে পায়ুকামে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারটি অকাট্যভাবে হারাম হওয়ার বিধান। এ ধরনের অনুশাসন মেনে চলার জন্য اُوْلِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ (উলীল আমরে মিনকুম) বলা হয়েছে। এ তিন রকম শরীয়ত বিধির জন্য তিনটি আদেশ দেয়া হয়েছে।
(৫) فَاسلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
(হে লোক সকল! তোমাদের যদি জ্ঞান না থাকে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।) এ আয়াত থেকে বোঝা গেল যে, যে বিষয়ে অবহিত নয়, সে যেন সে বিষয়ে জ্ঞানীদের নিকট থেকে জেনে নেয়। যে সব গবেষণালব্ধ মাসাইল বের করার ক্ষমতা আমাদের নেই, ঐগুলো মুজতাহিদগনের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে হবে। কেউ কেউ বলেন যে, এ আয়াতে ঐতিহাসিক ঘটনাবলী জেনে নেয়ার কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে, এর পূর্ববর্তী আয়াত থেকেও এটাই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। কেননা এ আয়াতের শব্দগুলো বিশেষিত বা শর্তযুক্ত নয়। আর না জানাটাই হলো জিজ্ঞাসা করার মূল কারণ। সুতরাং যে বিষয়ে আমরা জানি না, সেটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা একান্ত প্রয়োজন।
(৬) وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ اَنَابَ اِلَىَّ
(যিনি আমার দিকে (আল্লাহর দিকে) রুজু করেছেন তার পদাঙ্ক অনুসরন কর।) এ আয়াত থেকে এও জানা গেল যে আল্লাহর দিকে ধাবিত ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ (তাকলীদ) করা আবশ্যক। এ হুকুমটাও ব্যাপক, কেননা আয়াতের মধ্যে বিশেষত্ব জ্ঞাপক কোন কিছুর উল্লেখ নেই।
(৭) وَالَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا
এবং তাঁরা আরয করেন- হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের দ্বারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দাও এবং আমাদেরকে পরহেযগারদের ইমাম বানিয়ে দাও। ‘তাফসীরে মাআলিমুত তানযীলে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। فَنَقْتَدِىْ بِالْمُتَّقِيْنَ وَيَقْتَدِى بِنَا الْمُتَّقُوْنَ অর্থাৎ যাতে আমরা পারহেযগারদের অনুসরণ করতে পারি, আর পারহেযগারগণও আমাদের অনুসরণ করার সুযোগ লাভ করতে পারেন। এ আয়াত থেকেও বোঝা গেল যে, আল্লাহ ওয়ালাদের অনুসরণ বা তাকলীদ করা একান্ত আবশ্যক।
(৮) فَلَوْلَانَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوْ افِى الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْ اقَوْ مَهُمْ اِذَا رَجَعُوْا اِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ
(সুতরাং এমন কেন করা হয় না যে তাদের প্রত্যেক গোত্র হতে একটি দল ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণের জন্য বের হয়ে পড়তো এবং ফিরে এসে নিজ গোত্রকে ভীতি প্রদর্শন করতো। যাতে গোত্রের অন্যান্য লোকগণ মন্দ, পাপ কার্যাবলী থেকে দুরে সরে থাকতে পারে। এ আয়াত থেকে বোঝা গেল প্রত্যেকের মুজতাহিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ ফিকহবিদ হবেন, অন্যরা কথায় ও কর্মে তাঁদের অনুসরন করবে।
(৯) وَلَوْرَدُّوْهُ اِلَى الرَّسُوْلِ وَاِلى اُوْلِى الْاَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِيْنَ يَسْتَنْبِطُوْنَهُ مِنْهُمْ
(এবং যদি এ ক্ষেত্রে তারা রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও আদেশদানকারী যোগ্য ব্যক্তিদের প্রতি রুজু করতো তাহলে নিশ্চয় তাদের মাঝে যারা সমস্যার সমাধান বের করার যোগ্যতা রাখেন, তাঁরা এর গুঢ়তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারতেন।) এ আয়াত থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল যে, হাদীছ, ঘটলাবলীর খবর ও কুরআনের আয়াত সমূহকে প্রথমে মুজতাহিদ আলিমদের কাছে পেশ করতে হবে। এরপর তাঁরা যে রকম বলবেন, সে ভাবে আমল করতে হবে। শ্রুত খবর থেকে কুরআন-হাদীছের স্থান অনেক উর্ধে। সুতরাং উহাকে মুজতাহিদের কাছে পেশ করা দরকার।
(১০) يَوْمَ نَدْعُوْا كُلُّ اُنَاسٍ بِاِمَامِهِمْ
(যে দিন আমি প্রত্যেক দলকে নিজ নিজ ইমাম সহকারে ডাকবো….। তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ এর ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে-
اَوْمُقَدَّمٍ فِى الدِّيْنِ فَيُقَالُ يَا حَنْفِىُّ يَاشَافِعِىُّ
(কিংবা ইমাম হচ্ছেন ধর্মীয় পথের দিশারী, তাই কিয়ামতের দিন লোকদিগকে ‘হে হানাফী’ হে সাফেঈ! বলে আহবান করা হবে।) এ থেকে বোঝা গেল, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ইমামের সাথে ডাকা হবে। ডাকা হবে হে হানাফী মতাবলম্বীগণ! হে মালিকী মযহাবের অনুসারীগণ! চলো। এখন প্রশ্ন হলো, যে ইমাম মানেনি, তাকে কার সাথে ডাকা হবে? এ সম্পর্কে সুফীয়ানে কিরাম (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন যে, যার ইমাম নেই, তার ইমাম হলো শয়তান।
(১১) وَاِذَاقِيْلَ لَهُمْ امنُوْا كَمَا اَمَنَ النَّاسُ قَالُوْا اَنُؤْمِنَ كَمَا اَمَنَ السُّفْهَاءُ
(এবং যখন তাদেরকে বলা হয়- ‘তোমরা ঈমান আন, যেরূপ সত্যিকার বিশুদ্ধ চিত্ত মু’মিনগণ ঈমান এনেছেন। তখন তারা বলে- আমরা কি বোকা ও বেওকুফ লোকদের মত বিশ্বাস স্থাপন করব? বোঝা গেল যে, ঐ ধরনের ঈমানই গ্রহনযোগ্য, যে ঈমান নেক বান্দাগণ পোষণ করেন। অনুরূপ, মাযহাব ওটাই যেটার অনুসারী হচ্ছে নেক বান্দাগণ। উহাই হলো তাকলীদ।
তাকলীদ সম্পর্কে মুহাদ্দিছীনের মতামত :
প্রখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ ‘দারমী’র الاقتداء بالعلماء (আল ইকতিদাউ বিল উলামা) অধ্যায়ে আছেঃ
اَخْبَرْنَا يَعْلى قَالَ اَخْبَرْ نَا عَبْدُ الْمَلِكِ عَنْ عَطَاء اَطِيْعُوا اللهَ وَاطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُلِى الْاَمْرِ مِنْكُمْ قَالُوْا اُوْلُوالْعِلْمِ وَالْفِقْهِ
অর্থাৎ- আমাদেরকে ইয়া’লা বলেছেন। তিনি বলেন, আমাকে আবদুল মালিক বলেছেন, আবদুল মালিক‘আতা’ থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর আনুগত্য কর, রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তোমাদের মধ্যে যারা আদেশ দাতা আছেন, তাদের আনুগত্য কর।’ ‘আতা’ বলেছেন এখানে জ্ঞানী ও ফিকহাবিদগণকে আদেশ প্রদানের অধিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাফসীরে খাযিনে فَاسْئَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ اِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ (যদি তোমরা না জান, জ্ঞানীদের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা করিও) আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছেঃ
فَاسْئَلُوْا الْمُؤْمِنِيْنَ الْعلَمِيْنَ مِنْ اَهْلِ الْقُرْانِ
অর্থাৎ তোমরা ঐ সকল মুমিনদের নিকট থেকে জিজ্ঞাসা কর, যারা কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী। তাফসীরে দুররে মানসুরে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে- অর্থাৎ ইবনে মারদাওয়াই হযরত আনাস (রহমতুল্লাহে আলাইহে) থেকে বর্ণনা করেছেন, আনাস (রহমতুল্লাহে আলাইহে)বলেছেন আমি হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, কতেক লোক নামায পড়ে, রোযা রাখে, হজ্বও জিহাদ করে; অথচ তারা মুনাফিক গণ্য হয়। আরয করা হলঃ ইয়া রাসুলাল্লাহে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কি কারণে তাদের মধ্যে নিফাক (মুনাফিকী) এসে গেল? প্রত্যুত্তরে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমালেন, নিজ ইমামের বিরূপ সমালোচনা করার কারণে। ইমাম কে? এ কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ ফরমান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- فَاسْئَلُوْا اَهْلَ الذِّكْرِ (الايته) অর্থাৎ আয়াতে উল্লেখিত আহলে যিকরকে ইমাম বলা হয়। তাফসীরে সাবীতে সুরা কাহাফের وَاذْكُرْ رَبَّكَ اِذَا نَسِيْتَ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিপিবদ্ধ আছেঃ অর্থাৎ চার মাযহাব ছাড়া অন্য কোন মাযহাবের তাকলীদ বা অনুসরণ জায়েয নয় যদিও সে মাযহাব সাহাবীদের উক্তি, সহীহ হাদীছ ও কুরআনের আয়াতের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ হয়। যে এ চার মাযহাবের কোন একটির অনুসারী নয়, সে পথভ্রষ্ট এবং পথভ্রষ্টকারী। কেননা হাদীছ ও কুরআন কেবল বাহ্যিক অর্থ গ্রহণই হলো কুফরীর মূল। সংশ্লিষ্ট হাদীছ সমূহঃ মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডে ৫৪ পৃষ্ঠায় اِنَّ الدِّيْنَ نَّصِيْحَةُ এর বর্ণনা অধ্যায়ে আছে-
عَنْ تَمِيْمُ الدَّارِىْ اَنَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ قَالَ الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ قُلْنَا لِمنْ قَالَ لِلّهِ وَلِكِتَابِه وَلِرَسُوْلِه وَلِاَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنِ وَعَامَّتِهِمْ
অর্থাৎ ‘তামীম দারী’ থেকে বর্ণিত, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, ধর্ম হলো কল্যাণ কামনা। আমরা (উপস্থিত সাহাবীগণ) আরয করলাম, কার কল্যাণ কামনা? তিনি ফরমালেন, আল্লাহর, তার কিতাবের, তার রসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর, মুসলমানদের, মুজতাহিদ ইমামগণের এবং সাধারণ মুসলমানদের। মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘নববীতে’ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। (অর্থাৎ এ হাদীছ ‘উলামায়ে দ্বীন’কেও ইমামদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উলামায়ে দ্বীন এর কল্যান কামনার অর্থ হচ্ছে তাদের বর্ণিত হাদীছসমূহ গ্রহণ করা, শরীয়ত বিধিতে তাঁদের অনুসরন করা এবং তাদের সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করা।
বিষয়: বিবিধ
৯৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন