গাজা যুদ্ধে হামাসের বিস্ময়কর উত্থান, আরবদের মুখোশ উন্মোচিত

লিখেছেন লিখেছেন আমি কি সত্যিই রাজাকার? ০৮ আগস্ট, ২০১৪, ১১:১৯:৫৯ সকাল

চলতি হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ আরব-ইসরাইল

যুদ্ধ তো নয়ই বরং ফিলিস্তিন বনাম

ইসরাইল যুদ্ধ বলাও কতটুকু যুক্তিসঙ্গত

হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ

ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের

প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই

যুদ্ধে ইসরাইলকে নীরব সমর্থন

দিয়ে যাচ্ছেন। তাই বলা যায় এই

যুদ্ধটা হলো একটি প্রক্সি যুদ্ধ।

মনোস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে এই

প্রক্সি যুদ্ধটা হচ্ছে মূলত ইরান বনাম

আরব! ইসরাইলের বৃহত্তর ইসরাইল

বাস্তবায়নে বর্তমান প্রধান

বাধা হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরান আর

অন্যদিকে আরব শাসকেরাও এই তিন

পক্ষকে তাদের জানের শত্রু মনে করে।

অন্যদিকে ইসরাইলী প্রেসিডেন্ট

শিমোন পেরেজ বলেছেন, “এই প্রথম

গাজা যুদ্ধে আমরা সব আরব শাসকদের

সমর্থন পেয়েছি।” ইসরাইল আরবদের

স্বার্থে নয় তার নিজ স্বার্থেই যুদ্ধ

করছে তবে আরব শাসক ও ইসরাইলের

স্বার্থ একই বিন্দুতে মিলিত হওয়ায়

আরব ও ইসরাইলের মধ্যে বন্ধুত্ব

হতে কোনো বাধা নেই কারণ বর্তমান

প্রেক্ষাপটে ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-

রাজনীতির আলোকে আরব ও ইসরাইল

একমাত্র ইরানকেই তাদের কমন শত্রু

মনে করে তাই আরব

শাসকেরা মনে করছে ইসরাইল তাদের

হয়ে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে!

অন্যদিকে ইরানের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ

করছে হামাস কথাটা ঠিক নয়

বরং এভাবে বললে শতভাগ সঠিক

হবে যে, চলমান যুদ্ধ ইরান ও

হামাসকে আগের যে কোনো সময়ের

চেয়েআরোকাছাকাছিনিয়েএসেছে।

এক্ষেত্রে হামাসকে ইরানের

যতটা না প্রয়োজন

তারচেয়ে ইরানকে হামাসের অনেক

বেশি প্রয়োজন। এর আগে হামাস-

ইসরাইল অনেক যুদ্ধ হয়েছে কিন্তু

বর্তমান যুদ্ধের মত

দীর্ঘমেয়াদি এবং এত বেশিসংখ্যক

বেসামরিক মানুষ হতাহত ও বিপুল

সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়নি ! কিন্তু

এবারে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার মূল কারণ

হলো- আরব শাসকেরা চায় না যুদ্ধ বন্ধ

হোক বরং আরব শাসকেরা চায়

ইসরাইলের দ্বারা হামাসের পতন ও

ধ্বংস অথবা নিদেনপক্ষে আরবরা এমন

একটি যুদ্ধ বিরতি চায় যে যুদ্ধ

বিরতিতে ইসরাইলের জয় নিশ্চিত ও

হামাস অত্যন্ত দুর্বল ও অক্ষম হবে। আর

এটাকরতেযেয়েপুরোগাজাবাসীকেইসরাইল

নিশ্চিহ্ন করলেও আরব শাসকদের কিছু

যায় আসে না। দেখুন, কয়েকদিন

আগে মিসর কর্তৃক যুদ্ধবিরতির

প্রস্তাবনা। মিসরের সেই প্রস্তাব

আত্মসমর্পণের নামান্তর

বলে প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস আর

একমাত্র কাতার ছাড়া উপসাগরীয় সব

আরব দেশই জোরালো কণ্ঠে সমর্থন

করেছে।

গত ২০১১ সালে সিরিয়াতে বিদ্রোহ

ও আইএসআইএল, আল কায়েদা জঙ্গীদের

অনুপ্রবেশের

ফলে সিরিয়াতে যে যুদ্ধাবস্থার

সৃষ্টি হয় সেই যুদ্ধে ইরান নেয়

প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষ আর

হামাস তার দীর্ঘদিনের মিত্র

প্রেসিডেন্ট আসাদকে পরিত্যাগ

করে পক্ষ নেয় বিদ্রোহীদের! সেই

থেকে ইরান-হামাসের স্নায়ু দ্বন্দ্ব!

হামাস তখন মিসর, তুরস্ক ও

কাতারমুখী হয়েছিল। মিসরের

প্রেসিডেন্ট মুরসির পতন হামাসের

জন্য ছিল বিরাট আঘাত ও

অন্যদিকে তুরস্ক ও কাতার মৌখিক

সমর্থন ছাড়া গাজাবাসী ও

হামাসের জন্য তেমন কিছুই করেনি।

তবে এরদোগান

মাঝে মাঝে ইসরাইলের

বিরুদ্ধে ফাঁকা বুলি ও

ফাঁকা গুলি ছুড়েন! অবশ্য পশ্চিমাদের

মিত্র হয়ে হামাসকে অস্ত্র সাহায্য

করার ক্ষমতা এই দুই দেশের কারো নেই

একমাত্র ইরান ছাড়া। এজন্য হামাসের

ইরানমূখী হওয়া ছাড়া আপাতত

দ্বিতীয় কোনো পথ নেই তবে চলমান

গাজা যুদ্ধ ইরান, তুর্কি ও কাতারকেও

কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। অন্তত

ফিলিস্তিন ইস্যুতে হয়তো নিকট

ভবিষ্যতে সৌদি আরব, জর্ডান, মিসর,

আরব আমিরাতের

বিরুদ্ধে একটা জোট গঠন

হতে পারে তবে এজন্য

আরো অপেক্ষা করতে হবে। তাই

হামাস চলমান যুদ্ধকে দেখছে তার

বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে ওঠার চরম

সুযোগ হিসেবে। নিঃসন্দেহ চলমান

যুদ্ধ ইরান ও

হামাসকেআবারোঅতিকাছাকাছিনিয়েএসেছে!

এক্ষেত্রে ইরানের লাভ হলো-এই

যুদ্ধে আরব শাসকদের মুখোশ যেমন

খুলে গেছে তেমনি ইরানের

পজিটিভ ভূমিকার কারণে বিশেষ

করে মুসলিম বিশ্বে ইরানের

ভাবমূর্তি আগের যে কোনো সময়ের

চেয়ে অনেক উজ্বল হয়েছে। এখন

এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, সৌদি ও

অন্যান্য আরব শাসক এবং ইসরাইলের

আশা হামাসের ধ্বংস দূরাশাই

হয়ে থাকল বরং উল্টোটাই ঘটছে।

অন্যদিকে মাহমুদ আব্বাস একটি ঐক্য

সরকার গঠন

করে হামাসকে সাবঅর্ডিনেট ও

ইসরাইলের প্রতি কম বৈরিভাবাপন্ন

করে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু চলমান

যুদ্ধ সবকিছুই পাল্টে দিয়েছে! শুধু

গাজা নয় মাহমুদ আব্বাসের পশ্চিম

তীরেও এখন হামাসের

জনপ্রিয়তা তুঙ্গে! আর যুদ্ধ বিরতির শর্ত

হিসেবে হামাসের অন্যতম

দাবি গাজার উপর ইসরাইলী ও

মিসরীয় অবরোধ প্রত্যাহার

হলে নিঃসন্দেহ ফিলিস্তিনিদের

পরবর্তী ভাগ্য নির্ধারণ হবে এই

হামাসের মাধ্যমেই।

বিষয়: রাজনীতি

১০৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File