বাঙালি জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস , জানা থাকা ভাল-০১
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ০৩ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:১০:৪৯ রাত
সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি একটি মিশ্রিত জাতি এবং এ অঞ্চলে বসবাসকারী আদিতম মানবগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে অন্যতম।
পৃথিবীর বহু জাতি বাংলায় অনুপ্রবেশ করেছে, অনেকে আবার বেরিয়েও গেছে, তবে পেছনে রেখে গেছে তাদের আগমনের অকাট্য প্রমাণ।
বৃহত্তর বাঙালির রক্তে মিশ্রিত আছে বহু এবং বিচিত্র সব নরগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। দীর্ঘকাল বিভিন্ন জন ও কোমে বিভক্ত হয়ে এ আদি মানুষেরা বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেছে, এবং একে অপরের সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছে শতকের পর শতকব্যাপী।
জাতিতাত্ত্বিক নৃবিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর চারটি প্রধান নরগোষ্ঠীর প্রতিটির কোনো না কোনো শাখার আগমন ঘটেছে বাংলায়।
নরগোষ্ঠীগুলি হলো নিগ্রীয়, মঙ্গোলীয়, ককেশীয় ও অষ্ট্রেলীয়। মনে করা হয় যে, বাংলার প্রাচীন জনগুলির মধ্যে অষ্ট্রিক ভাষীরাই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের সাঁওতাল, বাঁশফোড়, রাজবংশী প্রভৃতি আদি অষ্ট্রেলীয়দের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই আদি জনগোষ্ঠীগুলি দ্বারা নির্মিত সমাজ ও সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে আর্যদের আগমনের পর। বাংলাদেশের জনপ্রবাহে মঙ্গোলীয় রক্তেরও পরিচয় পাওয়া যায়। বাঙালির রক্তে নতুন করে মিশ্রন ঘটল পারস্য-তুর্কিস্তানের শক জাতির আগমনের ফলে। বাঙালি রক্তে বিদেশি মিশ্রন প্রক্রিয়া ঐতিহাসিককালেও সুস্পষ্ট। ঐতিহাসিকযুগে আমরা দেখি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং ভারতের বাহির থেকে আসা বিভিন্ন অভিযাত্রী নরগোষ্ঠী বাঙালি জাতি নির্মাণে অবদান রাখতে। গুপ্ত, সেন, বর্মণ, কম্বেজাখ্য, খড়গ, তুর্কি, আফগান, মুগল, পুর্তুগিজ, ইংরেজ, আর্মেনীয় প্রভৃতি বহিরাগত জাতি শাসন করেছে বঙ্গ অঞ্চল এবং রেখে গেছে তাদের রক্তের ধারা। এমনকি পাকিস্তান যুগেও আমরা দেখি রক্ত মিশ্রণে চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এ শংকরত্ব আরো বেগবান হচ্ছে। এক কথায় বাঙালি একটি শংকর জাতি।
তবে আধুনিক শংকরতার পরিবেশ থাকলেও আদি জাতি স্বত্ত্বাই বাঙালির প্রকৃত পরিচয়। বৈদিক স্তবগান-স্ত্ততিতে বাংলা অঞ্চলের কোনো উল্লেখ নেই। বৈদিকদের সর্বপূর্ব জায়গা বিহার। ঐতরীয় ব্রাহ্মণে উল্লেখ আছে যে, পূর্ব আর্যবর্তের আরো পূর্বে থাকে দস্যুরা। দস্যুদের কথা অস্তিত্ব ঘোষণা দিয়ে ঐতরীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুন্দ্র জাতি এবং তাদের রাজধানী ’পুন্ড্রনগর’-এর কথা। বর্তমান মহাস্থান গড়ই সেই দস্যুদের রাজধানী। ঐতরীয় ব্রাহ্মণে না থাকলেও সমকালীন ঐতরীয় আরণ্যকএ বঙ্গ জাতির উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায়। ঐতরীয় রায় দিয়েছে, দস্যুরা পথভ্রষ্ট পাপী কেননা তাঁরা কোনো সত্য গ্রন্থের অনুসারী নয়। রামায়ণ ও মহাভারতে দেখা যায় যে, বঙ্গজরা পাপীতো নয়ই, বরং মিত্রতা প্রতিষ্ঠা করার মতো অতি সম্ভাবনাময় জাতি। রামায়ণে এক তালিকায় রয়েছে কোনো কোনো বঙ্গজ জাতির সঙ্গে আর্যদের মিত্রতা স্থাপিত হয়েছে। মহাভারতে ভীব কর্তৃক পুন্ডবর্ধন ও অন্যান্য কয়েকটি বঙ্গজ জাতিকে বশীভূত করার উল্লেখ আছে। বনপার্বণ গ্রন্থের তীর্থযাত্রা পর্বে পুন্ডনগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া গঙ্গার একাংশ করতোয়া নদীকে পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। এমনিভাবে ধীরে ধীরে বঙ্গজ জাতিগুলি মহাভারতের যুগে এসে আর্যাবর্তের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে মর্যাদার সহিত সম্পৃক্ত হলো।
বিষয়: বিবিধ
১৯৩৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
জেনে নিলাম চমৎকার তথ্যটি! অনেক শুকরিয়া!
অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন