গল্প : আন্তরিকতার সহিত চাইলে আল্লাহ কাউকেই নিরাশ করেন না...
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ আহমেদ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৪:১০:০৮ বিকাল
কাহিনীটা হচ্ছে একজন ডাক্তারের । উনার জীবনে ঘটে যাওয়া এক সত্য কাহিনী। তিনি হচ্ছেন পাকিস্তানের এক অন্যতম বিখ্যাত স্নায়ু চিকিৎসক । উনার নাম হচ্ছে ঈষান । শুধু উনার এপয়েন্টমেন্ট পেতে হলে মাঝে মাঝে ১ মাসের মত অপেক্ষা করতে হয় রোগীদেরকে । খুবই ব্যস্ত থাকেন তিনি । উনাকে প্রায়ই
প্লেনে করে এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় যেতে হয় চিকিৎসার কাজে। তিনি বললেন, একদিন আমি প্লেনে করে যাচ্ছিলাম । হঠাৎ করেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেল সারা আসমান । বজ্রপাত, বৃষ্টি এবং ঝড় হাওয়া শুরু হয়ে গেল । তখন হটাৎ করেই আমাদের প্লেনের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিল এবং সেখানের কোন এক এয়ারপোর্টে আমাদের প্লেনকে ল্যান্ড করতে হল। যে এয়ারপোর্টে আমরা নামলাম সে যায়গাটা ছিল শহর থেকে অনেক দূরে । এবং সাথে সাথে ইঞ্জিন ঠিক করার জন্য দক্ষ কারিগর সেখানে ছিল না। আমাদেরকে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না । কিন্তু আমার জরুরী কাজ ছিল যেখানে পৌঁছানো আমার জন্য খুবই জরুরী । আমি ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলাম, - কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে ? -- ক্যাপ্টেন বললেন, ঠিক বলা যাচ্ছে না, কিন্তু
অনেক্ষন অপেক্ষা করতে হবে । - আমি বললাম, কিন্তু আমার তো সেখানে পৌঁছা খুবই দরকার । -- ক্যাপ্টেন বললেন, তাহলে আপনি গাড়ি করে চলে যান না কেন ? এখান থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার রাস্তা । এ ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না। তাই আমি গাড়ি করেই রওয়ানা দিলাম । কিছু দূর যাওয়ার পর আবার সেই ঘন কালো মেঘ, বৃষ্টি আর ঝড় শুরু হয়ে গেল। যেহেতু গ্রামের মাটির রাস্তা তাই বৃষ্টির কারণে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না । কারণ বৃষ্টির কারণে রাস্তায় এত কাদা হয়ে গিয়েছিল যে গাড়ির চাকা কাদার মধ্য দিয়ে চলছিল না। তখন কিছুদূর সামনে একটা বাড়ি দেখতে পেলাম । ঠিক করলাম ঐ বাড়িতে গিয়ে বৃষ্টি থামার আগ পর্যন্ত যদি আশ্রয় পাই তাহলে নামাজ আদায় করতে পারব। আমি ঐ বাড়িতে গেলাম এবং দরজায় নাড়া দিলাম । এক বৃদ্ধ মহিলা দরজা খোললেন এবং আমাকে ভেতরে আসতে বললেন । আমি বৃদ্ধ মহিলাকে সবকিছু বললাম এবং নামাজ পড়ার অনুমতি চাইলাম। বৃদ্ধ মহিলা আমাকে ভেতরে আসতে বললেন । ভেতরের রুমে একটা জায়নামাজ ছিল এবং জায়নামাজের পাশে এক ছোট্ট ছেলে শুয়ে ছিল । একটু পর পর বৃদ্ধ মহিলা ছেলেটির পাশে এসে বসে দেখে যেতেন ছেলেটি কেমন আছে এবং তার পাশে বসে বসে দো'আ করতেন । বেশ কিছুক্ষণ পর আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, - ছেলেটির কি হয়েছে ? -- বৃদ্ধ মহিলা বললেন, ছেলেটির মা-বাবা কেও নেই । আমি ওর নানী। ছেলেটা খুবই অসুস্থ । আশেপাশের সকল ডাক্তারকে দেখিয়েছি কিন্তু কোন কিছুই হচ্ছে না। এখানকার ডাক্তাররা বললেন, শহরে একজন ভাল ডাক্তার আছে, যে হয়তো এই ছেলেটার ভাল চিকিৎসা করতে পারবে । আমি অনেক চেষ্টা করেছি সে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নেয়ার জন্য কিন্তু তারা বলেছে ছয় মাস পর যোগাযোগ করার জন্য, ছয় মাসের আগে সেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না । সেদিন থেকে আল্লাহ'র কাছে দো'আ করছি, "হে আল্লাহ, আমাদের জন্য সহজ করে দেও । ছেলেটা অসুস্থ, হে আল্লাহ ।
আমাদেরকে সাহায্য কর । তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে ডাক্তারের নাম
কি ? বৃদ্ধ মহিলা বললেন, ডাক্তার ইষান এই কথা শোনার সাথে সাথেই আমি কাঁদতে শুরু করলাম । তখন আমার বুক ফেটে কান্না বের হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। বৃদ্ধ মহিলা আমাকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
-- আপনি কেন কাঁদছেন ? আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, - আপনার দো'আ আল্লাহ কবুল করেছেন । শুধু আপনার দো'আ, আল্লাহ কবুল করেছেন বলেই, এই ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত এসে আমাদের প্লেনকে থামিয়ে দিল, তারপর যখন গাড়িতে করে যাচ্ছিলাম তখন আবার সেই ঝড়, বৃষ্টি আর বজ্রপাত আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে । আর আপনাকে প্রশ্ন করার সাথে সাথেই বৃষ্টিও থেমে গেছে । ডাক্তারের কথা শুনে বৃদ্ধ-মহিলাও কাঁদতে শুরু করলেন । এই কাহিনী বলার পর ডাক্তার ঈষান বললেন, সেদিন আমি শিখেছি, আল্লাহ যার ভাল চান তার জন্য যা কিছু সম্ভব তা তিনি নিজেই করেন । অবশেষে ডাক্তার ঈষান ছেলেটির চিকিৎসা করেছিলেন।
ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
বিষয়: বিবিধ
১৯৭৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্লেন চলে মেঘের অনেক উপর দিয়ে ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন