রাজাকার দেলোয়ার মোল্লার আমৃত্যু কারাদণ্ড মানেই, আপিল বিভাগ থেকে তার সাজা বৃদ্ধি
লিখেছেন লিখেছেন পাতা বাহার ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:১৮:৫৫ রাত
রাজাকার দেলোয়ার মোল্লার ফাঁসির রায় পরিবর্তন করে, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়াতে আমি অনেক খুশি হয়েছি। আর আমি আপিল বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা দেলোয়ার মোল্লার উপর দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে, সাজা বাড়িয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় প্রদানের জন্য।
সম্মানীত পাঠক-
আপনারা জানেন যে- রাজাকার দেলোয়ার মোল্লার ফাঁসির রায পরিবর্তন করে, আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। এতে করে আপনারা অনেকেই মনে করছেন যে- রাজাকার দেলোয়ার মোল্লার সাজা কমানো হয়েছে। আমি বলবো আপনাদের এই ধারণাটি সঠিক নয়। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলেই আপনারা বুঝতে সক্ষম হবেন যে- মূলতঃ দেলোয়ার মোল্লার ফাঁসির রায় পরিবর্তন করে, আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান, দেলোয়ার মোল্লার সাজা কমানো হয় নাই, বরং এতে করে দেলোয়ার মোল্লার সাজা বাড়ানো হয়েছে। মৃত্যদণ্ডের রায় মানে, অপরাধীর পৃথিবীতে করা অপরাধ থেকে অপরাধীকে নিস্কিৃতি দেওয়া, যে রায় পূর্বে তাকে দেওয়া হয়েছিল। আর আপিল বিভাগ দেলোয়ার মোল্লাকে, তার পৃথিবীতে করা অপরাধের সাজা খাটতে বাধ্য করেছে, বা তার সাজা বৃদ্ধি করেছে। আপনারা ভাবছেন আমি হেঁয়ালী করছি? মোটেই না। তাহলে আর কথা বাড়িয়ে কাজ নাই। আসুন আমরা জেনে নিই, মৃত্যু দণ্ডের সাজা অপেক্ষা আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা, কিভাবে বেশি মাত্রার সাজা।
মৃত্যুদণ্ড কোন অপরাধীর পৃথিবীতে কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি হতে পারে না। কারণ, অপরাধীকে আপনি মৃত্যুদণ্ড না দিলেও, একদিন তাকে মরতেই হবে। এই মৃত্যু, সৃষ্টির সকল প্রাণীকেই গ্রহন করতে হবে। সে পৃথিবীতে কৃত কোন অপরাধী হউক, আর নিরপরাধীই হউক। তাই মৃত্যুদণ্ড কোন অপরাধের সাজা হতে পারে না। বরং পৃথিবীতে কৃত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া মানে, তাকে পৃথিবীতে কৃত অপরাধের সাজা থেকে মু্ক্ত করে দেওয়া। অর্থাৎ, অপরাধীর কৃত অপরাধ থেকে তাকে নিস্কৃতি দেওয়া।
কারণ, এই মৃত্যু নামক সাজাটি সকলের জন্যই পূর্ব থেকে নির্ধারিত। এই মৃত্যু নামক সাজাটি প্রত্যেককেই তার পূর্ব কৃত কর্মের জন্য ভোগ করতেই হবে। তাই, পৃথিবীতে করা কোন অপরাধের জন্য, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না। কেন না, এই মৃত্যু নামক সাজাটি তার পূর্ব কৃত অপরাধের জন্য আগেই রায় হয়ে আছে। আবার, যদি আপনি পৃথিবীতে কৃত কোন অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেন, তাহলে তো তার দু-বার মৃত্যু হওয়া উচিৎ। আর আপনার পক্ষে কি সম্ভব, যে আপনি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিৎ করার পরে, পূণঃরায় তাকে দ্বিতীয় বার মৃত্যুর জন্য রেখে দেওয়া? এটা কোন মতেই সম্ভব নয়। তাই, পৃথিবীতে করা কোন অপরাধের জন্য, কেউই কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে না। আর দিলেও, এই মৃত্যুদণ্ডের সাজাটি অপরাধীর পৃথিবীতে করা অপরাধের সাজা হিসাবে গণ্য হবে না। অর্থাৎ, কোন অপরাধীকে পৃথিবীতে কৃত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া মানে, তাকে পৃথিবীতে কৃত যে অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো, সেই অপরাধ থেকে তাকে মুক্তি দেওয়ার নামান্তর।
এই তো, সেদিন কোন এক র্যাব সদস্য, তার কোন এক পৃথিবীতে কৃত অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো। আর সেই র্যাব সদস্য আত্মহত্যায় সফল হলে, পৃথিবীতে করা তার অপরাধের সাজা খাটা থেকে, সে মুক্তি পেয়ে যেতো। সে শুধু মাত্র জন্ম সূত্রে কৃত অপরাধের সাজা খাটতো।
অতএব, রাজাকার দেলোয়ার মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের সাজাটি ছিল, জন্ম সূত্র অপরাধের সাজা। আর তার ফাঁসি দিলে পৃথিবীতে কৃত অপরাধের সাজা মাফ করে দেওয়া হতো। তাই, রাজাকার দেলোয়ার মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় পরিবর্তন করে, বর্তমান রায় আমৃত্যু কারাদণ্ডটি, দেলোয়ারের সাজা বৃদ্ধি করেছে। এতে করে দেলোয়ার, তার পৃথিবীতে কৃত অপরাধের সাজা, যা সে মৃত্যুর পূর্ব দিন পর্যন্ত ভোগ করতে থাকবে। আর মৃত্যু নামক সাজাটি তার জন্য সামনে অপেক্ষা করতেই থাকবে, এবং এক সময ঠিকই তাকে মৃত্যু নামক সাজাটি গ্রহন করতে হবে।
মনে রাখবেন, পৃথিবীতে জন্ম গ্রহনকারী সকলকেই মৃত্যু নামক সাজাটি ভোগ করতে হবে। কিন্তু পৃথিবীতে জন্ম গ্রহনকারী সকলেই, কারাভোগ নামক সাজাটি ভোগ করবে না। এই কারাভোগটি হলো, পৃথিবীতে কৃত অপরাধের সাজা।
লিখেছেন গুরুজী- বিশ্বশান্তি ডট কম ব্লগে।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন