বর্তমান বাইবেল আল্লাহর নাযিল করা তাওরাত ও ইঞ্জিল কিনা?

লিখেছেন লিখেছেন নেনাভাই ১৯ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৩০:১৪ রাত

সাধারণভাবে লোকেরা তাওরাত বলতে বাইবেলের ওল্‌ড টেস্টামেন্টের (পুরাতন নিয়ম) প্রথম দিকের পাঁচটি পুস্তক এবং ইনজীল বলতে নিউ টেস্টামেণ্টের (নতুন নিয়ম) চারটি প্রসিদ্ধ ইনজীল মনে করে থাকে৷ তাই এ পুস্তকগুলো সত্যিই আল্লাহর কালাম কিনা, এ প্রশ্ন দেখা দেয়৷ আর এই সংগে এ প্রশ্নও দেখা দেয় যে, এই পুস্তকগুলোতে যেসব কথা লেখা আছে যথার্থই কুরআন সেগুলোকে সত্য বলে কিনা৷ কিন্তু এ ব্যাপারে প্রকৃত সত্য হচ্ছে এই যে, তাওরাত বাইবেলের প্রথম পাঁচটি পুস্তকের নাম নয় বরং এগুলোর মধ্যে তাওরাত নিহিত রয়েছে এবং ইনজীল নিউ টেস্টামেন্টের চারটি ইনজীলের নাম নয় বরং এগুলোর মধ্যে ইনজীল পাওয়া যায়৷

আসলে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াত লাভের পর থেকে তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তাঁর ওপর যেসব বিধান অবতীর্ণ হয়েছিল সেগুলোই তাওরাত৷ এর মধ্যে পাথরের তক্তার গায়ে খোদাই করে দশটি বিধান আল্লাহ তাঁকে দান করেছিলেন৷ অবশিষ্ট বিধানগুলো হযরত মূসা (আ) লিখিয়ে তার বারোটি অনুলিপি করে বারোটি গোত্রকে দান করেছিলেন এবং একটি কপি সংরক্ষণ করার জন্যে দান করেছিলেন বণী লাবীকে৷ এ কিতাবারে নাম ছিল তাওরাত৷ বাইতুল মাকদিস প্রথমবার ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত এটি একটি স্বতন্ত্র কিতাব হিসেবে সংরক্ষিত ছিল৷ বনি লাবীকে যে কপিটি দেয়া হয়েছিল, পাথরের তক্তা সহকারে সেটি 'অংগীকারের সিন্দুকে'র মধ্যে রাখা হয়েছিল৷ বনী ইসরাঈল সেটিকে 'তাওরীত' নামেই জানতো৷ কিন্তু তার ব্যাপারে তাদের গাফলতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যার ফলে ইয়াহুদীয়ার বাদশাহ ইউসিয়ার আমলে যখন 'হাইকেলে সুলাইমানী' মেরামত করা হয়েছিল তখন ঘটনাক্রমে 'কাহেন' প্রধান (অর্থাৎ হাইকেল বা উপাসনা গৃহের গদীনশীন এবং জাতির প্রধান ধর্মীয় নেতা)৷ খিলকিয়াহ একস্থানে তাওরীত সুরক্ষিত অবস্থায় পেয়ে গেলেন৷ তিনি একটি অদ্ভুত বস্তু হিসেবে এটি বাদশাহর প্রধান সেক্রেটারীকে দিলেন৷ সেক্রেটারী সেটিকে এমনভাবে বাদশাহর- সামনে পেশ করেন যেন ঐটি একটি বিস্ময়ক আবিষ্কার (২-রাজাবলী, অধ্যায় ২২, শ্লোক ৮-১৩ দেখুন)৷ এ কারণেই বখ্‌তে নসর যখন জেরুসালেম জয় করে হাইকেলসহ সারা শহর ধ্বংস করে দিল তখন বনী ইসরাঈলরা তাওরাতের যে মূল কপিটিকে বিস্মৃতির সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিল এবং যার অতি অল্প সংখ্যক অনুলিপি তাদের কাছে ছিল, সেগুলো হারিয়ে ফেললো চিরকালের জন্য৷ তারপর আযরা (উযাইর) কাহেনের যুগে বনী ইসরাঈলদের অবশিষ্ট লোকেরা বেবিলনের কারাগার থেকে জেরুসালেমে ফিরে এলো এবং ভাইতুল মাসদিস পূনর্নিমান করা হলো৷ এ সময় উযাইর নিজের জাতির আরো কয়েকজন মনীষীর সহায়তায় বনী ইসরাঈলদের পূর্ণ ইতিহাস লিখে ফেললেন৷ বর্তমান বাইবেলের প্রথম সতেরোটি পরিচ্ছেদ এ ইতিহাস সম্বলিত৷ এ ইতিহাসের চারটি অধ্যায় অর্থাৎ যাত্রা, লেবীয়, গণনা ও দ্বিতীয় বিবরণে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের জীবনী লিপিবদ্ধ হয়েছে৷ আযরা ও তার সহযোগীরা তাওরাতের যতগুলো আয়াত সংগ্রহ করতে পেরেছিল এই জীবন ইতিহাসের বিভিন্ন স্থানে অবতীর্ণের সময়-কাল ও ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ঠিক জায়গামতো সেগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে৷ কাজেই এখন মূসা আলাইহিস সালামের জীবন ইতিহাসের মধ্যে সেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশের নামই তারওরাত৷ এগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য আমরা কেবলমাত্র নিম্নোক্ত আলামতের ওপর নির্ভর করতে পারি৷ এ ঐতিহাসিক বর্ণনার মাঝখানে যেখানে লেখক বলেন, প্রভু মূসাকে একথা বললেন অথবা মূসা বলেন, সদাপ্রভু তোমাদের প্রভু একথা বললেন, সেখান থেকে তাওরাতের একটি অংশ শুরু হচ্ছে, তারপর আবার যেখান থেকে জীবনী প্রসংগ শুরু হয়ে গেছে সেখান থেকে ঐ অংশ খতম হয়ে গেছে ধরে নিতে হবে৷ মাঝখানে যেখানে যেখানে বাইবেলের লেখক ব্যাখ্যা বা টীকা আকারে কিছু অংশ বৃদ্ধি করেছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ও বাছাই করে আসল তাওরাত থেকে আলাদা কিতাবসমূহের গভীর জ্ঞান রাখেন, তারা ঐসব অংশের কোথায় কোথায় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মূলক বৃদ্ধি করা হয়েছে কিছুটা নির্ভুলভাবে তা অনুধাবন করতে পারেন৷ এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশগুলোকেই কুরআন তাওরাত নামে আখ্যায়িত করেছে৷ কুরআন এগুলোকেই সত্য বলে ঘোষণা দিয়েছে৷ প্রকৃতপক্ষে এ অংশগুলোকে একত্র করে কুরআনের পাশাপাশি দাঁড় করালে কোন কোন স্থানে ছোট খাটো ও খুঁটিনাটি বিধানের মধ্যে কিছু বিরোধ দেখা গেলেও মৌলিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সামান্যতম পার্থক্যও পাওয়া যাবে না৷ আজও একজন সচেতন পাঠক সুস্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারেন যে, এ দু'টি স্রোতধারা এক্ই উৎস থেকে উৎসারিত৷

অনুরূপভাবে ইনজীল হচ্ছে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ইলহামী ভাষণ ও বানী সমষ্টি, যা তিনি নিজের জীবনের শেষ আড়াই তিন বছরে নবী হিসেবে প্রচার করেন৷ এ পবিত্র বাণীসমূহ তাঁর জীবদ্দশায় লিখিত, সংকলিত ও বিন্যস্ত হয়েছিল কিনা সে সম্পর্ক জানার কোন উপায় আমাদের কাছে নেই৷ হতে পারে কিছু লোক সেগুলো নোট করে নিয়েছিলেন৷ আবার এমনও হতে পারে, শ্রবণকারী ভক্তবৃন্দ সেগুলো কণ্ঠস্থ করে ফেলেছিলেন৷ যাহোক দীর্ঘকাল পরে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জীবন বৃত্তান্ত সম্বলিত বিভিন্ন পুস্তিকা রচনা কালে তাতে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাথে সাথে ঐ পুস্তিকাগুলোর রচয়িতাদের কাছে মৌখিক বানী ও লিখিত স্মৃতিকথা আকারে হযরত ঈসার (আ) যেসব বানী ও ভাষণ পৌঁছেছিল সেগুলোও বিভিন্ন স্থানে জায়গা মতো সংযোজিত হয়েছিল৷ বর্তমানে মথি, র্মাক, লুক ও যোহন লিখিত যেসব পুস্তককে ইনজীল বলা হয় সেগুলো আসলে ইনজীল নয়৷ বরং ইনজীল হচ্ছে ঐ পুস্তকগুলোতে সংযোজিত হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বানীসমূহ৷ আমাদের কাছে সেগুলো চেনার ও জীবনীকারদের নিজেদের কথা থেকে সেগুলো আলাদা করার এ ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন মাধ্যম নেই যে, যেখানে জীবনীকার বলেন, ঈসা বলেছেন অথবা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন-কেবলমাত্র এ স্থানগুলো আসল ইনজীলের অংশ৷ কুরআন এ অংশগুলোর সমষ্টিকে ইনজীল নাম অভিহিত করে এবং এরই সত্যতার ঘোষণা দেয়৷ এ বিক্ষিপ্ত অংশগুলোকে একত্র করে আজ যে কেউ কুরআনের পাশাপাশি রেখে এর সত্যতা বিচার করতে পারেন৷ তিনি উভয়ের মধ্যে অতি সামান্য পার্থক্যই দেখতে পাবেন৷ আর যে সামান্য পার্থক্য অনুভূত হবে পক্ষপাতহীন চিন্তা-ভাবনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা সহজেই দূর করা যাবে৷

বিষয়: বিবিধ

৫০৪৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

256130
১৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৪৮
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : বাইবেলে যেহেতু ভুল তথ্য আছে সেহেতু এটা বিকৃত হয়েগেছে!
256141
২০ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:১৫
বুড়া মিয়া লিখেছেন : সুন্দরভাবে বিশ্লেষন করেছেন ...
256157
২০ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৫১
সাদাচোখে লিখেছেন : চমৎকার লিখেছেন। যথার্থ বর্ননা।

জানতে ও চিন্তা করতে ইচ্ছুক মানুষের জন্য আপনার লিখা হতে পারে ইন্সপাইরেশান স্বরূপ।

জানাশোনা মানুষের জন্য - কোরআন কে আরো নিবিড় ভাবে পেতে, আরো ভালবাসতে এবং কোরানের উপর আরো বেশী নির্ভরতা বাড়াতে - আমাদের উচিত সময় ও সুযোগ মত ঐ দুটো বইয়ে চোখ ভুলানো।

আপনার রেফারেন্সটা অবশ্যই মনে রেখে - তাতে কোরানের ইউনিকনেস যেমন আরো প্রকট হয়ে ধরা দেবে, আল্লাহর কালামের শক্তিও বিমূর্ত হবে।

আল্লাহ আমাদের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ অবারিত করে দিন। আমীন

ধন্যবাদ লিখককে।
256221
২০ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৩২
নেনাভাই লিখেছেন : সকলকে অশেষ ধন্যবাদ
256250
২০ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
হতভাগা লিখেছেন : পূর্বেকার আসমানি কিতাবগুলো তাদের অনুসারীরা নিজেদের পছন্দ মত পরিবর্তন করেছে ।

যার জন্য আল্লাহ মহানবী হযরত মু'হাম্মাদ (সাঃ)এর উপর ক্বুরআন নাজিল করেছেন এবং এর সংরক্ষণ করবেন স্বয়ং আল্লাহই ।

(আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন , তিনিই সর্বজ্ঞানী )
256885
২১ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩৩
নেনাভাই লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File