ঢাকার পুলিশ কমিশনারের কাছে খোলা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন নেনাভাই ২২ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:২৫:১১ সকাল
মান্যবর জনাব, অভিশপ্ত এবং বিষাক্ত ঢাকা মহানগরীর বেদনা ভারাক্রান্ত কোটি মানুষের পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা। আপনি হয়তো কিছুটা অবাক হয়ে ভাবতে পারেন কেন আমি ঢাকা নগরীকে অভিশপ্ত এবং বিষাক্ত বললাম! বিষাক্ত ঢাকার বহুমুখী বিষ এবং রংবেরঙের আশীবিষ সম্পর্কে কম-বেশি অনেকেই জানেন। কিন্তু অভিশপ্ত ঢাকা সম্পর্কে হয়তো খুব কম লোকেই জানতে পারে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটি একটি অভিশপ্ত নগরী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মোগল সুবেদার ইসলাম খান এবং তার কামানের ইতিহাস পড়লে ঢাকা সম্পর্কে আপনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। পরবর্তীতে শায়েস্তা খানের আমলে লালবাগের দুর্গ নির্মাণ, তার কন্যা পরীবানুর মৃত্যু এবং শাহজাদা মোহাম্মদ আজমের নির্মম পরিণতি শুনলে আপনি ভয়ে ওই এলাকায় রাত-বিরাতে যেতে সাহসী হবেন না। মোগল সাম্রাজ্যের পতন এই ঢাকা থেকেই শুরু হয়েছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজিম উস শান এবং দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খানের বিরোধের জের ধরে রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ চলে যাওয়ার পর থেকেই দিলি্লতে একের পর এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। ঢাকার হীরাঝিল প্রাসাদ ষড়যন্ত্রেই নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতন হয়েছিল। আবার ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে ঘসেটি বেগমের মৃত্যু হয় অনেকেই জানেন। তারপর ১৯৫৪ সালে এই ঢাকাতেই মুসলিম লীগের পতন শুরু হলো। এই সেই ঢাকা- যেখানে জাতির জনক সপরিবারে নিহত হলেন। আপনি যেখানে বসে কর্ম পরিচালনা করেন ওই স্থানের লাল ভবনটির অভিশপ্ত কাহিনী তো আপনার অজানা থাকার কথা নয়। অতীত ইতিহাসের সব অভিশাপের গ্লানি নিয়ে ঢাকার আকাশ কীরূপে কাঁদছে কিংবা ঢাকার বাতাস কীভাবে গন্ধ ছড়াচ্ছে তা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন শহরবাসী মানুষ, জীবজন্তু, জানোয়ার, গাছপালা ও পশুপাখির দুরবস্থা এবং আচার-আচরণে অদ্ভুত অদ্ভুত সব পরিবর্তন ও বিবর্তন অনুধাবনের মাধ্যমে।
ঢাকার মানুষ রাস্তাঘাটে হাঁটতে ফিরতে এখন আর হাস্যরস করে না। প্রতিটি গৃহের মধ্যে ঢুকে গেছে চাপা কান্না। শোনা যেত একসময় ঢাকার ঘোড়াগুলোও নাকি হাসত। কিন্তু সেদিন এখন আর নেই। শহরে কোনো বানর নেই। কখনোবা কদাচিৎ পুরান ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় হাতেগোনা দু-চারটি বানর দেখা গেলেও তা আপনাকে হতাশ করবে। ওরা মানুষের বাঁদরামোর কাছে পরাজিত হয়ে সারা দিন মুখ ভার করে থাকে। ঢাকার কুকুরগুলোও যেন কেমন কেমন করছে। সেগুলো আর আগের মতো ঘেউ ঘেউ করে না। রাস্তায় চলাফেরার সময় জিহ্বা বের করে হাঁটে না। আশ্বিন-কার্তিক মাসে কুকুর-কুকুরীরা আর আগের মতো মিলনের জন্য ছোটাছুটি করে না। আপনি যদি কাকের দিকে তাকান তবে দেখবেন, দাঁড়কাক একটিও নেই। পাতিকাকের সংখ্যা ভয়ানকভাবে কমে গেছে। ওরা ডাকাডাকিও করে না! আগে দেখা যেত শত শত কাক নির্জন রাস্তায় লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে এবং দুই ঠোঁট ফাঁক করে ঘাড় বাঁকা করে বারবার পথচারীদের দিকে তাকাচ্ছে। সেই দৃশ্য এখন আর নেই। ঢাকার বাতাসকে আপনি আর মৃদুমন্দ বাতাস অর্থাৎ ইজঊঊতঊ বলতে পারবেন না। এই বাতাসে প্রাণ জুড়ায় না কিংবা শরীর ঠাণ্ডা হয় না বরং মন বিগড়ে দেয়।
আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন কেন আমি এতসব বলছি কিংবা এসব জেনে আপনার কিইবা লাভ হবে। হবে, অনেক লাভ হবে। বিশাল এই মহানগরীর আপনিই হলেন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একমাত্র অভিভাবক। নগরবাসীদের পিতা ছিল। হানিফ সাহেবের মৃত্যু এবং খোকা সাহেবের বিদায়ের পর এখন আমরা পিতৃহীন ইয়াতিম। নগরকে দুভাগ করে দুজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত তিন-চার বছরে কতজন যে এলো এবং কতজন যে গেল তা আমরা বলতে পারব না। ওইসব প্রশাসককে নগরপিতা বলার মতো রুচি এ শহরের মানুষ তো দূরের কথা, পশুপাখিরও নেই। এ ছাড়া আবহমান বাংলায় দুজন মায়ের কথা শুনেছি, কিন্তু দুজন পিতা! ছি! ওমন কথা মুখে আনাও পাপ! এরপর যদি ধরেন অন্য সরকারি পদ যেমন ডিসি, বিভাগীয় কমিশনার, এসপি, জেলা জজ প্রমুখ কেউই এই মহানগরীর জন্য এককভাবে কিছু করার জন্য সামর্থ্যবান নন কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত নন। সেদিক থেকে একমাত্র আপনার পদ ও পদবি সমগ্র রাজধানীবাসীর ওপর এককভাবে কর্তৃত্ববান। তাই ইয়াতিম রাজধানীবাসী আপনাকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে বিশেষত আপনার সফল ফরমালিন-বিরোধী অভিযানের পর থেকে।
কোনো দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে কোনো কিছু বলতে বা কোনো কিছু চাইতে লম্বা একটি ভূমিকা দিতে হয়। নইলে ভদ্রলোকের মান রক্ষা হয় না। এটাই নিয়ম এবং এটাই ঐতিহ্য- আর আমি সেই নিয়ম এবং ঐতিহ্যের পথ ধরেই হাঁটছি। আজ আপনি যে পদে আছেন, তার গুরুত্ব এবং ওজন অনেক বড়। আমার শৈশবে শুনতাম আমার কাকা অতিরিক্ত আইজি। ইতিপূর্বে পাকিস্তান আমলে আমার এক দাদা ছিলেন আইজি। তারা অবশ্য কোনো দিন গ্রামে যেতেন না। আমাদের গ্রাম পরিচালনা করতেন চকিদার, দফাদার এবং মাতব্বর সাহেব। গ্রামবাসী তাদের শ্রদ্ধা করত, মর্যাদা দিত এবং যমের মতো ভয় করত। চকিদাররা কেমন মাননীয় ছিলেন তার একটি উদাহরণ আপনাকে বলছি- গ্রামে কোনো নবজাতকের জন্ম হলে মা-চাচিরা চলে যেতেন চকিদার বাড়িতে। চকিদারের পুরনো চামড়ার বেল্ট থেকে ছোট এক টুকরা চামড়া এনে নবজাতকের গলায় অন্যান্য তাবিজ, কড়ি, রুদ্রাক্ষের সঙ্গে পরিয়ে দিতেন। আমার গলায়ও সম্ভবত অমনটি ছিল। গ্রামের মানুষ কোনো থানা-পুলিশে যেত না। গ্রাম্য সালিশেই সব কিছু নিষ্পত্তি হতো। এসব সালিশ বসত সন্ধ্যার পর। বড় বড় সালিশে কখনো কখনো হাজার খানেক লোক হতো। সেক্ষেত্রে অন্যগ্রাম থেকে হ্যাজাক লাইট আনা হতো আর দরকার পড়লে সমঝদার সালিশিও আসত। সন্ধ্যার পর সারা গ্রামে কুট কুট শব্দে কুনো ব্যাঙ ডাকত আর ঝিঁ-ঝিঁ পোকারা ব্যাঙের সঙ্গে কণ্ঠ মিলাত। এর বাইরে ছিল কোলা ব্যাঙ এবং ভাউয়া ব্যাঙ। বিশেষ করে বর্ষাকালে কোলা ব্যাঙ এবং ভাউয়া ব্যাঙের দাপট বেড়ে যেত। কোলা ব্যাঙেরা দুই গাল ফুলিয়ে ডাকত এবং আমরা বাচ্চারা ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডাকতাম -ঘি পোলাও, ঘি পোলাও। অন্যদিকে, ভাউয়া ব্যাঙেরা ডাকত না বটে, তবে সুযোগ পেলেই বিশাল বিশাল লাফ মারত। তো একদিন কি হলো- গ্রামে মস্তবড় এক সালিশ বসেছে। মাতুব্বর, চকিদার, দফাদার এবং থানা থেকে এসেছেন জমাদার সাহেব। পারিবারিক মামলা-সম্ভবত জমিজমা এবং দাম্পত্য বিরোধ নিয়ে। শ পাঁচেক লোক- সবাই দাঁড়াল। কেবল সালিশদাররা চেয়ারে বসা। টান টান উত্তেজনা। হঠাৎ শুরু হলো হুড়োহুড়ি-চিৎকার-চেঁচামেচি। ওরে বাবারে, ওরে মারে! ওই যে গেল, ধর! এই এই! হা হা হা। ও আল্লাহ! ও খোদা বাঁচাও। ভূত! আরে ভূত না ভাউয়া ব্যাঙ! ব্যাঙ না সাপ! এত সব কথা, চিৎকার, চেঁচামেচি এবং দৌড়াদৌড়ির মধ্যে কে যেন ধাক্কা দিয়ে হ্যাজাক লাইট ফেলে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পর সাহসী মানুষেরা মশাল নিয়ে এগিয়ে দেখল ৪-৫ জন সংজ্ঞা হারিয়ে চিৎপটাং শুয়ে আছে। এদের মধ্যে একজনের হাতে শক্ত করে ধরা ছিল একটি ভাউয়া ব্যাঙ। সম্ভবত ব্যাঙটি তার ওপর লাফিয়ে পড়েছিল, আর সে শরীর থেকে ব্যাঙ সরাতে গিয়ে অসাবধানতাবসত ব্যাঙটি মুঠ করে ধরে ফেলল। একটু পর সে বুঝল, হয়তো ভয়ানক কিছু একটা ধরে ফেলেছে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার হাতের মুঠি শক্ত হয়ে যায় ভয়ে এবং সংজ্ঞা হারানোর আগে মৃগী রোগীর মতো ছটফট করলেও শক্ত হয়ে যাওয়া হাতের মুঠি থেকে ব্যাঙটি ছাড়া পায়নি।
প্রিয় জনাব সেই দিন আর নেই। দেশে কুনো ব্যাঙ, কোলা ব্যাঙ কিংবা ভাউয়া ব্যাঙ যেমন নেই, তেমনি ওদের ভয় পাওয়ার মতো সরল মনের ভীরু বাঙালিও নেই। বাঙালি এখন চৌকিদার, দফাদার বা ওসি-এসপি মানে না। রাস্তার রিকশাওয়ালাও আইজি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে গালাগাল করে। এ অবস্থায় আপনার পূর্বসূরিরা মানসম্মান সহকারে যত সহজে দায়িত্ব পালন করে গেছেন আপনাদের পক্ষে সেটা কল্পনা করাও অসম্ভব। মানুষের শয়তানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাই আপনাকে ডাণ্ডা মারার কৌশল পরিবর্তন করতে হয়েছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও নগরবাসী কিন্তু শান্তিতে নেই। এই মহানগরীতে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, মাস্তানি, চাঁদাবাজি, অন্যায়ভাবে জোর-জবরদস্তিমূলক দখল, খুন, ধর্ষণ, প্রতারণা, ভয়ভীতি প্রদর্শন প্রভৃতি অপরাধমূলক কর্ম জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। গত ঈদে কী পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়েছে, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার কোনো ভাই বা বন্ধুকে সাধারণ মানুষের বেশে বিভিন্ন মার্কেট, দোকান এমনকি ফুটপাতের ফেরিওয়ালার কাছে পাঠিয়ে একান্তে তাদের মনের দুঃখের কথা জেনে নিতে পারেন। নগরবাসী আপনি বা আপনাদেরও মারাত্দকভাবে ভয় পায়। কারণ ইদানীংকালে সব অপরাধের সঙ্গেই রক্ষকরা সাধারণ অপরাধীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুকর্মে নেমে পড়েছে। আপনি একা এদের বিরুদ্ধে কী বা করতে পারবেন। আজ আমি অবশ্য ওসব কথা বলার জন্য আপনাকে পত্র লিখতে বসিনি। নগরবাসীর দুটি সামাজিক সমস্যা সমাধানে আপনার সাহায্য ও সহযোগিতা কামনার উদ্দেশ্যেই এতক্ষণ লম্বা ভূমিকা টানলাম। সমস্যা দুটি প্রায় একই প্রকৃতির এবং সেগুলো সংগঠিত হচ্ছে কাছাকাছি দুটি এলাকায় দিনে-রাতে, সব সময়। ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা বাদল কোনো কিছুই যেন ওসব কুকর্মের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বরং প্রকৃতি বিরূপ হলে অপরাধীরা বেশি স্বস্তি এবং বেশি নিরাপত্তা বোধ করে। দুটি এলাকার একটি হলো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এখানে ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের অবাধ বিচরণ এবং তাদের খদ্দেরদের সঙ্গে রমণ ও রতিক্রিয়ার কথা ওই এলাকার সবাই জানে। তারা ওসব কুকর্ম একদিকে যেমন খোলা প্রান্তরে করে, তেমনি পার্কের ভেতর স্থাপিত ছোট ছোট টং ঘর এবং চার চাকার ভ্যান গাড়ি যা কিনা পলিথিন কাগজ দিয়ে চারদিক দিয়ে ঢেকে ছোট ঘরের মতো বানানো হয়েছে, সেখানেও করে। এসব কাজের দালাল, খদ্দের, পাহারাদার এবং টং ঘর ও ভ্যানগাড়ির মালিকরা একে অপরের পরিপূরক এবং হরিহর আত্দা। আপনার পুলিশের একটা অংশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা নিয়মিত বখরা নেয় নতুবা বিনা পয়সায় রতিকাম করে নিজেদের দায় শোধ করে।
অসামাজিক কর্মের পাশাপাশি মাদকের ব্যবহার, অপহরণের পর পার্কে এনে চাঁদা আদায়, ছিনতাই, নিরীহ পথচারী, খেলতে আসা তরুণ ও যুবকদের জিম্মি করে টাকা-পয়সা আদায় এবং দিনে-দুপুরে যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগের ঘটনা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে পড়েছে। বিপথগামী স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে ওখানে চলে আসে। তারা উলঙ্গ হয়ে যৌনক্রিয়াটুকু ব্যতিরেকে প্রায় সবকিছুই করে প্রকাশ্য দিবালোকে। ভারতীয় চ্যানেল থেকে চুমোচুমি, রং তামাশা এবং অন্যসব হারামিপনার কলাকৌশল শেখার পর তারা এই উদ্যানে এসে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে জাতিকে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা আপনার সুসজ্জিত অফিসে বসে আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না। এসব দৃশ্যের সফল মঞ্চায়নের কারণে ওই পার্কে কোনো কুকুরও লজ্জায় জিহ্বা বের করে হাঁটে না, ওখানকার মানুষ্য মলে ওদের কোনো আগ্রহ নেই, আর কাকেরাও ওই স্থান দিয়ে হাঁটাচলা, ডাকাডাকি বা উড়াউড়ি করে না।
সোহরাওয়ার্দী পার্কের পর অন্য একটি মন্দ জায়গার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি যদি ছদ্মবেশে সন্ধ্যার পর ধানমণ্ডি লেকের ওয়াক ওয়ের পুরোটা একবার চক্কর দিয়ে রবীন্দ্র সরণি, প্রয়াত শেরে খাজার জাহাজ বাড়ির পেছনের বটতলা এবং সুধাসদন থেকে ধানমণ্ডি ২ নং সড়কের রাইফেল স্কয়ার যাওয়ার ওয়াকওয়ের দিকে গভীর মনোযোগ দেন, তবে এ দেশের তরুণ-তরুণী সম্পর্কে আপনার নূ্যনতম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বা অনুরাগ সৃষ্টি হবে না। তারা পাশাপাশি বসে যেসব অপকর্ম করে এবং যেসব বাজে কথা বলে তা পৃথিবীর কোনো অসভ্য দেশের ছেলেমেয়েরা করে কিনা সন্দেহ। ওদের যন্ত্রণায় কোনো ভদ্রলোক বা ভদ্র মহিলা সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় হাঁটাচলা করে না। ওখানেও মাদক ব্যবসায়ী, ভ্রাম্যমাণ পতিতা এবং হিজড়ারা সন্ধ্যার পর তাদের পসরা মিলিয়ে আদিম উল্লাসে মেতে ওঠে। সবচেয়ে বেশি অসহায় এবং অস্বস্তির মধ্যে থাকতে হয় লেকপাড়ের হাজার হাজার বাসিন্দাকে। তারা এখন আফসোস করে বলছেন, হয়তো কোনো পাপ বা কারও অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে তারা লেকপাড়ের বাসিন্দা হয়েছিলেন।
প্রিয় জনাব, আপনি একবার ভাবুন তো, লেকপাড়ে আপনার একটি বাসা আছে। বেলকনিতে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনি দেখতে পেলেন আপনার পুত্র-কন্যার বয়সী ছেলেমেয়েরা অশ্লীলভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমোচুমি করছে এবং একে অপরের গোপন জায়গায় হাত দিয়ে গুঁতোগুঁতি করছে। আপনি সাহস করে তাদের ধমক দিলেন। ওরা উল্টো আপনার বাপ-মা তুলে গালাগাল করল। কিছুক্ষণ পর ওদের সঙ্গী-সাথীরা এসে আপনার বাসা লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ল এবং ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করল। আপনার কাজের ছেলে বা ড্রাইভারকে মারধর করল এবং সুযোগমতো গাড়িতে ঢিল ছুড়ল। অথবা ধরুন, আপনার ঘরে ১২ থেকে ২০ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে আছে। কিংবা আপনার বৃদ্ধা মা-বাবা আপনার সঙ্গে বাসায় থাকেন। আপনার স্ত্রী একজন পরহেজগার মহিলা। এ অবস্থায় লেকপাড়ের মনোরম বাসভবনটি কিংবা অ্যাপার্টমেন্টটি কি আপনার জন্য জান্নাতের টুকরা হবে নাকি জাহান্নাম হবে! অনুগ্রহ করে চিন্তা করুন এবং ওই এলাকার বাসিন্দাদের আপনার ভাই-বোন অথবা নিকটাত্দীয় ভাবুন- তারপর দেখুন আপনার কাছে কেমন লাগছে?
আপনি জেনে অবাক হবেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন ওইসব এলাকায় সন্ধ্যার পর বাতি নিভিয়ে দেয়। অন্যদিকে বেশির ভাগ জায়গায় লাইটপোস্টই নেই। রাত ৯টা-১০টার দিকে ২/১টা পুলিশের টহল ওখানে গিয়ে বাঁশি বাজায়-ব্যাস এ পর্যন্তই। বাকিটা আল্লাহর হাতে। লেকপাড়ের দিনের অবস্থা আরও ভয়াবহ। রাতে চলে অবাধ যৌনকর্ম। দিনে ওভাবে না চললেও রীতিমতো প্রেমের হাট বসে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে দলবেঁধে ঘুরতে আসে। তারা এখানে এসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়। তারপর একসঙ্গে ২/১ দিন আড্ডা দেয় এবং শেষমেশ আলাদা জুটি বেঁধে রাত-বিরাতে বেরিয়ে পড়ে। এসব কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই মারামারি হয়, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুনখারাবির পর্যায়ে পর্যন্ত গড়ায়।
আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, এসব ব্যাপারে আপনার কিইবা করার আছে? তা ছাড়া বাপ-মা তাদের ছেলেমেয়েদের কন্ট্রোল করলেই তো পারে। আপনি রাগ হয়ে আরও বলতে পারেন- বাবারা কিংবা মায়েরা নিজেরাই যদি চুরি, চোট্টামি বা পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়, তবে ছেলেমেয়েরা তো ওসব করবেই। আল্লার দোহাই- আপনি নিষ্ঠুর হয়ে ওসব জিনিস ওমনভাবে চিন্তা করবেন না এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন না। বিশ্বাস করুন এই অভিশপ্ত নগরীর নীতিহীন নিয়মকানুন, শৃঙ্খলহীন সামাজিক বন্ধন এবং প্রতিবেশ/পরিবেশের জন্য লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ, নীতিবান ও সৎ মানুষ বোবা কান্না কাঁদছে। মান-সম্মানের ভয়ে কিংবা নিজেদের দুর্বলতার জন্য তারা ছেলেমেয়েকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অনেক পরিবারের টিনএজ ছেলেমেয়ে তাদের পিতামাতাকে নিয়মিত মারধর করে। দুর্বল চিত্তের অভিভাবকরা কাউকে সে কথা বলে না, কিংবা আপনার কাছে নালিশ জানাতে পারে না। তারা শুধু আকাশের দিকে তাকায় এবং অশ্রু বিসর্জন করে। তাদের কান্নায় ঢাকা মহানগরীর বাতাস আজ বিষাক্ত, আকাশ আজ বিক্ষুব্ধ। আপনার সহকর্মীর কন্যা ঐশীর কথা তো সবাই জানে। পুলিশ হওয়ার কারণে তিনি হয়তো একটু বেশি সাহসী হয়ে মেয়েকে শাসন করেছিলেন, তাই প্রাণ দিয়ে তাকে এবং তার স্ত্রীকে মেয়েকে ভালো মানুষ করার চেষ্টার ঋণ শোধ করতে হয়েছে। ঢাকার সব বাবা-মা যদি ঐশীর বাবা-মার মতো সাহসী হন, তবে প্রতিদিন কম করে হলেও একশ হত্যাকাণ্ড ঘটবে।
জনাব আমি যদি আপনার চেয়ারের মালিক হতাম তবে ডিবি পুলিশের চৌকস একটি দলকে সাদা পোশাকে অপরাধপ্রবণ এলাকায় মোতায়েন করতাম। তাদের প্রতি কড়া নির্দেশ থাকত, আপত্তিকর অবস্থায় যাদের পাওয়া যাবে কিংবা অসময়ে যারা স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে ওই এলাকায় ঘুরতে এসেছে তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে আসো। ছেলেমেয়ে উভয়কে প্রথমে বেত মার। আপত্তিকর কর্মে জড়িতদের একশত বেত এবং বাকিদের ৫০ বেত। তারপর ওদের পিতা-মাতা, স্কুল-কলেজের নাম-ঠিকানা নাও। ওদের কাছে জিজ্ঞাসা কর বাবা-মা এবং শিক্ষকরা ভালো না মন্দ। যদি ওরা মন্দ বলে তবে ওইসব বাবা-মা ও শিক্ষককে ধরে নিয়ে আস। মুখোমুখি কর কুলাঙ্গারদের। যদি মনে হয় ছেলেমেয়েরা সত্য বলেছে, তবে বাবা-মা ও শিক্ষকের পাছায় বেদম প্রহার কর। এরপর সবার কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে ছেড়ে দাও, নইলে লাল দালানে পাঠিয়ে দাও। যারা বলবে যে তাদের বাবা-মা ভালো তাদের আরেক দফা বেত মার। তারপর তাদের বাবা-মাকে খবর দাও। বাবা-মা যদি বন্ড দিয়ে সন্তানদের ছাড়িয়ে নিতে চায়, তবে ছেড়ে দাও। নচেৎ কুলাঙ্গারদের জেলে পাঠিয়ে দাও।
মাননীয় কমিশনার সাহেব, আপনি যদি উপরোক্ত কাজ করতে পারেন তবে জান্নাতে আপনার স্থান হবে খলিফা হজরত ওমর (রা.) বা খলিফা হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের (রহ.) পাশে। দুনিয়াতে আপনি হবেন স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সনদ বলে সম্মানীত এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। জমিন-আসমান এবং বৃক্ষলতা আপনার চলার পথে আপনার জন্য আল্লাহর দরবারে রহমত, ক্ষমা এবং সফলতার জন্য দোয়া করবে। আপনি পেঁৗছে যাবেন দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার স্বর্ণ শিখরে। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরাজিত হবে আর আপনি হবেন প্রশান্ত হৃদয়ের সুখী এবং সফল একজন মানুষ। ইতি- আল্লাহ হাফেজ। ধন্যবাদান্তে- গোলাম মাওলা রনি, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
মান্যবর জনাব, অভিশপ্ত এবং বিষাক্ত ঢাকা মহানগরীর বেদনা ভারাক্রান্ত কোটি মানুষের পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা। আপনি হয়তো কিছুটা অবাক হয়ে ভাবতে পারেন কেন আমি ঢাকা নগরীকে অভিশপ্ত এবং বিষাক্ত বললাম! বিষাক্ত ঢাকার বহুমুখী বিষ এবং রংবেরঙের আশীবিষ সম্পর্কে কম-বেশি অনেকেই জানেন। কিন্তু অভিশপ্ত ঢাকা সম্পর্কে হয়তো খুব কম লোকেই জানতে পারে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এটি একটি অভিশপ্ত নগরী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মোগল সুবেদার ইসলাম খান এবং তার কামানের ইতিহাস পড়লে ঢাকা সম্পর্কে আপনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন। পরবর্তীতে শায়েস্তা খানের আমলে লালবাগের দুর্গ নির্মাণ, তার কন্যা পরীবানুর মৃত্যু এবং শাহজাদা মোহাম্মদ আজমের নির্মম পরিণতি শুনলে আপনি ভয়ে ওই এলাকায় রাত-বিরাতে যেতে সাহসী হবেন না। মোগল সাম্রাজ্যের পতন এই ঢাকা থেকেই শুরু হয়েছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজিম উস শান এবং দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খানের বিরোধের জের ধরে রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ চলে যাওয়ার পর থেকেই দিলি্লতে একের পর এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। ঢাকার হীরাঝিল প্রাসাদ ষড়যন্ত্রেই নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতন হয়েছিল। আবার ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে ঘসেটি বেগমের মৃত্যু হয় অনেকেই জানেন। তারপর ১৯৫৪ সালে এই ঢাকাতেই মুসলিম লীগের পতন শুরু হলো। এই সেই ঢাকা- যেখানে জাতির জনক সপরিবারে নিহত হলেন। আপনি যেখানে বসে কর্ম পরিচালনা করেন ওই স্থানের লাল ভবনটির অভিশপ্ত কাহিনী তো আপনার অজানা থাকার কথা নয়। অতীত ইতিহাসের সব অভিশাপের গ্লানি নিয়ে ঢাকার আকাশ কীরূপে কাঁদছে কিংবা ঢাকার বাতাস কীভাবে গন্ধ ছড়াচ্ছে তা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন শহরবাসী মানুষ, জীবজন্তু, জানোয়ার, গাছপালা ও পশুপাখির দুরবস্থা এবং আচার-আচরণে অদ্ভুত অদ্ভুত সব পরিবর্তন ও বিবর্তন অনুধাবনের মাধ্যমে।
ঢাকার মানুষ রাস্তাঘাটে হাঁটতে ফিরতে এখন আর হাস্যরস করে না। প্রতিটি গৃহের মধ্যে ঢুকে গেছে চাপা কান্না। শোনা যেত একসময় ঢাকার ঘোড়াগুলোও নাকি হাসত। কিন্তু সেদিন এখন আর নেই। শহরে কোনো বানর নেই। কখনোবা কদাচিৎ পুরান ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় হাতেগোনা দু-চারটি বানর দেখা গেলেও তা আপনাকে হতাশ করবে। ওরা মানুষের বাঁদরামোর কাছে পরাজিত হয়ে সারা দিন মুখ ভার করে থাকে। ঢাকার কুকুরগুলোও যেন কেমন কেমন করছে। সেগুলো আর আগের মতো ঘেউ ঘেউ করে না। রাস্তায় চলাফেরার সময় জিহ্বা বের করে হাঁটে না। আশ্বিন-কার্তিক মাসে কুকুর-কুকুরীরা আর আগের মতো মিলনের জন্য ছোটাছুটি করে না। আপনি যদি কাকের দিকে তাকান তবে দেখবেন, দাঁড়কাক একটিও নেই। পাতিকাকের সংখ্যা ভয়ানকভাবে কমে গেছে। ওরা ডাকাডাকিও করে না! আগে দেখা যেত শত শত কাক নির্জন রাস্তায় লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে এবং দুই ঠোঁট ফাঁক করে ঘাড় বাঁকা করে বারবার পথচারীদের দিকে তাকাচ্ছে। সেই দৃশ্য এখন আর নেই। ঢাকার বাতাসকে আপনি আর মৃদুমন্দ বাতাস অর্থাৎ ইজঊঊতঊ বলতে পারবেন না। এই বাতাসে প্রাণ জুড়ায় না কিংবা শরীর ঠাণ্ডা হয় না বরং মন বিগড়ে দেয়।
আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন কেন আমি এতসব বলছি কিংবা এসব জেনে আপনার কিইবা লাভ হবে। হবে, অনেক লাভ হবে। বিশাল এই মহানগরীর আপনিই হলেন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একমাত্র অভিভাবক। নগরবাসীদের পিতা ছিল। হানিফ সাহেবের মৃত্যু এবং খোকা সাহেবের বিদায়ের পর এখন আমরা পিতৃহীন ইয়াতিম। নগরকে দুভাগ করে দুজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত তিন-চার বছরে কতজন যে এলো এবং কতজন যে গেল তা আমরা বলতে পারব না। ওইসব প্রশাসককে নগরপিতা বলার মতো রুচি এ শহরের মানুষ তো দূরের কথা, পশুপাখিরও নেই। এ ছাড়া আবহমান বাংলায় দুজন মায়ের কথা শুনেছি, কিন্তু দুজন পিতা! ছি! ওমন কথা মুখে আনাও পাপ! এরপর যদি ধরেন অন্য সরকারি পদ যেমন ডিসি, বিভাগীয় কমিশনার, এসপি, জেলা জজ প্রমুখ কেউই এই মহানগরীর জন্য এককভাবে কিছু করার জন্য সামর্থ্যবান নন কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত নন। সেদিক থেকে একমাত্র আপনার পদ ও পদবি সমগ্র রাজধানীবাসীর ওপর এককভাবে কর্তৃত্ববান। তাই ইয়াতিম রাজধানীবাসী আপনাকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে বিশেষত আপনার সফল ফরমালিন-বিরোধী অভিযানের পর থেকে।
কোনো দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে কোনো কিছু বলতে বা কোনো কিছু চাইতে লম্বা একটি ভূমিকা দিতে হয়। নইলে ভদ্রলোকের মান রক্ষা হয় না। এটাই নিয়ম এবং এটাই ঐতিহ্য- আর আমি সেই নিয়ম এবং ঐতিহ্যের পথ ধরেই হাঁটছি। আজ আপনি যে পদে আছেন, তার গুরুত্ব এবং ওজন অনেক বড়। আমার শৈশবে শুনতাম আমার কাকা অতিরিক্ত আইজি। ইতিপূর্বে পাকিস্তান আমলে আমার এক দাদা ছিলেন আইজি। তারা অবশ্য কোনো দিন গ্রামে যেতেন না। আমাদের গ্রাম পরিচালনা করতেন চকিদার, দফাদার এবং মাতব্বর সাহেব। গ্রামবাসী তাদের শ্রদ্ধা করত, মর্যাদা দিত এবং যমের মতো ভয় করত। চকিদাররা কেমন মাননীয় ছিলেন তার একটি উদাহরণ আপনাকে বলছি- গ্রামে কোনো নবজাতকের জন্ম হলে মা-চাচিরা চলে যেতেন চকিদার বাড়িতে। চকিদারের পুরনো চামড়ার বেল্ট থেকে ছোট এক টুকরা চামড়া এনে নবজাতকের গলায় অন্যান্য তাবিজ, কড়ি, রুদ্রাক্ষের সঙ্গে পরিয়ে দিতেন। আমার গলায়ও সম্ভবত অমনটি ছিল। গ্রামের মানুষ কোনো থানা-পুলিশে যেত না। গ্রাম্য সালিশেই সব কিছু নিষ্পত্তি হতো। এসব সালিশ বসত সন্ধ্যার পর। বড় বড় সালিশে কখনো কখনো হাজার খানেক লোক হতো। সেক্ষেত্রে অন্যগ্রাম থেকে হ্যাজাক লাইট আনা হতো আর দরকার পড়লে সমঝদার সালিশিও আসত। সন্ধ্যার পর সারা গ্রামে কুট কুট শব্দে কুনো ব্যাঙ ডাকত আর ঝিঁ-ঝিঁ পোকারা ব্যাঙের সঙ্গে কণ্ঠ মিলাত। এর বাইরে ছিল কোলা ব্যাঙ এবং ভাউয়া ব্যাঙ। বিশেষ করে বর্ষাকালে কোলা ব্যাঙ এবং ভাউয়া ব্যাঙের দাপট বেড়ে যেত। কোলা ব্যাঙেরা দুই গাল ফুলিয়ে ডাকত এবং আমরা বাচ্চারা ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডাকতাম -ঘি পোলাও, ঘি পোলাও। অন্যদিকে, ভাউয়া ব্যাঙেরা ডাকত না বটে, তবে সুযোগ পেলেই বিশাল বিশাল লাফ মারত। তো একদিন কি হলো- গ্রামে মস্তবড় এক সালিশ বসেছে। মাতুব্বর, চকিদার, দফাদার এবং থানা থেকে এসেছেন জমাদার সাহেব। পারিবারিক মামলা-সম্ভবত জমিজমা এবং দাম্পত্য বিরোধ নিয়ে। শ পাঁচেক লোক- সবাই দাঁড়াল। কেবল সালিশদাররা চেয়ারে বসা। টান টান উত্তেজনা। হঠাৎ শুরু হলো হুড়োহুড়ি-চিৎকার-চেঁচামেচি। ওরে বাবারে, ওরে মারে! ওই যে গেল, ধর! এই এই! হা হা হা। ও আল্লাহ! ও খোদা বাঁচাও। ভূত! আরে ভূত না ভাউয়া ব্যাঙ! ব্যাঙ না সাপ! এত সব কথা, চিৎকার, চেঁচামেচি এবং দৌড়াদৌড়ির মধ্যে কে যেন ধাক্কা দিয়ে হ্যাজাক লাইট ফেলে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পর সাহসী মানুষেরা মশাল নিয়ে এগিয়ে দেখল ৪-৫ জন সংজ্ঞা হারিয়ে চিৎপটাং শুয়ে আছে। এদের মধ্যে একজনের হাতে শক্ত করে ধরা ছিল একটি ভাউয়া ব্যাঙ। সম্ভবত ব্যাঙটি তার ওপর লাফিয়ে পড়েছিল, আর সে শরীর থেকে ব্যাঙ সরাতে গিয়ে অসাবধানতাবসত ব্যাঙটি মুঠ করে ধরে ফেলল। একটু পর সে বুঝল, হয়তো ভয়ানক কিছু একটা ধরে ফেলেছে। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার হাতের মুঠি শক্ত হয়ে যায় ভয়ে এবং সংজ্ঞা হারানোর আগে মৃগী রোগীর মতো ছটফট করলেও শক্ত হয়ে যাওয়া হাতের মুঠি থেকে ব্যাঙটি ছাড়া পায়নি।
প্রিয় জনাব সেই দিন আর নেই। দেশে কুনো ব্যাঙ, কোলা ব্যাঙ কিংবা ভাউয়া ব্যাঙ যেমন নেই, তেমনি ওদের ভয় পাওয়ার মতো সরল মনের ভীরু বাঙালিও নেই। বাঙালি এখন চৌকিদার, দফাদার বা ওসি-এসপি মানে না। রাস্তার রিকশাওয়ালাও আইজি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে গালাগাল করে। এ অবস্থায় আপনার পূর্বসূরিরা মানসম্মান সহকারে যত সহজে দায়িত্ব পালন করে গেছেন আপনাদের পক্ষে সেটা কল্পনা করাও অসম্ভব। মানুষের শয়তানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাই আপনাকে ডাণ্ডা মারার কৌশল পরিবর্তন করতে হয়েছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও নগরবাসী কিন্তু শান্তিতে নেই। এই মহানগরীতে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, মাস্তানি, চাঁদাবাজি, অন্যায়ভাবে জোর-জবরদস্তিমূলক দখল, খুন, ধর্ষণ, প্রতারণা, ভয়ভীতি প্রদর্শন প্রভৃতি অপরাধমূলক কর্ম জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। গত ঈদে কী পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়েছে, তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার কোনো ভাই বা বন্ধুকে সাধারণ মানুষের বেশে বিভিন্ন মার্কেট, দোকান এমনকি ফুটপাতের ফেরিওয়ালার কাছে পাঠিয়ে একান্তে তাদের মনের দুঃখের কথা জেনে নিতে পারেন। নগরবাসী আপনি বা আপনাদেরও মারাত্দকভাবে ভয় পায়। কারণ ইদানীংকালে সব অপরাধের সঙ্গেই রক্ষকরা সাধারণ অপরাধীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুকর্মে নেমে পড়েছে। আপনি একা এদের বিরুদ্ধে কী বা করতে পারবেন। আজ আমি অবশ্য ওসব কথা বলার জন্য আপনাকে পত্র লিখতে বসিনি। নগরবাসীর দুটি সামাজিক সমস্যা সমাধানে আপনার সাহায্য ও সহযোগিতা কামনার উদ্দেশ্যেই এতক্ষণ লম্বা ভূমিকা টানলাম। সমস্যা দুটি প্রায় একই প্রকৃতির এবং সেগুলো সংগঠিত হচ্ছে কাছাকাছি দুটি এলাকায় দিনে-রাতে, সব সময়। ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা বাদল কোনো কিছুই যেন ওসব কুকর্মের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। বরং প্রকৃতি বিরূপ হলে অপরাধীরা বেশি স্বস্তি এবং বেশি নিরাপত্তা বোধ করে। দুটি এলাকার একটি হলো ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এখানে ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের অবাধ বিচরণ এবং তাদের খদ্দেরদের সঙ্গে রমণ ও রতিক্রিয়ার কথা ওই এলাকার সবাই জানে। তারা ওসব কুকর্ম একদিকে যেমন খোলা প্রান্তরে করে, তেমনি পার্কের ভেতর স্থাপিত ছোট ছোট টং ঘর এবং চার চাকার ভ্যান গাড়ি যা কিনা পলিথিন কাগজ দিয়ে চারদিক দিয়ে ঢেকে ছোট ঘরের মতো বানানো হয়েছে, সেখানেও করে। এসব কাজের দালাল, খদ্দের, পাহারাদার এবং টং ঘর ও ভ্যানগাড়ির মালিকরা একে অপরের পরিপূরক এবং হরিহর আত্দা। আপনার পুলিশের একটা অংশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা নিয়মিত বখরা নেয় নতুবা বিনা পয়সায় রতিকাম করে নিজেদের দায় শোধ করে।
অসামাজিক কর্মের পাশাপাশি মাদকের ব্যবহার, অপহরণের পর পার্কে এনে চাঁদা আদায়, ছিনতাই, নিরীহ পথচারী, খেলতে আসা তরুণ ও যুবকদের জিম্মি করে টাকা-পয়সা আদায় এবং দিনে-দুপুরে যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগের ঘটনা এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে পড়েছে। বিপথগামী স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে ওখানে চলে আসে। তারা উলঙ্গ হয়ে যৌনক্রিয়াটুকু ব্যতিরেকে প্রায় সবকিছুই করে প্রকাশ্য দিবালোকে। ভারতীয় চ্যানেল থেকে চুমোচুমি, রং তামাশা এবং অন্যসব হারামিপনার কলাকৌশল শেখার পর তারা এই উদ্যানে এসে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে জাতিকে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা আপনার সুসজ্জিত অফিসে বসে আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না। এসব দৃশ্যের সফল মঞ্চায়নের কারণে ওই পার্কে কোনো কুকুরও লজ্জায় জিহ্বা বের করে হাঁটে না, ওখানকার মানুষ্য মলে ওদের কোনো আগ্রহ নেই, আর কাকেরাও ওই স্থান দিয়ে হাঁটাচলা, ডাকাডাকি বা উড়াউড়ি করে না।
সোহরাওয়ার্দী পার্কের পর অন্য একটি মন্দ জায়গার ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি যদি ছদ্মবেশে সন্ধ্যার পর ধানমণ্ডি লেকের ওয়াক ওয়ের পুরোটা একবার চক্কর দিয়ে রবীন্দ্র সরণি, প্রয়াত শেরে খাজার জাহাজ বাড়ির পেছনের বটতলা এবং সুধাসদন থেকে ধানমণ্ডি ২ নং সড়কের রাইফেল স্কয়ার যাওয়ার ওয়াকওয়ের দিকে গভীর মনোযোগ দেন, তবে এ দেশের তরুণ-তরুণী সম্পর্কে আপনার নূ্যনতম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বা অনুরাগ সৃষ্টি হবে না। তারা পাশাপাশি বসে যেসব অপকর্ম করে এবং যেসব বাজে কথা বলে তা পৃথিবীর কোনো অসভ্য দেশের ছেলেমেয়েরা করে কিনা সন্দেহ। ওদের যন্ত্রণায় কোনো ভদ্রলোক বা ভদ্র মহিলা সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় হাঁটাচলা করে না। ওখানেও মাদক ব্যবসায়ী, ভ্রাম্যমাণ পতিতা এবং হিজড়ারা সন্ধ্যার পর তাদের পসরা মিলিয়ে আদিম উল্লাসে মেতে ওঠে। সবচেয়ে বেশি অসহায় এবং অস্বস্তির মধ্যে থাকতে হয় লেকপাড়ের হাজার হাজার বাসিন্দাকে। তারা এখন আফসোস করে বলছেন, হয়তো কোনো পাপ বা কারও অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে তারা লেকপাড়ের বাসিন্দা হয়েছিলেন।
প্রিয় জনাব, আপনি একবার ভাবুন তো, লেকপাড়ে আপনার একটি বাসা আছে। বেলকনিতে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনি দেখতে পেলেন আপনার পুত্র-কন্যার বয়সী ছেলেমেয়েরা অশ্লীলভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমোচুমি করছে এবং একে অপরের গোপন জায়গায় হাত দিয়ে গুঁতোগুঁতি করছে। আপনি সাহস করে তাদের ধমক দিলেন। ওরা উল্টো আপনার বাপ-মা তুলে গালাগাল করল। কিছুক্ষণ পর ওদের সঙ্গী-সাথীরা এসে আপনার বাসা লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়ল এবং ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করল। আপনার কাজের ছেলে বা ড্রাইভারকে মারধর করল এবং সুযোগমতো গাড়িতে ঢিল ছুড়ল। অথবা ধরুন, আপনার ঘরে ১২ থেকে ২০ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে আছে। কিংবা আপনার বৃদ্ধা মা-বাবা আপনার সঙ্গে বাসায় থাকেন। আপনার স্ত্রী একজন পরহেজগার মহিলা। এ অবস্থায় লেকপাড়ের মনোরম বাসভবনটি কিংবা অ্যাপার্টমেন্টটি কি আপনার জন্য জান্নাতের টুকরা হবে নাকি জাহান্নাম হবে! অনুগ্রহ করে চিন্তা করুন এবং ওই এলাকার বাসিন্দাদের আপনার ভাই-বোন অথবা নিকটাত্দীয় ভাবুন- তারপর দেখুন আপনার কাছে কেমন লাগছে?
আপনি জেনে অবাক হবেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন ওইসব এলাকায় সন্ধ্যার পর বাতি নিভিয়ে দেয়। অন্যদিকে বেশির ভাগ জায়গায় লাইটপোস্টই নেই। রাত ৯টা-১০টার দিকে ২/১টা পুলিশের টহল ওখানে গিয়ে বাঁশি বাজায়-ব্যাস এ পর্যন্তই। বাকিটা আল্লাহর হাতে। লেকপাড়ের দিনের অবস্থা আরও ভয়াবহ। রাতে চলে অবাধ যৌনকর্ম। দিনে ওভাবে না চললেও রীতিমতো প্রেমের হাট বসে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে দলবেঁধে ঘুরতে আসে। তারা এখানে এসে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়। তারপর একসঙ্গে ২/১ দিন আড্ডা দেয় এবং শেষমেশ আলাদা জুটি বেঁধে রাত-বিরাতে বেরিয়ে পড়ে। এসব কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই মারামারি হয়, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুনখারাবির পর্যায়ে পর্যন্ত গড়ায়।
আপনি হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, এসব ব্যাপারে আপনার কিইবা করার আছে? তা ছাড়া বাপ-মা তাদের ছেলেমেয়েদের কন্ট্রোল করলেই তো পারে। আপনি রাগ হয়ে আরও বলতে পারেন- বাবারা কিংবা মায়েরা নিজেরাই যদি চুরি, চোট্টামি বা পরকীয়ায় জড়িয়ে যায়, তবে ছেলেমেয়েরা তো ওসব করবেই। আল্লার দোহাই- আপনি নিষ্ঠুর হয়ে ওসব জিনিস ওমনভাবে চিন্তা করবেন না এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাবেন না। বিশ্বাস করুন এই অভিশপ্ত নগরীর নীতিহীন নিয়মকানুন, শৃঙ্খলহীন সামাজিক বন্ধন এবং প্রতিবেশ/পরিবেশের জন্য লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ, নীতিবান ও সৎ মানুষ বোবা কান্না কাঁদছে। মান-সম্মানের ভয়ে কিংবা নিজেদের দুর্বলতার জন্য তারা ছেলেমেয়েকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অনেক পরিবারের টিনএজ ছেলেমেয়ে তাদের পিতামাতাকে নিয়মিত মারধর করে। দুর্বল চিত্তের অভিভাবকরা কাউকে সে কথা বলে না, কিংবা আপনার কাছে নালিশ জানাতে পারে না। তারা শুধু আকাশের দিকে তাকায় এবং অশ্রু বিসর্জন করে। তাদের কান্নায় ঢাকা মহানগরীর বাতাস আজ বিষাক্ত, আকাশ আজ বিক্ষুব্ধ। আপনার সহকর্মীর কন্যা ঐশীর কথা তো সবাই জানে। পুলিশ হওয়ার কারণে তিনি হয়তো একটু বেশি সাহসী হয়ে মেয়েকে শাসন করেছিলেন, তাই প্রাণ দিয়ে তাকে এবং তার স্ত্রীকে মেয়েকে ভালো মানুষ করার চেষ্টার ঋণ শোধ করতে হয়েছে। ঢাকার সব বাবা-মা যদি ঐশীর বাবা-মার মতো সাহসী হন, তবে প্রতিদিন কম করে হলেও একশ হত্যাকাণ্ড ঘটবে।
জনাব আমি যদি আপনার চেয়ারের মালিক হতাম তবে ডিবি পুলিশের চৌকস একটি দলকে সাদা পোশাকে অপরাধপ্রবণ এলাকায় মোতায়েন করতাম। তাদের প্রতি কড়া নির্দেশ থাকত, আপত্তিকর অবস্থায় যাদের পাওয়া যাবে কিংবা অসময়ে যারা স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে ওই এলাকায় ঘুরতে এসেছে তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে আসো। ছেলেমেয়ে উভয়কে প্রথমে বেত মার। আপত্তিকর কর্মে জড়িতদের একশত বেত এবং বাকিদের ৫০ বেত। তারপর ওদের পিতা-মাতা, স্কুল-কলেজের নাম-ঠিকানা নাও। ওদের কাছে জিজ্ঞাসা কর বাবা-মা এবং শিক্ষকরা ভালো না মন্দ। যদি ওরা মন্দ বলে তবে ওইসব বাবা-মা ও শিক্ষককে ধরে নিয়ে আস। মুখোমুখি কর কুলাঙ্গারদের। যদি মনে হয় ছেলেমেয়েরা সত্য বলেছে, তবে বাবা-মা ও শিক্ষকের পাছায় বেদম প্রহার কর। এরপর সবার কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে ছেড়ে দাও, নইলে লাল দালানে পাঠিয়ে দাও। যারা বলবে যে তাদের বাবা-মা ভালো তাদের আরেক দফা বেত মার। তারপর তাদের বাবা-মাকে খবর দাও। বাবা-মা যদি বন্ড দিয়ে সন্তানদের ছাড়িয়ে নিতে চায়, তবে ছেড়ে দাও। নচেৎ কুলাঙ্গারদের জেলে পাঠিয়ে দাও।
মাননীয় কমিশনার সাহেব, আপনি যদি উপরোক্ত কাজ করতে পারেন তবে জান্নাতে আপনার স্থান হবে খলিফা হজরত ওমর (রা.) বা খলিফা হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের (রহ.) পাশে। দুনিয়াতে আপনি হবেন স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সনদ বলে সম্মানীত এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। জমিন-আসমান এবং বৃক্ষলতা আপনার চলার পথে আপনার জন্য আল্লাহর দরবারে রহমত, ক্ষমা এবং সফলতার জন্য দোয়া করবে। আপনি পেঁৗছে যাবেন দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার স্বর্ণ শিখরে। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরাজিত হবে আর আপনি হবেন প্রশান্ত হৃদয়ের সুখী এবং সফল একজন মানুষ। ইতি- আল্লাহ হাফেজ। ধন্যবাদান্তে- গোলাম মাওলা রনি, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন