ছড়ির তরবারি হাদিছ শরিফ থেকে নেয়া

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২২ মার্চ, ২০১৫, ১১:৫৬:০৬ সকাল

দারুণ দুঃসাহসী এক অবাক পুরুষ। নাম উকাশা ইবনে মিহসান (রা)। সবাই তাকে ডাকে আবু মিহসান নামে। এই নামেই তিনি প্রসিদ্ধ। এই নামের তিনি পরিচিত। রাসূলও (সা) তাকে আদর করে কাছে ডাকেন আবু মিহসান বলে। রাসূলের (সা) ডাক! সে ডাকে মধু ঝরে। সে ডাকে শিশির ঝরে।

আর কুলকুল করে বয়ে যায় আবু মিহসানের বুকের ভেতর আনন্দ ও খুশির কোমল ঝরণা ধারা। কেন বইবে না!

রাসূল (সা) হলেণ মানুষের মধ্যে সেরা মানুষ। নবীদের মধ্যে সেরা ও শ্রেষ্ঠ নবী। সেই মহামানবের ডাক শুনে কার না হৃদয় আপ্লুত হয়? আবু মিহসানও আপ্লুত হলেন রাসূলের (সা) ভালোবাসায়। তাঁর অসীম মানবিকতায়। তখনও ইসলামে পালে লাগেনি সুবাতাস। তখনও মসৃণ হয়নি ইসলামের পথ। বরং সে পথে ছিল কাঁটা আর কাঁটা। বলা যায় বন্ধুর গিরিপথ। কঙ্কর ছিটানো। আঁকাবাঁকা। যার সাহসী তারাই কেবল সেই পথের যাত্রী হচ্ছেন। ধীরে ধীরে। এই সাহসীদের সহযাত্রী হলেন আবু মিহসান (রা)। তিনি ইসলাম কবুল করলেন। সাথে সাথে তার চারপাশে জ্বলে উঠলো বিরুদ্ধতার আগুন। হিংস্র দাবানল। তবুও তিনি সিদ্ধান্তে অনড়। অটল ঈমানের ওপর। ঠিক যেন হিমালয় পর্বত।

ইসলাম গ্রহণের পর অনেকের মত তিনিও টিকতে পারলেন না মক্কায়। মক্কা তার জন্মভূমি। মক্কা তার প্রাণপ্রিয় আবাসভূমি। তবুও, সেই প্রিয় জন্মস্থঅন ছেড়ে তিনি হিজরত করলেন মদিনায়। পেছনে পড়ে রইলো স্মৃতিবাহী শৈশস ও কৈশোরের নগরী। চেনা-জানা আপনজন আর নিত্যকার হাঁটাচলার পথঘাট। তবুও তার মনে কষ্ট নেই। দুঃখ নেই। আছে কেবল এক অপার্থিব আনন্দ। সেটা আল্লাহকে খুশি করার আনন্দ। সেটা রাসূলকে (সা) কাছে পাবার তৃপ্তি। সেটা ইসলামের বিশাল আকাশের নিচে ঠাঁই করে নেবার খুশি।

সেদিনের জন্য এই ধরনের ত্যাগ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ আল্লাহ, রাসূল (সা) ও ইসলামকে প্রাণের চেয়ে ভালোবাসলেই কেবল এমন ত্যাগ স্বীকার করা যায়। আবু মিহসানও তাই করলেন। এটাতো তুচ্ছ ত্যাগ তার কাছে। এর চেয়েও বড় কুরবানী তিনি করেছিলেন। ইসলামের জন্য। সে সবই তো এখন ইতিহাস হয়ে আছে। সোনালি ইতিহসা।

বদর যুদ্ধ!

সেই কঠিন যুদ্ধের ময়দানে অন্যান্য সাহাবীর সাথে আবু মিহসানও ছিলেন দুর্বার, দুঃসাহসী। তখন তো ছিল না যুদ্ধের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। হাতের তরবারি আর বর্শা- এ ধরনের অস্ত্রই সম্বল।

কাফেরদের বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি দুঃসাহসী সত্যের সৈনিক। সংখ্যায় তারা নগণ্য। সমরাস্ত্রও অপ্রতুল। কিন্তু বিশাল তাদের ঈমানী শক্তি। সেই শক্তি আল্লাহর দেয়া শক্তি। সেই শক্তি রাসূলের (সা) প্রতি ভালোবাসার শক্তি। সুতরাং তাদের আর কিসের পরওয়া? অন্যান্য বীর মুজাহিদদের সাথে সমান তালে যুদ্ধ করছেন আবু মিহসান। শত্রুর ব্যুহ ছিন্নভিন্ন করে এগিয়ে যাচ্ছেন ক্রমাগত সামনের দিকে।

যুদ্ধ করতে করতেই হঠাৎ ভেঙ্গে গেল তার হাতের সেই বহু ব্যবহৃত তরবারিটি।

এখন উপায়?

যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পিঠটান দেবার কথা ভাবতেও পারেন না তিনি। আবার খালি হাতে যুদ্ধও তো সম্ভব নয়। কারণ এটা তো নয় মল্লযুদ্ধের ময়দান। কী করা যায়? ভাবছেন তিনি। তার অভিপ্রায় এবং আকুতি বুঝলেন দয়ার নবীজী (সা)। তিনি মুহূর্তেই আবু মিহসানের হাতে তুলে দিলেন একটি খেজুর ছড়ি।

রাসূলের (সা) দেয়া সেই ছড়িটির আগা সুচালো করে তাই দিয়েই তিনি যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন বদরের প্রান্তরে। এবং যুদ্ধের শেষ সময় পর্যন্ত। বিস্ময়করই বটে!

এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেল (স) আনুকূল্য পেলে কী না সম্ভব হয়! শুধু বদর যুদ্ধই নয়, উহুদ, খন্দকসহ সংঘটিত সকল যুদ্ধেই তিনি সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছেন। এই সব যুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল অসীম। হিজরী সপ্তম সনের রবিউল আউয়াল।

আবু মিহসানকে দায়িত্ব দেয়া হলা বনী আসাদের মূলোৎপাটনের জন্য। তিনি দায়িত্ব পেয়েই তার চল্লিশজনের এক বাহিনী নিয়ে রওয়ানা হলেন। বনী আসাদের বসতি ছিল মদিনার পথে ‘গামার’ কূপের কাছেই।

বনী আসাদের লোকেরা কীভাবে যেন খবর পেয়ে গেল যে, আসছেন! আসছেন দুঃসাহসী মিহসান তার বিশাল বাহিনী নিয়ে। ভয়ে তারা ঘাবড়ে গেল। মিহসানকে মুকাবিলা করার সাহস তাদের নেই। ফলে তারা পালিয়ে গেল। মিহসান সেখানে পৌঁছেই তাদেরকে পেলেন না। যুদ্ধের আগেই যুদ্ধ শেষ!

হাসলেন মিহসান। ভাবলেন, মিথ্যার কোনো সাহস থাকে না। থাকে না কোনো চিরস্থায়ী শক্তি। কিন্তু সত্যের সাহস ও শক্তি অসীম। সত্যের সামনে কীভাবে দাঁড়াবে মিথ্যার বহর?

আবু মিহসান তার বাহিনী নিয়ে ফিরে এলেন মদিনায়। সাথে করে আনলেন বনী আসাদের ফেলে যাওয়া পরিত্যক্ত দুশো উট ও কিছু ছাগল-বকরী।

এর মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন দয়ার নবীজী (সা)।

এলো হিজরী ১২ সন।

এই সময় খলিফা হযরত আবু বকর (রা) খালিদ ইবনুল ওয়ালিদকে নির্দেশ দেন ভন্ড নবী তুলাইহা আসাদীর বিদ্রোহ নির্মূলের জন্য। খালিদ তার বাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। এই বাহিনীর দু’জন ছিলেন অগ্রসেনানী। একজন আবু মিহসান এবং অপরজন সাবিত ইবন আকরাম। দু’জনই চলছিলেন বাহিনীর আগে আগে। বুকে তাদের শঙ্কাহীন সাহসের ঢল।

আকস্মিকভাবেই বেধে গেল যুদ্ধ। তুমুল যুদ্ধ। এক পর্যায়ে শহীদ হলেন সাবিত। আবু মিহসান তখন আরও তীব্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তুলাইহার ওপর। তাকে কাবও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তার আর্তচিৎকারে ছুটে এলো তার ভাই সালামা। পাপিষ্ঠ ঝাঁপিয়ে পড়লো আবু মিহসানের ওপর এবং সেই আক্রমণে তিনি শহীদ হলেন। শহীদ হলেন আবু মিহসান। শহীদ হলেন, কিন্তু তার মৃত্যু হয়নি। শহীদেরা কি মরেন কখনো?

না, তারা জীবিত। সর্বদাই জীবিত। আবু মিহসানও বেঁচে আছেন, জেগে আছেন। জেগে আছেন ছড়ির তরবারিধারী সেই দুঃসাহসী স্বর্ণ ঈগল।

বিষয়: বিবিধ

১০২৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

310427
২২ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : আলহামদুল্লিলাহ। ভাল লাগলো।
২২ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০১:২৬
251436
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
২২ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০১:২৬
251437
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
310439
২২ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০১:১৪
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান !
২৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩১
252365
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আমিন
310500
২২ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪১
শেখের পোলা লিখেছেন : এঁরাই ছিলেন প্রকৃত মুসলীম৷ এদের মৃত বলা যাবেনা৷এঁরাই শহীদ৷
২৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩১
252367
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : সহমত
Good Luck
310520
২২ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:০৬
আবু জারীর লিখেছেন : প্রচলিত অস্ত্রের চেয়ে ঈমানের অস্ত্র আজও বেশী কার্যকর বলে প্রমানীত।
ধন্যবাদ।
২৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩২
252369
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
Good Luck
310528
২২ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:২৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন :
হাসলেন মিহসান। ভাবলেন, মিথ্যার কোনো সাহস থাকে না। থাকে না কোনো চিরস্থায়ী শক্তি। কিন্তু সত্যের সাহস ও শক্তি অসীম। সত্যের সামনে কীভাবে দাঁড়াবে মিথ্যার বহর?


শহীদ হলেন আবু মিহসান। শহীদ হলেন, কিন্তু তার মৃত্যু হয়নি। শহীদেরা কি মরেন কখনো?


সন্দেহাতিতভাবে সত্য কথা।

ঘটনাটি আগেও পড়েছি, কিন্তু আপনার বর্ণনায় নতুনত্বের স্বাদ পেলাম যেন।

ধন্যবাদ জানবেন।
২৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩২
252370
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আমিন
Good Luck
310553
২২ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার বর্ননা এবং শিক্ষনিয় ঘটনাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২৭ মার্চ ২০১৫ রাত ১২:৩৩
252371
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আমিন
Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File