বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দুদিন পরই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন জেনারেল মইন

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ১৮ নভেম্বর, ২০১৪, ০৩:৪৫:০৫ দুপুর

আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন জেনারেল মইন উ আহমেদ। সেনাসদরে নিজের অফিস কক্ষেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এজন্য একটি ‘সুইসাইড নোট’ও প্রস্তুত করেন ওয়ান-ইলেভেন জমানার দোর্দ-প্রতাপশালী এই সেনাপ্রধান। তাতে নিজের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

ক্ষমা চান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ ও দেশবাসীর কাছে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুনিয়াজুড়ে বহুল আলোচিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দুদিন পরই এমন সিদ্ধান্ত নেন।

রোমহর্ষক ওই ঘটনার পর শোক-বিক্ষুব্ধ সেনাকর্মকর্তাদের প্রচণ্ড চাপের মুখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় মইনের মাথায় এমন চিন্তা আসে। তবে শেষ পর্যন্ত নানা দিক চিন্তা করে তিনি ফিরে আসেন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজের খুব ঘনিষ্ঠজনদের কাছে এমন কথা বলেছেন গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা সাবেক এই জেনারেল। সম্প্রতি আরেকটি বই লেখায় হাত দিয়েছেন তিনি। তার নতুন বইয়ের বিষয়বস্তু হলো বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর।

কবে নাগাদ বইটি প্রকাশ করা হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রতিদিনই একটু একটু করে লিখছেন তিনি। জেনারেল মইনের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি নৃশংসতম বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর নিজের সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। ভয়াবহ সেই ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস কর্মকর্তা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন।

ঘটনার দিন সকালেই বেশিরভাগ সিনিয়র সেনাকর্মকর্তা জেনারেল মইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পিলখানায় আটকে পড়া কর্মকর্তাগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারের জন্য দ্রুত সেনা অভিযান পরিচালনার তাগিদ দেন। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সায় নেই- এমন অজুহাতে তিনি সেনা অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন।

পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাবেলায় যখন জানা গেল যে, পিলখানায় অবস্থানকারী কর্মকর্তাদের কেউই বেঁচে নেই, তখন বিপুল সংখ্যক বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যান সেনাপ্রধানের বাসভবনে। সেখানে জেনারেল মইনের সামনে প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। মইন ছিলেন নির্বাক। এতে কর্মকর্তারা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তিনি সেনা অভিযান না চালানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করতেই কয়েকজন কর্মকর্তা মারমুখো হয়ে তেড়ে যান তার দিকে এবং তার জামার কলার টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।

নিদারুণ অপরাধবোধে ভুগতে থাকা এই সেনাপতি সেই রাতেই চিন্তা করেন আত্মহত্যার কথা। কিন্তু পরক্ষণে নানা দিক চিন্তা করে আবার সরে আসেন চরম সিদ্ধান্ত থেকে। এরপর তিনি উদ্যোগী হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসেন সেনাকুঞ্জে। ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ক্ষোভ প্রশমনের উপায় হিসেবেই তিনি এ পদক্ষেপ নেন।

প্রসঙ্গত, সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসর গ্রহণের কিছুকাল পরেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো সাবেক এই সেনাপ্রধান আর দেশে ফিরে যাননি। বাংলাদেশে নিজের নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কথা জানিয়ে ইতোমধ্যেই এদেশে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।

বর্তমানে বসবাস করছেন নিউ ইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকা এলাকার ১৭৯ নম্বর স্ট্রিটের একটি বাড়ির বেজমেন্ট ফ্লোরে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় বসবাস করলেও স্থানীয় বাঙালিদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ বা দেখা-সাক্ষাৎ নেই। বাড়ির বাইরেও খুব একটা বের হন না। খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া অন্য কাউকেই তিনি সাক্ষাৎও দিচ্ছেন না। নিজে ব্যবহার করছেন না কোন মোবাইল ফোন। বিশেষ ঘনিষ্ঠজনরা জেনারেল মইনের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তারপর দেখা করছেন তার সঙ্গে।

সাম্প্রতিক সময়ে জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শারীরিকভাবে এখন অনেকটাই সুস্থ তিনি। স্বাস্থ্য খানিকটা ভেঙে গেলেও টানা চিকিৎসা গ্রহণের ফলে তিনি এখন ক্যান্সারমুক্ত। তবে অজ্ঞাত কারণে তিনি খুবই দৈন্যদশায় জীবনযাপন করছেন।

জ্যামাইকার যে ভাড়া বাসায় তিনি থাকেন, সেটি মূলত একটি তিন তলা বাড়ির বেজমেন্ট, যেখানে আছে ছোট্ট একটি বেডরুম ও একটি লিভিং রুম। রান্নাঘর এবং বাথরুমটিও নিতান্তই ছোট। স্ত্রী ছাড়া আর কেউই নেই তার সঙ্গে। ফ্লোরিডায় বসবাসরত ছোট ভাইয়ের কাছে মাঝেমধ্যে বেড়াতে গেলেও সরকারি খরচের চিকিৎসা-সুবিধা গ্রহণের জন্য নিউ ইয়র্কেই থাকতে হচ্ছে মইনকে।

ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানায়, এককালের দাপুটে এই সেনাপ্রধান বর্তমানে এমন দুর্দশার জীবন কাটালেও ভাইদের বিত্ত-বৈভব তার কোনো কাজে আসছে না। প্রথম দিকে তারা কমবেশি কিছু চিকিৎসা খরচ দিলেও আজকাল আর তেমন খবর নিচ্ছেন না। ওয়ান-ইলেভেন যুগের সতীর্থদের মধ্যে একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ মাঝেমধ্যে টেলিফোনে খোঁজখবর নেন মইনের। তিনিও স্বেচ্ছা নির্বাসনে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে।

ওয়ান-ইলেভেন জমানার আরেক আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরী ফজলুল বারীও আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বসবাস করছেন টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস সিটিতে। তবে তার সঙ্গে জেনারেল মইন বা ফখরুদ্দীন আহমেদের কোনো যোগাযোগ নেই।

বিষয়: বিবিধ

৯৪৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

285527
১৮ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:০৮
মামুন লিখেছেন : অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ ভাই। Rose Rose
১৮ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৪
228838
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই
285563
১৮ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এতটাই ভিতু যে আত্মহত্যা করার সাহস ও করে উঠতে পারে নাই!!! জবরদখলকারি রা এরকমই হয়।
১৮ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
228872
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ঠিক বলেছেন
285633
১৮ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৮
হতভাগা লিখেছেন : উনার আত্মহত্যা করাই শ্রেয় ছিল । এখন উআনকে বেঁচে থেকে এমন অনেক কিছু ফেস করতে হবে যে তখন মনে হবে যে এর চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল ।

পিলখানা হত্যাকান্ডের পর মার্চের ৩ তারিখে সেনাকুন্জে সেনাকর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী সেখাআনে উপস্থিত অনেকের কথা শুনেন যে ইউটিউবে আছে ।

পরবর্তীতে বিশ্বস্ত সূত্রে শুনতে পাই যে, সে সভায় ক্ষোভ প্রকাশকারী প্রায় শতাধিক অফিসারকে অবসরের ঠিক আগে টার্মিনেট করে যান মঈন ।

হত্যাকান্ডের ২ দিন পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এর সাথে ১০০+ অফিসারকে বরখাস্ত করা - ঠিক মেলে না ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File