জেনে নিন রহস্যেঘেরা আদম পাহাড় এর কথা!!

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:৪৬:১৬ বিকাল



শ্রীলংকার রহস্যময় এক পাহাড়। নাম তার আদম পাহাড়। নানা কারণে এ পাহাড়টি রহস্যে ঘেরা। এর শীর্ষে রয়েছে বিরাট আকারের এক পায়ের ছাপ। এ পায়ের ছাপকে সব ধর্মের মানুষই পবিত্র হিসেবে মনে করে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বে নানা রকম পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এসব পায়ের ছাপ একেকটা একেক রকম। আকৃতি নানা রকম। এমনই এক পায়ের ছাপ আদম পাহাড়ে। শ্রীলংকার মুসলমানরা বিশ্বাস করেন পৃথিবীর আদি মানব হজরত আদম (আ.) প্রথম এই শ্রীলংকায় পদার্পণ করেছিলেন। ওই পাহাড়ে রয়েছে তারই পায়ের ছাপ। তার জন্য এ পাহাড় ও পাহাড়ের ওই পায়ের ছাপ মুসলমানদের কাছে পবিত্র হিসেবে পরিণতি হয়ে আসছে।

শুধু শ্রীলংকার মুসলমানরাই নয়, এর বাইরের অনেক দেশের মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত আদম (আ.)-কে যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয় তখন তিনি প্রথম পা রাখেন শ্রীলংকায়। আর আদম পাহাড়ের ওপর ওই পায়ের ছাপ দেখে তারা মনে করেন তা হজরত আদম (আ.)-এর। এজন্য মুসলমানরা এ পাহাড়কে অসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আর এজন্য এর নাম দেয়া হয়েছে আদমস পিক বা আদমের পাহাড়।

এই পায়ের ছাপ শুধু মুসলমানদের কাছেই নয়, একই সঙ্গে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও হিন্দুদের কাছেও পবিত্র। তারাও মনে করেন তাদের ধর্মের সঙ্গে এর রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্ক। এতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আদমের পাহাড় সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই পবিত্র। তারা শ্রদ্ধার চোখে দেখেন এ পাহাড়কে। তারা সবাই স্বীকার করেন এ পাহাড়ের চূড়ায় আছে ওই পবিত্র পদচিহ্ন। তার আকৃতি বিশাল।

চিত্র: আদম পাহাড় এর পাঁয়ের ছাপ।

এ্যাডামস পিক পাহাড় আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছতে হলে যে পথ তা চলে গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪০০০ ধাপ। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে। জটিল এক আবহাওয়ার এক অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ, কাব্যিক অর্থে বলা যায় এ পাহাড় তখন মেঘের ভিতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে।

এ পাহাড় ও পাহাড়ের পদচিহ্ন নিয়ে একটি বই লিখেছেন মারকুস অকসল্যান্ড। বইটির নাম ‘দ্য স্যাক্রেট ফুটপ্রিন্ট: এ কালচারাল হিস্ট্রি অব আদমস পিক’। এতে বলা হয়েছে, এ পাহাড়টি ২২৪৩ মিটার উঁচু। আকৃতি কোণের মতো। ভারত মহাসাগর থেকে এ পাহাড় পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আগেকার দিকে আরবের সৌখিন ব্যক্তিরা সমুদ্র যাত্রায় এসে পিরামিডের আকৃতির এ পাহাড় দেখে পুলকিত হতেন।

৮৫১ সালে এ পাহাড়ে পদচিহ্ন প্রথম দেখতে পান আরবের সোলাইমান। রত্নপুরা হয়ে পবিত্র এ পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন বিখ্যাত আরব দার্শনিক ইবনে বতুতা। তিনি এখানে উঠার জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন বারবেরিন থেকে। তার আগে ব্যাপক পরিচিত বণিক ও ভ্রমণ পিপাসু মার্কো পোলো আদমের পদচিহ্নে তার সম্মান জানানোর জন্য আরোহণ করেন এ পাহাড়ে। তিনি ১২৯২ সালে চীন থেকে ভেনিস যাওয়ার পথে এ সফর করেন।

এ পাহাড়ের চূড়া সামান্য একটি সমতল ক্ষেত্র। ১৮১৬ সালে লেফটেন্যান্ট ম্যালকম এর পরিমাপ করেন। তাতে দেখা যায় এর দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট এবং প্রস্থ মাত্র ২৪ ফুট। মোট আয়তন ১৭৭৬ বর্গফুট। এর চূড়ায় রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন। এর দৈর্ঘ্য ৬৮ ইঞ্চি। ৩১ ইঞ্চি চওড়া। তবে বৌদ্ধরা মনে করেন, ওই পদচিহ্ন হলো বুদ্ধের বাম পায়ের। বুদ্ধ তার অন্য পা রেখেছিলেন বর্তমানের থাইল্যান্ডে (আগে যা সিয়াম নামে পরিচিত ছিল)। থাইল্যান্ডে রয়েছে তার ডান পায়ের ছাপ। থাই ভাসায় একে বলা হয় ফ্রা স্যাত। সেখানে পায়ের ছাপের যে মাপ তা আদম পাহাড়ের পায়ের ছাপের মতোই। আকারও এক রকম। একই রকম পদচিহ্ন আরও পাওয়া গেছে লাওসে, ক্যাবোজে ও চীনে।

চিত্র: আদম পাহাড়ে উঠার সিড়ি।

বৌদ্ধরা ধারণা করেন, বুদ্ধ ছিলেন ৩৫ ফুট লম্বা। তাই তিনি এত দূরে দূরে পা ফেলতেন। তবে এই পদচিহ্নকে খ্রিস্টানরাও সম্মানের চোখে দেখে। ১৫০৫ সালে শ্রীলংকা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। তারা মনে করেন সেইন্ট থমাস দ্য ডাউবটার ভারত ও শ্রীলংকা এসেছিলেন। এরপর তিনি এই পাহাড়ে পা রেখে স্বর্গে চলে গিয়েছেন। তবে হিন্দুরা মনে করেন, ওই পদচিহ্ন হলো শিবের পায়ের।

আদম পাহাড় সকল ধর্মের মানুষের কাছেই এক মিলন মেলার নাম যেখানে সকলেই খুঁজে পায় তার বিশ্বাস আর শান্তির উৎস।

বিষয়: বিবিধ

৪৭৭০ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347430
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৭
288470
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
347438
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।

সুন্দর পোস্টটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া। পড়ে চমৎকার কিছু তথ্য জানলাম।

জাযাকাল্লাহু খাইর।
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৮
288471
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ওয়ালাইকুমসালামা ওয়ারাহমাতুল্লাহ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
347444
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৯
শেখের পোলা লিখেছেন : বৌদ্ধদের ধারণাটা একেবারেই অচল৷মানুষ ৩৫ লম্বা নয় বরং ৫০ ফুট হলেও এক পা শ্রীলঙ্কায় আর অন্য পা থাইল্যাণ্ডে দিয়ে দাঁড়াতে পারেনা৷ যাই হোক আল্লাহই ভাল জানেন৷ ধন্যবাদ৷
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
288473
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
347445
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমার একটি বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের উত্তর আজো পাইনি।

- একটি পাথরের উপর খোদাই হয়ে, একটি নরম পায়ের তুলতুলে ছাপ বসে যেতে হলে, সেখানে একজন ব্যক্তিকে ঠাঁয় কতশত বছর দাড়িয়ে থাকতে হবে সেটা ভাবনার বিষয়।

- আদম (আঃ) দাড়ানোর সাথে সাথেই কি ছাপ বসে পড়ে! তাহলে মাটি কি সিমেন্টের মত কাই আকারে ছিল কিনা। যদি তাই হয় তাহলে তাঁর দু'পায়ের ছাপ নেই কেন?

- আদম (আঃ) ৬০ হাত অথবা ৬০ গজ (এই মুর্হুতে সঠিকটি মনে পড়ছেনা) লম্বা ছিলেন, কোরআনেই এমন দাবী করা হয়েছে। তাহলে ৬০ হাত লম্বা একজন মানুষের পায়ের ছাপ অানুপাতিক হারের ব্যবধান সঠিক আছে কিনা সে ব্যাপারে কোন তথ্য আছে কিনা?

যাক সুন্দর প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ।
২৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৩
288476
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : নজরুল ভাই সচেতনতামুলক প্রশ্নর জন্য অনেক ধন্যবাদ কিন্তু যতটুকু পাওয়া গেছে ততটুকুই প্রকাশ হয়েছে
347462
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:১৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : সত্য মিথ্যা যাই হোক, তবে অনেক কিছু জানলাম। ভালো লাগলো। ধন্যবাদ
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৩০
288495
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Good Luck
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৩৩
288496
আবু জান্নাত লিখেছেন : হাসতেছেন কেন? Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৫২
288497
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সত্যমিথ্যার কথা শুনে
আমরা ইতিহাসের অনেক কথা , বিজ্ঞানের অনেক কথা এ্মনিই গ্রহন করতে অভ্যস্ত তো তাই
347541
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:০১
আফরা লিখেছেন : আমাদের এখানে এক ধরনের আপেল গাছ আছে ঠিক আমাদের দেশের বড়ই এর মত ছোট ছোট এটা নাকি আদম আপেল বলে এটা কেউ খায় না ।এটাই নাকি সেই গন্ধম ফল ।
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:১৯
288551
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপু
এটা কি কানাডায় ? না আপনার দেশের বাড়ী
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:২২
288553
আফরা লিখেছেন : জী না ভাইয়া আমাদের দেশের বাড়ি না আর আমি কানাডার কথাও জানি না । আমি স্কান্ডিনিভিয়ার কথা বলেছি ভাইয়া ।
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৩৯
288556
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপু আমি মনে হচ্ছে বোকা বনে গেলাম
স্কান্ডিনিভিয়ার নামটি ! কোন মহাদেেশের দেশ প্লিচ
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:২০
288559
আফরা লিখেছেন : উত্তর ইউরোপের ৫টি দেশ মিলে হল স্কান্ডিনিভিয়া । ডানমার্ক, নরওয়ে ,সুইডেন ,ফিনল্যান্ড ও আইচল্যান্ড । আমি ডানমার্ক আছি ভাইয়া ।
২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:৩০
288560
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : thanks
347654
২৯ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৫২
দ্য স্লেভ লিখেছেন : দারুন লাগল। ওটাা কার পা তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে হযরত আদমের শরীরের মাপ ছিল সম্ভববত ৪০ গজ বা ৬০ হাত.....
২৯ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:০১
288673
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File