যাদের কথা কেউ বলে না----- মেজর জলিল
লিখেছেন লিখেছেন কাজি সারোয়ার মাহমুদ ১১ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৩৯:০৫ রাত
সারা বিশ্ব তাকে চিনতো কাউ বয় মেজর নামে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলা কালে সবচেয়ে বড় সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন সেই কাউ বয় মেজর । নাম তার মেজর জলিল । সেই মেজর জলিলের আরেকটা পরিচয় ও আছে ।তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম গৃহবন্দী ।এবং খুব সম্ভবত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সেনা কর্মকর্তা যাকে হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য করার অপরাধের সেনা বাহিনী থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো
মেজর জলিল ৯ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। দক্ষিনাঞ্চল ছিল তার যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধের শুরু থেকেই নানা বিষয়ে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের সাথে তার মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে ।অবশ্য শুধু তার সাথে না । প্রায় সব সেক্টর কমান্ডারদের সাথেই ভারতীয় সেনাকর্মকর্তাদের বিরোধ চলছিলো ।সেটা রেক ইতিহাস ।অন্য কোনদিন লেখা যাবে ।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ১৭ডিসেম্বর বিজয়ী বেশে যখন খুলনা প্রবেশ করে, তখন সেখানে মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন দলবীর সিং।
মুক্তবাংলায় ভারতীয় বাহিনী লুটপাটে অংশ নিলো। বাংলার সম্পদ পাচার শুরু করল। এ সময় ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটে নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এ লুটেরাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মেজর জলিল।
মিত্র বাহিনীর প্রধান দলবীর সিংকে তর্জনী উঁচিয়ে বলেছিলেন,
‘তোমার সৈন্যরা লুটেরার ভূমিকা থেকে সরে না দাঁড়ালে আমি গুলি ছুড়তে বাধ্য হবো।’ দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
কিন্তু মেজর জলিল যদি জানতেন যে দেশের জন্য তিনি রুখে দাড়ালেন সেই দেশ তার সাথে কি ব্যবহার করতে যাচ্ছে!
এরপর জরুরী ভিত্তিতে এক মিটিং এ তলব করা হয় সব সেক্টর কমান্ডার দের ।সেই মিটিং এ যোগ দেবার পথে গ্রেফতার করা হয় মেজর জলিল কে ।জলিলের বিরুদ্ধে সেনাবিধি অনুসারে হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য, বিদ্রোহ এবং খুলনা পতনের পর লুটতরাজ পরিচালনার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন বিরোধীতামূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপের অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অর্থাৎ কোর্ট মার্শালে বিচার করা হবে। এরপর একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসেন বন্দীদের সঙ্গে পাওয়া জিনিসপত্রের সিজার লিস্ট করতে। সবার ব্যাগেই কাপড় ও গুলি ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর আসে জলিলের ব্যাগ খোলার পালা। তার অনুপস্থিতিতে এই ব্যাগ খোলার ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদের পরও সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে তালা ভাঙা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাগের ওজন সন্দেহজনক বলে রায় দেন তার আগে। খোলার পর এতে পাওয়া যায় বিখ্যাত সমরনায়কদের লেখা গেরিলা যুদ্ধের মোটা মোটা সব বই, যা কলকাতা থেকে ফেরার পথে বিভিন্ন বুকস্টল থেকে কিনে আনতেন জলিল। মূলতো স্বাধীন একটা দেশের সেনা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ করে অফিসারদের আধুনিক রণকৌশল এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানা উচিত বলেই মনে করতেন মেজর জলিল ।সে কারণেই ভারত থেকে এই বই গুলো সংগ্রহ করেছিলেন তিনি ।
যাই হোক , হতভম্ব ম্যাজিস্ট্রেট এরপর স্টাফ অফিসার মোস্তফাকে জানান, তাকে বলা হয়েছিলো মেজর জলিল ও তাদের সঙ্গীরা খুলনা থেকে লুট করা ব্যাগ ভর্তি সোনাদানা, অলঙ্কার ও টাকা পয়সা নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথ তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে!
এই হল ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বঞ্চিত একমাত্র সেক্টর কমান্ডার,স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী মেজর জলিলের গল্প ।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস লিখতে গেলে মেজর জলিল , তাহের , জিয়া , খালেদ মোশাররফ , মঞ্জুর কাউকে বাদ দিয়ে লেখা যাবে না ।এদের প্রত্যেকেই দেশকে ভালোবাসতেন নিজের মতো করে ।একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছেন , লড়াই করেছেন তাও ও দেশের জন্য ।আবার রণাঙ্গনে এই মেজররাই দেশের জন্য কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন ।
বাংলাদেশ মানে শেখ মুজিব না! মুক্তিযুদ্ধ মানে আওয়ামী লীগ না!
ইতিহাস মানে জয় বাংলা না!
(মেজর জলিলের আর একটা পরিচয় ও আছে ।তিনিই স্বাধীন বাংলাদেশের একমাত্র খেতাব বঞ্চিত সেক্টর কমান্ডার!)
বিষয়: বিবিধ
১১৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন