ছোটগল্প: দুয়ার

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত হোসাইন ২৪ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৮:১৬:৫৯ রাত

মুক্তির একটাই পথ সমাজতান্ত্রীক বিপ্লব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দেয়াললিখনটি নজর কাড়ল মুহিনের।কথা সত্য মুক্তির পথ একাধিক নয়।আচ্ছা, পথের ঠিকানাটা সঠিক তো ? সব মানুষের যৌক্তিক চাহিদা ও উৎপাদন ক্ষমতা সমান নয়, এর উপর রাষ্ট্র পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে তা পূর্ণরুপে বিকশিত হওয়ার সুযোগ কোথায়।বেশিরভাগ সময় তা অতি আবশ্যকীয় যোগান চাহিদার সীমানায় পৌছাতওে বাঁধার সম্মুখীন হয়।তা নাহলে চীন রশিয়ার মত দেশ খাঁটি সমাজতন্ত্র হতে ক্রমে উদারপন্থী সমাজতন্ত্রের দিকে এগুচ্ছে কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ণিজ্য অনুষদ, চার তলার বারান্দায় পলাশকে দেখে নীলা হাই বলল। সাথে সাথে পলাশের জবাব, হায়, হায়!

নীলার পাল্টা প্রশ্ন, মানে কি?

যেভাবে বনলতা সেন হয়ে এসেছিস, আমাকে যে যুদ্ধে নামতে হবে।

বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্রমেদেনী, বুড়ো আঙ্গুল উঁচিয়ে নীলার জবাব।

পাশে দাঁড়ানো মুহিন বলল, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।

ম্যাম আসছে রব উঠতে বারান্দাশুদ্ধ ছাত্রছাত্রীরা তড়িঘড়ি করে ক্লাসরুমে ঢুকল।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত ছিমছাম ফিন্যান্স বিভাগের ক্লাসরুম।মঞ্চে ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে শিক্ষিকা দাঁড়িয়ে । কালো বোরকা, কালো জুতা পায়ে, রুচিশীল মধ্যবয়স্ক মহিলা।এই বিভাগের ক্লাসে পড়াশোনার বাইরের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না বললেই চলে কিন্তু আজকের সূর্য্ সম্ভবত পূর্বদিকে উঠে নি।শিক্ষিকা একটি গল্প বলা শুরু করলেন, গল্পটা এরকম নভেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের শান্ত স্নিগ্ধ কোন এক দরিদ্র গ্রমে হঠাৎ বন্যা দেখা দিল।পাকা ধান বানের পানিতে তলিয়ে গেছে, রাস্তা ঘাট ঘরবাড়িও বাদ যায় নি।কর্ম হীন এ জনপদে খাদ্যাভাব দেখা দিল।ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন রাখলেন, এ সমস্যার সমাধান কি?

রাহাত উত্তর দিল, গ্রমের ও আশেপশের মানুষকে ত্রান সহেযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।অদিতি যোগ করল, সবাই মিলে চাঁদা তুলে খিঁচুড়ি রান্না করে খা্ওয়ালে খাদ্য সমস্যা মেটানো সম্ভব ।

শিক্ষিকা বললেন ভাল উদ্যোগ, কিন্তু কদিন তারা খাওয়াবে? তাছাড়া দুর্গত গ্রামবাসীর খাদ্য ছাড়াও আরো চাহিদা আছে।

এবার কৌশিক বলল, অর্থ সাহায্য দেয়া যেতে পারে

শিক্ষিকা বললেন, অনন্ত কাল ধরে অর্থ সাহায্য দেয়া সম্ভব কি? তাছাড়া এতে সমস্যার ক্ষুদ্র একটা অংশের সমাধান হবে মূল সমস্যা রয়েই যাবে, একমাত্র রাষ্ট্র এগিয়ে আসলে পুরোপুরি সমাধান সম্ভব।

পিনপতন নিরবতা ক্লাসরুমজুড়ে।তুরণ তরুণীদের ভাবনার জগতে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।শিক্ষিকা নিজেই মুখ খুললেন,মূল সমস্যা অসময়ে বন্যা, খোঁজ নিয়ে জানা গেল গ্রামের পাশ বয়ে যাওয়া নদীতে সরকারী বাঁধের ফলে বন্যার সৃষ্টি।অনেকসময় রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহলের কোন কোন সিদ্বান্ত জনকল্যাণ না করে জনদূর্দশা র্সৃষ্টি করে,অবশ্য মুষ্টিমেয় কিছু লোক এতে সুবিধা পায়।জনমত যাচাই না করে সিদ্বান্ত নিলে এরকম হতে পরে।

সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং জটিল বিষয়ের মুখোমুখি ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা।কারো মুখে কোন কথা নেই।গম্ভীর মুখ নিয়ে ভাবনার অতল সমুদ্রে ডুবে আছে সবাই।

পরিস্থিতি হালকা করার জন্য শিক্ষিকা ভিন্ন দিকে মোড় নিলেন।কয়েকজনের কাছে জীবনের লক্ষ্য জানতে চাইলেন।কেউ ব্যাংকার,কেউবা গবেষক,পরামর্শক,অনেক ব্যাবসায়ী,উদ্যোক্তা আরো আরো অনেক কিছু হতে চায়।শিক্ষিকা আবার শুরু করলেন,আমাদের চিন্তা ভাবনা একটি গণ্ডির মধ্যে আটকে গেছে,আমরা ভাবি ছাত্রজীবণে পড়াশুনা,বন্ধুবান্ধব,প্রেম,আড্ডায় মেতে থাকব,এরপর চাকরী,অঢেল টাকার হাতছানি, একসময় বিয়ে সংসার,তারপর বুড়ো হয়ে পরপারে চলে যাওয়া।সৃষ্টির সেরা জীবের জীবণ উপভোগের ভাবনা এমন হলে এত সমস্যার সমাধান হবে কিভাবে? পৃথিবীর আলো হাওয়া মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব কি এতই ক্ষুদ্র?

এ জীবণধারা বদলে দিতে গর্জণ করে উঠল কিছু হাত,ধীরে ধীরে ক্লাসের সবাই শরিক হল তাদের সাথে।কিন্তু কিভাবে সম্ভব চিরচারিত এ নিয়মকানুন ঢেলে সাজানো?

শিক্ষিকাই উত্তর দিলেন,নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে না পৌছালে কিছুই করা সম্ভব নয়,এককভাবে নয় যা করতে হবে তা যেন সংঘবদ্ধভাবে হয়,যত বেশি লোকের সমর্থন পা্ওয়া যাবে তত শক্তিশালী হবে সংগঠন।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বিশ্বাস, নৈতিকতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা।এসব বিষয়ে এতটুকু ছাড় মানে লক্ষ্য অর্জনে সহস্র ধাপ পিছিয়ে পড়া।তারুণ্যের শক্তি অসীম,চিন্তার জগত প্রসারিত করে,আর্দশের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে,জগতের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ শুরু করলে জয় তারুণ্যের হবেই।

ক্লাস শেষে মধুর ক্যান্টিনের পথ দরে টিএসসির দিকে যাচ্ছে মুহিন আর কৌশিক।কৌশিক হলে থাকে, মিরপুর যাচ্ছে ছোট খালার বাসায়।কথায় কথায় হলের প্রসঙ্গ উঠল,কৌশিক বলল-

শুধু রাজনিতীক কর্মসূচির বিষয়টা বাদ দিলে, হলে থাকাটা বেশ ভালই।

মুহিন যোগ করল, রাজণীতি তো খারাফ না, ওদের একটা আর্দশ আছে, লক্ষ্য আছে।

আদর্শ ! হ্যাঁ, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ানোই আদর্শ অন্যায়ভাবে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাই লক্ষ্য।

সবাই তো একরকম নয়

তা ঠিক, কিন্তু জনাব, রকমফের চিন্তা করলে হলে থাকা অন্যায় হয়ে দাঁড়াবে।

মুহিনকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে, তাই বলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে হবে এটা সে মানতে পারছে না।তাছাড়া আজকের ক্লাশে ম্যামের কথা তাকে অন্য জগতে নিয়ে গেছে।জীবণ সমন্ধে এতকালের লালিত ভাবনা আচমকা অর্থহীন হয়ে পড়েছে, নিজেকে খুব সংকীর্ণমনা মনে হচ্ছে।

হঠাৎ খেয়াল করল কেন্দ্রীয় মসজিদের দিকে দলে দলে লোকজন প্রবেশ করছে, হ্যাঁ একটু আগেই তো যোহরের আযান হল।মুহিনের মা সবসময় তাকে নামাযের কথা বলে।তার মনে হল, আজ মায়ের কথা শুনতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

৯৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File