মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামীলীগ নেতাদের ক-ুকীর্তির দালিলিক প্রমান , ইতিহাসের পাতা থেকে ( পর্ব -০২)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৫:৫১ দুপুর
এপ্রিলের ৪ তারিখে ভারতীয় সীমান্তঘেষা হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে যুদ্ধরত সেনা কমান্ডার কর্নেল রব্, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর সফিউল্লা, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর মমিন চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন মিলিত হয়ে কর্নেল ওসমানীর নেতৃত্বে গঠন করেন “সম্মিলিত মুক্তিফৌজ।”
অন্যদিকে ভারত সরকারের সাহায্য ও সমর্থন লাভের আশায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দীন সাক্ষাৎ করেন ৪ এপ্রিল। তাজউদ্দিনের ধারনা ছিল, শেখ মুজিব আগে থেকেই একটি আপদকালীন ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছেন, কিন্তু তার ধারনা কার্যত ভূল প্রমানিত হয়, এবং তাজউদ্দীনকে গোড়া থেকেই শুরু করতে হয়।
৮ এপ্রিল কোলকাতার ভবানীপুর এলাকার রাজেন্দ্র রোডের এক বাড়ীতে আওয়ামী ও যুবনেতাদের সভায় ভারত সরকারের সাথে বোঝাপড়া সম্পর্কে অবহিত করেন তাজউদ্দীন এবং একটি প্রবাসী সরকার গঠনের লক্ষে কাজ শুরু করেন।
শুরুতেই তাজউদ্দীনের নেতৃত্ব ও কতৃত্ব নিয়ে শুরু হয় বাদানুবাদ ও নেতৃত্বের কোন্দল।
শেখ মুজিবের ভাগ্নে শেখ মনি নিজেকে মুজিবের অনুপস্থিতিতে একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি দাবী করে তাজউদ্দীনের নেতৃত্ব মানতে অস্বীকার করেন, এবং চিত্ত সুতারের নেতৃত্বে ৪২ জন আওয়ামী লীগ ও যুব নেতা স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তাজউদ্দীনের সরকার গঠন ও বেতার বক্তৃতা বন্ধ করার জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক আবেদন পাঠান।
শুরু হলো দলাদলি। নির্বাচিত গণপরিষদের নেতারা বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় তাদের একত্র করা দূরুহ কাজ ছিল বটে। এ অবস্থায়, তাজউদ্দীন নিজেই বেড়িয়ে পড়েন তাদের খুঁজতে।
১১ এপ্রিল আগরতলায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, আবদুল মান্নান, খোন্দকার মোশতাক আহমদ এবং কর্নেল ওসমানীসহ অন্যান্যদের সাথে ব্যাপক আলাপ আলোচনা করে প্রবাসী সরকারের অবয়ব তৈরী করে ঐদিনই আকাশবানী শিলিগুড়ি বেতারকেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করেন তাজউদ্দীন।
১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকার শপথ নেয় মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়।
মে-জুন মাস থেকে শুরু হয় মুক্তিবাহিনী গঠনের কাজ। ন’মাস যুদ্ধকালে প্রায় লাখ খানেক মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নেয়, এদের তাদের মধ্যে শতকরা ১ ভাগেরও কম ছিল শরনার্থী শিবিরের।
জীবনের ভয়ে পালিয়ে আসা বেশীরভাগ শরনার্থী ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের, যাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ছিল ট্রেনিং নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা সম্পন্ন।
তাছাড়া শরনার্থী শিবিরে পরিবারের জন্য রেশন কার্ডের ভিত্তিতে কিছু খাদ্যদ্রব্য ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছিল বিধায় যুদ্ধে যাওয়ার তাড়না ছিল কম। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে থেকে নানা কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ও সাহসী যুব ও ছাত্ররা সীমান্ত পেরিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগদানের জন্য সচেষ্ট ছিল। সাহায্যের পরিবর্তে তাদের পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
চেষ্টা চরিত্র করে আওয়ামীলীগ দলীয় সনদ জোগাড় হলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে আগ্রহী ছাত্র-যুবকদের নিয়োগে আওয়ামীলীগ নেতাদের মারাত্মক স্বজনপ্রীতি বাহিনী গঠনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
আওয়ামীলীগের বাইরের নানা দল ও মতের ছাত্র-যুবকদের মুক্তি বাহিনীতে নিয়োগে বাধা দেয়া ও নিরুৎসাহিত করা হতো।
সেপ্টেম্বরে নাগদ রিক্রুটিং-এর ক্ষেত্রে দলীয় বৈষম্যের নীতি অনেকখানি হ্রাস পেলেও মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যায়ে অবিশ্বাস, রেষারেষি ও দ্বন্দ্বের জের মূলত চলতেই থাকে (মঈদুল হাসান, ২০০৬)।
অপরদিকে শেখ মুজিবের ভাগিনা যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনির (শেখ সেলিমের বড় ভাই) বাড়াবাড়িতে ভারতীয় জেনারেল উবানের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় ’মুজিব বাহিনী’ বা বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ)।
এই বাহিনী না ছিল তাজউদ্দীন সরকারের নিয়ন্ত্রনে, না ছিল ওসমানীর অধীনে, এমনকি জেনারেল অরোরার কমান্ডেও ছিল না।
এই রহস্যজনক এলিট বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল ছাত্রলীগের তিন জঙ্গি ছাত্রনেতা আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ও সিরাজুল আলম খান এবং যুবলীগ নেতা শেখ মনি।
হাসানুল হক ইনুর মত উগ্রপন্থী বামপন্থী নেতা ছিলেন মুজিব বাহিনীর রাজনৈতিক প্রশিক্ষকদের একজন।
মুজিব বাহিনীর অনেকেই শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে নামার সুযোগ পাননি। আবার স্বাধীনতার পর তাঁরাই পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়েছেন রক্ষীবাহিনী ও গণবাহিনীর আদলে।
মেজর জলিলের ভাষায়,”মুজীব বাহিনীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের পূর্বেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। তাদের দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য বলা চলে যে, সাধারণ মানুষর মুক্তিযুদ্ধে তাদের রক্ত ঝরাতে হয়নি। তাদের অভিজাত রক্ত সংরক্ষিত করা হয়েছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সাধারন মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ঝরানোর লক্ষে (অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরধীনতা)।
বিষয়: বিবিধ
১২২৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে এই ফটোটি মুক্তি বাহীনির এলবাম থেকে নেওয়া
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন