শেখ মুজিবের সুসজ্জিত রক্ষি বাহিনী কেন ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি ?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ০৩ আগস্ট, ২০১৫, ১২:২৮:৪৩ রাত
১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে সাক্ষরিত তাজউদ্দিন-ইন্দিরা সরকারের সাত দফা মৈত্রি চুক্তি । যার মধ্যে দফা ২, ৩, ৪, এবং ৭ যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর প্রচন্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. সামরিক বিষয়ক: বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে।
৩. বাংলাদেশের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী থাকবেনা। অভ্যন্তরীণ আইন-শৃংখলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে।
৪. ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান। এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তি বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে।
৭. প্রতিরক্ষা বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করবে ভারত।
যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে ভারতে এক দল বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের সমাবেশে ভারতে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা ডি পি ধর বলেন, "আপনাদের এসব ব্যাপারে চিন্তা করার দরকার নেই। আপনাদের শুধু ধান চাষ করলেই হবে। বাকি সব কিছু আমরাই দেখব।
“ চুক্তির এই অনুচ্ছেদটির (৪) কথা মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানিকে জানানো হলে তীব্র ক্ষোভে তিনি ফেটে পড়েন। এর প্রতিবাদে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকেন না”।
৭১ এর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের ভিআইপি ট্রিটমেন্টে খুব আহত হয়। ৯ মাস প্রানপন যুদ্ধ করেছে তারা অথচ আওয়ামী সরকারের চোখে বীর বনেছে ভারতীয় সেনারা।
মেজর জলিলের ভাষায়, “জাতির বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজ উপহাস, কৌতুক, আর করুনার পাত্র। ভাবখানা এমন যেন মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছে এক শ্রেণীর কামলা, যাদের কাজ শুধু হানাদার তাড়ান।“
৭২ এ শেখ মুজিব দেশে ফিরে তাজউদ্দিন সরকার আর অন্যান্য আওয়ামী নেতা আর বুদ্ধিজীবীদের মতের বিপরীতে গিয়ে, মৈত্রি দফা ২ ভঙ্গ করে ভারতীয় সেনাদের ভারতে ফেরত পাঠিয় দেন। কিন্তু দফা ৩ অনুসারে গঠন করেন রক্ষি বাহিনী নামক প্যারামিলিশিয়া বাহিনী। গুনগত আর শিক্ষাগত যোগ্যতায় রক্ষীবাহিনীর অফিসারেরা আর্মি অফিসারদের চাইতে অনেক নিম্নমানের হলেও এদের সম্মান দেয়া হয় সেনাবাহিনীর চাইতে বেশি।
সেনাবাহিনী কাঠামোগত ভাবে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল বাহিনী। কিন্তু সেই কাঠামোগত ধারা ভঙ্গ করে শেখ মুজিব সিনিয়র জিয়াকে ডিঙ্গিয়ে জুনিওর সফিউল্লাহ কে আর্মি চিফ বানিয়ে দেন। মুজিবের এই ডিসিশান আর্মি কম্যান্ড স্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে গেলে আর্মিতে অসন্তোষ দেখা দেয়।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাদের একটি অংশ কর্নেল তাহেরের অনুগত ছিল, যারা ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিব তাহেরকে সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কার করলে অসন্তুষ্ট হয়।
বহিস্কারের পর তাহের বামপন্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। এবং অননুমোদিত অস্ত্র সহ আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক ক্যাডার বাহিনি গঠন করেন।
এই সময় দিনকে দিন রক্ষি বাহিনী হয়ে উঠে আর্মির চাইতেও ক্ষমতাশীল আর আওয়ামী সরকারের কাছে প্রিয়। তাদের অস্ত্র সামগ্রি ছিল আর্মির চাইতে বেশি আর উন্নত। তার উপর মুজিবের আদেশে চোরাকারবারি, মজুতদারদের গ্রেফতারে সেনাবাহিনী যখন বেশির ভাগ আওয়ামী সদস্যদেরকেই গ্রেফতার করে, আর আওয়ামীরা মুজিবের কাছে এই ব্যাপারে নালিশ করে, তখন শাস্তি স্বরূপ মুজিব সেনাদের সিলেট থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত পায়ে হেটে আসার আদেশ দেন। এই ব্যাপার সেনাবাহিনীর জন্য প্রচণ্ড অপমান জনক ছিল।
১৯৭৪ সালে ঘটে মেজর ডালিমের সেই কুখ্যাত ঘটনা, যেখানে এক বিয়ে বাড়ীতে গোলাম মোস্তফার ছেলে মেজর ডালিমের শালাকে অপমান করে, মেজর ডালিমের সাথে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা ডালিম আর তার স্ত্রী কে বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।
মেজর ডালিম আর তার স্ত্রী শেখ মুজিবের খুব কাছের লোক ছিলেন বিধায় আশা করেছিলেন শেখ মুজিব থেকে এই ব্যাপারে সঠিক বিচার পাবেন। বরং উল্টা কিছুদিনের মধ্যেই মেজর ডালিম আর মেজর নুর (ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন) দুজনকেই মুজিব মিলিটারি থেকে ডিসমিস করে দেন। সেনাবাহিনীর সামগ্রিক অসন্তোষের সাথে যোগ হয় কিছু অফিসারের ব্যাক্তিগত বিদ্বেষ।
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব সংবিধান ভঙ্গ করে ওয়ান ম্যান ওয়ান পার্টি বাকশাল সৃষ্টি করেন,
এরপর ঘটে যায় ১৯৭৫ সনের ১৫ই অগাস্টের বিপ্লব। মেজর ডালিম, ফারুক, রশিদ, রহমান, হুদা সহ আরও কিছু অফিসার শেখ মুজিবকে পরিবারের ১৪ জন সদস্য সহ মোট ৪৬ জনকে গুলি করে মুজিব অধ্যায়ের বিলুপ্তি ঘটান। সেদিন মুজিবের নিজ হাতে গড়া সুসজ্জিত রক্ষি বাহিনী পর্যন্ত মুজিবকে বাচাতে এগিয়ে আসেনি।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্য সবাইর জানার দরকার তাই অনেক সত্যকেও একটু পড়িয়ে চলি তারপরও কিছু চলেই আসে যাহা শুনলে ওদের গায়ে জালা তো ধরবেই দাদা
আপনাকে ধন্যবাদ
পএিকায়।
ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
ধন্যবাদ
সুযোগ পাচ্ছেনা জবাব দিবার
মন্তব্য করতে লগইন করুন