সেজদা বিষয়ে লালনের ভ্রান্ত মতবাদ। লালন পর্ব-১৭

লিখেছেন লিখেছেন পাতা বাহার ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:২১:৪৭ সন্ধ্যা

আজ আমি আপনাদের সম্মূখে লালনের যে গানটি উপস্থাপন করবো, সে গানটি হলো- লালনের লেখা নামাজ বিষয়ক একটি গান। যে গানে লালন তার নিজস্ব গড়া ভ্রান্ত মতবাদ কোরাণের নামে চালানোর চেষ্টা করেছেন। আসুন, দেখে নিই লালন তার এই গানটিতে মূলতঃ কি বলতে চেয়েছেন।

আপন সূরাতে আদম গঠলেন দয়াময়।

নইলে কি আর ফেরেস্তারে সেজদা দিতে কয়।।

এক

আল্লাহ আদম না হইলে, পাপ হইতো সেজদা দিলে।

শেরেকি পাপ যারে বলে, এই দুনিয়ায়।।

আপন সূরাতে আদম গঠলেন দয়াময়।।

দুই

দুষে সে আদম সফি, আজাজিল হইলো পাপী।

মন তোমার লাফালাফি, তেমনি দেখায়।।

আপন সূরাতে আদম গঠলেন দয়াময়।।

তিন

আদমী সে চিনে আদম, পশু কি তার পায় মরম।

লালন কয় আদ্য ধরম, আদম চিনলেই হয়।।

আপন সূরাতে আদম গঠলেন দয়াময়।।

এবার আসুন, লালনের এই গানটি একটু পর্য্যালোচনা করে দেখি যে, মূলতঃ এই গানটিতে লালন কি বলতে চেষ্টা করেছেন, বা লালন তার ঘরাণার লোকদেরকে এই গানটির মাধ্যমে কি বার্তা রেখে গেছেন। আসুন দেখে নিই এই গানটির মুখোবন্ধে লালন কি বলেছেন-

আপন সূরাতে আদম গঠলেন দয়াময়। নইলে কি আর ফেরেস্তারে সেজদা দিতে কয়।।

ব্যখ্যা- গানের এই অংশে লালন বলেছেন, আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজ চেহারায়, বা আল্লাহর চেহারায়, আর সে জন্যই আল্লাহ ফেরেস্তাদেরকে বলেছিলেন আদমকে সেজদা করতে।

এবার আসুন গানটির প্রথম কলিতে লালন কি বলেছে, তা দেখে নিই-

আল্লাহ আদম না হইলে, পাপ হইতো সেজদা দিলে। শেরেকি পাপ যারে বলে, এই দুনিয়ায়।।

ব্যখ্যা- গানটির এই কলিতে লালন বলেছেন যে, আদম নিজেই আল্লাহ। আর আদম যদি আল্লাহ না হইতো, তাহলে, ফেরেস্তা কর্তৃক আদমকে সেজদা করা পাপ হইতো, যে টা শেরেকী পাপ। আদম নিজেই আল্লাহ, তাই ফেরেস্তা কর্তৃক আদমকে সেজদা করা মানেই, ফেরেস্তাদের আল্লাহকে সেজদা করা হযে যাবে। আর আল্লাহকে সেজদা করা কোন শেরেকী নয়।

মূলতঃ লালন এখানে অনেক বড় ভুল মতবাদ বা ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন। আর সেটা হলো- আদমকে আল্লাহ নির্ধারণ করা। কারণ, আদম আল্লাহ হতে সৃষ্ট, কোন অবস্থাতেই আদম আল্লাহ নয়। আর কোরাণের কোন স্থানেই মহাম্মদ আদমকে আল্লাহ বলেন নাই। আর, সেই কোরাণে উল্লিখিত আল্লাহ ও আদমকে, লালন তার নিজের গড়া ভ্রান্ত মতবাদের উপর নির্ভর করে বলেছেন যে, আদম নিজেই আল্লাহ, বা আল্লাহ ও আদমে কোনই পার্থক্য নাই। এটা লালন অনেক বড় অন্যায় করেছেন।

এবার আসুন এই গানের দ্বিতীয় কলিতে কি বলা হয়েছে, তা দেখে নিই।

দুষে সে আদম সফি, আজাজিল হইলো পাপী। মন তোমার লাফালাফি, তেমনি দেখায়।।

ব্যখ্যা- এখানে লালন বলেছেন, আজাজিল যেমন আদমকে সেজদা না করে, আল্লাহর কাছে পাপী বা অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে, হে মানুষ তোমারও সে রকমই লাফালাফি, বা সে রকমই অবস্থা মনে হচ্ছে। তার মানে লালন বলতে চেয়েছেন, ফেরেস্তারা যেমন আদমকে সেজদা না করায়, পাপী হয়েছে, হে মানুষ সকল, তোমরাও মানুষ রুপী গুরুকে সেজদা না করলে, আজাজিলের মত পাপী হয়ে যাবে। অর্থাৎ, লালন মানুষ হয়ে মানুষকে সেজদা করতে বলেছেন। তার মানে, লালন শীষ্যদেরকে তার গুরুকে সেজদা করতে বলেছেন। আর এটা হলো লালনের নিজস্ব গড়া ভ্রান্ত মতবাদ, যা সে কোরাণের নামে চালানোর চেষ্টা করেছেন।

আমরা কোরাণ পড়লে দেখতে পায় যে, আল্লাহ ফেরেস্তাদের কে বলেছেন আদমকে সেজদা করতে। কিন্তু কোরাণের কোথাও বলে নাই যে, এক মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে সেজদা করতে হবে। তবে প্রতিটি মানুষের মধ্যে অবস্থিত আদম নামক স্বত্বাটিকে ফেরেস্তা দ্বারা সেজদা করিয়ে নিতে হবে, বা স্রষ্টা ফেরেস্তাদেরকে আদমকে সেজদা করতে বলেছেন। তাই প্রতিটি মানুষেরই উচিৎ হবে যে, তার দেহ মধ্যে যে আদম অবস্থান করছে, সেই আদমকে, তার দেহ মধ্যে অবস্থিত ফেরেস্তা দ্বারা সেজদা করিয়ে নিতে। কিন্তু এক মানুষ হয়ে আরেক মানুষকে সেজদা করার কোন নির্দেশ নাই।

আর লালনের এই কথা যদি সত্যি হয় যে-আদমই আল্লাহ। তাহলে সৃষ্টির সকল মানুষই তো আল্লাহ হওয়ার কথা। তাহলে, এক আদম, বা আল্লা হয়ে, আরেক আদম বা আল্লাহকে সেজদা করতে পারে না। আর কোরাণে তো সে রকম কোন নির্দেশও দেওয়া হয় নাই। তাহলে লালন এই রকম গাঁজাখূরী তত্ব কোথায় পাইলেন? মূলতঃ লালন এই রকম কিছু তার নিজস্ব গড়া ভ্রান্ত মতবাদ কোরাণের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। যা সাধারণ অনেক মুসলমানকেই বিভ্রান্ত করতে সাহায্য করছে। যেটা অনেক বড় অন্যায়।

নিচের কলিটি নিয়ে কোন বিষয় আলোচনা করতে চাই না।

আদমী সে চিনে আদম, পশু কি তার পায় মরম। লালন কয় আদ্য ধরম, আদম চিনলেই হয়।।

তাহলে বুঝা গেল যে, লালন তার নিজস্ব গড়া ভ্রান্ত মতবাদ নিজের নামে না চালিয়ে, কোরাণের নামে চালাতে চেষ্টা করেছেন। লালন এটা অনেক বড় নিচু মানসিকতার কাজ করেছেন। আর লালন মূলতঃ এই রকম একজন নিচু মানসিকতার লোকই ছিলেন। শুধু লালন নয়, বাউল শিল্পী বলতেই এক নিচু মানসিকতার জীব। আর লালনও একজন সাধারণ বাউল শিল্পীই ছিলেন। আর সৃষ্ট জীবের মধ্যে সব থেকে নিকৃষ্ট কোন জীব থেকে থাকলে, সেটা হবে এই বাউল শিল্পী নামক প্রজাতির জীবটি। কারণ, এদের থেকে নিচু মনের, নিচু মানসিকতার ও নিচু চিন্তা চেতনার জীব, সৃষ্টিতে আর নাই। তাই সকলেরই উচিৎ, এই সকল পেশা জীবি বাউল শিল্পীদেরকে ঘৃণা করা।

মূল পোষ্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন। মূল পোষ্টটি লিখেছেন গুরুজী। বিশ্বশান্তি ডট কম ব্লগে।

বিষয়: বিবিধ

২৪১০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

263767
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০০
হতভাগা লিখেছেন : লালন গীতি শিরকীয় কথা বার্তা বলে - এটা জানি ।

লালন সমাজে ''প্রেম ভাজা '' নামক একটা জিনিস আছে - সেটা কি জিনিস ?
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪৫
207346
পাতা বাহার লিখেছেন : প্রেম ভাজাটি আবার লালনের গানের কোন তথ্যের ভিত্তিতে হয় নাই। প্রেম ভাজাটি মূলতঃ হিন্দু গোঁসাই কর্তৃক উদ্ভাবিত তত্ব। এ বিষয়ে আর ও পরে পোষ্ট রার আশা রাখছি। তাই এখানে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না। তবে এটুকু জেনে রাখুন যে, জীবের পাঁচটি ময়লা দ্বারা এটা তৈরী হয়। ও গোঁসাই রা এটা ভক্ষণ করেন।
263867
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৩১
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।

ইসলাম অনুযায়ী "লালনের মতবাদ" ভ্রান্ত, যে কোনো সৎ-মুসলমানের জন্য শেরক্।

মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪১
207598
পাতা বাহার লিখেছেন : পোষ্টটি পড়া ও মন্তব্য করার জন্য, অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File