স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দিলে কর্তব্য কি?
লিখেছেন লিখেছেন নেনাভাই ১৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:০৬:০৯ রাত
আল্লাহ বলেনঃ
﴿وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا﴾
আর যদি কোথাও তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিগড়ে যাবার আশংকা দেখা দেয় তাহলে পুরুষের আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ এবং স্ত্রীর আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন সালিশ নির্ধারণ করে দাও৷ তারা দুজন সংশোধন করে নিতে চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসা ও মিলমিশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবেন ৷ আল্লাহ সবকিছু জানেন , তিনি সর্বজ্ঞ৷(সূরা নেসা)
এ আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দিলে বিরোধ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর্যায়ে পৌঁছাবার বা ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়াবার আগেই ঘরেই তার সংশোধন ও মীমাংসার চেষ্টা করা উচিত৷ এজন্য এ পদ্ধিত বাতলানো হয়েছে যে, স্বামী ও স্ত্রীর উভয়ের পরিবার থেকে একজন করে লোক নিয়ে দু'জনের একটি সালিশ কমিটি বানাতে হবে৷ তারা উভয়ে মিলে বিরোধের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাবেন৷ তারপর এক সাথে বসে এর সামাধান ও মীমাংসার পথ বের করবেন৷ এই সালিশ কে নিযুক্ত করবে? এ প্রশ্নটি আল্লাহ অস্পষ্ট রেখেছেন৷ এর কারণ হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী চাইলে নিজেদের আত্মীয়দের মধ্য থেকে নিজেরাই একজন করে লোক বাছাই করে আনতে পারে৷ তারাই তাদের বিরোধ নিস্পত্তি করবে৷ আবার উভয়ের পরিবারের বয়স্ক লোকেরা এগিয়ে এসে এ ধরনের সালিশ নিযুক্ত করতে পারে৷ আর ব্যাপারটি যদি আদালতে চলে যায়, তাহলে আদালত নিজেই কোন সিদ্ধান্ত দেবার আগে পারিবারিক সালিশ নিযুক্ত করে এর মীমাংসা করে দিতে পারে৷
সালিশদের ক্ষমতা ব্যাপারে মতবিরোধ আছে৷ ফকীহদের একটি দল বলেন, এই সালিশে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ও মীমাংসা চাপিয়ে দেবার ক্ষমতা নেই৷ তবে তাদের মতে, ঝগড়া মিটমাট করার যে সংগত ও সম্ভাব্য পদ্ধতি হতে পারে সেজন্য তারা সুপারিশ করতে পারে৷ এই সুপারিশ মেনে নেয়া না নেয়ার ইখতিয়ার স্বামী-স্ত্রীর আছে৷ তবে স্বামী-স্ত্রী যদি তাদেরকে তালাক বা খুলা তালাক অথবা অন্য কোন ব্যাপারে মীমাংসা করে দেবার জন্য দায়িত্বশীল হিসেবে নিযুক্ত করে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যি তাদের ফায়সালা মেনে নেয়া স্বামী-স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব হয়ে পড়বে৷ হানাফী ও শাফেয়ী আলেমগণ এই মত পোষন করেন৷ অন্য দলের মতে, উভয় সালিশের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবার এবং ঝগড়া মিটমাট করে আবার একসাথে মিলেমিশে চলার ফায়সালা করার ইখতিয়ার আছে কিন্তু স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা করে দেবার অধিকার তাদের নেই৷ হাসান বসরী, কাতাদাহ এবং অন্যান্য বেশ কিছু সংখ্যক ফকীহ এই মত পোষণ করেন৷ তৃতীয় একটি দলের মত, এই সালিশদ্বয় স্বামী-স্ত্রীকে মিলিয়ে দেবার বা আলাদা করার পূর্ণ ইখতিয়ার রাখে৷ ইবনে আব্বাস, সাঈদ ইবনে জুবাইর, ইবরাহীম নাখঈ, সা'বী, মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন এবং অন্যান্য ফকীহগণ এই মতের প্রবক্তা ৷
হযরত উসমান (রা) ও হযরত আলীর (রা) ফায়সালার যেসব নজীর আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তা থেকে জানা যায়,তারা উভয়েই সালিশ নিযুক্ত করার সাথে সাথেই আদালতের পক্ষ থেকে তাদেরকে নিজেদের ফায়সালা কার্যকর করার প্রশাসনিক ক্ষমতা দান করতেন৷ তাই হযরত আকীল ইবনে আবু তালেব এবং তাঁর স্ত্রী হযরত ফাতেমা বিনতে উতবাহ ইবনে রাবীআর মামলা যখন হযরত উসমানের আদালতে দায়ের করা হলো তখন তিনি স্বামীর পরিবার থেকে হযরত ইবনে আব্বাসকে এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে হযরত মুআবীয়া ইবনে আবু সুফিয়ানকে সালিশ নিযুক্ত করলেন এবং তাদেরকে বললেন, আপনারা দু'জন যদি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তাদের স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে তাহলে তা করে দেবেন৷ অনুরূপভাবে একটি মামলায় হযরত আলি সালিশ নিযুক্ত করেন৷ তাদেরকে মিলিয়ে দেবার বা আলাদা করে দেবার ইখতিয়ার দান করেন৷ এ থেকে জানা যায়, সালিশের নিজস্ব কোন আদালতী ক্ষমতা বা ইখতিয়ার নেই ৷ তবে তাদের নিযুক্তির সময় আদালত যদি তাদেরকে ক্ষমতা দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের ফায়সালা আদালতের ফায়সালার ন্যায় প্রবর্তিত হবে৷
বিষয়: বিবিধ
১৬৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটাও এখন অনেকের মনঃপুত নয়! তবে শেষ-মেষ এটাই মেনে নিতে হয় বাধ্য হয়ে।
সুন্দর বিষয়ে জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন