আত্মীয়তার বন্ধনে রাজনীতি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কয়েকটি কিংবদন্তি রাজনৈতিক পরিবারের আত্মীয়।

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ১৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:৩২:৫৬ সন্ধ্যা



অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক থেকে মুসলিম লীগের সভাপতি হয়েছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। পাকিস্তানের স্পিকার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন একদিনের। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি কারাবন্দি হন। কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার পিতা আবদুল জব্বার চৌধুরী ও দাদা বক্সে আলী চৌধুরী। বাংলাদেশের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ অঞ্চলজুড়ে শেকড়ের মতো ছড়িয়ে চট্টগ্রামের এ চৌধুরী পরিবারের আত্মীয়তা। খোদ স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেই ছিল গভীর সম্পর্ক এ পরিবারের। ফজলুল কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এরশাদ সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী বিএনপি সরকারের সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। নির্বাচন করেছেন ওআইসি মহাসচিব পদেও। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে তিনি বর্তমানে কারাগারে।

পারিবারিক ও বৈবাহিক সূত্রে সালাউদ্দিন কাদের কয়েকটি কিংবদন্তি রাজনৈতিক পরিবারের আত্মীয়। তার দাদা শ্বশুর হলেন মাওলানা আবদুস সোবহান। যার নামে ঢাকার সোবহানবাগের নামকরণ। নানা শ্বশুর ফরিদপুরের বিখ্যাত চৌধুরী আবাদ আল্লা জহিরউদ্দিন লাল মিয়া। লাল মিয়ার মেয়ে জামাই আলমগীর মোহাম্মদ আদেল হলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শ্বশুর। ফলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ তার মামা শ্বশুর। এ সূত্রে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তৈরি হয়েছে তার দূরবর্তী সম্পর্ক। সালাউদ্দিন কাদেরের চাচা শ্বশুর হচ্ছেন জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল। আবার জাহাঙ্গীর আদেলের শ্বশুর হলেন পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খান। ফজলুল কাদের চৌধুরীর তৃতীয় ছেলে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাবেক এমপি এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। গিয়াসউদ্দিন কাদেরের শ্বশুর হলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিরক্ষা সচিব ও সাবেক কেবিনেট সচিব ভাষাসৈনিক মুজিবুল হক। ফজলুল কাদের চৌধুরীর মেজো ছেলে প্রয়াত সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার নানা শ্বশুর হলেন দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে ঢাকায় আসা মুসলিম লীগের নেতা ও দার্শনিক আবুল হাসিম। আর আবুল হাসিমের ছেলে হলেন এক সময়ের কট্টর বামপন্থি রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন উমর। সে হিসেবে বদরুদ্দিন উমর ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সম্পর্ক তালই-পুতরার। সাইফুদ্দিন কাদেরের শ্বশুর বাড়ির দিক থেকে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সঙ্গে দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়তা তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামের এ চৌধুরী পরিবারের। ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি হলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নাতিন জামাই। ফজলুল কাদের চৌধুরীর আপন ভাতিজা হলেন আওয়ামী লীগের এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। আবার সালাউদ্দিন কাদেরের খালাতো ভাই হলেন শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সালমান এফ রহমান। সালমান এফ রহমানের পিতা ব্যবসায়ী ও মুসলিম লীগ নেতা প্রয়াত ফজলুল রহমান। তার নিকট আত্মীয় বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আবার সালাউদ্দিন কাদেরের দুই খালাতো ভাই হলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান দুই বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী ও সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফুফা হলেন ভাষাসৈনিক ও এইচআরসি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হেদায়েত হোসেন চৌধুরী। তার দুই ছেলে হলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরী। সালাউদ্দিন কাদের ও সাবের হোসেন পরস্পর মামাতো-ফুফাতো ভাই। অন্যদিকে সাবের হোসেন চৌধুরীর দুই ফুফাতো ভাই হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও বিএনপি সরকারের আমলে ব্যর্থ ক্যুর অভিযোগে চাকরিচ্যুত সেনাপ্রধান মে. জেনারেল (অব.) নাসিম বীরবিক্রম। মুসলিম লীগের জাঁদরেল নেতা হামিদুল হক চৌধুরী ও সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী হলেন সম্পর্কে সাবের হোসেন চৌধুরীর চাচা। আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এম আশিকুর রহমান এমপি হলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফুফাতো বোনের জামাই। আর বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা হলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বোনের ভাসুর। এছাড়া এরশাদ সরকারের সাবেক মন্ত্রী সিলেটের এমএ হক (বাঘা হক) হলেন সালাউদ্দিন কাদেরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।

বৃটিশ যুগে কংগ্রেসের নেতা পরবর্তীকালে আইয়ুব খানের খাদ্যমন্ত্রী ফরিদপুরের জমিদার আবাদ আল্লা জহিরউদ্দিন লাল মিয়া। তার ভাই জমিদার মোহন মিয়া। ফরিদপুরের এ লাল মিয়ার পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধন ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের। বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো বোন মোসাম্মাৎ বেগমের মেয়ে বিয়ে করেছেন লাল মিয়ার বড় ছেলে চৌধুরী মমতাজ হোসেন রাজা মিয়া। বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুর হলেন ফরিদপুর-৩ সদর আসন থেকে নির্বাচিত এমপি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আবার পুতুলের দাদা শ্বশুর খন্দকার নুরুল হোসেন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই। অন্যদিকে পুতুলের শ্বশুর খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আপন বোন বিয়ে করেছেন পাকিস্তান আমলের ডাকসাইটে নেতা মন্ত্রী মরহুম ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়ার ছেলে। আবার প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দাদা শ্বশুর নুরু মিয়ার ভাই হলেন হিরু মিয়া। তার ভায়রার মেয়ে ডা. জোবায়দা রহমান হলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী। সে হিসেবে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে আত্মীয়তার বন্ধনে তৈরি হয়েছে ফরিদপুরের এ চৌধুরী পরিবারের। লাল মিয়ার বড় মেয়ে লাইলী চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় পুরান ঢাকার আলমগীর মোহাম্মাদ আদেলের। আরেক মেয়ে বিয়ে করেছিলেন পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছেলে মিশরের কায়রোতে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পয়গাম পত্রিকার সম্পাদক বাচ্চু। মোনায়েম খানের আরেক ছেলে হলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক মুসলিম লীগের সভাপতি কামরুজ্জামান খান। অন্যদিকে কামাল ইবনে ইউসুফের এক বোনের বিয়ে হয়েছে বৃটিশ যুগে উপমহাদেশের রাজনীতি কাঁপানো পরিবার টাঙ্গাইলের গজনবী পরিবারে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বেয়াই হলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। সাইফুর রহমানের ছেলে শফিউর রহমান বাবুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে কামাল ইউসুফের মেয়ের। আওয়ামী লীগ নেতা মে. জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁঁইয়া এমপিও কামাল ইউসুফের বেয়াই। সুবিদ আলী ভূঁঁইয়ার ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন কামাল ইউসুফ। আবার চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের ছোট ভাই আকমল ইবনে ইউসুফ বিএনপির সাবেক এমপি।

বাংলাদেশের খ্যাতনামা চৌধুরী পরিবারগুলোর একটি একটি সিলেটের চৌধুরী পরিবার। কূটনীতি ও রাজনৈতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত এ পরিবার। প্রথিতযশা কূটনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফারুক এ চৌধুরী। আরেক ভাই সাবেক কূটনীতিক ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। অন্যভাই ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। তিনিও ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের পালন করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব। আরেক ভাই কূটনীতিক প্রয়াত মাসুম এ চৌধুরী। সিলেটের এ চৌধুরী পরিবারের জামাই হলেন ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। তিনি বিয়ে করেছেন রাষ্ট্রদূত ফারুক আহমেদ চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর বোন। ফারুক চৌধুরীদের মামা প্রয়াত আবদুল মতিন চৌধুরী ছিলেন আসামের অর্থ ও উপমুখ্যমন্ত্রী। ফারুক চৌধুরীর কাজিন হলেন সাবেক স্পিকার প্রয়াত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম হলেন ফারুক চৌধুরীদের মামাতো ভাই। আবার শমসের মবিন চৌধুরীর খালাতো ভাই হলেন সাবেক সেনাপ্রধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং ওয়ান ইলেভেনের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান লে. জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী। অন্যদিকে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর চাচাতো শ্যালিকা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরীও ওয়ান ইলেভেন সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তার স্বামী নাজিম কামরান চৌধুরী ছিলেন সিলেট-৪ থেকে নির্বাচিত বিএনপির সাবেক এমপি। সূত্র : মানবজমিন

বিষয়: বিবিধ

৬০৫৬ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350188
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০০
290656
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
350194
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৪
শেখের পোলা লিখেছেন : এ দেখি আত্মীয়তার জাল বিছানো৷ সংগ্রহের জন্য ধন্যবাদ৷
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৯
290663
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : জি আমরা দেখি
350196
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৪
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যকাদ
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৩
290665
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
350205
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩১
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : অভূতপূর্ব কিছু তথ্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
290676
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
350342
১৯ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৫
হতভাগা লিখেছেন : সাকার বড় পরিচয় সে একজন যুদ্ধাপরাধী
১৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০০
290768
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : চশমা যদি কারো চোখে কালো থাকে তবে তার চোখটা যেমন বাইরের লোকে দেখতে পায় না তেমনি অন্ধ লোকেরা কিন্তু কালো চশমা পরে অন্যের কাছে নিজেকে অন্ধত্বকে ঢেকে রাখতে
১৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৬
290773
হতভাগা লিখেছেন :
১৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮
290791
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : এক অন্ধকে মোমবাতি দিয়েছে রাখার জন্য এখন সেই অন্ধ খাওয়ার শুরু করেছে
আপনাদের অবস্থা মনে হচ্ছে তেমন বললাম কি আর জবাব দিলেন কি
১৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১৬
290809
হতভাগা লিখেছেন : উনিও প্রায় সময় চশমা পড়ে থাকতেন । উনার মতি গতি এখন মানুষ বুঝতে শুরু করেছে । যুদ্ধাপরাধীদেরকে উনিই স্টাবলিশ হবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ।

I will make politics difficult for the politicians

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File