খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বাংলাদেশের ইতিহাস
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:০১:১৯ দুপুর
বঙ্গ বা বাঙলা নামের ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের অনেকে মনে করেন, বঙ্গ শব্দটির তিব্বতি ভাষা থেকে আগত। ভোটাচীন বা তিব্বতি ভাষায় Bans-Po বা Bons (বঙস) শব্দের অর্থ হলো আর্দ্র বা স্যাঁতস্যাঁতে স্থান বা জলাভূমি। বনজঙ্গলে আচ্ছন্ন নিম্ন পলিময় আর্দ্র এই অঞ্চলকে বঙস বলতো। পরবর্তী সময়ে বঙস থেকে বঙ্গ শব্দটি গৃহীত হয়েছে। তবে এই ধারণা অনুমান মাত্র।
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তাঁর বাঙ্গালা ভাষার অভিধান- মতে, বর্তমানে যাকে পূর্ববঙ্গই বলা হয়, প্রাচীনকালে তার নাম ছিল বঙ্গ। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ ছিল গৌড় বা রাঢ়। সংস্কৃতিতে পূর্ব ও মধ্যবঙ্গকে বঙ্গ বলা হতো। খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে উৎকীর্ণ এবং তাঞ্জোর হতে আবিষ্কৃত একটি প্রশস্তিমালায় 'বঙ্গলম' শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এই বঙ্গলম শব্দটি হতে আরবি ও ফার্সিতে 'বাঙ্গালা' শব্দটি প্রবেশ করেছিল। মোগল সম্রাট আকবরের প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল-এর মতে, এই অঞ্চল পূর্বে আল দ্বারা বেষ্টিত ভূমি ছিল। কথিত আছে প্রাচীনকালে এই অঞ্চলের এখানকার রাজারা ১০ গজ উঁচু ও ২০ গজ চওড়া ‘আল’ নির্মাণ করতেন। এই আল থেকে ‘বাঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি। কিন্তু একথা আধুনিক ঐতিহাসিকরা মানেন না। কারণ খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতক বা তারও আগে উৎকীর্ণ শিলা ও তাম্রলিপি, প্রাচীন গ্রন্থাদি ও ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদিতে 'বঙ্গ' ও 'বঙ্গাল' শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই বঙ্গদেশের নামের সঙ্গে ‘আল’ যুক্ত করে অথবা অন্য কোনো কারণে ‘বঙ্গাল’ নামের উদ্ভব হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না। মোগলদের দেয়া সুবা-বাংলা নামের অনুকরণে পর্তুগিজরা বাংলাদেশকে ‘বেঙ্গলা’ নামে অভিহিত করত। পরবর্তীকালে এই বাংলাভাষাভাষী অঞ্চল ব্রিটিশ অধিকারে আসার পর ইংরেজরা এই দেশকে ‘বেঙ্গল’ নামে পরিচিত করে। তবে একথা মানতেই হবে যে, প্রাচীনকালে ‘বাংলা’ নামে কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ভৌগোলিক এলাকা ছিল না। মূলত বঙ্গ শব্দের অপভ্রংশই হলো বাংলা।
বঙ্গদেশের বিকাশ
গুপ্তযুগের পূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন গ্রন্থে যে সকল বিচ্ছিন্নভাবে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়, তা থেকে বিশেষ কিছু জানা যায় না। যেমন মহাভারতের দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা, কর্ণের কয়েকটি অভিযান থেকে বঙ্গের কতিপয় রাজা ও জনপদের নাম পাওয়া যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, মহাভারতের যুগে বঙ্গদেশে একাধিক রাজ্যে বিভাজিত ছিল। অসংখ্য নদনদী এবং বনজঙ্গলে আচ্ছন্ন এই কোনো একক বড় রাজ্য গড়ে উঠেনি। ছোটো জনগোষ্ঠী নিয়ে ছোট ছোট রাজ্য গড়ে উঠেছিল। বৃহৎ রাজ্য গড়ে তোলার জন্য কোনো স্থানীয় রাজা বড় ধরনের উদ্যোগও গ্রহণ করেন নি, প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার জন্য। প্রাচীনকালের মূল যোগাযোগ ব্যবস্থাও গড়ে উঠেছিল নদী পথের সূত্রে।
উয়ারী-বটেশ্বর'-এ প্রাপ্ত রৌপ্যমুদ্রা ও পাতিল
এর পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী রাজারা একালের বঙ্গদেশে (অখণ্ড বাংলা) এক সময় রাজত্ব করতো তার নমুনা পাওয়া যায় প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারগুলোর সূত্রে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা অনুসারে 'উয়ারী-বটেশ্বর' নমুনাকেই প্রাচীনতম নমুনা হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উয়ারী-বটেশ্বর সভ্যতা
বাংলাদেশের রাজাধানী ঢাকা থেকে ৭০-৭৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর জেলার বেলাব উপজেলায় অবস্থিত দুটি গ্রামের নাম উয়ারী ও বটেশ্বর। এই দুটি প্রাচীন গ্রামে প্রাপ্ত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনার বিচারে, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন হিসাবে উয়ারী-বটেশ্বরকে উল্লেখ করা হয়। কার্বন-১৪ পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ পাওয়া গেছে, এই অঞ্চলের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে।বঙ্গ বা বাঙলা নামের ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের অনেকে মনে করেন, বঙ্গ শব্দটির তিব্বতি ভাষা থেকে আগত। ভোটাচীন বা তিব্বতি ভাষায় Bans-Po বা Bons (বঙস) শব্দের অর্থ হলো আর্দ্র বা স্যাঁতস্যাঁতে স্থান বা জলাভূমি। বনজঙ্গলে আচ্ছন্ন নিম্ন পলিময় আর্দ্র এই অঞ্চলকে বঙস বলতো। পরবর্তী সময়ে বঙস থেকে বঙ্গ শব্দটি গৃহীত হয়েছে। তবে এই ধারণা অনুমান মাত্র।
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস তাঁর বাঙ্গালা ভাষার অভিধান- মতে, বর্তমানে যাকে পূর্ববঙ্গই বলা হয়, প্রাচীনকালে তার নাম ছিল বঙ্গ। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ ছিল গৌড় বা রাঢ়। সংস্কৃতিতে পূর্ব ও মধ্যবঙ্গকে বঙ্গ বলা হতো। খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে উৎকীর্ণ এবং তাঞ্জোর হতে আবিষ্কৃত একটি প্রশস্তিমালায় 'বঙ্গলম' শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এই বঙ্গলম শব্দটি হতে আরবি ও ফার্সিতে 'বাঙ্গালা' শব্দটি প্রবেশ করেছিল। মোগল সম্রাট আকবরের প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল-এর মতে, এই অঞ্চল পূর্বে আল দ্বারা বেষ্টিত ভূমি ছিল। কথিত আছে প্রাচীনকালে এই অঞ্চলের এখানকার রাজারা ১০ গজ উঁচু ও ২০ গজ চওড়া ‘আল’ নির্মাণ করতেন। এই আল থেকে ‘বাঙ্গালা’ নামের উৎপত্তি। কিন্তু একথা আধুনিক ঐতিহাসিকরা মানেন না। কারণ খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতক বা তারও আগে উৎকীর্ণ শিলা ও তাম্রলিপি, প্রাচীন গ্রন্থাদি ও ভ্রমণ কাহিনী ইত্যাদিতে 'বঙ্গ' ও 'বঙ্গাল' শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই বঙ্গদেশের নামের সঙ্গে ‘আল’ যুক্ত করে অথবা অন্য কোনো কারণে ‘বঙ্গাল’ নামের উদ্ভব হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না। মোগলদের দেয়া সুবা-বাংলা নামের অনুকরণে পর্তুগিজরা বাংলাদেশকে ‘বেঙ্গলা’ নামে অভিহিত করত। পরবর্তীকালে এই বাংলাভাষাভাষী অঞ্চল ব্রিটিশ অধিকারে আসার পর ইংরেজরা এই দেশকে ‘বেঙ্গল’ নামে পরিচিত করে। তবে একথা মানতেই হবে যে, প্রাচীনকালে ‘বাংলা’ নামে কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ভৌগোলিক এলাকা ছিল না। মূলত বঙ্গ শব্দের অপভ্রংশই হলো বাংলা।
বঙ্গদেশের বিকাশ
গুপ্তযুগের পূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন গ্রন্থে যে সকল বিচ্ছিন্নভাবে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়, তা থেকে বিশেষ কিছু জানা যায় না। যেমন মহাভারতের দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা, কর্ণের কয়েকটি অভিযান থেকে বঙ্গের কতিপয় রাজা ও জনপদের নাম পাওয়া যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, মহাভারতের যুগে বঙ্গদেশে একাধিক রাজ্যে বিভাজিত ছিল। অসংখ্য নদনদী এবং বনজঙ্গলে আচ্ছন্ন এই কোনো একক বড় রাজ্য গড়ে উঠেনি। ছোটো জনগোষ্ঠী নিয়ে ছোট ছোট রাজ্য গড়ে উঠেছিল। বৃহৎ রাজ্য গড়ে তোলার জন্য কোনো স্থানীয় রাজা বড় ধরনের উদ্যোগও গ্রহণ করেন নি, প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতার জন্য। প্রাচীনকালের মূল যোগাযোগ ব্যবস্থাও গড়ে উঠেছিল নদী পথের সূত্রে।
উয়ারী-বটেশ্বর'-এ প্রাপ্ত রৌপ্যমুদ্রা ও পাতিল
এর পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী রাজারা একালের বঙ্গদেশে (অখণ্ড বাংলা) এক সময় রাজত্ব করতো তার নমুনা পাওয়া যায় প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারগুলোর সূত্রে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা অনুসারে 'উয়ারী-বটেশ্বর' নমুনাকেই প্রাচীনতম নমুনা হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উয়ারী-বটেশ্বর সভ্যতা
বাংলাদেশের রাজাধানী ঢাকা থেকে ৭০-৭৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর জেলার বেলাব উপজেলায় অবস্থিত দুটি গ্রামের নাম উয়ারী ও বটেশ্বর। এই দুটি প্রাচীন গ্রামে প্রাপ্ত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনার বিচারে, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন হিসাবে উয়ারী-বটেশ্বরকে উল্লেখ করা হয়। কার্বন-১৪ পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ পাওয়া গেছে, এই অঞ্চলের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন