বৃদ্ধাশ্রম যেন না হয় বাবা-মার শেষ আশ্রয় - আমাদের সবাইর সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ০৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:০৯:২২ বিকাল



আজ যারা বৃদ্ধ তারা নিজেদের জীবনের সবটুকু সময়, ধনসম্পদ বিনিয়োগ করেছিলেন সন্তানের জন্য, নিজের জন্য রাখেননি কিছুই।

কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের কাছ থেকে এর একটি ক্ষুদ্র অংশও তারা পাচ্ছেন না।

কখনো দেখা যায়, সন্তান তার নিজের পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই বাবা-মাকে মনে করছে বোঝা।

নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য বাবা-মার ঠাঁই করে দিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে।

আবার এমনো দেখা যায়, সন্তানের টাকা-পয়সার অভাব নেই, কিন্তু বাবা-মাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করছে না, বা বোঝা মনে করছে। হয় নিজেই পাঠিয়ে দিচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে, নয়তো অবহেলা ও দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছে- যেন তাদের বাবা-মা নিজেরাই সরে যান তার সাধের পরিবার থেকে।

আমার জানা মতে, পৃথিবীর প্রথম বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রাচীন চীনে। ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের এই উদ্যোগ ছিল শান রাজবংশের।

খ্রিষ্টপূর্ব ২২০০ শতকে পরিবার থেকে বিতাড়িত বৃদ্ধদের জন্য আলাদা এই আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে ইতিহাসে আলাদা জায়গাই দখল করে নিয়েছে এই শান রাজবংশ।

পৃথিবীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত সেই বৃদ্ধাশ্রমে ছিল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আরাম-আয়েশের সব রকম ব্যবস্থাই। ছিল খাদ্য ও বিনোদনব্যবস্থা।কিন্তু এখন বিষয়টি এমন হয়েছে যে, একবার বাবা-মাকে বৃদ্ধনিবাসে পাঠাতে পারলেই যেন সব দায়মুক্তি।

এভাবে নানা অজুহাতে বাবা-মাকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

অনেক নামী-দামি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক, চাকরিজীবী যারা একসময় খুব বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের সন্তানের দ্বারাই অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন।

অনেক সন্তান বা আত্মীয়স্বজন আর তাদের কোনো খবরও নেন না। তাদের দেখতে আসেন না, এমনকি প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা বা জিনিসপত্রও পাঠান না।

বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানে বা ঈদের আনন্দের সময়ও বাবা-মাকে বাড়িতে নেন না। এমনো শোনা যায়, অনেকে বাবা-মার মৃত্যুশয্যায় বা মারা যাওয়ার পরও শেষবার দেখতে যান না।

বৃদ্ধাশ্রম অবহেলিত বৃদ্ধদের জন্য শেষ আশ্রয়। তাদের সারা জীবনের অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি, শেষ সময়ের সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়া হয় এসব বৃদ্ধাশ্রমে। এখানে তারা নির্ভাবনায়, সম্মানের সাথে, আনন্দের সাথে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারেন। প্রয়োজনে অনেক বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসারও সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে।

কিন্তু সব প্রাপ্তির মাঝেও এখানে যা পাওয়া যায় না, তা হলো নিজের পরিবারের সান্নিধ্য।

বৃদ্ধ বয়সে মানুষ তার সন্তান, নাতি-নাতনীদের সাথে একত্রে থাকতে চান। তাদের সাথে জীবনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চান। সারা জীবনের কর্মব্যস্ত সময়ের পর অবসরে তাদের একমাত্র অবলম্বন এই আনন্দটুকুই। বলা যায় এর জন্যই মানুষ সমগ্র জীবন অপো করে থাকে।

বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া যায়, সঙ্গীসাথী পাওয়া যায়, বিনোদন পাওয়া যায়; কিন্তু শেষ জীবনের এই পরম আরাধ্য আনন্দটুকু পাওয়া যায় না- যার জন্য তারা এই সময়টাতে ভীষণ মানসিক যন্ত্রণা আর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন।যে বাবা-মা একসময় নিজে না খেয়েও সন্তানকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, তারা আজ কোথায় কেমন আছেন, সেই খবর নেয়ার সময় যার নেই তার নিজের সন্তানও হয়তো একদিন তার সাথে এমন আচরণই করবে।

বিভিন্ন উৎসবে, যেমন ঈদের দিনেও যখন তারা তাদের সন্তানদের কাছে পান না, সন্তানের কাছ থেকে একটি ফোনও পান না, তখন অনেকেই নীরবে অশ্রুপাত করেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।

আমাদের মনে রাখা উচিত- আজ যিনি সন্তান, তিনিই আগামী দিনের বাবা কিংবা মা।

বৃদ্ধ বয়সে এসে মা-বাবারা যেহেতু শিশুদের মতো কোমলমতি হয়ে যান, তাই তাদের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করাই সন্তানের কর্তব্য।

আর যেন কখনো কোনো বাবা-মার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয়, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের জন্য তৈরি করতে হবে একটা নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী।লেখক : নির্বাহী সদস্য, গুলশান হেলথ ক্লাব।

বিষয়: বিবিধ

১১১৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344194
০৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৪
সুমন আহমেদ লিখেছেন : মা-বাবা আমাদের জন্য আল্লাহর দেয়া সেরা উপহার ।
০৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৪:৪৭
285527
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সহমত
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
344204
০৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:১৭
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : নিজের সাধ্যমত মা বাবাকে সুখে রাখার চেষ্টা করি। কতটুকু পারছি আল্লাহই জানেন। Sad
০৩ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:১৯
285541
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : খুব ভাল কথা
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
344213
০৩ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : ভাইগো, আমরা ডজিটালের সিঁড়িতে পা দিয়েছি৷ অতএব, পুরা ডিজিটাল দেশ আমাদের আদর্শ৷সেখানে যুগ যুগ ধরে এ ব্যবস্থা চলে আসছে, তাই তারা এটাকেই স্বাভাবিক ভাবে নেয়৷ আমরা মুসলীম আমাদেশ শিক্ষা ভিন্ন৷ আমরা তাতেই সুখে শান্তিতে ছিলাম৷ কিন্তু আমরা অন্যের এ হেন হীনমন্যতাকে আদর্শ মেনে সেদিকেই চলেছি৷আসুন মুসলীম আদর্শেই থাকি,অন্যকে না বলি৷ধন্যবাদ৷
০৩ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৭
285545
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
344226
০৩ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমাদের মানসিকতা এখন এমনি আত্মকেন্দ্রিক যে পিতা-মাতাকে বোঝা বলে বিবেচনা করি।
০৩ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:২৩
285555
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
344234
০৩ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:০৬
সত্যের বিজয় লিখেছেন : সুন্দর লিখেছেন। মা শা আল্লাহ্ ! জাযাকাল্লাহ্
০৩ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:১৯
285557
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকেও প্রতিদান দিক আমিন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
344266
০৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:৫১
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:০৯
285639
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File