রহস্য উপন্যাস "ফাইল নম্বর টু" পর্ব - টু
লিখেছেন লিখেছেন কালো পাগড়ী ১৩ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৪২:৩৪ রাত
দুই।
চালনা বাজার।বাজারের মাঠেই আজকের খেলা।শিপনদের দলসহ প্রতিপক্ষ দলেরও সবাই চলে এসেছে। শিপন ওদের দলের অধিনায়ক। চারটার সময় খেলা শুরু হলো । পনের ওভারের খেলা। হিরা মাঠের পশ্চিম পাশে একটু নিরিবিলি জায়গায় ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়ালো। টসে সিদ্ধান্ত হলো, শিপনদের প্রতিপক্ষ দল প্রথমে ব্যাট করবে। আম্পায়ার রোমান আহমেদ। এক সময়ের তুখোড় ক্রিকেটার। তার নির্দেশে খেলা শুরু হলো। পঁয়তাল্লিশ মিনিতে প্রথম দলের ব্যাটিং শেষ। পনের ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে তাদের দলীয় সংগ্রহ ঊনষাট রান। ব্যাটিং এবার শিপনদের দলের। মন্থর গতিতে খেলা চলছে। চৌদ্দ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে ওদের সংগ্রহ যখন পঞ্চাশ রান। তখন মাঠে নামে শিপন । প্রথম দুটি বলে কোন রান হলোনা। সবার মাঝে টেনশন। তৃতীয় বলটি ব্যাটের বাড়ি খেয়ে যেন ককিয়ে উঠলো। এ বলে সংগ্রহ হলো চার রান। জিততে হলে তাদের প্রয়োজন আরো ছয় রান। বল আছে মাত্র দুটি।
শিপনের মামা অনেক আগেই মাঠে এসেছেন। তিনি হিরার পাশে এসে দাঁড়ালেন। খেলার গতি দেখে হিরার মন খুব খারাপ। লেবুর কথায় ও ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছে। হিরার পাশেই লেবু দাঁড়ানো। ওর আসল নাম রাসেদ। ও হিরাদের বন্ধু। সবাই ওর স্বভাবের কারনে লেবু বলে ডাকে। লেবুর রস যেমন টক, ও যেন সেই রকমই। কথা বা কাজের মধ্যে একটু টক ছেড়ে দেয়। টক ভাল, কিন্তু দুধে টক ছাড়লে যে সেটা নষ্ট হয়ে যায়, সে ভাবনা ওর নেই। এ জন্য দলের সবাই ওকে লেবু বলে ডাকে। এই লেবুই কিছুক্ষণ আগে হিরারে বলেছে, এই হিরা তোর ক্যামেরা বন্ধ কর। খেলার গুষ্টি কিলাই। আমরা হেরে যাচ্ছি। আর তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রঙ্গের ছবি তুলছিস। বন্ধ করবি কিনা বল। না হয় এই তোর ক্যামেরা সই করে ঢিল ছুড়লাম।
হিরা ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়। ওকে নিয়ে বিশ্বাস নেই। ঢিল ছুঁড়তেও পারে। লেবুর স্বভাবটাই এ ধরনের। তার পরেও সবাই ওকে দলে রাখে।
তানা টেনশনের মাঝে কীযে ঘটে গেলো। হিরা ত বটেই, লেবু পর্যন্ত থ হয়ে গেলো। চারদিকে একটি মাত্র আওয়াজ, ছক্কা ছক্কা, হু-র-রে আমরা জিতে গেছি। শিপনের শেষ বলে ছয় সংগৃহীত হওয়ায় তাদের মোট রান দাঁড়ালো ষাটে। কিছুক্ষণ পরই আম্পায়ার রোমান আহমেদ বিজয়ী দলের অধিনায়ক শিপনের হাতে ট্রফি তুলে দিলেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, নব্বই তাকা দামের বলটি নিয়ে। এটা ঢুকেছে মাঠের অনতি দূরে একটি ঘরের ভেতর। মুলত এটা একটা অফিস। সবাই কে বিদায় দিয়ে শিপন, লেবু আর হিরা রয়ে গেলো। শিপনের মামা রেজাও মাঠে ওদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। একসাথে বাড়ি যাবেন।
পাঁচটার পর অফিস বন্ধ। কেউ অফিসে নেই। কেবল অফিস সিকিউরিটি লাটমিয়া একটি টুলে বসে আছেন। সে-ও এখানে দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করছিলেন। এখন টুলে বসে নাকের ভিতর ম্যাচের কাঠি দিয়ে হাঁচি দেয়ার চেষ্টা করছে। ভাবখানা এই, যেন খেলা দেখে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছেন। এখন ম্যাচের কাঠির সাহায্যে হাঁচি দিয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
অফিস রুমের দক্ষিন দিকে যে জানালা, তার গ্রীলের ফাঁকাগুলো একটু বড়। এর কারনে বল জানালা দিয়ে সোজা ভেরতে ঢুকে গেছে। শিপনরা লাটমিয়ার কাছে অনেক অনুনয় – বিনয় করেছে, কিন্তু তার পরেও লাটমিয়া ওদের বলটি এনে দিচ্ছে না। লেবু জোরে জোরে তর্ক করা শুরু করেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শিপনের মামা এগিয়ে এলেন। তার অনুরোধে আমতা আমতা করতে করতে লাটমিয়া বললো, কিন্তু বস যে নিষেধ করেছে। অফিস টাইম ছাড়া এখানে কাউকে ঢুকতে না দেয়ার জন্য। ওদের বলুন ওরা বরং কালকে আসুক।
শিপনের মামা বললেন, আচ্ছা না হয় এক কাজ করুন। আমরা এখানে দাঁড়াই । আপনি বরং বলটা খুঁজে দিন।
তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো লাটমিয়া। একটু পর ফিরে এসে বললো, বল পাওয়া যাচ্ছেনা।
লাটমিয়া যখন তালা খুলে ভেতরে ঢুকছে, তখনি তার সাথে লেবু দরজার আড়ালে গা ঢাকা দিয়েছে। ওর বক্তব্য হচ্ছে ওদের কেন নিষেধ করলো, ও ভেতরে ঢুকবেই। লাট মিয়া রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে লেবু তার পেছন দিয়ে রুমে প্রবেশ করে । অবস্থা বুঝতে পেরে শিপনের মামা লাটমিয়ার সাথে নানা গল্প জুড়ে দিলেন। উদ্দেশ্য তাকে কিছু সময় ব্যস্ত রাখা। লাটমিয়ার ও তালা আটকানোর খবর নেই। কথায় মজে গেছে। শিপনের মামা তাকে শিপন্ দের বাসায় আসার জন্য দাওয়াত পর্যন্ত করলেন।
এর মধ্যে লেবু বল হাতে বের হয়ে এলো। মুখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে শব্দ না করার জন্য নিষেধ করলো । কাছে এসে বলল, বলটি যে গেলো কোথায়। ঠিক আছে আগামী কাল আমরা এসে খোঁজ করবো। না পেলে আপনার জরিমানা হবে কিন্তু। মনে থাকে যেন।
শিপনরা চলে এলো। হাঁটতে হাঁটতে হিরা বলল, তোরতো সাহস কম নয়রে লেবু? যদি বেটা দেখে ফেলতো ? আমার তো গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেছে। লাট মিয়ার গোঁফ আর ভুঁড়ি দেখে। বেটা যদি এক কিল বসিয়ে দিতো, তাহলে তোর বারোটা বেজে যেতো।
শিপিন বলল ভাগ্য ভালো বেটার চোখে পরিসনি।
ওর মামা রেজা একটু আগে আগে হাটছিলেন, তাই ওদের কথা শুনতে পাচ্ছেন না।
বলটা কোথায় পেলিরে লেবু ? হিরা জিজ্ঞেস করল।
আর বলিস নে। বলতো গোল, মনে হয় শিপনের ব্যাটের বারি খেয়ে ব্যাটার মাথা ঘুরে গিয়েছিল। তাই একে বারে সেক্রেটারিয়েট টেবিলের তলায় গিয়ে পালিয়েছে। লাট মিয়া হয়তো তার ভুরুর জন্য বাঁকা হতে পারেনি। তাই টেবিলের তলায় খুঁজতেও পারেনি। আচ্ছা শিপন সবুজ রঙ্গের কি কোন তেলাপোকা আছে ?
আমার মনে হয় নেই। হঠাৎ এ প্রশ্ন ?
না মানে বল খোঁজার সময় টেবিলের তলায় একটি পলিথিনে কিছু তেলাপোকা দেখলাম। দেখতে সবুজ।
হিরা প্রস্ন করল, কতগুলো দেখলি ?
সে কম হবে না । পঞ্চাশ ষাটটা তো হবেই।
পলিথিনের মুখ কি খোলা ছিল?
হ্যাঁ মুখতো খোলাই দেখলাম।
হিরা বললো, গুল মারতে আর জায়গা পাসনি ।
খোলা পলিথিনে এতগুলো তেলা পোকা বসে বসে ডিমে তা দিচ্ছিল বুঝি ?
লেবু উত্তেজিত হয়ে বললো, তুই কি বলতে চাস। হিরা বলল তেলাপোকার তো আর হাত পা নেই। যে বসে থাকবে।
বসে না থেকে উপায় আছে ? ওগুলো তো ইন্তেকাল ফরমাইছে। বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে হিরার কথার জবাব দেয় লেবু।
হিরা বলল মারলিতো আরেক টা গুল। এই সুন্দর অফিসে কিছু মরা তেলাপোকা পলিথিনে করে রেখে দিয়েছে। তাও আবার সেক্রেটারিয়েট টেবিলের নিচে। বন্ধ কর তোর চাপা।
এই তোরা কি থামবি, না সারাপথ শুধু ঝগড়া করে কাটাবি। মাঝখানে পরে শিপন। তার চেয়ে পনের তারিখে কাঁঠালিয়ায় যে ফাইনাল খেলা, তার ব্যাপারে কি করা যায় চিন্তা কর।
শিপন প্রায় ওর বাড়ির কাছে এসে পড়েছে। সবাইকে ও চা খেয়ে যেতে বললো। ওরা রাজি হলো না। সবাই যার যার পথে চলে গেলো।
চলবে . . . . . . . . . . .
পর্ব- এক
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9722/alam14/51164#.U-uUZpR_seg
বিষয়: বিবিধ
১৪০৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভুরু না হয়ে ভুঁড়ি হবে মনে হচ্ছে।
ভালো লেগেছে এবং পড়ের পর্ব পড়ার আকাংক্ষা ব্যাক্ত করছি।
........................................
মন্তব্য করতে লগইন করুন