বিগব্যাং মতবাদ অনুসারে মহাবিশ্ব সৃষ্টি রহস্য :-কাল্পনিক না বাস্তবিক যাচাই করার কোন হেকমত নাই ( ইনসাইক্লোপেডিয়া)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:৩৭:১৭ সন্ধ্যা



আদিতে মহাকাশের বস্তুপুঞ্জ বিক্ষিপ্তাকারে ছড়ানো ছিল। অবশ্য এই আদি বস্তুপুঞ্জ কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এগুলোর বিন্যাস কিরূপ ছিল, তার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা দিতে পারেন নাই। বিগব্যাং তত্ত্ব অনুসারে- প্রায় ১৫০০ কোটি বত্সর আগে এই সকল বিক্ষিপ্ত বস্তুগুলো আন্ত-আকর্ষণের কারণে পরস্পরের কাছে আসতে থাকে এবং ধীরে ধীরে একটি ডিমের আকার ধারণ করে। বিজ্ঞানীরা একে নামকরণ করেছেন মহাপরমাণু । উল্লেখ্য এই সময় কোন স্থান ও কালের অস্তিত্ব ছিল না। অসীম ঘনত্বের এই মহাপরমাণুর ভিতরে বস্তুপুঞ্জের ঘন সন্নিবেশের ফলে এর তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছিল- যে কোন পরিমাপ স্কেলের বিচারে ১০১৮ ডিগ্রী। বিগ ব্যাং-এর পরের ১ সেকেন্ডে যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল, তা কালানুক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো-



ধারণা করা হয় বিগব্যাং-এর ৩ সেকেণ্ড থেকে ১০০,০০০ বত্সরের মধ্যে সৃষ্ট কণাগুলো শীতল হয়ে উঠে। এই অবস্থায় বস্তুপুঞ্জে বিরাজমান ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন মিলিত হয়ে তৈরি হয় হাইড্রোজন ও হিলিয়াম পরমাণু। এ ছাড়া এই দুটি পদার্থের সাথে ছিল প্রচুর ইলেক্ট্রন প্লাজমা। সব মিলিয়ে যে বিপুল বস্তুকণার সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বিগ ব্যাং-এর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। এই সময় এই সকল কণিকাও ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমে ক্রমে এগুলো শীতল হতে থাকলো এবং এদের ভিতরের আন্তঃআকর্ষণের কারণে- কাছাকাছি চলে এসেছিল। ফলে বিপুল পরিমাণ বস্তুপুঞ্জ পৃথক পৃথক দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই পৃথক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পত্তন ঘটেছিল গ্যালাক্সি'র । আমাদের সৌরজগতও এরূপ একটি গ্যালাক্সির ভিতরে অবস্থান করছে। এই গ্যালাক্সির নাম ছায়াপথ (Milky Way)।

বিগ ব্যাং থেকে গ্যালাক্সি

এই বিগ ব্যাং-এর ৩ মিনিট থেকে ১০০,০০০ বৎসরের মধ্যে সৃষ্ট হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ছাড়াও ছিল বিপুল পরিমাণ ইলেক্ট্রন প্লাজমা। সব মিলিয়ে যে বিপুল বস্তুকণার সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বিগ ব্যাং-এর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। এই ছুটে চলার সময়, এই সকল উপকরণ কোথাও কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে, কোথাও ঘন মেঘের আস্তরণ তৈরি হচ্ছিল। এরই মাঝে প্রায়ই ছুটে চলা বস্ত পুঞ্জের ভিতর ঘটে চলেছে সংঘাত বা সম্মিলিন। এই সময় এই সকল কণিকাও ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমে ক্রমে এগুলো শীতল হতে থাকলো এবং এদের ভিতরের আন্তঃআকর্ষণের কারণে- কাছাকাছি চলে এসেছিল। ফলে বিপুল পরিমাণ বস্তু পুঞ্জ পৃথক পৃথক দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই পৃথক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পত্তন ঘটেছিল গ্যালাক্সি'র । মহাকাশে বিভিন্ন আকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের গ্যালাক্সি দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের সৌরজগতও এরূপ একটি গ্যালাক্সির ভিতরে অবস্থান করছে। এই গ্যালাক্সির নাম- ছায়াপথ (Milky Way)।

প্রতিটি গ্যালাক্সিতে রয়েছে অসংখ্য মহাকাশীয় উপকরণ। এর মধ্যে শুধু মাত্র বড় বড় নক্ষত্রই রয়েছে কয়েক শত কোটি। যেমন- আমাদের ছায়াপথ নামক গ্যালাক্সিতে রয়েছে প্রায় ৪০০,০০০,০০০,০০০ তারা রয়েছে। এরূপ অসংখ্য নক্ষত্রের মধ্যে আমাদের সূর্যও একটি। বিজ্ঞানীরা মতে, আমাদের এই ছায়াপথ প্রাথমিক রূপ লাভ করেছিল ১৫০০ থেকে বছর আগে। এটি একটি সর্পিলাকার শ্রেণীর ও নির্দিষ্ট আকৃতির গ্যালাক্সি। আড়াআড়িভাবে এই গ্যালাক্সির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব ১০০,০০০ আলোকবর্ষ। কিন্তু পুরুত্বের বিচারে এই দূরত্ব ৩০০ আলোকবর্ষ।

বিগব্যাং-এর সময় যে প্রচুর পরিমাণে তৈরিকৃত হাইড্রোজেন গ্যাস এবং মহাকাশীয় ধূলিকণার তৈরি হয়েছিল, তারই একটি অংশের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল আমাদের সূর্য। ছায়াপথের একটি প্রান্তে এই মহাজাগতিক বস্তুর মহাসমাবেশ যখন বেশ ঘনতর হয়ে উঠেছিল, তখনই এর কাছে কোন সুপারনোভার বিস্ফোরণ হয়েছিল। এই বিস্ফোরণ থেকে উৎপন্ন শকওয়েভ এই সকল উপকরণের ঘনত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণ। এর ফলে এই সকল কণার ভিতরে অস্বাভাবিক পরিমাণে মহাকর্ষ বলের বৃদ্ধি ঘটেছিল। স্থানীয় বস্তুপুঞ্জের ভিতর মহাকর্ষ বলের বৃদ্ধির কারণে, বস্তুপুঞ্জ সংকোচনের মাত্রায় চলে যায়। এক্ষেত্রে অনিবার্যভাবে বস্তু পুঞ্জের সংকোচনকালে বস্তুকণাগুলোর পারস্পরিক সংঘর্ষে তাপ উত্পন্ন হয়েছিল বিপুল পরিমাণ। সংকোচনের শুরুতে মেঘ রাশির তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী কেলভিন থাকলেও- ক্রমান্বয়ে বেড়ে তা ১০০০ ডিগ্রী কেলভিনে পরিণত হয়। কিন্তু কেন্দ্রের ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা যখন ৫০ হাজার ডিগ্রী তাপমাত্রায় পৌঁছালো তখন হাইড্রোজেন ও অল্প কিছু হিলিয়াম কণার মধ্যে তীব্র সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে পরমাণুগুলোর ইলেক্ট্রনগুলো নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে সৃষ্ট ইলেক্ট্রন ও নিউক্লিয়াসের গ্যাস জমে উঠতে থাকলো। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে সূর্যের ভ্রূণ জন্মলাভ করেছিল।

সূর্যের মতো সকল নক্ষত্রের ভ্রূণ বিকশিত হওয়ার সময় যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তার প্রায় অর্ধাংশই মহাকাশে বিকরিত হয়, অন্য অংশ কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার উপযোগী তাপমাত্রায় উন্নীত হয়। কেন্দ্রের তাপমাত্রা এক কোটি ডিগ্রী কেলভিনে উন্নীত হলে- এর প্রোটন কণা প্রচণ্ড গতিময় হয়ে উঠে এবং বৈদ্যুতিক বাধাকে অগ্রাহ্য করে নিউক্লিয় বলের অধীনে চলে যায়। এই পর্যায়ে হাইড্রোজেন সংযোজিত হয়ে হিলিয়ামে পরিণত হতে থাকে। এইভাবে সূর্য বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়ামে পরিণত হওয়ার সময় তাপ ও আলো বিকিরণ করা শুরু করে। উল্লেখ্য সূর্য প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ৪০ কোটি টন হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে পরিণত করার মধ্য দিয়ে তাপ ও আলো বিকিরণ করে চলেছে। মহাজাগতিক মেঘ সংকুচিত হয়ে সূর্য তৈরি হতে সময় লেগেছিল ৩ কোটি বৎসর। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৫০০ কোটি বছরের মধ্যে সূর্য তার সকল জ্বালানী শেষ করে একটি লাল বামন তারায় রূপ নেবে।

সূর্য তৈরির সময় যে মহাজাগতিক গ্যাসীয় অংশ সূর্যকে ঘিরে ছিল। বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন-accretion disk। সূর্য সৃষ্টির সময় এই উত্তপ্ত গ্যাসীয় অংশ বাইরের দিকে আগুনে গোল্লা হয়ে ছুটে যেতে লাগলো। কিন্তু এর বাধ সাধলো সূর্য নিজেই। ছিটকে যাওয়া আগুনে গোলাগুলোকে নিজ কেন্দ্রের দিকে টেনে আনতে চাইলো। কিন্তু সবগুলোকে আনতে পারলো না। যেগুলোকে টেনে আনতে সক্ষম হলো- তার কিছু কিছু সূর্যের ভিতরে ঢুকে গেলো বটে, কিন্তু বড় বড় অনেক গোল্লাকেই ভিতরের দিকে আনতে সক্ষম হলো না। ফলে বিষয়টা হলো- দড়ি বাঁধা গোলক ঘোরানোর মতো। অর্থাৎ কেউ যদি একটি ভারী বলের সাথে দড়ি বেঁধে ঘুরানোর চেষ্টা করেন, তা হলে বলটি চারপাশে শূন্যের ভিতর দিয়ে ঘুরতে থাকবে। কারণ, বল তার ভরবেগ নিয়ে বাইরের দিকে ছুটে যেতে চাইবে, কিন্তু দড়ি তাকে আপনার দিকে টানবে। ফলে বলটি আপোষ করে চারপাশে ঘুরতে থাকবে। এক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটতে থাকলো। আগুনে গোলাগুলো বাইরের দিকে ছুটে যেতে ইচ্ছা করলেও সূর্যের মহাকর্ষীয় অদৃশ্য দড়ি তাদেরকে টেনে ধরে রাখলো। কিন্তু আমাদের খেলার দড়ির মতো এই আকর্ষণের দড়ি কঠিন পদার্থের তৈরি নয়। তাই আর্কষণের নমনীয় টানে এই আগুনে গোলকগুলো কখনো সূর্য থেকে দূরে চলে যেতে থাকলো, কখনো বা বেশ কাছে চলে এলো। ফলে তৈরি হলো উপবৃত্তকার কক্ষপথ। কিন্তু সূর্যের আকর্ষণ অগ্রাহ্য করে তা কখনোই মহাশূন্যে হারিয়ে গেলো না বা সূর্যের আকর্ষণে ভিতরে ঢুকে গেলো না। এই ভাবে তৈরি হয়ে গেলো সৌরজগতের গ্রহগুলো।

গোড়ার দিকে গ্রহগুলো সুনির্দিষ্ট কক্ষ পথ খুজে পায় নি। তাই এদের বার্ষিক গতি বা কালের অনিয়ম ছিল। ফলে এই গ্রহগুলো পরস্পরের সাথে ঠোক্কর খেতো। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই জাতীয় ঠোক্কর থেকেই তৈরি হয়েছিল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। এই ধাক্কাধক্কির ঠেলায় অনেক আদি গ্রহই হারিয়ে গিয়েছে। শেষপর্যন্ত গ্রহদের আত্মকলহ শেষে টিকে রইলো বর্তমান সৌরজগতের সদস্যরা।

বিষয়: বিবিধ

১৬২৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346551
২০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৯
শেখের পোলা লিখেছেন : বেশী চিন্তা করলে মাথা ঘুরে যায়৷ তাই স্রেফ বিশ্বাস করি আর কোরআন সাক্ষী দিচ্ছে৷ধন্যবাদ৷
২০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১১
287628
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ঠিক বলেছেন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
346775
২২ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:১২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : হাসান ইবনে সাব্বাহ (রঃ)..আনাস বিন মালিক (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,(কিয়ামতের আলামত হল) লোকেরা পরস্পরে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, আল্লাহ যদি সবকিছুরই স্রষ্টা হন, তবে তার সৃষ্টিকর্তা কে? (বুখারী: ৬৭৯৮, ১০ম খন্ড)
তারা কোরানের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করবেনা এবং অতীতে তাদের পূর্ববর্তীগণেরও আচরণ এরূপই ছিল। যদি তাদের জন্য আকাশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে তাকে, তবুও তারা বলবে,আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে, না, বরং আমরা জাদুগ্রস্হ হয়ে পরেছি। (সুরা হিজর, আয়াত:১৩,১৪,১৫)
কাজেই এদের আপনি কোন নিদর্শনই দেখাতে পারবেননা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File