মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামীলীগ নেতাদের ক-ুকীর্তির দালিলিক প্রমান , ইতিহাসের পাতা থেকে ( পর্ব -০৩)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ০৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৩৭:১৬ দুপুর



ভারতের টেন্ডুয়ায় প্রায় দশ হাজার যুবকে মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, মুজিবের অনুপস্থিতিতে এ বাহিনীর সদস্যদের শেখ মনির প্রতি আনুগত্যের শপথ পড়ানো হতো।

মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং, অস্ত্র এমনকি খাবারের যখন ছিল অভাব, তখন মুজিব বাহনীর অস্ত্র, টেনিং ও সুযোগসুবিধা ছিল উন্নতমানের।

নিরন্তর মুজিব বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের আনুগত্য পরিবর্তন করে তাদের বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে, কোথাও কোথাও অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে এবং এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কিছু কিছু সংঘর্ষও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অবশ্য গোড়া থেকেই ‘মুজিব বাহিনী’ প্রবাসী সরকার গঠনের তীব্র বিরোধিতা করে এসেছে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে এসেছে যে, তারা এ সরকারকে স্বীকার করে না (মূলধারা ৭১)।

শেখ মনি কেবল মুজিব বাহিনী বানিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না, বরং নিজের সম্পাদিত পত্রিকা সাপ্তাহিক ’বাংলার বাণী’তে মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্ব হাইজ্যাক করে মুজিব বাহিনীর নামে খবর ছাপেন। এ ধরনের প্রোপাগান্ডায় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধনায়ক জেনারেল ওসমানী রুষ্ট হয়ে মুজিব বাহিনীর তৎপরতা বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনকে অনুরোধ করেন, অন্যথায় তিনি নিজেই পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছিলেন (মঈদুল হাসান)। যুদ্ধের মাঝামাঝি পর্বে মুক্তিযুদ্ধকে ‘জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে’ রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা লাভ ও বিজয় ত্বরান্বিত করতে প্রবাসী সরকার যখন পাঁচটি দলকে নিয়ে “জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি” গঠনে চেষ্টারত, তখন মুজিব বাহিনী ছিল প্রবাসী সরকার ভেঙ্গে দিয়ে যুব কমান্ডের কাছে কতৃত্ব আনয়নের লক্ষে উপদলীয় সংগ্রামে রত। শেখ মনির ‘মুজিব বাহিনী’ ছাড়াও খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ফরিদপুরের ৪০ জন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে লিখিত অনাস্থা ঘোষণা করেন, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মণির নিকটাত্মীয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং শেখ আবদুল আজিজ। মূলত, প্রবাসী সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগ মহলে তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণা শুরু হয় শেখ মনির নেতৃত্বে, এমনকি তাজউদ্দীনকে প্রাণনাশের চেষ্টাও করা হয়। এসময় তারা প্রচার করতে থাকে ‘তাজউদ্দীনই বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার হওয়ার কারণ’,‘তাজউদ্দীন যতদিন প্রধানমন্ত্রী, ততদিন ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের স্বীকৃতিদান অসম্ভব’, ‘তাজউদ্দীন ও মন্ত্রিসভা যতদিন ক্ষমতায় আসীন ততদিন বাংলাদেশের মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়’ (২১ ও ২৭শে অক্টোবর আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির সভায় আবদুল মমিন তালুকদার, শামসুল হক, নুরুল হক, আবদুল মালেক উকিল ও আবদুল হান্নান প্রমুখ)। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের জন্য কোনো সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই, ভারতের সাথে এমন একটি গোপন চুক্তির প্রেক্ষিতে এই মুজিব বাহিনী হতেই পরবর্তীকালে গঠন হয় মুজিবের কুখ্যাত ’রক্ষী বাহিনী’, যাদের হাতে নিহত হয়েছিল হাজার হাজার যুবক।



একদিকে রণাঙ্গনে যখন চলছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ, তখন অপরদিকে ভারতে আশ্রয় নেয়া আওয়ামীলীগের আরেকদল নেতৃবর্গ মুজিব-ইয়াহিয়ার মার্চ-এর আলোচনার সূত্র ধরে ”পাকিস্তান কনফেডারেশন” প্রস্তাবের ভিত্তিতে গোপনে সমঝোতার আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে। আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা আবদুল মালেক উকিল অলি আহাদকে জানান যে, তিনি এই আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে আশাবাদী (জাতীয় রাজনীতি, পৃষ্ঠা ৪২৪)। যুদ্ধের মাঝামাঝি পর্বে ৭ই আগস্ট ইয়াহিয়ার সরকার শেখ মুজিব সহ আওয়ামী লীগের ৭৯ জনের নাম জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ বাতিল করে (ঞযব ঞরসবং, ১১ ঙপঃড়নবৎ ১৯৭১), কিন্তু পরবর্তীতে লায়ালপুর কোর্টের ট্রায়াল ও মার্কিন কূটনীতির প্রভাবে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্যদের পূর্ববর্তী তালিকা ১০ই অক্টোবরে কিঞ্চিত পরিবর্তিত হয়, যাতে শেখ মুজিবের জাতীয় পরিষদ সদস্যপদ বহাল থাকে (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঐবৎধষফ ঞৎরনঁহব, ১ ঘড়াবসনবৎ ১৯৭১), এমনকি শেখ মুজিবের পরিবারে জন্য ইয়াহিয়া সরকার মাসিক ১৫০০ রুপী (যার বর্তমান মূল্যমান ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা) ভাতা চালু থাকে (অলি আহাদ, জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-৭৫)। এ ছাড়া আওয়ামীলীগ দলীয় ৮৮ জন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যকে পিন্ডি থেকে বৈধ বলে আলাদা গেজেট জারী ইয়াহিয়ার সরকার। অর্থাৎ মুজিব এবং ৮৭ জন আওয়ামীলীগ সদস্য পাকিস্তানের জন্য নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত! খবরে বলা হয়, বাকীদেরও পরিস্কার হওয়ার সুযোগ ছিল। বিষয়টি রহস্যজনক বৈ কি!

বিষয়: বিবিধ

১২২৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345044
০৮ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সত্য বা রহস্য বলতে কিছু নাই। সব চেতনা!!
০৮ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৩
286286
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
345059
০৮ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : এসব পড়লে মাথাটা আওলায়া যায় শুধু মনে হয় স্বাধীনতার মালিকানা দাবীদার দলটির সবই যেনো মিথ্যা আর হটকারিতায় ভরপুর...আল্লাহই ভালো জানেন ইতিহাসের সত্যতা। অনেক ধন্যবাদ
০৮ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৭
286293
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File