প্রিয় বন্ধু তোমাকে ঈদের শুভেচ্ছা

লিখেছেন লিখেছেন কালো পাগড়ী ১৬ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৫৫:১৩ দুপুর






প্রিয় বন্ধু তোমাকে ঈদের শুভেচ্ছা । হায় ঈদের শুভেচ্ছা। দোস্ত ঈদের শুভেচ্ছা নিস। প্রিয়তমা তোমাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়া - ফেসবুক, টুইটার কিংবা অনলাইন ফ্রি ম্যাসেজিং ও কলিং ওয়েব ভাইভার, ইমুর কল্যাণে অথবা অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলোর সৌজন্যে যে কোন ঈদের পূর্বে আমরা চমৎকার ও আকর্ষণীয় ঈদ শুভেচ্ছা পেয়ে থাকি। গ্লোবালাইজেশনের যুগে বিশ্ব হাতের মুঠোয়। তাই ঈদ সংক্রান্ত উপরের শিরোনাম সম্বলিত ঈদ কার্ড সহসাই বন্ধু তার বন্ধুকে সেন্ড অথবা ট্যাগ করতে পারে।মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রিজনকে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়। যুব মানসে তাই আজ ঈদ যেন শুধুই ডিজিটাল সম্ভোধন। ঈদের ভালবাসা বা সমতার ভিত্তিতে সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার প্রবণতা একবারেই ক্ষণস্থায়ী।

ঈদ আসলে মুসলিম জাতি সত্যার ঐক্য ও ভ্রাতৃতের প্রতীক। ধনী-গরীব, আমীর- ফকির নির্বিশেষে সকলের মাঝে সমতা ও সহযোগিতার বাণী বার বার পৌঁছে দেওয়াই ঈদের মুল শিক্ষা। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মধ্যে মুলত ঈদুল ফিতরই বড় ও তাৎপর্য পূর্ণ। একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানব আত্মা পরম আত্মা কে পাওয়ার জন্য কতটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ করল, অন্যের জন্য কতটুকু সেক্রিফাইজ করার মন মানসিকতা তৈরি হল, ঈদুল ফিতরের পরথেকে আরেক ঈদুল ফিতর পর্যন্ত তার সামগ্রিক কার্যক্রমই সে কথা প্রমাণ করবে।

আবহমান কাল থেকে বাংলা মুলুকে ঈদ উৎসব ও ঈদের আনন্দ ঘিরে চলত ব্যাপক আয়োজন, সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিটি পরিবার পরিবারের সদস্য ও আপনজনদের জন্য পোশাকাদি ও উপহার সামগ্রী ক্রয় করত। আয়োজন করত বিশেষ খানা পিনার। আজো সে ধারা অব্যহত আছে, তবে অনেকাংশেই হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। লোক দেখানো ও ফ্যাশনেবল ঈদ, ঈদের অর্থকেই পাল্টে দিচ্ছে। অতিতে ঈদ নিয়ে বাংলা সাহিত্যের যে রত্ন ভাণ্ডার রয়েছে, তা আমাদের সর্বদাই স্মরণ করিয়ে দেয় সে যুগের ঈদ ও এদের মর্মবাণী। সাহিত্যে আধুনিকতা এসেছে তাই ঈদ সাহিত্যও আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিপুষ্ট।

যতটুকু জানা যায়, বিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা কবিতায় ঈদ নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়। সৈয়দ এমদাদ আলীর ‘ঈদ’ কবিতাটিই সম্ভবত বাংলাভাষায় রচিত প্রথম ঈদ-বিষয়ক কবিতা। ১৯০৩ সালে তাঁরই সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক নবনূর পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় কবিতাটি ছাপা হয়। তিনি লিখেছেন-

“ ধর্ম ও কর্মরে জীবনের মাঝে

প্রতিষ্ঠিত করি আজ জীবনের আবহে হও অগ্রসর,

নাহি তাতে কোন লাজ।

যে চেতনা থাকে একদিন জাগি,

দীর্ঘ নিদ্রা তার পরে,

সে তো আনে শুধু ঘন অবসাদ

জীবনে ঢালে অনন্ত বিষাদ

দেও তারে দূর করে। ”

মানবজাতির তথা মুসলমানদের মহামিলনের উৎসব ঈদকে নিয়ে কবি কায়কোবাদ ‘ঈদ আবাহন’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি এ রকম-

“ এই ঈদ বিধাতার কি যে শুভ উদ্দেশ্য মহান,

হয় সিদ্ধ, বুঝে না তা স্বার্থপর মানব সন্তান।

এ ত নহে শুধু ভবে আনন্দ উৎসব ধুলা খেলা।

এ শুধু জাতীয় পুণ্যমিলনের এক মহামেলা। ”

কবি শাহাদাত হোসেনের ‘বাংলার ঈদ’ কবিতায়। লিখেছেন,

“ বাংলার মুসলমান

শুধু চেয়ে রয়-

মৌন ম্লান ক্লিষ্ট মুখ নির্বাক নিশ্চল।

ফিত্রার খুশী কোথা তার?

কি দান সে দিবে ক্ষুধিতেরে?

নিজেই কাঙাল রিক্ত-

ভিক্ষা মাগি ফিরে দ্বারে দ্বারে।”

ঈদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা ও গান লিখেছেন, আমাদের জাতীয় কবি , কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার লেখা –

‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।

তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ।’

-এ গানটি ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না। এছাড়া, ‘ঈদ মোবারক’ ও ‘কৃষকের ঈদ’ ও ‘ঈদের চাঁদ’ কবি নজরুলের বহুল আলোচিত কবিতা। ‘ঈদ মোবারক’ কবিতায় কবি লিখেছেন,

“শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো,

কত বালুচরে কত আঁখি-ধারা ঝরায়ে গো,

বরষের পরে আনিলে ঈদ! ”

ঐতিহ্য সচেতন কবি ফর্রুখ আহমদ - ঈদকে ভেবেছেন অজানা সাতসাগর ঘুরে-আসা স্বপ্নের মাঠে ভেসে বেড়ানো একখণ্ড রাঙা মেঘ। আতরের অধীর গন্ধ আর হাওয়ার ব্যাকুল বাঁধনে রেখায়িত গোধূলি-আকাশে তিনি ধরতে চেয়েছেন ঈদের ইশারা। তিনি যেন ‘ঈদের স্বপ্ন’ কবিতায় স্বস্তি খোঁজেন ঐতিহ্যের বিরাট পাটাতনে—

মনে পড়ে বহু আগে একদিন এসেছিল কাছে

এখনো সে স্বপ্নলোকে ফেরে এক অতৃপ্ত চকোর

কাবার মিনার ঘিরে আনন্দের সফেদ আভাসে

নিমেষে ছিঁড়িয়া যায় শতাব্দীর সঞ্চিত পাথর।

সিকান্দার আবু জাফর - বর্তমানের সব গ্লানি আর ব্যর্থতার দায় নিজে গ্রহণ করে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন ঈদের আনন্দ-আলোয়। পিতা তথা অভিভাবকের কাছে আশীর্বাদের জন্য তাঁর আকুল প্রার্থনা যেন ব্যক্তিগত বিষয়াদির প্রসঙ্গ ছাড়িয়ে সবার অর্থাত্ জাতীয় অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি ‘ঈদের চিঠি’তে বাপজানকে লিখছেন—

ঈদের সালাম নিও, দোয়া করো আগামী বছর

কাটিয়ে উঠতে পারি যেন এই তিক্ত বছরের

সমস্ত ব্যর্থতা।

অন্ততঃ ঈদের দিন সাদাসিধে লুঙ্গি একখানি,

একটি পাঞ্জাবী আর সাদা গোলটুপি

তোমাকে পাঠাতে যেন পারি;

আর দিতে পারি পাঁচটি নগদ টাকা।

অধিকাংশ কবি-সাহিত্যিক ঈদের দিনকে খুশীর দিন হিসেবে চিত্রিত করলেও কবি মতিউর রহমান মল্লিক তার গানে লিখেছেন,

“ঈদের খুশী অপূর্ণ রয়ে যাবে ততদিন

খোদার হুকুমাত হবে না কায়েম

কায়েম হবে না যতদিন।”

কবির এ গানের কথাগুলো যৌক্তিক। কারণ দুনিয়ায় খোদার হুকুমাত কায়েমের মাধ্যমেই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করা সম্ভব। আর এ বৈষম্য দূর হলেই ঈদ হবে সত্যিকার আনন্দের দিন; তা সবার হৃদয়ে বুলিয়ে দেবে প্রেম প্রীতি আর শান্তির পরশ।

এছাড়া ঈদ থেকে শিক্ষা নিয়ে সারাবছর নিজের জীবনকে পরিচালিত করতে পারলেই ঈদ উৎসব সার্থক হবে। ঈদের দিন যেভাবে ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে যায়,সারাবছর ধরে সেই বিভেদের দেয়ালকে তুলে ফেলতে হবে। কবি গোলাম মোস্তফার কথায়-

“আজি সকল ধরা মাঝে বিরাট মানবতা মূর্তি লভিয়াছে হর্ষে,

আজিকে প্রাণে প্রাণে যে ভাব জাগিয়েছে রাখিতে হবে সারা বর্ষে,

এই ঈদ হোক আজি সফল ধন্য নিখিল-মানবের মিলন জন্য,

শুভ যা জেগে থাক,অশুভ দূরে যাক

খোদার শুভাশীষ স্পর্শে।”

আমরা যারা প্রবাসে বসবাস করি, দেশীয় আমেজে প্রিজনদের সাথে ঈদের যে মজা ও সুখ, তা পুরটাই বিসর্জন দিতে হয়। জীবনের ঘানি টেনে সবার মুখে হাসি ফুটাতে আমরা সব কিছুই বিসর্জন দেই, আর ঈদ তো তার থেকে বাদ পরা কোন বিষয় নয়। সে কথাটিই ফুটে উঠেছে কুয়েত প্রবাসী কবি ও ছড়াকার -----শামসুল হক শামস্ এর লিখায়।

প্রবাসীদের ঈদ মানে

বালিশ ছাড়া ঘুম,

প্রবাসীদের ঈদ মানে

ফোনে আদর চুম।

প্রবাসীদের ঈদ মানে

ফিরনী পিঠা নাই,

প্রবাসীদের ঈদ মানে

বেঁচে থাকার ঠাঁই।

প্রবাসীদের ঈদ মানে

কান্না হাসি গান,

প্রবাসীদের ঈদ মানে

নাড়ীর প্রতি টান।

প্রবাসীদের ঈদ মানে

বুকে আশার বল,

প্রবাসীদের ঈদ মানে

চোখের লোনা জল।

প্রবাসীদের ঈদ মানে

ব্যাথা মাখা মুখ,

প্রবাসীদের ঈদ মানে

প্রিয়জনের সুখ।

ঈদ ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে আমাদের কায় মনোবাক্যে প্রার্থনা হলো জগতের সব মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। পৃথিবী সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত হোক! সন্ত্রাসের বিভীষিকা দূর হোক! আর্ন্তরদন্দ আর নাশকতা দূর হোক! আগামী দিনগুলো সুন্দর ও সৌন্দর্যম-িত হোক! হাসি-খুশি ও ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি প্রাণ। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। তাই আসুন, ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার মনে-প্রাণে। বুকে বুক মিলিয়ে আসুন সবাই সবার হয়ে যাই। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন ‘ঈদ মোবারক, ।

বিষয়: সাহিত্য

৩৩৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File