সম্রাট জাহাঙ্গীরের মত এমন একজন শাসক দান করুন, যে, শাসকের অন্তর আল্লাহর ভয়ে কেঁপে উঠে।
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ০৭ আগস্ট, ২০১৫, ১১:১২:৫৫ রাত
একদিন সম্রাট জাহাঙ্গীর বসে আছেন, তার বৈঠক খানায় । এমন সময় এসে হাজির হলেন, এক বৃদ্ধ মহিলা। সম্রাটকে উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন, জাহাপনা, আমি এসেছি আপনার নিকট একটি বিচার নিয়ে।
আমার বাড়ীটা আপনার বাড়ী থেকে বেশি দুরে নয়। আমার ছেলে সেনা বাহিনীতে চাকুরী করে, বর্তমানে চাকুরীতে সে যুদ্ধরত আবস্থায় আছে। এখন আমার এক সুন্দরী পুত্রবধূ ঘরে। প্রতিদিন কে যেন আমার বাড়ীতে এসে হামলা চালায়। আর আজকে রাতেই সে এসে হয়তো আমার পুত্র বধূর ইজ্জ্বত নষ্ট করবে। আমি আশংকা বোধ করছি, সুতারাং আমি আপনার নিকট নালিশ করলাম। হয়, আপনি আমার পুত্র বধূর ইজ্জ্বত হেফাজত করুন, আর নয় আমাকে ও আমার পুত্র বধূকে এ রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমোতি প্রদান করুন।
বুড়ীর কথা শুনার পর সম্রাট কোন কথা বললেন না, চুপ করে রইলেন। সম্রাটের বিরবতা দেখে বুড়া মহিলাটি রেগে গেলেন, আর বলতে লাগলো জাহাঙ্গীর তুমি যে, দিন জম্ম গ্রহন করেছিলে, সেদিনের কথা আজও আমার স্মরনে আছে, আজ তুমি এ রাজ্যের সম্রাট।
এ রাজ্যের প্রজাদের জামিনদার, আর সে তুমি যদি আমার পুত্রবধূর ইজ্জ্বতের হেফাজত না কর, তাহলে তোমাকে বলছি, তুমি যে পরকালে বিশ্বাস করো, সে পরকালে তোমাকে আমি তোমার স্রষ্টার সামনে আস্বামীর কাটগড়ায় দাঁড়া করাবো।
জাহাঙ্গীর তবুও কিছু বললেন না, বড়ো মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে ভরা মনে কষ্ট নিয়ে চলে গেলো।
সেদিন সন্ধার পর যখন সূর্য ডুবে গেলো, অন্ধকার চারোদিক ঘিরে ফললো। সবার অজান্তে সম্রাট জাহাঙ্গীর গিয়ে, অসহায় বুড়িটির বাড়ীর পাশে অন্ধকার নির্জনে দাঁড়িয়ে রহিলো।
গভীর রাত, হঠাৎ সম্রাট দূর থেকে দেখতে ফেলেন, আগুনের মশাল হাতে, মুখোশ পরা আবস্থায় দুই ব্যক্তি ঘোড়ায় ছোঁড়ে, বুড়ির বাড়ীর সামনে উপস্থিত হলো।
দুই ব্যক্তির মধ্যে এক ব্যক্তি বুড়ির বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করলো, অন্য ব্যক্তি প্রহরী ঘোড়া ও মশাল হাতে নিয়ে বুড়ির বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে রহিলো।
সম্রাট প্রথমত প্রহরীর সামনে উপস্থিত হলো, নিজ তলবারী দিয়ে কৌশলে প্রহরীকে হত্যা করলো। অতঃপর সম্রাট বুড়ির বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করলো এবং ঘরের ভিতর বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে ফেল। সঙ্গে সঙ্গেই সম্রাট বুড়ির পুত্রবধূর কক্ষে প্রবেশ করলো এবং মুখোশ ধারী লোকটিকে ধরে ফললো।
সম্রাট বুড়িকে আলো নিভিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলো, বুড়ি আলো নিভিয়ে দিলো। অতঃপর সম্রাট অন্ধকারেই নিজ তলবারী দিয়ে ২য় লোকটির দেহ থেকে মস্তক আলাদা করে দিলো। লোকটিকে হত্যা করার পর সম্রাট বুড়িকে পুনরায় আলো জ্বালিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানালো।
বুড়ি আলো জ্বালিয়ে দিলো। সম্রাট আলোর মাঝে মৃত ব্যক্তির মুখটি দেখার পর, আলহাদুলিল্লাহ বলে আল্লাহকে শুকরিয়া জানালো এবং বুড়িকে এক গ্লাস পানি দেওয়ার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলো, বুড়ি পানি দিলো, সম্রাট ডক ডক করে, পানি গুলো খেয়ে ফললো।
অতঃপর বুড়িকে আর বূড়ির পুত্র বধূকে নির্দেশ দিলো, যেন পরের দিন, রাজ দরবারে উপস্থিত হয়। এ বলে সম্রাট চলে গেল।
পরের দিন রাজ্যের মান্য গন্য ব্যক্তি বর্গ নিয়ে, রাজ দরবারে সবাই উপস্থিত হলো, বুড়িকে লক্ষ্য করে সম্রাট বলতে লাগলো, বুড়ি সে তুমি রাজ দরবারে বিচার দেওয়া স্বত্তেও আমি কেন নিরব ছিলাম, আমি ভেবে ছিলাম, যেহেতু তোমার বাড়ী রাজ প্রাসাদের নিকটে, সেই জন্য ভেবে ছিলাম আমার পুত্র ব্যতিত এমন দূর সাহস আর কেহ করতে পারে না, দুষ্কৃত ব্যক্তিকে হত্যা করার সময় আলো নিভিয়ে দেওয়ার জন্য কেন তোমাকে অনুরোধ করেছিলাম, দুষ্কৃত লোকটি যদি আমার ছেলে হতো, তাহলে তাকে হত্যা করার সময় আমার মায়া লাগবে বলে, আলো নিভিয়ে দিতে বলেছিলাম।
আলোতে দুষ্কৃত মৃত লোকটির মুখোমন্ডল দেখে কেন আলহাদুলিল্লাহ বলেছিলাম, দুষ্কৃত লোকটি আমার ছেলে নয় বলে।
দুষ্কৃত লোকটিকে হত্যার পর তোমার থেকে পানি নিয়ে প্রান করেছিলাম কেন জানো বুড়ি মা, তুমি যে, সেদিন রাজ দরবারে বলেছিলে, পরকালে আল্লাহর দরবারে আমাকে বিচারের সম্মূখীন করবে, সে ভয়ে, সেদিন আমি দূর চিন্তায় কিছু আহার করতেও ভুলে গিয়েছিলাম।
আল্লাহ আমাদেরকে সম্রাট জাহাঙ্গীরের মত এমন একজন শাসক দান করুন, যে, শাসকের অন্তর আল্লাহর ভয়ে কেঁপে উঠে। বিচারের সময় পিতা পুত্রের সম্পর্কের কথা ভূলে যায় এবং অন্যায় এর সময় পিতা পুত্রকেও হত্যা করতে দিধা করেনা। (আমিন)
বিষয়: বিবিধ
১২৩৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন