মঙ্গল গ্রহে কদিন বাঁচবে মানুষ? বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গভেষনার ফলাফল পড়ুন।

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:৩৬:৪০ বিকাল



আগামী এক দশকের মধ্যেই মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় চলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে গেলে মানুষ সর্বোচ্চ কত দিন টিকতে পারবে? মার্কিন গবেষকেরা হিসাব করে দেখেছেন, মঙ্গল গ্রহের প্রতিকূল পরিবেশ ও সেখানে তৈরি করা অবকাঠামো বিবেচনায় নিলেও মাত্র ৬৮ দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে মানুষকে।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকেরা মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাসের সম্ভাবনার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন।

এমআইটির পাঁচজন গবেষক নেদারল্যান্ডসের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান গৃহীত একটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা বিবেচনা করে দেখেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, মঙ্গল গ্রহে যে আবাসস্থল গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে তাতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে একপর্যায়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বাস করতে আরও নতুন নতুন প্রযুক্তির দরকার হবে।

২০২৪ সাল থেকে মঙ্গল গ্রহে স্থায়ী বসবাসের জন্য কলোনি বা অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নেদারল্যান্ডসের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মার্স ওয়ান। সেখানে একমুখী অভিযানের মাধ্যমে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা তাদের। অর্থাৎ, মঙ্গল গ্রহে অবকাঠামো তৈরির পর সেখানে মানুষ পৌঁছে দেবে তারা। এরপর সেখানে যাঁরা যাবেন, তাঁদেরই সেখানে টিকে থাকার জন্য লড়াই করতে হবে। কিছুদিনের জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় রসদ দেওয়া হবে। সেখানে প্রতিবার দুজন করে মানুষ পাঠানো হবে এবং প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করা হবে।

মঙ্গল অভিযানের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে লোক বাছাইও শুরু হয়ে গেছে। এই অভিযানে যাওয়ার জন্য দুই লাখেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল মার্স ওয়ানের কাছে। এর মধ্যে এক হাজার জনকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রেখেছে মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ।

মার্স ওয়ান জানিয়েছে, বাছাইকৃত এক হাজার জনের মধ্যে ২৪ জনকে মঙ্গলে বসবাসের জন্য চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মঙ্গল গ্রহের এই মিশনটি টেলিভিশনে রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে দেখিয়ে এই অভিযানের খরচ জোগানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে মার্স ওয়ান।

এদিকে, মার্স ওয়ানের এই পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত কিনা তা নিয়ে গবেষণা করেছেন এমআইটির গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, মঙ্গল গ্রহে মানুষের জন্য বসবাসের প্রতিকূল পরিবেশ এবং বর্তমানে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এই মিশনকে অসম্ভব করে তুলবে।

এমআইটির গবেষকেরা আশঙ্কা করছেন, ‘মঙ্গলগ্রহে প্রথম যে মানুষটি বাস করতে যাবেন সর্বোচ্চ ৬৮ দিনের মধ্যেই তাঁর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাবে।’

৩৫ পাতার একটি প্রতিবেদনে গবেষকেরা এই প্রকল্পে তৈরি অক্সিজেন, খাবার ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা বলছেন, মঙ্গলগ্রহে কলোনিতে অক্সিজেন ও খাবার উৎপাদনের জন্য যে উদ্ভিদ জন্মানো হবে তা যে পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি করবে তা নিরাপদ নয় এবং এর ফলে বিস্ফোরণও ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে অক্সিজেন নির্গমণ পদ্ধতি তৈরি করার দরকার হবে কিন্তু নভোযানে এ ধরনের কোনো পদ্ধতি এখনও তৈরি করা যায়নি বা ভিনগ্রহের পরিবেশে তা পরীক্ষা করে দেখাও হয়নি।



এই অভিযানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ। মঙ্গলগ্রহে টিকে থাকার জন্য যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ দরকার হবে তা সরবরাহ করা সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়বে। মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাতে সাত মাসেরও বেশি সময় লাগবে। প্রয়োজনীয় রসদ ও যন্ত্রাংশ সরবরাহে সাড়ে চারশো কোটিরও বেশি অর্থ খরচ হয়ে যাবে।

অবশ্য, এমআইটির গবেষকেদের এই আশঙ্কা অমূলক বলেই মনে করছেন মার্স ওয়ান প্রকল্পের উদ্যোক্তা ব্যাস ল্যান্সড্রপ। তাঁর দাবি, এই গবেষণার কোথাও ত্রুটি আছে। তিনি এ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সব ধরনের পরামর্শ করেই তবে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। যদিও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করাটাকে সমস্যা বলেই মনে করছেন তিনি।

ব্যস ল্যান্সড্রপ পপুলার সায়েন্স ম্যাগাজিনকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘মার্স ওয়ানের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সবকিছু ঠিকঠাক চালিয়ে রাখা।’

ল্যান্সড্রপ এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘এমআইটির গবেষকেরা অসম্পূর্ণ তথ্য ব্যবহার করেছেন। মার্স ওয়ান সভ্যতা গড়ে তোলার এ প্রকল্প নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’তিনি বলেন অক্সিজেন নির্গমণ পরীক্ষা করা না হলেও মঙ্গলে বাস করার প্রযুক্তি এখন প্রস্ত্তত।’

ল্যান্সড্রপ বলেন, ‘মঙ্গলে বাস করার জন্য প্রয়োজনীয় মূল অবকাঠামোর নকশা আরও ভালোভাবে করা এবং তা নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করা দরকার। কিন্তু সেই প্রযুক্তি আমাদের কাছে আছে।’

মার্স ওয়ানের মঙ্গল মিশন নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করলেও এর পক্ষে দাঁড়ানোর লোকও এখন অনেক। ১৯৯৯ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল জয়ী জেরার্ড’টি হুফট সমর্থনই দিচ্ছেন ব্যাস ল্যান্ডসড্রপকে ।

পৃথিবী থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ মাইল দূরে লাল রঙের এই গ্রহটিতে সর্বোচ্চ গতির নভোযানে করে পৌঁছাতে কমপক্ষে সাত মাস সময় লাগে।

প্রসঙ্গত, এ বছরের জুন মাসে টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো প্রযোজক প্রতিষ্ঠান এন্ডেমোল মঙ্গল গ্রহের অভিযাত্রীদের নিয়ে রিয়েলিটি শো করতে রাজিও হয়েছে।

ব্যাস ল্যান্সড্রপের দাবি অনুযায়ী, মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্য সবকিছুই প্রস্ত্তত। এখন শুধু মঙ্গল গ্রহে কবে মানুষের পা পড়ে সেটাই দেখার পালা।

বিষয়: বিবিধ

১০৮৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

280652
০২ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০৮
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : ভালো বুদ্ধি, যাচ্ছেতাই করে পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে মঙ্গল ধ্বংস অভিযান!
বিজ্ঞানের আগ্রহী ছাত্রী আমি, কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবসম্মত নয়। এগুলো স্টার ট্রেকের মত মুভিতেই ভাল মানায়।
০৩ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:১০
224361
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : হ আপু আপনি ঠিক বলেছেন
281239
০৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৩
হতভাগা লিখেছেন : এত কাছের চাঁদে ৪০ বছরে আর একবারও যারা যেতে পারে নি তারা কিভাবে মঙ্গলে বসবাসের চিন্তা করে ? চাঁদ যদি বসবাসের উপযোগী না হয় তাহলে মঙ্গল কি করে হবে ?

বেশী টাকা হয়ে গেছে তো! তাই উড়াতে মন উসখুস করে ।
281385
০৫ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫৮

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File