মরক্কোয় জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী দলের বিজয়,বাংলাদেশে কবে?

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত হোসাইন ২২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:১১:৫৩ দুপুর

মরোক্কোর জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেলেপমেন্ট পার্টি (পিজেডি) দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছে। মরোক্কোয় ইসলামপন্থী দলের বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের ঘোষণা আরব ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর আবারো ফিরে আসার ইঙ্গিত হিসাবে দেখা হচ্ছে। জর্ডানেও মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ইসলামিক অ্যাকশন ফ্রন্ট ভালো ফলাফল করেছে।

মরোক্কোর নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পিজেডি ২০১১ সালের তুলনায় বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে। ১০৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ আসন। অপর দিকে পিজেডির প্রধান প্রতিপক্ষ সেকুলারদের জোট পিএএম ১০২ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। মরোক্কোর নির্বাচনব্যবস্থা বেশ জটিল। ৩৯৫ সদস্যের পার্লামেন্টে ৯২টি নির্বাচনী এলাকা থেকে ৩০৫ জন সদস্য নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত আছে ৯০টি আসন। ৬০টি নারীদের জন্য বাকি ৩০টি ৪০ বছরের কম বয়স এমন তরুণদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। সংসদে আসন পেতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যূনতম ৬ শতাংশ ভোট পাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দলগুলোর ভোটের ভিত্তিতে আসন পাওয়ায় এককভাবে কোনো দল সরকার গঠন করতে পারে না। অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়।

সর্বাধিক আসন পাওয়া দলকে বাদশাহ সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। ২০১১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পিজেডি রক্ষণশীল ও রাজপ্রাসাদের সাথে ঘনিষ্ঠ ইসতিকলাল পার্টির সাথে জোট গঠন করে সরকার গঠন করে। ২০১৩ সালে ইসতিকলাল পার্টি সরকার থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু বিরোধী দলের রাজনৈতিক সমর্থন থাকায় সরকার তার মেয়াদ পূরণ করে।

এবারো পিজেডিকে তৃতীয় দল ৪৬ আসন পাওয়া ইশতিকলাল, ৩৭ আসনে বিজয়ী আর এন আই, ২৭ আসন পাওয়া পপুলার মুভমেন্ট ও ২০ আসন পাওয়া ইউএসএফপির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে। বাদশাহীর এই দেশে অবাধ রাজনীতির সূচনার পর এক দশকও হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যথেষ্ট সংহত হচ্ছে। বর্তমান ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রীর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করা হয়। পেশায় শিক্ষক থেকে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বেনকারিন দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। জনকল্যাণকর কিছু কর্মসূচি ও অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী বেনকারিন বলেছেন জনগণের সেবার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তা অব্যাহত থাকবে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পিজেডির সেক্রটারি ও প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বেনকারানির সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নেয়া। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নি¤œগতির দিকে যাচ্ছে। যদিও জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে। এখন বিপুলসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের দিকে সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। যদিও রাষ্ট্র পরিচালনায় সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বাদশাহ বেশি ক্ষমতাবান।

২০১১ সালে আরব বসন্তের ধাক্কা মরোক্কোতেও লেগেছিল। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছিল। পরিস্থিতি যাতে অন্য আরব দেশের মতো না হয় সে জন্য বাদশাহ ষষ্ঠ মোহাম্মদ দ্রুত কিছু সংস্কার কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর মধ্যে পার্লামেন্টে আরো বেশি ক্ষমতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সংবিধানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। যদিও বাদশাহর হাতে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা। বাদশাহ বিচারক, নিরাপত্তা পরিষদ এবং মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। পার্লামেন্টে যেকোনো আইন তার অনুমোদনের জন্য পেশ করতে হবে। কোনো দল রাজতন্ত্রের বিরোধী নয়।

মরোক্কোর নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের দ্বিতীয়বারের মতো ফিরে আসার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জর্ডানের বাদশাহর মতো মরোক্কোর বাদশাহ ইসলামপন্থী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে ঠেলে দেননি। বরং নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনায় ইসলামপন্থী দলগুলোর উত্থান ঘটেছিল। প্রথম সাফল্য এসেছিল তিউনিশিয়ায় পরে মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু সেনাবাহিনী ও সেকুলারদের দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতা স্থায়ী হয়নি। তিউনিসিয়ার ইসলামপন্থী দল আননাহদা স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে জাতীয় স্বার্থে সহাবস্থানের রাজনীতিতে নতুন মডেল হিসেবে হাজির হয়েছে। অপর দিকে, মিসরের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সেনাতন্ত্র জেঁকে বসেছে। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার সরিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল এ অঞ্চলে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

মরোক্কোয় পিজেডির বিজয় ও আবারো সরকার গঠন আরব ও উত্তর আফ্রিকায় ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক শক্তি ফিরে আসার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আরব বিশে^ মধ্যপন্থী দল হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী রাজনৈতিক দলের বিকল্প যেমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই, তেমনি এই দলগুলো যথেষ্ট জনপ্রিয়। সীমিত আকারে হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে মরোক্কোর পথ অন্য বাদশাহ শাসিত দেশগুলো ধীরে ধীরে গ্রহণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে শাসকেরা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে একধরনের সমঝোতার পথেও এগোতে পারেন।

বিষয়: রাজনীতি

১২৬৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378931
২২ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০১:১৯
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২২ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০২:২০
313867
আরাফাত হোসাইন লিখেছেন : অাপনাকেও ধন্যবাদ
378946
২২ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো /
২৪ অক্টোবর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০৫
313904
আরাফাত হোসাইন লিখেছেন : অালহামদুলিল্লাহ,ভাল থাকবেন
378952
২২ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০৯:০৮
নিমু মাহবুব লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
ভালো লাগল,ধন্যবাদ। Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Rose Rose Rose Rose
২৩ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৮:২৮
313879
আরাফাত হোসাইন লিখেছেন : অাপনাকেও ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File