সোলেমান মুন্সি ( পর্ব-২)
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২৩ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:২৭:০২ রাত
প্রথম পর্বের পর:-
এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘাড়ের গামছাটা শক্ত করে মাজার সাথে বাধার আগে লুংগিটা হাটু সমান তুলল তারপর নেকড়ে বাঘের সাথে লড়াই করার জন্য গুটি গুটি পায়ে অগ্রসর হচ্ছেন সোলেমান মুন্সি।
হাতের লাঠিটা দিয়ে আশপাশের ছোট ছোট আগাছার উপর আঘাত করছে আর তিক্ষ্নদৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। অন্ধকারের ভিতরতো পরিস্কার সব কিছু না দেখা গেলেও অনুমান করা যাচ্ছে কোথাও কিছু আছে কি নাই।
এবার সোলেমান মুন্সি মনে মনে বলছে ! না না আর না!! সামনে আর অগ্রসর হওয়া যাবে না কিছু একটা বসে আছে আমার দিকে তাকিয়ে । চোখ দুটি কেমন যেন জ্বলজ্বল করছে।
সত্যি এটা নেকড়ে বাঘ ছাড়া আর কিছুই না। তাই শেষ বারের মতো যত দোয়া দুরুদ জানা ছিল সোলেমান মুন্সির সব পড়ে শেষ করে হাতের লাঠিটা উচিয়ে গুটি গুটি পায়ে অগ্রসর হচ্ছে তবে চলাচলের পথ দিয়ে নয় । পথ ছেড়ে একটু বাইরে দিয়ে।
সোলেমান মুন্সি এমন ভাবে অগ্রসর হচ্ছে যেন পিপড়াতেও টের পাবেনা। ওনার উদ্দেশ্য নেকড়েতো সিধা পথের দিকে তাকিয়ে আছে আর হয়তো ভাবছে আমি সিধা পথ ধরে হাটতে থাকবো আর সে আমার উপর হামলা করবে কিন্তু নেকড়েকে সেই সুযোগ দেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা তার আগেই ওর মাথায় আঘাত করে ওকে শেষ করে দিব। যদি তাহা না করতে পারি তবে আমার বাড়ি যাওয়ার পথ পরিস্কার হবে না।
যেমন ভাবনা তেমনই কাজ , সোলেমান মুন্সি অগ্রসর হতে হতে একসময় ঠিক নেকড়ের কাছাকাছি পৌছে গেল। তারপর হাতের লাঠি দিয়ে নেকড়ের মাথায় সজোরে একটা আঘাট করেই চিতকার করে আল্লাহুআকবার বলে উঠলো।
সোলেমান মুন্সি এমন জোরে নেকড়ের মাথায় আঘাত করেছে যে তার আঘাতের সাথে সাথে হাতের লাঠিটা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে সোলেমান মুন্সি হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
সোলেমান মুন্সি মাটিতে পড়লেও কিন্তু বেহুশ হয়নি তবে বেহুশের ভান করে নড়াচড়া ছাড়া বেশ কিছুক্ষন মাটিতে শুয়ে থাকলেন। উদেশ্য নেকড়ে বাঘের পরবর্তি অবস্থা অবলোকন করা।
বেম অনেকক্ষন মাটিতে পড়ে থাকার পরও নেকড়ে বাঘের কোন লড়াচড়া অনুভব করলেন না । এবার সোলেমান মুন্সি শুয়ে শুয়ে ভাবছে মনে হয় আমার বুদ্ধি কাজে লেগেছে সজোরে আঘাত করার সাথে সাথে হয়তোবা নেকড়েটা মারা গেছে অথবা বেহুশ হয়ে গেছে তাই নড়াচড়া করতে পারছে না।
এবার সোলেমান মুন্সি আস্তে আস্তে মাথা তুলে ভাল করে নেকড়ের দিকে তাকালেন।
ভাল করে অনেকক্ষন তাকানোর পরে বলছে একি !! এতো নেকড়ে নারে বাবা । এটাতো একটা গাছের গোড়া মাত্র , আমি নেকড়ে ভেবেতো ভয় পেয়ে গিছিলাম।
কয়েকদিন আগে একজনের গাছের দরকার হয়েছিল তাই বনের ভিতর থেকে এই গাছটা কুড়াল দিয়ে বেশ উচু থেকে কেটে নিয়েছে।
সোলেমান মুন্সি সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলছে হায়রে আমার খেয়াল ! এই পথ দিয়ে কতবার যে যাওয়া আসা করেছি আমার একদম মনে নাই। খামাখা কতক্ষন গাছের গোড়ার সাথে লড়াই করলাম।
বাড়ি গিয়ে সোলেমান মুন্সি নিজের এই বোকামির কথা আর কাউকে বলেনি। চুপচাপ নিজের মতো শুয়ে পড়লেন আর মনে মনে ভাবছেন যদি সেটা সত্যি সত্যি নেকড়ে বাঘ হতো তবে কি আমার বুদ্ধিতে আজ বেচে আসতে পারতাম ?
যাক যা হবার তাতো হয়েছে আমাকে আর রাত বিরাতে এই ভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।
আবার মনে মনে ভাবছে যদি না্ যাই তবে আমার সংসার চলবে কি করে?
বাবার আমলের বাড়ি এবং একচিলতে জমি ভাগে পেয়েছি এই সম্বল ছাড়াতো আমার আর কিছুই নাই তাহা হলে আমি কি করবো ? এমন আরো অনেক ভাবনা ভাবছে তো ভাবছে। এই ভাবনার মাঝে কোন সময় যে ঘুম এসেছে সোলেমান মুন্সি আর বলতে পারবে না।
সকাল হতে না হতেই পাড়ায় ডাক চিতকার শুরু হয়ে গেছে।
তৃতীয় পর্ব কাল লিখব
বিষয়: বিবিধ
১০১৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গোলামের ঘরে সব গোলামই জন্ম নেয়, বেচে থাকাই এক দায়! তাই নেকড়ে হোক আর সিংহ হোক, সবাই ছোটে পেটের দায়ে! সবাই আত্নাহুতী দিলে খারাপ হতো না, কিন্তু সেই সাহসটাও হচ্ছে না ....
সব সোলেমানের মুক্তির জন্য দোয়া রইলো!
মন্তব্য করতে লগইন করুন