শিরোনামহীন
লিখেছেন লিখেছেন শিরোনামহীন ১৩ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:৪১:৪৬ বিকাল
অনেক দিন কোন কিছু লিখা হয় না। লিখতে বসে দু-চার লিখে কেন জানি ইচ্ছে হয় না। হঠাত মানসিকতার কোথায় যেন পরিবর্তন হয়েছে। ভাবলাম কিছু লিখি আমার ডিজিটাল ডায়েরীর পাতায়। চারদিক কোলহল, ডিজিটাল সাইট গুলোতে ডিজিটাল প্রজন্মের পদচারনায় মুখরিত। মাঝে মাঝে ভাবি মানুষ কত কিছু নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত, তারপর রাত থেকে সকাল পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মানুষ জেগে থাকে বা পৃথিবীকে মুখরিত রাখে নিজেদের নানা রকম কাজে।
মানুষ কত কিছু নিয়ে ই ব্যস্ত থাকে। মানুষের জীবনের কত কিছু আকাংখা। জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই, সমাজে নিজের নামকে সবার উপরে উঠানোর লড়াই কিংবা অন্যের কাছে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের লড়ায়ে মানুষ কত কিছু ই না করে। কিন্তু মানুষ কখনই নিজের আত্নার তৃপ্তির জন্য বা মানসিক সূখের জন্য ভাবেনা। অন্যের চলা পথে সূখ খুজতে মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের অজান্তে ফলে নিজে প্রকৃত সূখ পায় না। জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে যখন ভাবে এখন একটু বিশ্রাম নেয়ার সময় ঠিক তখনই বুঝতে পারে যে, সে ভূল পথে হেঠেছে। নিজের চারপাশের পরিবেশ তার কাছে অপরিচিত হয়ে ওঠে। ফলে যৌবনের শুরুর যে অতৃপ্তি সেই অতৃপ্তি নিয়ে মৃত্যুবরন করে তার শরীর তার অতৃপ্ত আত্না।
কিছুদিন আগে এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিলো। সে জিগ্গেস করলো আচ্ছা বন্ধু পিএইচডি টা আসলে কি? প্রশ্ন করার অনেক কারন আছে হয়ত। যখন বাংলাদেশে ছিলাম কলেজে পড়তাম বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। দেখতাম কিছু স্যারের নামের পেছনে লিখা পিএইচডি কিংবা নামের আগে ডক্টর। ভাবতাম জীবনে এই ডিগ্রীটাই বুঝি সবার চেয়ে বড়। বড় মনে হওয়ার কারন যারা এসব টাইটেল সামনে পেছনে লাগায় মানুষ তাদের সমীহ করে, তারা নিজেদেরকে একটি আলাদা শ্রেনী ভাবা শুরু করে দেয়। ফলে সমাজের তরুন প্রজন্মের কাছে এসব কিছু জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায়। জীবনের গুনগত পরিবর্তন নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। ডিগ্রী আর সার্টিফিকেটের জন্য পড়াশোনাই হয়ে উঠে জীবনের লক্ষ্য। ফলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে ভাবার জন্য কেউ থাকেনা আবার সমাজের গুনগত পরবর্তনের জন্য যে কেউ পথ দেখাবে সেটাও হয়ে উঠে না।
ফলে স্বার্থান্বেষী একটি সমাজ তৈরী হয়, প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজ তৈরী হয়, মানুষের মানবিকতা লোপ পায়। পরষ্পরকে ডিংগিয়ে নিজেকে বড় করার প্রবনতা মুখ্য ও বৈধ হয়ে উঠে।
সে যাই হোক; বন্ধু জিগ্গেস করলো পিএইচডি টা আসলে কি?
আমার কাছে পিএইচডি কখনই আকাংখার বস্তু ছিলোনা। তবে আমি যতটুকু বুঝি বা আমি যে রকম মনে করি তাতে পিএইচডিকে আমার কাছে তেমন কিছু মনে হয় না। এটি অবশ্যই একটি বড় অর্জন। তবে এটি খুব বেশিকিছু নয়। কারনটি বলছি।
বন্ধুকে বললাম যে, পিএইচডি হলো গবেষনা কিভাবে করতে হবে তার জন্য একটি ট্রেনিং মাত্র। গবেষনা নামক সমূদ্রে সাতার কাটার জন্য প্রাথমিক ট্রেনিং বলা যেতে পারে। বললাম লক্ষ্য লক্ষ্য প্রফেসর যেখানে সারাজীবন চেষ্টা করে সামান্য কিছুই করতে পারছে সেখানে একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী কি বা অবদান রাখতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন কোন অবদানই রাখতে পারেনা।
এক ভদ্রলোকের সাথে কথা হচ্ছিলো পিএইচডি নিয়ে। তিনি বললেন যে শুরুর দিকে একজন গবেষকের সারাজীবনের কাজের উপর ভিত্তি করে পিএইচডি দেয়া হত। আর এখন ভূরি ভূরি পিএইচডি ধারী।
বন্ধু আমার একটু আশ্বস্ত হলো আর কি।
আসলে একাডেমিক কোন ডিগ্রী একজন মানুষকে মুল্যয়নের জন্য মাপকাঠি হওয়া ঠিক হতে পারে না। একাডেমিক ডিগ্রি হয়ত একজন মানুষের একাডেমিক মুল্যয়নের মাপকাঠি হতে পারে। যেমন কোন রোগী দেখার জন্য ডাক্তারী ডিগ্রি দরকার। তবে সমাজে মানুষ হিসেবে মূল্যয়নের জন্য ডিগ্রিকে মাপকাঠি করলে সমাজের মূল্যবোধ লোপ পায়। সেই সমাজে পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ যান্ত্রিক হয়ে উঠে।
তাই আমাদের উচিত সমাজে ভালো মানুষ তৈরীর চেষ্টা করা। সেই পরিবেশ তৈরী করা যাতে ভালো মানুষ জন্ম নিতে পারে। কারন খারাপ পরিবেশে কখনই ভালো মানুষ জন্ম নেয় না বা পরিবেশ মানুষকে ভালো হতে বাধা দেয়। সুতরাং আপনার আমার মানসিকতার উপর নির্ভর করবে আপনার আমার পরিবারের পরিবেশের অবস্থা এবং সেটিই বলবে যে সেখানে কে জন্ম নিবে ভালো মানুষ নাকি স্বার্থবাদী মানুষ।
বিষয়: বিবিধ
১০৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন