বনী ইসরাঈলরা ( বর্তমান ইহুদীরা) কোন কোন পয়গম্বরদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল?
লিখেছেন লিখেছেন নেনাভাই ০৭ আগস্ট, ২০১৪, ১০:২৫:২০ রাত
একঃ হযরত সুলাইমানের পর ইসরাঈলী সাম্রাজ্য দু'টি রাষ্ট্রে( জেরুযালেমের ইহুদিয়া রাষ্ট্র এবং সামারিয়ার ইসরাঈর রাষ্ট্র ) বিভক্ত হয়ে যায় ৷ তাদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ চলতে থাকে ৷ অবশেষে ইহুদিয়া রাষ্ট্র নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দামেস্কের আরামী রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করে ৷ এতে আল্লাহর হুকুমে হানানী নবী ইহুদিয়া রাষ্ট্রের শাসক 'আসা'-কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন৷ কিন্তু 'আসা' এই সতর্কবাণী গ্রহণ করার পরিবর্তে আল্লাহর নবীকে করারুদ্ধ করে ৷ (২ বংশাবলী , ১৭অধ্যায় , ৭-১০ শ্লোক)
দুইঃ হযরত ইলিয়াস (ইলিয়াহ—ELLIAH) আলাইহিস সাল্লাম যখন বা'ল দেবতার পূজার জন্য ইহুদিদের তিরস্কার করেন এবং নতুন করে আবার তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন তখন সামারিয়ার ইসরাঈলী রাজা 'আখিআব' নিজের মুশরিক স্ত্রীর প্ররোচনায় তাঁর প্রাণনাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় মেতে ওঠেন৷ ফলে তাঁকে সিনাই উপদ্বীপের পর্বতাঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয় ৷ এ সময় ইলিয়াস যে দোয়া করেন তার শব্দবলী ছিল নিম্নরূপঃ
"বনী আসরাঈল তোমার সাথে কৃত অংগীকার ভংগ করেছে …………………. তোমার নবীদের হত্যা করেছে তলোয়ারের সাহায্যে এবং একমাত্র আমিই বেঁচে আছি৷ তাই তারা আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে ৷ ( ১ রাজাবলী , ১৭ অধ্যায় , ১-১০ শ্লোক)
তিনঃ সত্য ভাষণের অপরাধে হযরত 'মিকাইয়াহ' নামে আর একজন নবীকেও এই ইসরাঈলী শাসক আখিআব কারারুদ্ধ করে৷ সে হুকুম দেয় ,এই ব্যক্তিকে বিপদের খাদ্য খাওয়াও এবং বিপদের পানি পান করাও ৷ (১ রাজাবলী ,২২ অধ্যায় , ২৬-২৭ শ্লোক ) ৷
চারঃ আবার যখন ইহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তি পূজা ও ব্যভিচার চলতে থাকে এবং হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সাল্লাম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন তখন ইহুদি রাজা ইউআস-এর নির্দেশে তাকে মূল হাইকেলে সুলাইমানীতে 'মাকদিস'( পবিত্র স্থান) ও 'যবেহ ক্ষেত্র'-এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয় ৷ (২ বংশাবলী, ২৪ অধ্যায় , ২১ শ্লোক ) ৷
পাঁচঃ অতপর আশুরিয়াদের হাতে যখন সামারিয়াদের ইসরাঈলী রাষ্ট্রের পতন হয় এবং জেরুসালেমের ইহুদি রাষ্ট্র মহাধ্বংসের সম্মুখীন হয় তখন 'ইয়ারমিয়াহ' নবী নিজের জাতির পতনে আর্তনাদ করে ওঠেন ৷ তিনি পথে-ঘাটে , অলিতে-গলিতে নিজের জাতিকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন , "সতর্ক হও, নিজেদেরকে সংশোধন করো , অন্যথায় তোমাদের পরিণাম সামারিয়া জাতির চাইতেও ভয়াবহ হবে ৷" কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে এই সাবধান বাণীর বিরূপ জওয়াব আসে ৷ চারদিক থেকে তাঁর ওপর প্রবল বৃষ্টিধারার মতো অভিশাপ ও গালি-গালাজ বর্ষিত হতে থাকে ৷ তাঁকে মারধর করা হয় ৷ কারারুদ্ধ করা হয় ৷ ক্ষুধা ও পিপাসায় শুকিয়ে মেরে ফেলার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে তাকে কর্দমাক্ত কূয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয় ৷ তাঁর বিরুদ্ধে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার এবং বিদেশী শত্রুর সাথে আতাত করার অভিযোগ আনা হয় ৷ ( যিরমিয়, ১৫ অধ্যায়, ১০ শ্লোক; ১৮ অধ্যায়, ২০-২৩ শ্লোক; ২০ অধ্যায় , ১-১৮ শ্লোক; ৩৬-৪০ অধ্যায় )৷
ছয়ঃ 'আমুস' নামক আর এজন নবী সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ যখন তিনি সামারিয়ার ইসরাঈলী রাষ্ট্রের ভ্রষ্টতা ও ব্যভিচারের সমালোচনা করেন এবং এই অসৎকাজের পরিণাম সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেন তখন তাঁকে চরমপত্র দিয়ে দেয়া হয়, এদেশ থেকে বের হয়ে যাও এবং বাইরে গিয়ে নিজের নবুওয়াত প্রচার করো ৷ (আমুস, ৭ অধ্যায় , ১০-১৩ শ্লোক )৷
সাতঃ হযরত ইয়াহইয়া (JOHN THE BAPTIST) আলাইহিস সালাম যখন ইহুদি শাসক হিরোডিয়াসের দরবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত ব্যভিচার ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তখন প্রথমে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয় ৷ তারপর বাদশাহ নিজের প্রেমিকার নির্দেশানুসারে জাতির এই সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিটির শিরচ্ছেদ করে৷ কর্তিত মস্তক থালায় নিয়ে বাদশাহ তার প্রেমিকাকে উপহার দেয় ৷ (মার্ক, ৬ অধ্যায়, ১৭-২৯ শ্লোক) ৷
আটঃ সবশেশে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের আলেম সমাজ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের ক্রোধ উদ্দীপিত হয় ৷ কারণ তিনি তাদের পাপ কাজ ও লোক দেখানো সৎকাজের সমালোচনা করতেন৷ তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের দিকে আহবান জানাতেন৷ এসব অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরি করা হয় ৷ রোমান আদালত তাঁকে প্রাণদন্ড দানের সিদ্ধান্ত করে৷ রোমান শাসক পীলাতীস যখন ইহুদিদের বললো, আজ ঈদের দিন, আমি তোমাদের স্বার্থে ঈসা ও বারাব্বা(Barabbas) ডাকাতের মধ্য থেকে একজনকে মুক্তি দিতে চাই ৷ আমি কাকে মুক্তি দেবো? ইহুদিরা সমস্বরে বললো, আপনি বারাব্বকে মুক্তি দিন এবং ঈসাকে ফাঁসি দিন৷ (মথি, ২৭ অধ্যায়, ২০-২৬)৷
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৩৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন