কেমন ছিল বাকশালের শাসন ? বাকশাল শাসনামলের একটি গল্প “সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করল হাতে কুঠার দিয়ে বলল, ‘মাথা কেটে দে, ফুটবল খেলবো।

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ০২:৩৭:১৮ দুপুর

মুরুব্বীদের মুখে অনেক শুনেছি, বাকশালের বিভিষীকার কথা শুনে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছি, নিছক রাজনীতি, মিথ্যে গালগল্প বলে এড়িয়ে গেছি। অথচ সেই বাকশাল যখন আজ আজরাইলের বেশে দুয়ারে দাড়ায়ে, তখন বুঝতে বাকী থাকে না, কি ভুলই না করেছি আমরা। চারিদিকে শুরু হয়েছে রক্ষীবাহিনী স্টাইলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশলীগের হত্যা, গুপ্ত হত্যা, গণধষর্ণ, পৈশাচিক তান্ডব। এখন আর শোধরানোর কোন পথ নেই, হায়েনার হাতে রক্তাক্ত দেশ, বিপন্ন মানবতা। অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ, চলেছে পেছন পানে, ভিশন নাইনটিন সেভেনটি ফোর, ভিশন বাকশাল, ভিশন রক্ষী বাহিনী, ভিশন দূর্ভিক্ষপীড়িত বাসন্তীর বাংলাদেশ।

আসুন একবার ইতিহাসের পাতায় চোখ মেলে দেখে নেই কেমন ছিল সেসব দিনগুলো। হাজার হাজার করুণ কাহিনীর সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসন আমলে বাংলাদেশে। যার সবগুলো গুমড়ে মরেছে নির্বিচারে, প্রকাশিত হতে পারেনি। পাবনার বাজিতপুরের কোরাটিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীর ছেলে রশীদকে রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিমর্মভাবে খুনের বিভৎস সে চিত্র মেজর ডালিমের সাইট থেকে তুলে ধরলাম।

আবদুল আলীর সাক্ষাৎকারটা ছিল নিম্নরূপ :-

“আমার সামনে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করল। আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল, ‘মাথা কেটে দে, ফুটবল খেলবো।’ আমি কি তা পারি! আমি যে বাপ। কিন্তু অকথ্য নির্যাতন কতক্ষণ আর সহ্য করা যায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে ছেলের মাথা কেটে দিয়েছি। রশীদ নাকি রাজনীতি করত আমি জানতাম না। একদিন মাতু আর শাহজাহান এসে ধরে নিয়ে গেল। আওয়ামী লীগ অফিসে সারারাত ওরা ওকে বেদম মার মারল। সকালে বলল এক হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। রশীদ স্বীকার করে এল এক হাজার টাকা দেবার। আমার কাছে টাকা চাইল। কিন্তু আমি দিন আনি দিন খাই, মজুর মানুষ। হঠাৎ তিন দিনের মধ্যে এক হাজার টাকা কোত্থেকে দেব? বললাম, তুই বরং পালিয়ে সিলেট চলে যা। রশীদ সিলেট চলে গেল। কিন্তু ১০-১২ দিন পর ফিরে এসে বলল, ‘বাবা মন মানেনা তোমাদের ফেলে থাকতে।’ সিলেট থেকে ফেরার পরই কঠিন অসুখে পড়ল। টাইফয়েড। অসুখ সারার পর একদিন তার মাকে বলল, ‘মা আজ ভাত খাব।’ তার মা শৈলমাছ দিয়ে তরকারী রানল। এমন সময় আওয়ামী লীগের পান্ডারা রক্ষীবাহিনীসহ বাড়ি ঘেরাও করল। অসুস্থ মানুষ। কোন রকমে বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে দৌড় দিল। বাবা আমার জানত না সেখানেও ঘাপটি মেরে বসে আছে আজরাইল। পাষন্ডরা দৌড়ে এসে ধরল তাকে। রশীদ সিরাজের পা ধরে বলল, ‘সিরাজ ভাই, বিমারী মানুষ আমায় ছেড়ে দেন।’ ছাড়ল না। তারপর বাপ-বেটা দু’জনকেই বেধে মার শুরু করল। কত হাতে পায়ে ধরলাম। এরপর মাতু গুলি করল রশীদকে। ঢলে পড়ল রশীদ। আমি নির্বাক তাকিয়ে রইলাম। মরার পর একজন বলল, ‘চল ওর কল্লাটা নিয়ে যাই ফুটবল খেলব।’ মাতু বলল, ‘হ্যাঁ। তাই নেব। তবে ওর কল্লা আমরা কাটব না। তার বাবা কেটে দেবে।’ বলেই আমার হাতে কুঠার দিয়ে বলল কেটে দিতে। আমার মুখে রা নেই। বলে কি পাষন্ডগুলো? চুপ করে আছি দেখে বেদম পেটাতে শুরু করল। বুড়ো মানুষ কতক্ষণ আর সহ্য হয়। সিরাজ এসে বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে বলল, ‘এক্ষুনি কাট, নইলে তোকেও গুলি করব।’ ইতিমধ্যে দেড় ঘন্টার মত সময় পার হয়ে গেছে। বুঝতে পারলাম না কাটলে ওরা সত্যি আমাকেও মেরে ফেলবে কিনা? শেষে কুঠার দিয়ে কেটে দিলাম মাথা। নিয়ে সউল্লাসে চলে গেল তারা। আল্লায় কি সহ্য করব?”

বিষয়: বিবিধ

১২৯৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357641
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:১৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এখন তো সেইম অবস্থা।
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০৩:১৯
296735
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : তার থেকেও মনে হচ্ছে কয়েক ধাপ বেশী
ধন্যবাদ
357670
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৫৪
শেখের পোলা লিখেছেন : স্বাধীনতার সুফল বাংলার মুসলীম তখন থেকেই পাওয়া শুরু করেছে, আজও পাচ্ছে৷ অপরাধ স্বীকার না করা অবধি হয়ত আল্লাহ থামাবেন না৷ আল্লাহ আমাদের অপরাধ ক্ষমা কর৷
২৫ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৫
296753
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আমিন সুম্মাআমিন
আপনাকে ধন্যবাদ
357708
২৬ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:১৮
ব্লগার শঙ্খচিল লিখেছেন : শিরোনাম টা ছোট করবেন সেটা সর্বোচ্চ শব্দ যেন ৮, ১০ বা ১২ শব্দ এর বেশি না হলে খুব ভাল হবে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File