টেলিফোনে বিয়ে করার সঠিক পদ্ধতি ; এবং কিছু গুরুত্বপুর্ন আলোচনা
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ১১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১১:০১:২৬ রাত
আমাদের সমাজে প্রায়ই টেলিফোনে বিয়ে-শাদীর কথা শোনা যায়। বিশেষ করে অনেক প্রবাসী টেলিফোনে বিয়ে করে থাকেন। কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না মোবাইল-ফোনে বিয়ে করার সঠিক পদ্ধতি কি? ফলে অনেক বিয়েই ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক সম্পন্ন হচ্ছে না। অথচ বিয়ের পর তারা দিব্যি ঘর সংসার করে যাচ্ছেন।
টেলিফোনে বিয়ের ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট। তার আগে বিয়ের মৌলিক কিছু বিষয় জেনে নেয়া উচিত। বিয়ে মানবজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিয়ের মাধ্যমে শারীরিক চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে অনেক গোনাহের কাজ থেকেও বেঁচে থাকা যায়। বিয়ে মানুষের মন পরিষ্কার করে। চক্ষু শান্ত রাখে। জীবনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামী বিধানমতে বিয়ের অন্যতম শর্ত হলো দু’জন সাক্ষী থাকতে হবে। সাক্ষী ছাড়া বিয়ে কোনোভাবেই সঠিক হবে না। হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না।’ [তিরমিজি]। অপর এক হাদিসে রয়েছে, ‘যেসব মহিলা সাক্ষী ছাড়া বিয়ে করে, তারা ব্যভিচারিণী। [তিরমিজি]।
ফতোয়ার কিতাবে একথাও উল্লেখ রয়েছে যে, বিয়ে অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে একই স্থানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল সরাসরি ও সামনাসামনি শুনতে হবে। তবেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়। [ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/২৬৯]।
এ থেকে বোঝা যায় সাক্ষীরা যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিলের কথা সশরীরে সামনাসামনি না শোনেন, তাহলে বিয়ে হবে না। তদ্রুপ একই বৈঠকে বিয়ে অনুষ্ঠান হতে হবে। বৈঠক দুই হলে বিয়ে হবে না।
এবার আসুন টেলিফোনে বিয়ের বিষয়ে। টেলিফোনে বিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বর এক স্থানে এবং কনে অন্য স্থানে অবস্থান করেন, উপরন্তু সাক্ষীরা ইজাব-কবুল ফোনের মাধ্যমে শুনে থাকেন, সরাসরি বর বা বরের উকিল, কনে বা কনের উকিলকে দেখেন না এবং তাদের কথাও শোনেন না; সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে এমন বিয়ে জায়েজ নয়।
তবে ইসলাম স্বভাব-প্রকৃতির ধর্ম। সহজ-সরল পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা বা বিষিয়ে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। তাই প্রবাসীদের বিয়ে-শাদির বাস্তব সমস্যাকে ইসলাম জিইয়ে রাখেনি। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনে বিয়ের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা থাকলে ফোনে বিয়ের প্রয়োজনই পড়ে না। তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন। এতে উভয় পক্ষ ও সাক্ষীরা একই বৈঠকে বিয়ে সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন। তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে আর কোনো আপত্তি থাকবে না। [ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ১১/১৬৩, ফাতাওয়া নিজামিয়া : ২/২০৭]।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লিখার একদম নিচে উল্লেখিত পদ্দতিতেই আমার শুভ বিবাহের কাজ সম্পন্ন করেছি। দোয়া করবেন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন