পরিচয় দিলে যদি সন্তানের সন্মান যায় তাই নিরবে গামছা দিয়ে চোখের নোনা জল মুছেই নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করলেন সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৭:১৩:১১ সন্ধ্যা
সাবেক উপ-সচিব আব্দুল মান্নান। জন্মস্থান চট্টগ্রামের মিরেরসরাই। বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই। ১৯৯৭ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। জীবনের সব পরিশ্রম, ঘাম ও মেধা দিয়ে এক ছেলে ও দুই মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১৪ বছর ধরে একাকী সময় পার করছেন আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাসের ৪১৩ নম্বর কক্ষে।
আব্দুল মান্নান চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। উপ-সচিব থেকে অবসর নেওয়ার কিছু দিন পরেই তার ঠিকানা হয় নগরীর এই প্রবীণ নিবাসে।
সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করার চেষ্টা করে গেছেন। হয়তো ভেবেছিলেন সন্তানদের পড়াশুনা করিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই জীবনের বাকিটা সময় সুখ স্বাচ্ছন্দেই কাটবে তার। জীবনের শেষ সময়ে অসহায় পিতার সহায় হবে সন্তানেরা। কিন্তু বিধি বাম। বৃদ্ধের শেষ ঠিকানা হয় প্রবীণ নিবাসেই।
শেষ সময়ে পেনশনে পাওয়া টাকা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে পরে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছেন আব্দুল মান্নান। প্রবীণ নিবাসে থাকা প্রসঙ্গে অভিমানি আব্দুল মান্নান জানান, আমি স্বতন্ত্রভাবেই থাকতে পছন্দ করি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে থাকলে এক কথা, দুই কথা করে অনেক কিছুই হবে। জীবনের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।
ছেলে মেয়েরা কি করে এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান জানান, আমি সচিব ছিলাম এখন প্রবীণ নিবাসে আছি। ওদের পরিচয় দিতে পারবো না। ওদের পরিচয় দিলে ওদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।
ছেলে মেয়েদের পরিচয় দেওয়া যাবে না। তিনি আরো জানান, বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়ান এক গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করে। মেঝ মেয়ে ও তার জামাই বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে এবং ছোট মেয়ে মিরপুরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের লেকচারার। ছেলে মেয়েদের আপত্তি থাকার কারণে ছেলে মেয়েদের নাম বলতে চাননি আব্দুল মান্নান। একাকী থাকতে কেমন লাগে এমন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে গাল বেয়ে গড়াতে থাকে নোনা জল। ছেলে মেয়েরা না এলেও বাবা বলে কথা। সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই।
ছেলে মেয়েরা পিতাকে না দেখলেও দেওয়ালে টানানো ফ্রেমে বন্দি তাদের ছবিগুলো দ্যাখেন সারাক্ষণ। এখন সময় পার করেন ইসলামী বই, কবিতা, উপন্যাস ও খবরের কাগজ পড়ে। আব্দুল মান্নান যে একজন বইয়ের পোকা তার রুম দেখলেই তা আর মুখে বলে দিতে হবে কাউকে। প্রায় দুই শতাধিক বই রুমে সাজিয়ে রেখেছেন তিনি। অধিকাংশ সময়ই এসব বই পড়ে সময় পার করেন আব্দুল মান্নান।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের এক বন্ধুকে গবেষণার কাজে সাহায্য করছেন তিনি প্রবীণ নিবাসে বসেই। এভাবেই প্রতিদিন জানালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে কার যেনো পথ চেয়ে সময় পার করেন তিনি। নিঃসঙ্গ জীবনে গল্প করার সঙ্গী পেলে তাকে আর সহজে ছাড়তে চান না। ২০০৬ সাল থেকে একই প্রবীণ নিবাসের ৪১৭ নম্বর কক্ষে আছেন জাহাঙ্গীর হোসেন (প্রতীকী নাম)।
জাহাঙ্গীর হোসেনের জীবনের গল্পটা আরো করুণ। ৩৫ বছর বিদ্যুত বিভাগে চাকরি করেছেন। যাবতীয় সম্পদ ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার জন্য খরচ করেছেন, নিজের জন্য কিছুই সঞ্চয় করেননি।
জীবনের শেষ সময়েও এসে একটা ভুল করেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। চট্টগ্রামের সোসাইটিতে অবস্থিত ৫ কাঠা প্লটের ওপর একটি বাড়ি সন্তানদের নামে লিখে দিয়েছেন। তাই এখন ঠিকানা বলতে এই প্রবীণ নিবাস। তার জন্মস্থান চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরেই। বিয়ে করেন সিলেটে। তিন সন্তানের জনক জাহাঙ্গীর হোসেন। বড় মেয়ে সিলেট মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা। ছোট মেয়ে ও তার জামাই কানাডায় থাকে। দুই সন্তান মাঝে মধ্যে ফোনে যোগাযোগ রাখলেও বড় ছেলে কোনো যোগাযোগ রাখে না।
বিষয়: বিবিধ
২৫৩১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিবেশীদেরকেও সচেতন করতে হবে
ধন্যবাদ
সহমত
আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিবেশীদেরকেও সচেতন করতে হবে
ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন