ভালোবাসার মানুষটির জন্য এভাবেই নীরবে কাজ করে চলেছেন হালিমা

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ১৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:২৮:৪৩ বিকাল



ভালোবাসা প্রতিদিন ভোরে উঠে স্বামীকে নামাজ পড়ার জন্য অজু করান। সকালের নাশতা খাওয়ানো। দুপুরে গোসল করানো। কাপড় পরানো আর রাতে তাকে পিঠে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ানো। সবই করেন তিনি হাসিমুখে।

নয় বছর ধরে ভালোবাসার মানুষটির জন্য এভাবেই নীরবে কাজ করে চলেছেন হালিমা বেগম (৫১)।

তার বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ীর দক্ষিণ রানীগাঁও গ্রামে।

৩৬ বছর আগে আমজাদ আলীর (৫৯) সঙ্গে বিয়ে হয় হালিমার। হালিমা অন্যের বাড়িতে ও আমজাদ দিনমজুরি করতেন। জমানো টাকায় তারা ৩০ শতক আবাদি জমি কেনেন। পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের ঘর আলো করে আসে দুটি সন্তান।

২০০৫ সালে আমজাদের ডান পায়ের আঙুলে ছোট্ট একটি ফোড়া ওঠে। চিকিৎসকের পরামর্শে কেটে ফেলতে হয় আঙুলটি। চিকিৎসক জানান, এটি বারজার রোগ। এ রোগে এক বছরের মধ্যে পা কোমর পর্যন্ত কাটতে হয়। তখন এক পায়ের ওপর ভর করে কিছুটা চলতে-ফিরতে পারতেন। চার বছরের ব্যবধানে একই রোগে বাম পাও কেটে ফেলতে হয়।

সম্প্রতি ওই দম্পতির বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, ৬ শতক জমির ওপর ছোট্ট টিনের ঘরে এ দুজন বাস করেন। উঠানে রোদের মধ্যে বসে স্বামী-স্ত্রী মিলে ছেঁড়া মশারি সেলাইয়ের কাজ করছেন। হালিমা খাতুন জানান, তার স্বামীর পায়ে চারবার অস্ত্রোপচার করতে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

শেষ সম্বল জমিটুকু বন্ধক দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। স্বামীর দুটি পা কেটে ফেলায় সারাক্ষণ ঘরে থাকতে হতো। তাই স্বামীকে একা রেখে অন্যের বাড়িতে কাজ করা সম্ভব ছিল না। ২০০৯ সালে কাজের সন্ধানে তারা ঢাকায় চলে যান। আমজাদ আলী ভিক্ষাবৃত্তি আর তিনি গার্মেন্টসে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেন। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে হালিমার অসুখ হলে তারা দুজনই গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। ঢাকা থেকে ফিরেই বন্ধক দেয়া জমিটুকু ছাড়িয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে ছেলে হাফিজুর (৩৩) ঢাকায় রিকশা চালান। মেয়ে আঞ্জুয়ারা বেগমের (৩০) বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামে।

সন্তানেরা সহযোগিতা করেন কি না, জানতে চাইলে আমজাদ আলী বলেন, ‘তাদেরই ঠিকমতো সংসার চলে না, আমগরে দিব কেমনে?

তবে অসুখ-বিসুখের কথা শুনলে মেয়েডা ছুইটা আসে।’ এই অসহায় জীবনে স্ত্রী কখনো অবহেলা বা বিরক্তবোধ করেছেন কি না, জানতে চাইলে ছলছল নয়নে আমজাদ আলী বলেন, ‘ইচ্ছা করলে ও আমারে ফালাইয়া যাইবার পাইরত।

অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় যখন পইড়া থাকতাম, প্রচন্ড অস্থির লাগত। ঘুম অইত না। লোকজনের আড়ালে রাইতে ও আমারে পিঠে লইয়া গ্রামের সড়কে সড়কে ঘুরত। ও না থাকলে বাঁইচা থাহাডাই কঠিন অইত।’ স্ত্রীর জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আবাদি জমিটুকু ওর নামে কিনছিলাম। আর বাকি যা দেওনের সবকিছু ও আমারে দিছে।’

আমজাদ আলীর সঙ্গে আলাপের সময় হালিমা বেগম পাশে বসে বারবার সুইয়ে সুতা লাগানোর চেষ্টা করছিলেন।

জানতে চাইলে বললেন, ‘কষ্টরে অহন কষ্ট মনে অয় না। বাকি জীবনটা এই পঙ্গু মানুষটার সেবা কইরা যাইবার চাই।’

প্রতিবেশী হারুন-অর-রশিদ জানান, একজন স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি কতটা ভালোবাসা, দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণ হতে পারেন, হালিমাকে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।

বিষয়: বিবিধ

১০১৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345534
১৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৯
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ হালিমাকে কবুল করুন৷ তাদের বেঁচে থাকার মত উপকরণ দিয়ে আল্লাহ তাদের সঠিক পথে বহাল রাখুন৷
১৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৫
286667
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আমিন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
345535
১৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫২
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : এমন একটি হালিমা যদি আমার কপালে জুটত সরাসরি বিয়ে করে ফেলতাম। দুঃখের বিষয় এই যুগে হালিমা পাওয়া দুষ্কর।
১৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৬
286668
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : হুম
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
345543
১৩ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩১
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৩ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫২
286688
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
345572
১৩ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:০২
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ।
১৩ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:১২
286712
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ
345625
১৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৯:১২
হতভাগা লিখেছেন : রিজিকের মালিক আল্লাহ । উনি তার বান্দাকে চালিয়ে নেবেনই ।

হালিমার মত এরকম জীবন সঙ্গিনী থাকলে সব সংসারেই জান্নাতের হাওয়া বইতো ।

(কোন মহিলা ব্লগার পারতে এই পোস্টে নিজস্ব কমেন্ট করতে আসবে না )
১৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:০২
286788
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : good comment

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File