আওয়ামী বাকশালীদের রচিত ইতিহাসে রয়েছে নিছক মুজিবের বন্দনা। প্রকৃত ইতিহাস জানতে হলে পড়তে হবে সেই সময়ের বিদেশী পত্রিকা( পর্ব- ০৬)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৮:২৩ দুপুর
সোমবার সন্ধাঃ ..তার মানসিক যোগ্যতা সম্পর্কে আমারসন্দেহ ছিল।..তার ভারসাম্যহীনতাকে আমি আর কোন ভাবেই ব্যাখা করতে পারি না।.
.আমি যত তাকে পর্যবেক্ষণকরেছি, তত মনে হয়েছে তিনি কিছু একটা লুকাচ্ছেন। এমন কি তার মধ্যে যে সার্বক্ষণিক আক্রমণাত্মক ভাব, সেটাকে আমার মনে হয়েছে আত্মরক্ষার কৌশল বলে।
ঠিক চারটায় আমি সেখানে ছিলাম।
ভাইস সেক্রেটারী আমাকে করিডোরে বসতে বললেন, যেখানে কমপক্ষে পঞ্চাশজন লোকে ঠাসাঠাসি ছিল।
তিনি অফিসে প্রবেশ করে মুজিবকে আমার উপস্থিতি সম্পর্কে জানালেন।আমি একটা ভয়ংকর গর্জন শুনলাম এবং নিরীহ লোকটি কম্পিতভাবে পুনরায় আবির্ভূত হয়ে আমাকে প্রতীক্ষা করতে বললেন।
আমি প্রতীক্ষা করলাম-এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, তিন ঘন্টা, চার ঘন্টা –রাত আটটা যখন বাজলো তখনো আমি সেই অপিসর করিডোরে অপেক্ষামান। রাত সাড়ে আটটায় আমাকে প্রবেশ করতে বলা হল।
আমি বিশাল এক কক্ষে প্রবেশ করলাম। একটি সোফা ও দুটো চেয়ার সে কক্ষে। মুজিব সোফার পুরোটায় নিজেকে বিস্তার করেছেন এবং দুইজন মোটা মন্ত্রী চেয়ার দু'টো দখল করে বসে আছেন।
কেউ দাঁড়ালো না।
কেই আমাকে অভ্যার্থনা জানালো না।
কেউ আমার উপস্থিতিকে গ্রাহ্য করলো না। মুজিব আমাকে বসতে বলার সৌজন্য প্রদর্শন না করা পর্যন্ত সুদীর্ঘক্ষণ নীরবতা বিরাজ করছিল।
আমি সোফার ক্ষুদ্র প্রান্তে বসে টেপ রেকর্ডার খুলে প্রথম প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
কিন্তু আমার সে সময়ও ছিল না। মুজিব চিৎকার শুরু করে দিলেন, “হ্যারি আপ, কুইক, আন্ডারষ্টান্ড? ওয়েষ্ট করার মত সময় আমার নাই।
ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?..পাকিস ্তানীরা ত্রিশ লক্ষ লোক হত্যা করেছে, ইজ দ্যাট ক্লিয়ার? আমি বললাম, মি. প্রাইম মিনিস্টার..।
“মি. প্রাইম মিনিস্টার, গ্রেফতারের সময় কি আপনার উপর নির্যাতন করা হয়েছিল?”
“ম্যাডাম নো।
তারা জানতো,ওতে কিছূ হবে না।
তারা আমারবৈশিষ্ট্য,আমার শক্তি,আমার সম্মান,আমার মূল্য, বীরত্ব সম্পর্কে জানতো, আন্ডারস্টান্ড?” “
তা বুঝলাম। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন যে তারা আপনাকে ফাঁসীতে ঝুলাবে? ফাঁসীতে ঝুঁলিয়ে কি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়?”
“নো নো ডেথ সেন্টেন্স?” এই পর্যায়ে তাকে দ্বিদাগ্রস্ত মনে হল। এবং তিনি গল্প শুরু করলেন, “আমি এটা জানতাম।
কারণ ১৫ই ডিসেম্বর ওরা আমাকে কবর দেওয়ার জন্য একটা গর্ত খনন করে”।
“কোথায় খনন করা হয়েছিল সেটা?”
“আমার সেলের ভিতর।”
“আপনার প্রতি কেমন আচরণ করা হয়েছে মি. প্রাইম মিনিস্টার?” “আমাকে একটি নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছিল। এমনকিআমাকে সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেয়া হতো না। সংবাদপত্র পাঠ করতে বা চিঠিপত্রও দেয়া হতো না, আন্ডারস্টান্ড?”
“তাহলে আপনি কি করেছেন?” “আমি অনেক চিন্তা করেছি।”
“আপনি কি পড়েছেন?” “বই ও অন্যান্য জিনিস।” “তাহলে আপনি কিছু পড়েছেন।”
“হ্যা কিছু পড়েছি।” “কিন্তু আমার ধারণা হয়েছিল,আপনাকে কিছুই পড়তে দেয়া হয়নি। ”
“ইউ মিস আন্ডারস্টুড।” “..কি হলো যে শেষ পর্যন্ত ওরা আপনাকে ফাঁসীতে ঝুলানো না।”
“জেলার আমাকে সেল থেকে পলাতে সহায়তা করেছেন এবং তার বাড়ীতে আশ্রয় দিয়েছেন।” “কেন, তিনি কি কোন নির্দেশ পেয়েছিলেন? “আমি জানি না।
এ ব্যাপারে তার সাথে আমি কোন কথা বলিনি এবং তিনিও আমার সাথে কথা কিছু বলেননি।” “নীরবতা সত্ত্বেও কি আপনারা বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন।” ‘হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে বহু আলোচনা হয়েছে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আমাকে সাহায্য করতে চান।” “তাহলে আপনি তার সাথে কথা বলেছেন।”
“হ্যাঁ, আমি তার সাথে কথা বলেছি।” “আমি ভেবেছিলাম, আপনি কারোই সাথে কথা বলেননি।” “ইউ মিস আন্ডারস্টুড।”
বিষয়: বিবিধ
১০৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন