হিন্দু বোনদের শিবলিঙ্গ পুজা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় বা ভালো
লিখেছেন লিখেছেন এ এম ডি ১২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:০৮:৩০ রাত
শিবলিঙ্গের মূল অর্থ হচ্ছে একটি প্রতীক অথবা মাথা । আর এটি হলো হিন্দু দেবতা শিবের একটি প্রতীকচিহ্ন । হিন্দুদের মন্দিরগুলোতে সাধারণত শিবলিঙ্গে শিবের পূজা হয়ে থাকে এবং বেশির ভাগ ক্ষেএেই শিবলিঙ্গকে অনেক সময় যোনি চিহ্ন সহ তৈরি করা হয়ে থাকে যার ফলে অন্যান্য ধর্মের অনেকেই এটাকে অন্য চোখে দেখেন । হিন্দু ধর্মের মতে যোনী হলো মহাশক্তির একটি প্রতীক । শিবলিঙ্গ এবং যোনির সম্মিলিত রূপটিকে নারী এবং পুরুষের অবিচ্ছেদ্য ঐক্যসত্ত্বা ও জীবনসৃষ্টির উৎস পরোক্ষ স্থান এবং প্রত্যক্ষ কালের প্রতীক হিসেবে তারা দেখে থাকেন । উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পাশ্চাত্য গবেষকরা লিঙ্গ ও যোনিকে নারী এবং পুরুষের যৌনাঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । তবে হিন্দুরা শিবলিঙ্গকে সৃষ্টির পিছনে নারী ও পুরুষ উভয়ের অবদানের কথা বলেন এবং তা স্মরণ করে শিবলিঙ্গের পূজা করেন । একটি সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী শিবলিঙ্গ শিবের আদি অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি এবং অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ ।
শিবলিঙ্গ পুজার উৎস
নৃতাত্ত্বিক ক্রিস্টোফার জন ফুলারের মতামত অনুযায়ী হিন্দু দেবতাদের মূর্তি সাধারণত মানুষ বা পশুর অনুষঙ্গে নির্মিত হয়ে থাকে । সেক্ষেত্রে প্রতীকরূপী শিবলিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম । কেউ কেউ মনে করেন যে লিঙ্গপূজা ভারতীয় আদিবাসী ধর্মগুলি থেকে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে । অথর্ববেদে একটি স্তম্ভের স্তব করা হয়েছে । এটিই সম্ভবত লিঙ্গপূজার উৎস । কারোর কারোর মতে যূপস্তম্ভ বা হাঁড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে । উক্ত স্তবটিকে আদি অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ এর কথা বলা হয়েছে এই স্কম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত । যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, মাদক সোমরস এবং যজ্ঞের কাঠ বহন করার ষাঁড় ইত্যাদির সঙ্গে শিবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলির যোগ লক্ষিত হয় । মনে করা হয় কালক্রমে যূপস্তম্ভ শিবলিঙ্গের রূপ নিয়েছিল । লিঙ্গপুরাণে এই স্তোত্রটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি কাহিনির অবতারণা করা হয় । এই কাহিনিতে উক্ত স্তম্ভটিকে শুধু মহানই বলা হয়নি বরং মহাদেব শিবের সর্বোচ্চ সত্ত্বা বলে উল্লেখ করা হয় । ভারত এবং কম্বোডিয়ায় প্রচলিত প্রধান শৈব সম্প্রদায় ও অনুশাসন গ্রন্থ শৈবসিদ্ধান্তের মতে উক্ত শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান উপাস্য দেবতা পঞ্চানন পাঁচ মাথা বিশিষ্ট ও দশভূজ দশ হাত বিশিষ্ট সদাশিব প্রতিষ্ঠা এবং পূজার আদর্শ উপাদান হল শিবলিঙ্গ ।
এটি হলো লিঙ্গোভাব শিব । আর শিব এক অনাদি অনন্ত লিঙ্গস্তম্ভের রূপে আবির্ভূত । বিষ্ণু বরাহ বেশে স্তম্ভের নিম্নতল ও ব্রহ্মা ঊর্ধ্বতল সন্ধান রত । এই অনাদি অনন্ত স্তম্ভটি শিবের অনাদি অনন্ত সত্ত্বার প্রতীক মনে করা হয়ে থাকে ।
শিবলিঙ্গের আধুনিক ব্যাখ্যা
১৮১৫ সালে আ ভিউ অফ দ্য হিস্ট্রি ও লিটারেচার, অ্যান্ড মিথোলজি অফ দ্য হিন্দুজ গ্রন্থে লেখক ব্রিটিশ মিশনারি উইলিয়াম ওয়ার্ড হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় প্রথার সঙ্গে লিঙ্গপূজারও নিন্দা জানিয়েছিলেন । তার মতে লিঙ্গপূজা ছিল মানুষের চারিত্রিক অবনতির সর্বনিম্ন পর্যায় । শিবলিঙ্গের প্রতীকবাদটি তার কাছে ছিল অত্যন্ত অশালীন সে সাধারণের রুচির সঙ্গে মেলানোর জন্য এর যতই পরিমার্জনা করা হোক না কেন । ব্রায়ান পেনিংটনের মতেও ওয়ার্ডের বইখানা ব্রিটিশদের হিন্দুধর্ম সম্পর্কে ধারণা এবং উপমহাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্বের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছিল । ব্রিটিশরা মনে করতেন শিবলিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গে আদলে নির্মিত এবং শিবলিঙ্গের পূজা ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে । অবশ্য ১৮২৫ সালে হোরাস হেম্যান উইলসন দক্ষিণ ভারতের লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি বই লিখে এই ধারণা খণ্ডানোর চেষ্টাও করেছিলেন ।
মনিয়ার উইলিয়ামস তার ব্রাহ্মণইজম অ্যান্ড হিন্দুইজম বইয়ে লিখেছিলেন লিঙ্গ প্রতীকটি শৈবদের মনে কোনো অশালীন ধারণা বা যৌন প্রণয়াকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয় না । জেনেন ফলারের মতে লিঙ্গ পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে নির্মিত এবং এটি মহাবিশ্ব রূপী এক প্রবল শক্তির প্রতীক । ডেভিড জেমস স্মিথ প্রমুখ গবেষকেরা মনে করেন শিবলিঙ্গ চিরকালই পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি বহন করছে । অন্যদিকে এন রামচন্দ্র ভট্ট প্রমুখ গবেষকেরা মনে করেন পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের রচনা । এম. কে. ভি. নারায়ণ শিবলিঙ্গকে শিবের মানবসদৃশ মূর্তিগুলি থেকে পৃথক করেছেন । তিনি বৈদিক সাহিত্যে লিঙ্গপূজার অনুপস্থিতির কথা বলেছেন এবং এর যৌনাঙ্গের অনুষঙ্গটিকে তান্ত্রিক সূত্র থেকে আগত বলে মত প্রকাশ করেন ।
রামকৃষ্ণ পরমহংস জীবন্ত লিঙ্গপূজা করতেন । ১৯০০সালে প্যারিস ধর্মীয় ইতিহাস কংগ্রেসে রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ বলেন যে শিবলিঙ্গ ধারণাটি এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ ধারণা থেকে । যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ হল বলিদানের হাঁড়িকাঠ । এটিকে অনন্ত ব্রহ্মের একটি প্রতীক মনে করা হতো । জার্মান প্রাচ্যতত্ত্ববিদ গুস্তাভ ওপার্ট শালগ্রাম শিলা ও শিবলিঙ্গের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তার গবেষণাপত্রে এগুলিকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে সৃষ্ট প্রতীক বলে উল্লেখ করে তা পাঠ করলে । তারই প্রতিক্রিয়ায় বিবেকানন্দ এই কথা বলেছিলেন । বিবেকানন্দ বলেছিলেন শালগ্রাম শিলাকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গ বলাটা এক কাল্পনিক আবিষ্কার মাত্র । তিনি আরও বলেছিলেন শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আগত ভারতের অন্ধকার যুগে কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প । স্বামী শিবানন্দও শিবলিঙ্গকে যৌনাঙ্গের প্রতীক বলে স্বীকার করেননি । ১৮৪০ সালে এইচ. এইচ. উইলসন একই কথাই বলেছিলেন । ঔপন্যাসিক ক্রিস্টোফার ইসারউড লিঙ্গকে যৌন প্রতীক মানতে চাননি । ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ায় Lingam ভুক্তিতেও শিবলিঙ্গকে যৌন প্রতীক বলা হয়নি ।
মার্কিন ধর্মীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ওয়েনডি ডনিগারের মতে
For Hindus, the phallus in the background, the archetype (if I may use the word in its Eliadean, indeed Bastianian, and non-Jungian sense) of which their own penises are manifestations, is the phallus (called the lingam) of the god Siva, who inherits much of the mythology of Indra (O'Flaherty, 1973). The lingam appeared, separate from the body of Siva, on several occasions... On each of these occasions, Sivas wrath was appeased when gods and humans promised to worship his lingam forever after, which, in India they still do. Hindus, for instance, will argue that the lingam has nothing whatsoever to do with the male sexual organ, an assertion blatantly contradicted by the material.
যদিও অধ্যাপক ডনিগার পরবর্তীকালে তার দ্য হিন্দুজ অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি বইতে তার বক্তব্যে পরিষ্কার করে লিখেছেন । এবং তিনি বলেছেন কোনো কোনো ধর্মশাস্ত্রে শিবলিঙ্গকে ঈশ্বরের বিমূর্ত প্রতীক বা দিব্য আলোকস্তম্ভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এই সব বইতে লিঙ্গের কোনো যৌন অনুষঙ্গ নেই ।
হেলেন ব্রুনারের মতে লিঙ্গের সামনে যে রেখাটি আঁকা হয় তা পুরুষাঙ্গের গ্ল্যান্স অংশের একটি শৈল্পিক অনুকল্প । এই রেখাটি আঁকার পদ্ধতি মধ্যযুগে লেখা মন্দির প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত অনুশাসন এবং আধুনিক ধর্মগ্রন্থেও পাওয়া যায় । প্রতিষ্ঠাপদ্ধতির কিছু কিছু প্রথার সঙ্গে যৌন মিলনের অনুষঙ্গ লক্ষ্য করা যায় । যদিও গবেষক এস. এন. বালগঙ্গাধর লিঙ্গের যৌন অর্থটি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন ।
বিদ্রঃ অনেক গভেষকদের মতে আসলে শিবলিঙ্গ পুজাটি হিন্দু কিছু পুরোহতদের গভীর চক্রান্ত আর টা হলো যুবতি বা কুমারি নারীদের যৌন সঙ্গম করা বা নারীদের প্রতি তাদের লালসা প্রনয়ন করা জন্য তাই মনে হয় হিন্দু বোনদের শিবলিঙ্গ পুজা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় বা ভালো ।
তথ্যঃ গুগল ইন্টারনেট
বিষয়: আন্তর্জাতিক
৪৫৬৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন