সোলেমান মুন্সি ( পর্ব-১)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ২২ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:৫০:১৭ রাত



মনে পড়লো সেই পুরানো দিনের স্মৃতির আড়ালের কথা । বাড়ির পুর্বপাশে বাশঝাড় আর আগাছার জংগল ভর্তি অরন্য যেন কোন কালেও এই জংগলের মধ্যে লোকের পদচারনা ছিল ন।জমিনের উপর বাশপাতা লতালুগ্ন পড়ে হাটু সমান হয়ে আছে । তার মাঝে ছোট ছোট তাল গাছের চারার মতো নজরে পড়ে । বয়স্ক লোকেরা বলেন ওনারা নাকি ছোট বেলা থেকে এই সব তালের চারাগুলিকে এই রকম ছোটই দেখেছেন। এই সকল তালের চারার সাথে আগাছার সাথে লেপ্টে থাকতে দেখেছি ডাকপাখি হাসপাখি বন মোরগ ইত্যাদি।

বনের ভিতর দিয়ে হেটে যেতে যেতে অনেক সময় ঠিক একেবারে পাশ থেকে ডানা মেলে ঝাত করে উড়ে যেতে দেখেছি বন কবুতর বন বাদুর আরো অনেক রকম পাখি।

সন্ধা নামার সাথে সাথে সেখানে জড়ো হতে থাকে হাজার জাতের পাখি। ক্ষনিকের জন্য কেহ যদি সেখানে যায় তবে তার কাছে মনে হবে যেন কোন হাট অথবা কোন মেলায় এসেছে সেখানে হাজার হাজার লোকের কোলাহলের মতো শব্দ হয় দুই জন পাশাপাশি থাকলেও পাখির কলতানের তাদের কথা হারিয়ে যায়।

সে এক মনভুলানো মনোরম দৃশ্য যাহা উপভোগ করার জন্য অনেক লোক সন্ধায় জড়ো হয়। হয়তো বা কোন কালে অনেক কবি সাহিত্যিক পন্ডিত তার কল্পনার জগত প্রসারিত করা মন্চ এখানে তৈরী করেছিল।

অনেক দুরদুরান্তের লোকের কাছে এই স্থানটি পরিচিত হওয়াতে অনেক পথভুলা লোকেরা তাদের গন্তব্যের ঠিকানা খুজে পেতো এখানে। অনেক যুগল তাদের প্রেমের সুত্রপাত অপঘাত তৈরীর মাধ্যম হিসেবেও এটাকে বেছে নিয়েছিল। আবার কেহ বা বহুদর দুরান্তে তাদের উত্তাপকে বাস্তবে রুপ দিয়েছে আবারকেহবা অপঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে গিয়ে নিজেকে নিজে শেষ করে দিয়েছিল এই মনোরম দৃশ্যাবলি সাক্ষাতে।

আবার অনেকে তার হারানো প্রতিভাকে বেকোশিত করে হয়তো আকাশচুম্বি আসনে আসিন হয়েছিল । সেই সকল ইতিহাস কালের গহব্বরে সমুদ্রের উত্তালের মতো আজকে হারিয়ে গেছে আর পুরাতন কোন নথিতে ছাড়া হয়তো সেই সকল ইতিহাস আজ আর নাই।

সোলেমান মুন্সি ভাল লোক । গ্রামের সকলে তাকে মুন্সি সাহেব বলে ডাকেন। টুকটাক মানুষের ছেলেমেয়েদেরকে আরবী শিক্ষা দেন নাামাজ কালাম শিক্ষা দেন । লোকজন তাতে যতসামন্য টাকাপয়সা দেন এটা দিয়েই সোলেমান মুন্সির সংসার চলে।

কখনো ইচ্ছাকৃত কাহারো ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ তিনি করেন না বরং পাররে কারো ক্ষতি দেখলে সেটা সংশোধনের জন্য নিজে চেষ্টা করেন। যদি নিজের পক্ষে সেই ক্ষতি সমাধা করা সম্ভব না হয় তবে মালিককে ডেকে বলেন তার এই ক্ষতি হচ্ছে।

প্রতিদিনকার মতো সোলেমান মুন্সি গভির রাত পাশের গ্রাম থেকে পড়াইয়া বাড়ি ফিরতেছেন। ওনার একটা অভ্যাস ছিল রাত্রে চলাফিরার সময় হাতে একটা লাঠি ব্যাবহার যাতে কোন অনিষ্টকারি প্রানি ওনার কোন ক্ষতি করতে না পারে।

রাত আনুমানিক ১১টা কি সাড়ে দশটা বাজে একা একা বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়েছেন। বলে রাখি লোকজনে বলাকওয়া করতো এই এলাকায় মাঝে মাঝে কেহ কেহ নাকি নেকড়ে বাঘ দেখেছে। দিনের বেলায় ওরা কোথায় থাকতো কেহ দেখতো না আর তখন দেখার মতো অতপ্রতুল লোকও ছিল না।তাই লোকজনে লোকমুখের কথাতে সেটাকে বিশ্বাস করতো।

সোলেমান মুন্সি বাড়ির দিকে হাটছে আর জিকির করছে একটু জোরে জোরে। হয়তোবা ওনার ভিতর ভয়ও কাজ করছে আর নতুবা সবসময় আল্লাহর কথা স্মরন করেন সেই ধারাবাহিকতায় জিকির করছেণ।

হটাত বনবাদুর চ্যা চ্যা আওয়াজ তুলে ওনার সামনে দিয়ে উড়ে যেতে লাগলো আর বনবাদুরের আওয়াজ শুনে ডাক পাখিরাও ভয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলো।

হটাত সোলোমা মুন্সি থেমে গিয়ে ভাবছে ব্যাপার কি? হচ্ছেটা কি এখানে?

অনেকদিন যাবত এই পথ দিয়ে সোলেমান মুন্সি যাতায়াত হয় কিন্তু এমন আর কখনো হয়নি কিন্তু আজকে হটাত হচ্ছেটা কি?

এবার সোলেমান মুন্সি মনে মনে ভাবছে এখানে কোন একটা কিছু হয়েছে নইলে এতরাত্রে পাখপাখালির দৌড়াদৌড়ি হওয়ার কথা না।

এবার সোলেমান মুন্সির মনে হলো লোকেযে বলে নেকড়ে বাঘ আছে তাহা হলে কি এখানে নেকেড়ে বাঘ এসেছে নিজের মনকে নিজেই জিজ্ঞাসা।

নেকড়ে এযাবত কাল কারো ক্ষতি করেছে বলে শোনা যায়নি কিন্তু আজকে আমার ক্ষতি করবে?

যদি নেকড়ে বাঘের সত্যি সত্যি আগমন ঘটে তবে আমাকে আত্মরক্ষার প্রস্তুতি না নিলে এই গভির রাত্রে কোন লোকজন নাই যে আমাকে রক্ষা করবে।

এমনিতেই দিনের বেলায় এই পথ দিয়ে লোকজনের চলাচল কম থাকে তারউপর এখন গভির রাত্র।

সোলেমান মুন্সি মনে মনে কালেমা পড়ছে আর ভাবতেছে হয়তো নেকড়ে বাঘ সিত্য এসেছে তার মানে আমাকে নেকড়ের সাথে লড়তে হবে। মরে যদিও যাই তবে নেকড়ের সাথে না লড়ে মরব না তবুও সরাসরি নেকড়ের সামনে সরাসরি মাথা পেতে দিব না বলে সোলেমান মুন্সির পাকা সিদ্ধান্ত।

( দ্বিতীয় পর্ব কাল)

বিষয়: বিবিধ

১২২৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

276971
২২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৯:৩৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২২ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৩১
220985
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ
277019
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম সোলেমান মুন্সীর খবর জানতে
277061
২২ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File