দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র নেই। যদি গণতন্ত্র থাকত, তাহলে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো---ড. আকবর আলি খান
লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত হোসাইন ১৭ জুলাই, ২০১৬, ০৬:৫৫:৫০ সন্ধ্যা
দেশে একদিকে উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে সুশাসনের ঘাটতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে— এই যে বৈপরীত্য, এটাকে বেশ কয়েকভাবে দেখা যেতে পারে। কেউ কেউ বলেন, আসলে বাংলাদেশে সরকারি খাতের উন্নয়ন খুব টেকসই হয় না। সেজন্য সরকারের শাসনের সঙ্গে দেশের উন্নয়নের কোনো যোগাযোগ নেই। আমার মনে হয়, এটা সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা নয়। এক্ষেত্রে দুটি তত্ত্ব আমাকে আকর্ষণ করে। এর একটি দিয়েছেন হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক প্রিচসেট। তিনি বলেন, সুশাসন ও উন্নয়নের মধ্যকার সম্পর্ক সরলরৈখিক নয়। অর্থাত্ সুশাসন বাড়লে উন্নয়ন হবে, এমন নাও হতে পারে। এটা হলো বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক। যখন একটি দেশ খুব নিম্নপর্যায়ে থাকে, তখন সুশাসন ও উন্নয়নের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকে না। আবার যখন একটি দেশ মধ্যপর্যায়ে চলে যায়, তখন মধ্যপর্যায় থেকে উচ্চপর্যায়ে উত্ক্রমণে সুশাসন ও উন্নয়নের নিবিড় সম্পর্ক থাকে। বাংলাদেশ খুব নিম্নপর্যায় থেকে শুরু করায় এখানে উন্নয়নের জন্য সুশাসনের খুব একটা প্রয়োজন পড়েনি। দেশ যখন পূর্ণমাত্রায় মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে, তখন সুশাসনের ঘাটতি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আমার কাছে এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে হয়।
আমাদের এখানে একদিকে দারিদ্র্য কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে। কমাটা নিয়ে আমরা সবাই হইচই করছি, কিন্তু যেদিক দিয়ে বেড়েছে, সেটা নিয়ে কিন্তু কথা বলছি না। আমরা সত্তরের দশকে বিআইডিএসের গবেষক ড. মহিউদ্দিন আলমগীর কর্তৃক দেয়া দারিদ্র্যসীমা পরিমাপক দিয়ে এখনো দারিদ্র্যের হার নির্ণয় করি। তিনি হিসাব করে দেখান, দরিদ্র মানুষের ন্যূনতম চাহিদা কি। সেসব পণ্য ও সেবা ক্রয়ে কত টাকা খরচ হয় এবং তা মেটানোর জন্য তাদের যে আয়, তা দারিদ্র্যসীমার উপরে থাকলে তারা দরিদ্র নয়। আর নিচে থাকলে তারা দরিদ্র। কিন্তু পণ্যের যে হিসাব করা হয়েছিল, তা তখনকার জন্যও ঠিক ছিল কিনা সন্দেহ আছে। প্রথমত. সেখানে আবাসনের জন্য কোনো অর্থ নেই। স্বাস্থ্যসেবার জন্য অর্থ নেই। কেবল খাবারের হিসাবটা আছে। দরিদ্র মানুষ তো কেবল খাদ্য পরিভোগ করে না। তাদের বসবাসের এবং স্বাস্থ্যসেবারও ব্যবস্থা করতে হয়। এসব বিষয় ওই হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
বাংলাদেশে অসুবিধা হলো, এখানে অর্থনীতি যতটা ভালো করছে, রাজনীতি তত খারাপ হচ্ছে। রাজনীতিতে আজকে বিতর্ক হওয়া উচিত, জনসংখ্যাকে কীভাবে কাজে লাগাতে পারব, কীভাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন করব, বিপুল জনসংখ্যার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারব ইত্যাদি। কিন্তু সেটা না করে আমরা পরস্পরের সঙ্গে অত্যন্ত বিচ্ছিরিভাবে ঝগড়া করছি। দুর্ভাগ্যবশত আজকের সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আদৌ কোনো আলোচনা হচ্ছে না। এজন্য আমি শঙ্কিত যে, অন্তত যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তখন আমাদের একটা চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল জাতিকে এগিয়ে নেয়ার; এখন সেই আকাঙ্ক্ষা নেই। আজকে সবাই উল্লাসে মত্ত— খুব ভালো করছি। এ উল্লাস বেশি দিন টিকবে না।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যারা পয়সা খরচ করতে পারে, তারা মানসম্মত সেবা হয়তো পাচ্ছে। এটা আরো উন্নত করা সম্ভব। কিন্তু যারা পয়সা খরচ করতে পারে না, তারা এ সেবা থেকে নিদারুণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মান সরকারের পক্ষ থেকে পরীক্ষণও করা হচ্ছে না। আমরা খুব উত্ফুল্ল যে, এক লাখ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাস করছে। কিন্তু কী মানের পরীক্ষায় পাস করছে, তার হিসাব নেই। এগুলো নিয়ে কেউ চিন্তা করছে না। আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে না সাজালে সুফল পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো, শহর ও গ্রাম— এই দুই অঞ্চল নিয়েই পরিকল্পনা করা এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন। গ্রামাঞ্চলে কাজ হচ্ছে না, অর্থ যাচ্ছে না— সেটা যেমন সত্য; আবার শহরাঞ্চলের সমস্যাগুলো এত তীব্র যে, সে তুলনায় সম্পদও যাচ্ছে না, কাজও হচ্ছে না। কাজেই বাংলাদেশ পরিবেশগত দিক থেকে মহাবিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছে।
আমার হিসাবে পদোন্নতির আগেই যে অতিরিক্ত পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, তাতে সরকারের ১০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তার মানে পাঁচ বছরে ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এটা বিরাট ক্ষতি। সরকার এ ক্ষতি মেনে নিতে পারে। কারণ সরকার যখন তাদের নিয়োগ দিয়েছিল, তখন যেসব বিষয় দেখা উচিত ছিল, সেগুলো দেখা হয়নি এবং প্রশাসনের কাঠামো ছিল না। তারা পদোন্নতি না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল, সরকার তাদের পদোন্নতি দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। সেটা নিয়ে আমার আপত্তি নেই।তত্ত্বাবধানের কর্মকর্তা নেই। সুতরাং সেখানে কাজ বাড়ছে, ফাইল নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এখানে লোকগুলো উপযুক্ত কি উপযুক্ত নয়, এটা বড় প্রশ্ন নয়। বিবেচ্য হলো, যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে নিচের পদে লোক নেই। অথচ যারা কাজ করে না (তত্ত্বাবধায়ক), তাদের পদ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়ছে। শুধু ১০০ কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে না, প্রশাসনের গতিশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এটা নিয়ে তর্ক-বির্তকও হচ্ছে না। কারণ দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র নেই। যদি গণতন্ত্র থাকত, তাহলে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো।
.............................................................................................................................................ড. আকবর আলি খান
http://bonikbarta.com/news/2016-07-17/80635/সà§à¦¶à¦¾à¦¸à¦¨-না-থাকলে-পà§à¦°à¦¬à§ƒà¦¦à§à¦§à¦¿-দরিদà§à¦°--মানà§à¦·à§‡à¦°-কাজে-লাগবে-না--/
বিষয়: বিবিধ
১১৬৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন