রহস্য উপন্যাস "ফাইল নম্বর টু " পর্ব- আট।
লিখেছেন লিখেছেন কালো পাগড়ী ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:০০:৩৩ রাত
আট।
চালনা বাজার মাঠ। আজ কলেজ ছাত্রদের ক্রিকেট খেলা সকাল দশটায় আরম্ভ হয়েছে। খেলা সুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর শিপনরা এসে উপস্থিত। ওরা এসে মাঠের অপর প্রান্তে ঐ অফিসটির সামনে এসে বসেছে। একটু পর শিপন বলল হিরা যা তো কিছু খাবার নিয়ে আয়, খুব ক্ষুধা লেগেছে। এটা ওদের পূর্ব পরিকল্পিত। হিরা দোকান থেকে গোটা দশেক সিংগারা নিয়ে এলো। ওরা বসে বসে খাচ্ছে। এমন ভাবে খাচ্ছে যেন পৃথিবীর সব চেয়ে তৃপ্তিকর খাবার ওরা এনজয় করছে। ওদের খাবার স্টাইল দেখলে যে কেউ মুখে লালা ঝড়িয়ে ফেলবে। লাট মিয়াঁ দরোজার সামনে টুলে বসে ওদের খাবার দেখছে।
লাট মিয়াঁ আর যেন চুপ থাকতে পারলনা । দরদ ভরা গলায় বলে উঠল, কিহে তোমার কি খাচ্ছ বসে বসে বসে? শিপন যেন এর জন্যেই অপেক্ষা করছিল। ও দুটি সিংগারা লাট মিয়াঁকে দিয়ে বলল, নিন চাচা আপনিও খান।
হাতে নিতে নিতে লাট মিয়াঁ না- না কোন প্রয়োজন নেই। তোমরা ছোট মানুষ।
লেবু আস্তে আস্তে বলল, ছোট না বড় দু’দিন পর হাড়ে হাড়ে টের পাবে। সিংগারা খাওয়া শেষ হলে লেবু বলল, চাচা পানি খাব। ভিতর থেকে জগ গ্লাস আনুন।
শিপন বলল হ্যাঁ চাচা একটু পানি খাওয়ান।
তোমরা বস আমি নিয়ে আসি। লাট মিয়াঁ তালা খুলে ভিতরে ঢুকার সাথে সাথে শিপনও ভিতরে ঢুকে গেলো। ওর উদ্দেস্য অফিসের পরিস্থিতি একটু দেখে আসা। একি তুমি আবার ভিতরে এসেছো কেন?
লাট মিয়াঁ শিপন কে বলল। শিপন যেন তৈরিই ছিল। বাহ্ আপনাদের অফিস টা তো খুব সুন্দর চাচা। শিপন এই ফাকে টেবিলের নিচে ও সাইডে কিছু খুজলো। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলোনা । বাহিরে এসে ওরা পানি পান করলো। শিপন লেবু কে বলল, লেবু ভিতরে জগ টা রেখে আয়। লাট মিয়াঁ নিজেই উঠতে চেয়েছিল।শিপন বলল, চাচা আপনি বসুন, ও রেখে আসুক। লেবু জগ রখে এলো। খেলা শেষ পর্যায়ে। এবার ওরা সবাই বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠলো।
আসি চাচা। এই বলে সবাই লাট মিয়াঁর থেকে বিদায় নিল।
লাট মিয়াঁ বলল আবার এসো তোমরা। সবাই ঘাড় বাকিয়ে যেন লাট মিয়াঁর কথায় সায় দিল।
এদিক ওদিক না তাকিয়ে ওরা সবাই শিপনের রুমে এসে ঢুকলো। এবং পরিকল্পনা করল আজ রাত দশটায় ওরা এ অফিসে অভিযান চালাবে। মিটিং শেষ যার যার মতো সবাই বাসায় চলে গেল।
রাত দশটা বাজতে এখন দশ মিনিট বাকি। ওরা অভিযানে যাওয়ার জন্য বের হলো। হিরা সাথে করে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে এসেছে।রাজুদের আবার ঔষধের দোকান। ও সাথে করে ছোট এক বোতল ক্লোরফোম ও একটি রূমাল নিয়ে এসেছে। শিপন এ ব্যাপারে আগেই ওদের বলে দিয়েছে। যদি প্রয়োজন পরে যায়। সিদ্ধান হলো শিপন আর হিরা ভিতরে ঢুকবে। লেবু আর রাজু বাহিরে। জরুরী মুহূর্তে কি করতে হবে, শিপন আগেই ওদের সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে।
অফিসের সামনে টুলে বসে লাট মিয়াঁ ঝিমুচ্ছে। শিপন আর হিরা অফিসের অফিসের পিছন দিকে যে দরোজা, তার সামনে গিয়ে দারালো। আলতো ভাবে চাপ দিতেই দরোজা খুলে গেলো। দুপুরে যখন শিপন অফিসে ঢুকেছে, তখন এক ফাঁকে দরোজার সিটকিনিটা খুলে রেখেছিল।দরোজায় পর্দা থাকার কারনে বুঝা যাচ্ছেনা সিটকিনিটা খোলা না আটকানো। ওরা ভীতরে ঢুকে পেন্সিল টর্চটা জ্বালিয়ে সেক্রেটারিয়েট টেবিলের নিচে সহ অফিস তন্ন তন্ন করে খোঁজ করে। কিন্তু কিছুই পাচ্ছে না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওদের। তবে কি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবে? ওরা আস্তে আস্তে পূব দিকে অগ্রসর হলো। দেখল পুব পাশের দরোজায় কোন তালা নেই। শুধু সিটকিনি দিয়ে আটকানো। তড়িৎ গতিতে প্রবেশ করল ওরা এ রুমেও তেলাপোকা কিংবা সন্দেহজনক কোন কিছু পাওয়া গেলো না। রুমের উত্তরপূর্ব কর্নারে টেবিলের উপর কি একটা ঢাকা আছে কাপড় দিয়ে। কাপড় উল্টিয়ে শিপন দেখলো এটা একটা ডেক্সটপ কম্পিউটার। ও চেয়ার টেনে বসে পড়ল কম্পিউটারের সামনে। সুইস টিপে অন করলো । অনেক গুলো ফাইল পেল । একে একে ঘেঁটে দেখলো সব ফাইল গুলো। তাতে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু পেলো না। তবে একটা ফাইল কেমন যেন সন্দেহ বাজক মনে হলো। কারন ফাইলের নামটা সাংকেতিক চিহ্ন দিয়ে সেভ করা। কিন্তু এ ফাইল টি কোন মতেই ওপেন করতে পারল না। বুঝতে বাকি রইল না এটা বিষের কোন কোড নাম্বার দিয়ে ওপেন করতে হয়।
শিপন তো কোন মতেই এ জটিল ফাইল টি ওপেন করতে পারছে না। এদিকে সাই সাই করে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ওর মনে হলো মামার শিখিয়ে দেওয়া একটা ফর্মুলা। কোড নাম্বার জানা না থাকলে কি করতে হয়। সে মতে ফর্মুলা প্রয়োগ করতেই ফাইল টি ওপেন হলো। এবং পর্দায় ভেসে উঠল কিছু সাংকেতিক লিখা। শিপন কিছুতেই বুঝতে পাড়ছে না লিখা গুলো। কিন্তু লাল চিহ্নিত একটি স্থানে চোখ আটকে গেলো শিপনের। ও জানে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেই লাল চিহ্ন দেওয়া থাকে। চিহ্নের সামনে লিখা আছে FN-2, CN-5, RN-3. ঝাড়া দশ সেকেন্ড চিন্তা করল শিপন। কিন্তু কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না। হিরাকে বলল এই লিখাটা তোর ক্যামেরায় তুলে নে। আমি ও কাগজে লিখে নিচ্ছি। আর কিছুক্ষণ পরে শিপনের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। হিরাকে কাছে ডেকে বলল, দেখতো হিরা মিনিংটা হচ্ছে কিনা ? FN-2, ফাইল নম্বর টু। CN-5, মানে কেবিন নাম্বার ফাইভ। এবং RN-3, মানে রুম নাম্বার থ্রি। তার মানে তিন নাম্বার রুমে নিশ্চয় একটি আলমিরা আছে। আর ঐ আলমিরার পাঁচ নাম্বার কেবিনে অনেক গুলো ফাইল রয়েছে, সে ফাইল গুলোর মধ্যে দুই নাম্বার ফাইল টা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার কারনে একে লাল চিহ্ন দিয়ে শনাক্ত করেছে।
হিরা একটু ভেবে বলল ইয়েস্। এটাই হবে। তাহলে চল আগে আমরা তিন নম্বর রুমে যাই। রুম গুলোর কোন সিরিয়াল নাম্বার না থাকায় ওরা মিলাতে পাড়ছে না কোনটা তিন নাম্বার রুম।
শেষে অনুমান করে শিপন বলল, প্রথমে আমরা যে রুমে ঢুকেছি, লাট মিয়াঁ যেহেতু ঐ রুমের সামনে বসা। অতএব ধরা যায় ওটাই প্রথন রুম। আর আমরা আছি দুই নম্বর রুমে। সুতরাং পাশের টা হবে তিন নম্বর রুম। তাছাড়া এখানে মোট রুম আছে পাঁচটি, শেষ দিক থেকে গুনে আসলে আমরা যেটায় দারিয়ে আছি সেটা হবে তিন নাম্বার। কিন্তু আমরা এখানে তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। চল ওটায় গিয়ে দেখি।
ওরা দরোজার সামনে দাড়িয়ে দেখে তালা চাবির কোন সিস্টেম নেই এ দরোজায়। তাহলে উপায় ? শিপনের স্মরণ হলো অটোমেটিক দরোজার কথা। যা বিদ্যুৎ চালিত। ও এ ধরনের দরোজার কথা শালক হোমসের বইতে পড়েছে। তবে কি এটা সেই ধরনের ! তাহলে আসে পাশে কোথাও এর সুইচ রয়েছে। অনেক খোঁজার পরেও কোন সুইচ চোখে পরলোনা ওদের। সময় ও দ্রুত চলে যাচ্ছে ওদের। দেয়ালে টানানো হাতে আঁকা একটি মানচিত্রের উপর চোখ পড়ল শিপনের। সমস্ত খুলনা বিভাগের ম্যাপ। এতে চালনা বাজারও রয়েছে। কিন্তু বাজার শব্দের বয়শুন্য রয়ের নিচে গোল চিহ্নটি মানচিত্রের সাথে বে-খাপপা মনে হলো। ওটা সাইজে একটু বড়। শিপন ওখানে টিপ দিতেই ক্লিক করে একটা শব্দ হলো। হিরাত ভয় পেয়েই গিয়েছিলো। শিপন দেখল দরোজা খুলে গেছে। ভিতরে অন্ধকার তাই কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। টর্চ জ্বালালো ওরা। হাতে সময় খুব কম। ওরা দেখলো ঘরের পূর্ব পশ্চিমে সারিবদ্ধ ভাবে কতগুলো একুরিয়াম সাজানো। বিভিন্ন প্রকার মাছ রয়েছে ভিতরে। কিন্তু একটা একুরিয়ামে কোন পানি নাই। শুকনো বালির উপর অগণিত তেলাপোকা। সবগুলো সবুজ রঙ্গের। বিস্ময়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম ওদের। পূর্বপাশের দেয়ালের সাথে আছে একটি আলমিরা। এ আলমিরার দরোজাও ইলেকট্রনিক। শিপন পাশেই এর সুইচ খুঁজে পেল। হিরা পর্যায় করমে সমস্ত একুরিয়াম গুলোর ভিডিও করে চলছে। শিপন আলমিরা খুলে পাঁচ নাম্বার কেবিন থেকে দুই নাম্বার ফাইলটা বের করলো । ফাইলের ভেতরে অনেক কাগজ পত্র। সাথে একটি হলুদ খাম। উপরে নাম লিখা আব্দুর রাজ্জাক। চিঠিটা খুলে পড়ল শিপন। চিঠির সারমর্ম হচ্ছে।
স্বল্প সময়ের ভিতর আফ্রিকায় প্রাপ্ত এই পাখি খুবই কার্যকর। প্রতি বিঘা জমির জন্য দশটি পাখিই যথেষ্ট। পানির সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে পাখি মারা যায়। এরপর বিষক্রিয়া ছড়ায়। জমিতে দেওয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক হবে। প্রয়োজন হলে জানাবে। ভয় নেই মন্ত্রী মহোদয় টোপ গিলেছেন। শান্তির সাথে যোগাযোগ রেখ।
শিপন চিঠি পড়ে ভাবছে এযে এক জঘন্যতম ষড়যন্ত্র। শান্তি মানে শান্তি বাহিনীও এর সাথে জড়িত!!! চিঠিটা পকেটে পুড়ে ওরা অত্যান্ত সতর্কতার সাথে দরোজা বন্ধ করে বেরিয়ে এলো পিছনের দরোজা দিয়ে।
বাড়ি এসে দেখে শিপনের মামা চলে এসেছেন। তিনি পৌঁছেছেন রাত এগারোটার টার দিকে। মামাকে নিয়ে ওরা সবাই আবার চিঠিটা খুলে পড়ল। সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল।
শিপন বলল, মামা খেয়াল করেছো এই গ্রাম্য অঞ্চলে ওরা কি বিল্ডিং তৈরি করেছে। তা আবার ইলেকট্রনিক দরোজা। মনে হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কত গুলো এন জি ও আসলেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বংশধর। বলল হিরা।
এনজিওর বাচ্চারা এবার দেখবি মজা কারে কয়। লেবু নিজের হাতের তালুতে নিজেই কষে কিল বসালো।
পর্ব- এক http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51164#.U_I7cZR_seg
পর্ব- দুই
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51284#.U_I8x5R_seg
পর্ব- তিন
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51334#.U_I9H5R_seg
পর্ব- চার
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51601#.U_XD6JR_seg
পর্ব- পাঁচ
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51783#.U_XcoJR_seg
পর্ব- ছয়
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51789#.U_8rbJR_seg
পর্ব - সাত
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/52260#.VAN-Utd_uuk
বিষয়: সাহিত্য
১৯৬৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ সাথে আছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন