চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ভাষা মতিন
লিখেছেন লিখেছেন এ এম ডি ০৯ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:৩২:৫০ দুপুর
চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ভাষা আন্দোলনের আরেক প্রধান সংগঠক, আজীবন সংগ্রামী ও রাজনীতিক চিন্তাবিদ আবদুল মতিন। বাংলাদেশ যাকে এক নামে চিনতেন তা হলো ভাষা মতিন নামে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের কারনে গত দেড় মাসের বেশি দিন ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন ।শেষে গত ৪ অক্টোবর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো । বুধবার সকাল ৯টায় লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে সেখানেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় । এ কথা জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের ডক্তার অধ্যাপক আফজাল হোসেন। মৃত্যুর আগে দুই মেয়ের বাবা আবদুল মতিন পরিবারের সদস্যদের সাথে ঢাকায় মোহাম্মদপুর থাকতেন । তার জম্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার মৈলজানা গ্রামে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ৯ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে ভাষা মতিন ছিলেন সবার বড়। হাসপাতালে চিকিৎসা হওয়া অবস্থাতেই তিনি নিজের শরীর দান করে দিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য চোখ দান করে গেছেন সন্ধানীকে। শহীদ মিনারে আজ শ্রদ্ধা নিবেদন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জানিয়েছেন প্রয়াত এই ভাষাসৈনিকের প্রতি সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ আজ বেলা ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক আবদুল মতিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, তার মৃত্যুতে জাতি ভাষা আন্দোলনের একজন জীবন্ত কিংবদন্তিকে হারাল। ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে যে অবদান রেখেছেন জাতি তা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। শোক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দেশের স্বাধীনতার সোপান রচনা হয় ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। আর ভাষা মতিন সেই আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী। তার মৃত্যু একটি জীবন্ত ইতিহাসের অবসান। জীবনের শেষ দিনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন ভাষা মতিন। এর মধ্যে স্ট্রোক করলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১৮ আগস্ট তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর একদিন পর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০ আগস্ট আবদুল মতিনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আফজাল হোসেন। অস্ত্রোপচারের পরও তার অবস্থা অনেকটা অপরিবর্তিতই ছিল। গত কয়েক দিনে তার শারীরিক অবস্থার অনেক অবনতি ঘটে। বিএসএমএমইউতে ভর্তির পর থেকে তিনি আইসিইউ চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৪ অক্টোবর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বুধবার সকাল ৯টায় তা খুলে নেয়া হয়। বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবন ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে ভাষার দাবিতে বাঙালির আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন আবদুল মতিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৪৫ সালে। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন মতিন। মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে মতিন ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) গঠন করেন। চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থী দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যেও আবদুল মতিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিপিবি) যোগ দিলেও আবদুল মতিন পুনর্গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেই থেকে যান। প্রকাশিত বই ভাষা আন্দোলন বিষয়ে তার রচিত বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালি জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস । এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তার আÍজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’। হাসপাতালে ভিড় দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়ার কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। এর পরপরই ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ফকির আলমগীর, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ হাসপাতালে ভিড় করেন। এ সময় ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের জীবন-সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন ভাষা মতিন একজন ব্যক্তি নন তিনি সমষ্টির মহানায়ক। তিনি আরও বলেন বাঙালি জাতিসত্ত্বার ভাষা আন্দোলন। এই ভাষা আন্দোলনের কাণ্ডারি ছিলেন ভাষা মতিন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতি ঘটল। মরণোত্তর দেহ দান মরণাত্তর দেহ দান ও চক্ষু দান করে গেছেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন। এক চিঠিতে তিনি বলেন আমি আবদুল মতিন, পিতা মৃত আবদুল জলিল মাতা মৃত আমেনা খাতুন স্বেচ্ছায় শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ অবস্থায় আমার মরণোত্তর দেহ বা লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের শিক্ষার্থীদের এনাটমি ফিজিওলজি ইত্যাদি শেখার কাজে লাগবে জেনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে দেহ সম্পূর্ণ এবং সন্ধানীকে চক্ষু দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে আমার স্ত্রী ও কন্যাদের সম্মতি রয়েছে। কাজেই মৃত্যুর পরে আমার মৃতদেহ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অর্পণ করার জন্য আমার স্ত্রী ও কন্যাদের নির্দেশ দিচ্ছি।
বিষয়: বিবিধ
১১৫৯ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যমুনার পানি লাল হয় না কেন?
মাঝের সময়টার কথা কেউ কখনও উল্লেখ করেন না। কারণ তিনি বাম রাজনীতিক! যদি ডান বা মধ্যপন্থী হতেন তাহলে.......
ইতিহাসের পাতায় এসব লেখা থাকলেও মানুষের অন্তরেও এমন অনেক কিছু লেখা রয়েছে যা ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি কিন্তু ঘটনা ঘটেছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে আমার বাড়ি হওয়ায় সেখানে সংঘটিত আমার মা-বাবাসহ বড়দের কাছে শোনা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বেশ কিছু ঘটনা যা আমার বিবেককে ধ্বংস করে তার মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের এলাকার কৃতি সন্তান(!) ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের কর্মকাণ্ড। তিনি আজ বাংলাদেশের সকল মহলের নিকট কমবেশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আমার এলাকার এমন কিছু লোক আছে যারা তাকে একজন নিষ্ঠুর খুনি ছাড়া আর কিছুই ভাবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মতিন এলাকার এমন কিছু লোককে হত্যা করেছে যার এলাকার মাথা হিসেবে পরিচিত ছিল। যাদের তালিকা কেউ চাইতেই নিহতদের সন্তানদের নিকট থেকে পেতে পারে। তিনি ঐ সময় এমনভাবে খুন করতেন যে খুন করা যেন ডাল-ভাত। এলাকায় প্রচলিত আছে- তার খুনে সন্তুষ্ট না হয়ে তার স্ত্রী বলেছিল-” মতিন- তুমি কী খুন করছো! যমুনার পানি লাল হয় না কেন?
ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
বাস্তবতা হলো আমাদের নতুন প্রজন্ম একদিকে যেমন ইতিহাসবিমুখ তেমনি শিক্ষাব্যবস্থার পূরো আয়োজনটাও ইতোহাসবিস্মৃতির অনন্য কলাকৌশলে অলংকৃত!
কাকে যে দোষ দেবো- আসলে আমাদেরই ব্যর্থতা!!
এই কারনেই আমরা আজ পিছায়ে আছি ।
ধন্যবাদ
তবে ভাই একজন মানুষ আরেক জন মানুষকে কাফের বলা কবিরা গুনাহ
আপনার লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন