রহস্য উপন্যাস ফাইল নম্বর টু পর্ব- চার।

লিখেছেন লিখেছেন কালো পাগড়ী ১৮ আগস্ট, ২০১৪, ১১:৫৪:২০ রাত



চার।

সকাল দশটায় খেলা শুরু। ওরা আগে ভাগেই রওয়ানা হয়েছে, যাতে নয়টার ভেতর কাঁঠালিয়ায় পৌছা যায়। কাঁঠালিয়া মাঠেই আজকের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। ওদের সাথে যাচ্ছেন আম্পায়ার রোমান আহমেদ। আর বিশ মিনিট হাঁটলেই কাঁঠালিয়া পৌছা যাবে। কিছু দূর অগ্রসর হতেই একটা জটলার মতো দেখা গেল। অনেক লোক ভিড় করে আছে। একজন বৃদ্ধ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর চিৎকার করে বলছে আমার এইটা কি হইল . . . . . . . আমার কি অপরাধ . . . . . আমিতো কারো কোন ক্ষতি করি নাই। আল্লাহ আমি এখন কি করবো। বৃদ্ধর পাশে বসে মধ্যবয়সের একটি লোকও চোখের পানি ফেলছেন। জানা গেলো সে বৃদ্ধ লোকটির ছেলে।

শিপনরা কিছুই বুঝে উঠতে পাড়ছে না। এমন সময় শিপন দের স্কুলের একটি ছেলের সাথে ওখানে দেখা হলো। শিপনরা ছেলেটার সাথে এখানের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে আলাপ করল। আলাপ করে জানতে পারলো যে লোকটি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, তার নাম আব্দুল গফুর। কাঁঠালিয়াতে তিনি সবার কাছে গফুর চাচা নামে পরিচিত। এলাকার সব চেয়ে বড় চিংড়ি ঘের ওনার। এবার প্রায় পনেরশ বিঘা জমিতে উনি চিংড়ি ঘের করেছেন। সেই প্রথম থেকে প্রায় অর্ধ শতাধিক কর্মচারী এ ঘেরে কাজ করে। একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ঘের করার জন্য প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রত্যক দিনের মতো আজও তিনি ফজরের নামাজ পরে ঘের পরিদর্শনে বের হয়েছিলেন। ঘের গুলো পরিদর্শনের এক পর্যায়ে দেখেতে পান, তার ঘেরের চিংড়ি মাছে গুলো পানির উপর ভেসে আছে মৃত অবস্থায়। তিনি বুঝতে পারছেন না কেমন করে এমন হলো । মৃত মাছেগুলো নীল বর্ণ ধারণ করেছে। এ কথা বাতাসের আগে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। পুড়ো গ্রামের মানুষ তাই চিংড়ি ঘেরের চারপাশে ভীড় জমিয়েছে। আর গফুর চাচা সকাল থেকে মাটির উপর গড়াগড়ি খাচ্ছেন। খবর পেয়ে থানার ওসি এবং চেয়ারম্যান নিতাই বাবু সহ আরো অনেকই এসেছেন। আর এসেছেন আব্দুল গফুর চাচা যে সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছেন, তার চালনা থানা প্রধান আব্দুর রাজ্জাক। ঘেরের পরিস্থিতি দেখে সবারই হৃদয় শোকে বিহিব্বল। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন গ্রামের মানুষ। কারো মুখেই কোন ভাষা নেই। শুধু আব্দুল গফুর নয়, এর সাথে গ্রামের পঞ্চাশ টি পরিবারে রুজি রুটির প্রশ্ন। তাই শোকের মাতম বইছে নীরবেই। ঋণ দাতা সংস্থার প্রধান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এটা কি কোন বিবেকবান মানুষের কাজ ? আমরা চিংড়ি ঘেরের জন্য এ এলাকায় কৃষিঋণ দিয়েছি। আমরা চাই দেশের কল্যাণ। স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে আমরা নিরলস পরিশ্রম করে জাচ্ছি। কিন্তু এ কাজ কারা করলো ? এর কিছুই বুঝতে পারছিনা। থানার ওসি শাহজাহান গফুর চাচাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি কাউকে সন্দেহ করেন? এর উত্তরে গফুর চাচা কোনই জবাব দেন নি। তার বাকরুদ্ধ মলিন মুকখানা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

শিপনরা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে কাঁঠালিয়া স্কুল মাঠের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা খেলার ভেনু কাঁঠালিয়া হাই স্কুলে পৌঁছল। স্কুলে পৌছতেই টিম ম্যানেজার ও খেলার আয়োজকের সাথে দেখা হলো। আয়োজক জানালেন সংগত কারনে আজকের খেলা পরিচালনা সম্ভব নয়। কারন কাঁঠালিয়ায় শিপনদের প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক হচ্ছেন আব্দুল গফুরে সাহেবের ছেলে। এতো বড় দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই খেলার প্রশ্ন উঠেনা ।তারা বললেন সময় সুযোগ মতো তারা আবার তারিখ ঠিক করে জানাবে। শিপনরা আর কথা না বাড়িয়ে নিজেদের এলাকার দিকে রওয়ানা দিলো। শিপন দলের সবাইকে প্রস্তাব করলো চল ঘেরটা একটু ঘুরে দেখে যাই। আমাদের তো আবার চিংড়ি ঘের আছে। আল্লাহ্‌ ই জানেন এ আবার কন ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ।

শিপন লেবু আর হিরা পাশাপাশি হেঁটে ঘের দেখছে। মাছেগুলো কেমন নীল বর্ণ হয়েগেছে। সাথে সাথে বাকা হয়েগেছে। মনে হলো প্রত্যেকটি মাছের গায়ে কে যেন বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করেছে। ওরা অনেক দূর হাঁটার পর লেবু কী যেন দেখতে পেলো। ধান গাছের গায়ের সাথে লেগে রয়েছে একটা বড়সড় পোকা। তেলাপোকার মতো মনে হলো। রং সবুজ। তীক্ষ্ণ চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। হঠাৎ কেউ দেখলে ধানক্ষেতের ফড়িং ছাড়া কিছুই ভাববে না।

লেবু শিপন কে ডেকে বলল, শিপন দেখতো একটা তেলাপোকা মরে আছে।

হিরা লেবুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, তেলাপোকা মরে রয়েছে তাতে কি হয়েছে।

লেবু ঝাঁঝালো কণ্ঠে জবাব দিলো হিরা আমি তোর সাথে কথা বলছি না, বলছি শিপনের সাথে। হিরার প্রতি লেবুর বিরক্ত ভাব পুরোটাই ফুটে উঠলো।

শিপন এগিয়ে দেখলো সত্যিইতো ! কী সুন্দর তেলাপোকা , দেখতে একেবারে সবুজ। ধান গাছের সাথে গায়ে গায়ে মিশে রয়েছে। ধরার কোন উপায় নেই। এবার হিরা অগ্রসর হয়ে দেখে বলল, তাইতো এ রকম তেলাপোকা আরতো কখনো দেখিনি ।

লেবু একটু চুপ মেরে গেলো মনে হয়। কিছু একটা স্মরণ করার চেষ্টা করছে ও। শিপন বলল কিরে লেবু মনে হয় কিছু ভাবছিস।

হিরা বলল এ নিয়ে আবার কোন কেরামতি জাহির করতে চাস নাকি।

লেবু এবারও কোন কথা বলল না। একটু পরে ও বলে উঠলো, কোথায় যেন দেখেছি। মনে আসছেনা। কো-থা-য়, , , , ওহ মনে পড়েছে। ঐ যে আমাদের বল ঢুকেছিল না? ঐ অফিসের সেক্রেটারিয়েট টেবিলের নিচে। ঠিক এ রকম তেলাপোকাই দেখেছিলাম পলেথিনে।

ভাবনায় ছেদ পড়লো ওদের সবার। যেই হিরা কিছুক্ষণ আগে একে কোন গুরুত্ব ই দেয়নি, মনে হলো সেও চিন্তার সাগরে ডুব দিয়েছে। কি যেন মিলাতে পাড়ছে না ওরা।

শিপন বললো , আচ্ছা ঐ তেলাপোকা এখানে কেন , , , , ? চুপ হয়ে যায় সবাই। চল তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই। এ ব্যাপারে বাড়ি ফিরেই আলাপ করব। আর একটা কথা, কাউকেই কিছু বলিস না এ ব্যাপারে। আয় যাওয়ার পথে আর একটু ঘুরে দেখি এ রকম দেখা যায় কিনা। ওরা কিছু দূর অগ্রসর হয়ে আরোকিছু তেলাপোকা দেখতে পেলো। যার কারনে সন্দেহ আরো ঘুনিভুত হলো।

পর্ব- এক http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51164#.U_I7cZR_seg

পর্ব- দুই

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51284#.U_I8x5R_seg

পর্ব- তিন

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51334#.U_I9H5R_seg

বিষয়: সাহিত্য

১৩৪৯ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

255721
১৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:০৭
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : thanks
১৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৩২
199352
কালো পাগড়ী লিখেছেন : thanks too
255725
১৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:৪২
মামুন লিখেছেন : আগের পর্বগুলো যদিও পড়ি নাই, লিংক দিয়েছেন, পড়ে নিবো। ধন্যবাদ আপনাকে।
১৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৩৩
199353
কালো পাগড়ী লিখেছেন : আমার ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ও ধন্যবাদ। আশাকরি সাথে থাকবেন।
255750
১৯ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:০১
কাজি সাকিব লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ পিলাচ
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৫
199441
কালো পাগড়ী লিখেছেন : ধন্যবাদ। আপনাদের ভালো লাগাই আমার অনুপ্রেরণা।
255791
১৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৩৩
আওণ রাহ'বার লিখেছেন : দারুন লাগছে তবে ক্যামেরাটা কই গেলো?
এখানে ক্যামেরার কেরামতি পড়ের পর্বে দেখতে পারবো বলে আশা করি।
ভালোই তো গোয়েন্দাগিরি সামনে শুরু হবে।
অন্নেক ধন্যবাদ।
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৬
199442
কালো পাগড়ী লিখেছেন : ক্যামেরার কেরামতি সামনে অপেক্ষা করছে। আশাকরি আপনার ভালো লাগবে।
255831
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:০৭
মামুন লিখেছেন : ওয়েলকাম, কালো পাগড়ি Happy। আছি, সব সময়ের জন্যই।
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৭
199443
কালো পাগড়ী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
255859
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৩৬
আহ জীবন লিখেছেন : ভালো লাগলো। সাথে আছি লিখে যান।
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৭
199444
কালো পাগড়ী লিখেছেন : ধন্যবাদ।
255870
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৭
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : এখনও আপনার সিরিজগুলো পড়ার সুযোগ হয়নি এ অধমের Crying Frustrated Crying আপনি লিখে যান...... হয়তো কোন একদিন শুরুথেকে শেষতক সব পর্ব একসাথে পড়বো ঠিক যেমনটি করেছিলাম টিপু ভাইয়ার "পিক্যুলিয়ার মানুষ" সিরিজের ক্ষেত্রে Skull Skull Waiting Waiting
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:২৯
199446
কালো পাগড়ী লিখেছেন : ধন্যবাদ। আপনার সমালচনা মুলক মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন।
১৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
199447
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ্ Waiting Waiting
256202
২০ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:৩৪
কাহাফ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ .........
২০ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:১৪
199926
কালো পাগড়ী লিখেছেন : আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ।
256490
২০ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগল চলতে থাকুক।
২০ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩২
200088
কালো পাগড়ী লিখেছেন : ধন্যবাদ, সাথে থাকুন।
১০
256491
২০ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩৪
কালো পাগড়ী লিখেছেন : সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাদের মন্তব্য ও প্রেরণাই আমার পাথেয়।
আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File