শাই শব্দটি লালনের নয় ও লালনের গুরুচণ্ডালি। লালন পর্ব-৮
লিখেছেন লিখেছেন পাতা বাহার ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ১২:১৬:২৫ দুপুর
আজ আমি আপনাদের সম্মূখে লালনের এমন একটি গান উপস্থাপন করবো, যে গান দ্বারা আপনারা পরিস্কার বুঝতে সক্ষম হবেন যে- লালন তার গানে সিরাজ এর সাথে যে শাই শব্দটি যোগ করে, সিরাজ শাই করলেন, এই শাই শব্দটি লালন কোথা থেকে নিয়েছে ও শাই শব্দের অর্থ কি, এবং এই গানটিতে লালন কিভাবে হিন্দুয়ানী ও মুসলমানী গ্রন্থকে ব্যবহার করে, কেমন গুরুচণ্ডালি করেছে। আসুন- প্রথমে আমরা দেখে নিই এই গানটিতে লালন কি বলেছেন।
শাই আমার কখন খেলে কোন খেলা।
জীবের কি আর সাধ্য বলো, গুণে পড়ে তাই বলা।।
এক
অবতার অবতারী, সে ও সম্ভবো তার ই।
দেখ দেখি মন নেহার করি, এক চাঁদে হয় উজালা।।
শাই আমার কখন খেলে কোন খেলা।।
দুই
কখনো ধরে আকার, কখনো হয় নিরাকার।
কেউ বলে আকার স্বাকার, অপার ভেবেই হই ভোলা।।
শাই আমার কখন খেলে কোন খেলা।।
তিন
ভাণ্ড ব্রহ্মাণ্ড মাঝে, শাই বিনে কি খেল আছে।
লালন বলে নাম ধরেছে, কৃষ্ণ, করিম, কালা।।
শাই আমার কখন খেলে কোন খেলা।।
এবার আসুন, আমরা এই গানটিকে একটু পর্য্যালোচনা করে দেখি যে, এই গানে লালন মূলতঃ কি বলতে চেয়েছেন, বা লালনের এই গানটিতে কি বার্তা বহন করছে।
এই গানটির মুখোবন্ধে বলা হয়েছে-
শাই আমার কখন খেলে কোন খেলা। জীবের কি আর সাধ্য বলো, গুণে পড়ে তাই বলা।।
এই গানটির প্রথম শব্দটি হলো শাই। লালন ঘরাণার লোকেরা বলে থাকেন এই শাই শব্দটি লালনের নিজের তৈরী। আর এই শাই শব্দটি লালনের নিজের তৈরী জ্ঞানেই লালন ঘরাণার একেক জন, একেক রকম ভাবে এই শাই শব্দটির ব্যখ্যা দিয়ে চলেছেন। তাই আসুন, এখন আমরা জেনে নিই এই শাই শব্দটি মূলতঃ কোন ভাষা থেকে লালন সংগ্রহ করেছেন, ও এই শাই শব্দের বাংলা অর্থ কি।
শাই শব্দটি মূলতঃ আরবী শব্দ। শীন ইয়া ইইয়া, এই তিনটি শব্দের সমন্নয়ে সৃষ্টি হয়েছে শাই শব্দটি। যার বাংলা অর্থ- জিনিস, দ্রব্য ও বস্তু। অর্থাৎ মহাবিশ্বের সকল জিনিষ, সকল দ্রব্য ও সকল বস্তুকেই শাই বলা হয়। আর সে সূত্র ধরেই বলা যেতে পারে, শুকর, কুকুর, পিপিলীকা, মানুষ, মশা, গু, গোবর সবই শাই এর আওতা ভূক্ত। অর্থাৎ শুধু সিরাজ বা লালন নয়,মহা বিশ্বের সকল কিছুই শাই। আর এই শাই শব্দটি লালনের নিজের তৈরীকৃত শব্দ নয়, এটা প্রচলিত কোরাণ থেকে নেওয়া আরবী শব্দ। অতএব যারা বলছেন শাই শব্দটি লালনের নিজের তৈরীকৃত শব্দ তারা ভুল অথবা মিথ্যা বলছেন।
মূলতঃ জীবের দেহ মধ্যে অবস্থিত বস্তু সমুহকেই লালন বলেছেন শাই আমার। অর্থাৎ আমার দেহ মধ্যে অবস্থিত বস্তু সমুহ কখন কোন খেলা খেলে, জীবের কোনই সাধ্য নাই যে, তাহা গুণে পড়ে বলে দেওয়া। কিন্তু লালন কি এই কথাটি সঠিক বলেছেন? না, লালন এই উক্তিটি সঠিক বলেন নাই, বলেছেন অজ্ঞতা বশতঃ।
জীব দেহে অবস্থিত বস্তু সমুহ কখন কোন খেলা খেলেন তার সবই গুণে পড়ে বলে দেওয়া সম্ভব। আর এখন কিছু কিছু বলে দেওয়াও হচ্ছে। যেমন- চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে দেয় যে- এত দিনের মধ্যে এই রোগী মারা যাবে, ঠিক ডাক্তারের সেই বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সেই রোগী মারা যায়। আর পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ গত হয়েছেন, যারা মৃত্যুর পূর্বে বলে গেছেন, কোন দিন কোন সময় তিনি কোথায় মরবেন। তার অনেক নজির আছে। অর্থাৎ লালন তার অজ্ঞতা হেতুই এরুপ কথা বলেছেন।
এবার আসুন- এই গানের প্রথম কলিতে কি বলা হয়েছে, তা দেখে নিই। এই গানের প্রথম কলিতে বলা হয়েছে-
অবতার অবতারী, সে ও সম্ভবো তার ই। দেখ দেখি মন নেহার করি, এক চাঁদে হয় উজালা।।
অযোণী সম্ভবা সকল সৃষ্টিকেই অবতার ও যোণী সম্ভবা সকল সৃষ্টিকেই অবতারী বলা হয়। এই অবতার ও অবতারী হলো হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থে ব্যবহৃত সংস্কৃত শব্দ। লালন এই গানের প্রথম শব্দ ব্যবহার করেছেন মুসলমানের ধর্ম গ্রন্থ কোরাণ থেকে নেওয়া আরবী শব্দ, আবার কলিতে এসে ব্যবহার করেছেন হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ বেদ এর বৈদীক শব্দ । এটা রীতিমত গুরুচণ্ডালি। কারণ লালন যখন মুসলমানের ধর্ম গ্রন্থে ব্যবহৃত আরবী শব্দ দিয়ে গানটি শুরু করেছেন, সেখানে হিন্দুয়ানী শব্দ না ঢুঁকানোই উচিৎ ছিল।
এবার আসুন- লালন এই কলিতে ভুল কি লিখেছেন তাহা দেখার চেষ্টা করি। এই কলিতে লালন বলেছেন, অবতার অবতরী সব কিছু করাই তার দ্বারা সম্ভব। তোমরা নেহার বা লক্ষ করে দেখো এক চাঁদেই সব উজালা হয়, বা উদ্ধার হয় বা সৃষ্টি হয়। তার মানে লালন বলেছেন এক চাদেঁই সকল কিছু সৃষ্টি হয়েছে, ও এক চাঁদেই সকল কিছু উদ্ধারীত হবে।
কিন্তু মূলতঃ তা নয়। লালন এখানে ভুল তথ্য দিয়েছেন। অবতার ও অবতারী সৃষ্টি একই চাঁদে হয় না, হতে পারে না। মূলতঃ সাড়ে চব্বিশ চন্দ্রের সাহায্যেই অবতার ও অবতারী সৃষ্টি হয়, এক চাঁদে নয়। আর উদ্ধারের ব্যাপারেও এক চাঁদে নয়, সাড়ে চব্বিশ চন্দ্রের মাধ্যমেই উদ্ধার হওয়া সম্ভব, নচেৎ নয়।
এর পরের কলিতে লালন যাহা বলেছেন তাহা হলো-
কখনো ধরে আকার, কখনো হয় নিরাকার। কেউ বলে আকার স্বাকার, অপার ভেবেই হই ভোলা।।
এখানে তিনি যাহা বলেছেন তাহা সাধারণ কথা এখানের কথায় আমি কিছু বলতে চাই না। কেন না, শাই বা বস্তু সমুহের আকার, নিরাকার ও নিজ আকার সবই হওয়া সম্ভব। আর লালন এখানে তাই বলেছেন।
এবার আসুন এই গানের শেষ কলিতে লালন কি বলেছে তা দেখে নিই। এই গানের শেষ কলিতে বলেছে-
ভাণ্ড ব্রহ্মাণ্ড মাঝে, শাই বিনে কি খেল আছে। লালন বলে নাম ধরেছে, কৃষ্ণ, করিম, কালা।।
শেষ কলিতে লালন বলেছেন, দেহ ভাণ্ড ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সকল খেল বা ক্রীয়া ই এই শাই এর দ্বারাই সংঘটিত হয়। এই শাই বীনে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে কোন খেলই সম্ভব নয়। আর লালন বলেছেন এই শাই ই নাম ধরেছে কৃষ্ণ, করিম ও কালা।
কৃষ্ণ শব্দের অর্থ কালো, আর যিনি কালো কে ধারণ করেন তিনিই কালা। আর করিম অর্থ সম্মানী। তো- গানের এই কলিতে যখন তিনি কৃষ্ণ ও কালা শব্দ ব্যবহার করেছেন, সেখানে তিনি করিম শব্দ না ব্যবহার করে সম্মনীর হিন্দুয়ানী শব্দ ভগবান বা ইশ্বর ব্যবহার করতে পারতেন, অথবা করিম শব্দ যখন ব্যবহার করেছেন, সেখানে কৃষ্ণ ও কালা শব্দ ব্যবহার না করে, সেখানে করিমের বিপরীত একটি আরবি শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে, হিন্দুয়ানী ও মুসলমানী শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে গুরুচণ্ডালি করেছেন।
এই লেখাটি আমার নয়। এই লেখাটি লিখেছেন গুরুজী। আমি তার অনুমতি সাপেক্ষে এখানে পোষ্ট করেছি। গুরুজীর মূল পোষ্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিষয়: বিবিধ
২৬৮০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ত্রিবেনী এক অছে,
যাস না রে সেই নদীর কাছে,
তথায় মদনা চোরা ফাঁদ পেঁতেছে,
বাধবে অমনি গেলি।
কেউ বলেন ইহা মাইয়া মাইনষের যৌনাঙ্গ তওবা তওবা এইডা আমার কথা না। ওইদিকে মডারেটরের চোখ পড়িলে আমার খবর আছে। দয়া করিয়া ত্রিবেনী সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন লিখুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন