হত দরিদ্র বাবারা কামনা করে ঈদ যেন আর কখনো মানুষের মাঝে ফিরে না আসে । ঈদ এলে তাদের চোখে পানি ঝরে।
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি ১০ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:১০:০৮ দুপুর
আব্দুল আওয়াল সকাল সকাল বাজারে গেছে, কারন কয়েকদিন পরেই ঈদ আসবে ছেলেমেয়েদের জন্য যতসামান্য কাপড় চোপড় কিনে আনা।
আব্দুল আওয়াল হত দরিদ্র লোক মানুষের ক্ষেতেখামারে কাজ করে তার সংসারের ঘানি টানা আর তাতে যা ইনকাম হয় কোন রকম তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চলে । বাড়তি টাকা কখনো তার হাতে থাকে না।
ঝামেলা হয় বছরে দুইটি ঈদ নিয়ে আর শবেবরাত নিয়ে। অন্যান্ন লোকেরা যখন ভাল ভাল খাদ্যখাবার জামা কাপড় তাদের পরিবারকে দেয় তখন আব্দুল আওয়াল সেটা দেখে সন্তানদেরকে বুঝ দেওয়ার মতো কোন ভাষা থাকে না।
তারপরেও অনন্তত কিছু না পারলেও চিনি সেমাই এবং ফুটপথের কিছু কাপড়চোপড় ম্যানেজ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু এবার হলো তার ব্যাতিক্রম। বর্তমানে বাজারের যেই অবস্থা তাতে ধনীরাই রিতিমত হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত বা তারমতো গরিবদের কথাতো অবান্তর। বাজারের যেই অবস্থা হোক না কেন ছেলেমেয়েরাতো কোন কিছু শুনবেনা তাদের চাহিদার কিছুনা কিছুতো করার দরকার।
আজ আ্ব্দুল আওয়ালের মন একেবারে খারাপ , আসরের নামাজ পড়ে বাজারের মসজিদে বসে ভাবছে আজকে বাড়ী গিয়ে ছেলেমেয়েদের সামনে কি নিয়ে দাড়াবো ? ছেলেমেয়েরা এসে জিজ্ঞাস করবে আব্বা আমাদের জন্য কি এনেছেন তখন আমি কি বলব?
আব্দুল আওয়াল সকাল সকাল বাজারে আসার উদ্দেশ্য ছিল এক লোক ঈদের সময় কিছু টাকা সাহায্য দিবে বলেছিল যদি সে টাকাটা দেয় তবে সন্তানদের জন্য কিছু কিনে নিবেন কিন্তু বাজারে আসার পর জানতে পারলেন সেই লোকটি ঢাকা গিয়েছে খুব সম্ভবত ঈদের আগের রাত ফিরবে। এই কথা শুনার পরে আব্দুল আওয়ালের মাথাটা চক্কর দিয়ে বসে পড়েছিল।
আব্দুল আওয়াল বসে বসে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষতে কষতে একসময় হারিয়ে গেলেন অতিতের দিনগুলির মধ্যে।
আব্দুল আওয়ালের বাবা ছিলেন নৌকার মাঝি সবসময় তার বাবার কাছে টাকা থাকতো তাদের সংসারে অভাব কখনো ছিল না।
বাড়ির কাছে ছিল গাং লোকজন এপার থেকে ওপারে যেতে ১ পয়সা দিত । বাবা সারদিন হাড়ভাংগা খাটুনির পরেও বাড়ি ফিরতো মনে ফুর্তি নিয়ে। বাজারে যতরকম ফলফলাদি পাওয়া যেত বাবা জান কিনে আনতো। সেই সময়টাতে ধনী ও দরিদ্রদের মাঝে তেমন পার্থক্য ছিল না শুধু মাত্র পার্থক্য ছিল জমাজমি থাকা আর জমাজমি না । কারন তখনকার দিনে টাকার মুল্য ছিল বেশী।
আজ সেই গাং যেন গল্পের যাদুকর বনে গেছে , গাংকে দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না যে একসময় এই গাং দিয়ে পালতোলা নৌকা সুদুড় যশোর খুলনা কুষ্টিয়া বা দেশের প্রত্যান্ত এলাকায় চলে যেত । এখন সেই গাং দিয়ে বড় বড় গাড়ি চলে অনেক বড় বড় রাস্তা হয়েছে সেখানে ।
অনেক বছর পরে আব্দুল আওয়াল সেই স্মৃতি মন্থন করলো।
আগরে যুগে গরিব লোকেরা ফুটপাথের কাপড়চোপড় কিনত ছেলেমেয়েদেরকে কোন রকম বুঝ দেওয়ার জন্য আর আজকাল সেখানে সবশ্রেনীর লোকের সমাগম ঘটে যার কারনে এখন ফুটপাথেও কোন কিছু সস্তা নাই। ধনীদের ভিড়ে আজ ফুটপাথ আজ গরিব শুন্যপ্রায়। ধনীরা ফুটপাথে আসে টাকা বাচাতে আর দরিদ্ররা আসে ইজ্জত ঢাকতে।
ঈদ এলো ধনীদের জন্য খুশীর খবর নিয়ে তাদের সন্তানরা চাহিদা মতো জিনিসপত্র পাইবে আনান্দ ফুর্তি করবে এটাই স্বাভাবিক।
আব্দুল আওয়া মনে মনে ভাবছে যদি এমন হতো যে জীবনে আর কখনো ঈদ ফিরে না আসতো তবে আমরা ভালই থাকতে পারতাম। এই ঈদের কারনে প্রতিটা বছর আমাদের চোখের পানি ঝরে। আমাদের জীবন কষ্টের ভিতর চলে সারা বছর এই কষ্টটা আমাদের সৈহ্য হয়ে গেছে ,এই কষ্টের মধ্যে ঈদ আসলেই আমরা কষ্ট পাই বেশী কারন দুমুঠো ভাতের জোগাড় যেখানে কষ্টের ভিতর দিয়ে হয় সেখানে আমরা ঈদ করব কিভাবে?
তা্ই আসুন সকল ভাইদের কাছে আবেদন করি যদি আবার আমাদের মাঝে আগামি বছর ঈদ ফিরে আসে এবং সামর্থ থাকে তবে আমার আপনার প্রতিবেশীর মধ্যে যারা বেশী অভাবী তাদের সহযুগিতায় হাত বাড়াই ,আল্লাহ খুশি হবেন নবী খুশী হবেন এবং পরকালে এর প্রতিদান পাব।
আমিন সুম্মাআমিন
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবু ঈদ আসুক
বারবার
হাজারবার-
তারাও তো সুযোগ পায়
কিছু বিলাবার-
যাদের অন্তরে কাঁদে
গরীবের হাহাকার
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন