লালন তার নিজের তৈরী কিছু ভুল মতবাদ, হিন্দু ধর্মের নামে ও চালানোর অপচেষ্টা করেছে। লালন পর্ব=৪

লিখেছেন লিখেছেন পাতা বাহার ২২ আগস্ট, ২০১৪, ১০:৪৫:৪১ সকাল

আগের পর্বে আমি উপস্থাপন করেছিলাম যে- লালন নিজে গবেষণাকৃত কোন মতবাদ প্রচার করে নাই, বরং লালন নিজের কিছু ভ্রান্ত মতবাদ কোরাণের নামে চালানোর অপচেষ্টা করেছে। আজ আমি আলোচনা করবো লালন শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্ম কথাই প্রচার করেন নি, তিনি হিন্দু ধর্ম মতও প্রচার করেছেন, এবং সেখানেও নিজের গড়া কিছু ভ্রান্ত মতবাদ, হিন্দু মতবাদ নামে চালিয়ে দিয়েছেন। নিচের গানটি পড়ুন- তাহলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।

নিতাই কাউরে ফেলে যাবে না। ধর চরণ ছেড়ো না।



দৃঢ় বিশ্বাস করে রে মন, ধরো নিতাই চাঁদের চরণ।

পার হবি পার হবি তূফান, অপারে কেউ থাকবে না।।



হরি নামের তরী লয়ে, ফিরছে নিতাই নেয়ে হয়ে।

এমন দয়াল চাঁদকে পেয়ে, স্মরণ কেন নিলে না।।



কলির জীবে হয়ে সদয়, পারে যেতে ডাকছে নিতাই।

লালন বলে মন চলো যায়, এমন বান্ধব মিলবে না।।

এবার লক্ষ করুন এই গানটির মূখোবন্ধে লালন কি বলেছে-

নিতাই কাউরে ফেলে যাবে না। ধর চরণ ছেড়ো না। এই গানের মূখোবন্ধ পড়লে আমরা দেখতে পায় যে- লালন এখানে সকলকে আশ্বাস বাণী শুনাচ্ছেন যে- হে মানব মণ্ডলি, তোমাদের কোন ভয় নাই। কারণ নিতাই কাহাকেও ফেলে যাবেন না। তাই তোমরা এই নিতাইয়ের চরণ ধর। আর এই কথার মাধ্যমেই বুঝা যায় যে- লালন নিজস্ব গবেষণাকৃত মতবাদ প্রচার করেন নাই। এখানেও লালন যে মতবাদ প্রচার করেছেন তাহা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থে রচিত মতবাদ। তার পরেও লালন এখানে একটি অনেক বড় অপরাধ করে বসেন। এখানেও লালন তার নিজ গড়া ভ্রান্ত মতবাদ হিন্দু সম্প্রদায়ের নামে চালানোর অপচেষ্টা করেন। আসুন আমরা জেনে নিই যে- এই নিতাই কে, বা তার পরিচয় কি- এবং কেন লালনের এই উক্তিকে ভ্রান্ত বলা হচ্ছে।

নিতাই হলো কলি- যুগের অবতার শ্রীচৈতণ্য দেব বা নিমাই সণ্যাসীর সহচর। এখানে প্রকাশ থাকে যে- নিতাই কিন্তু পার করার কোনই অধিকার রাখে না। কারণ নিতাই কোন অবতার নয। মূলতঃ অবতার হলো- নিমাই। আর নিতাই হলো- নিমাই সন্যাসীর প্রচারক বা সহচর ছিলেন। এখানে যদি কাউকে চরণ ধরতেই হয়, তাহলে- নিমাই বা শ্রী-চৈতন্য দেব এর চরণ ধরতে হবে। কিন্তু লালন এখানে শ্রী-চৈতন্য দেব এর চরণ ধরতে না বলে নিতাই এর চরণ ধরতে বলে, অনেক বড় ভুল অথবা অন্যায় করেছেন, বা নিজের মতবাদ হিন্দু সম্প্রদায়ের নামে চাপিয়ে প্রচার করে, হিন্দু মতবাদকে বিকৃত করার অপচেষ্টা করেছেন।

হিন্দু ধর্মে অবতার চার যুগে মোট চার জন। আর তারা হলেন-

১। সত্য যুগে- নারায়ণ। ইনি হলেন অযোণী সম্ভবা অবতার। কারণ এই নারায়ণ পিতা মাতার দ্বারা জন্ম নয়, তিনি সৃষ্ট অবতার। তাই নারায়ণকে অযোণী সম্ভবা অবতার বলা হয়।

২। সত্য যুগের এই নারায়ণ ই ত্রেতা যুগে রাম অবতার হয়ে জন্ম গ্রহন করেন। এই রাম কিন্তু যোণী সম্ভবা অবতার। কারণ রাম পিতা মাতার দ্বারা জন্ম গ্রহন করেন। রামের পিতার নাম- দশরথ ও মাতার নাম কৌশল্যা।

৩। দ্বাপর যুগে এই নারায়ণই আবার অবতার শ্রী-কৃষ্ণ রুপে আবির্ভূত হন। এই শ্রী-কৃষ্ণও যোণী সম্ভবা অবতার। শ্রী-কৃষ্ণের পিতার নাম-বাসুদেব ও মাতার নাম দৈবকিনী।

৪। এই নারায়ণই কলি যুগের অবতার শ্রী-চৈতণ্য দেব বা নিমাই সন্যাসী হয়ে আবির্ভূত হন। এই শ্রী-চৈতন্যও যোণী সম্ভবা অবতার। নিমাই এর পিতার নাম-জগন্নাথ মিশ্র ও মাতার নাম-শচিরানী।

তাহলে দেখা গেল- হিন্দু শাস্ত্র মতে যুগে যুগে তাদের অবতার এসেছেন জীব উদ্ধার করতে। তাহলে জীবকে যদি উদ্ধার হওয়র জন্য চরণ ধরতে হয়- তাহলে অবতারের চরণ ধরতে হবে, কোন সহচরের চরণ নয়। তাই লালন এখানে তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বা অজ্ঞতার কারণে অবতারের চরণ ধরতে না বলে, নিতাই বা অবতারের সহচরের চরণ ধরতে বলেছেন।

আর নিতাই হলো- কলি যুগের অবতার নিমাই সন্যাসীর সহচর। এই নিতাই এর বাবার নাম-হাড়াই পণ্ডিত ও মায়ের নাম পদ্মাবতী।

এবার আসুন- গানের প্রথম কলিটি এক নজর দেখে নিই। এখানে লালন বলেছে-

দৃঢ় বিশ্বাস করে রে মন, ধরো নিতাই চাঁদের চরণ। পার হবি পার হবি তূফান, অপারে কেউ থাকবে না।।

গানের এই কলিটিতে ও লালন সেই একই ভুল করেছেন যে-দৃঢ় বিশ্বাস করে নিতাই এর চরণ ধরতে বলেছেন, এবং বলেছেন যে- তাহলেই জীব তুফান পার হতে পারবে। এখানে কিন্তু লালন কোন অবতারের চরণ ধরতে না বলে, উদ্ধারের জন্য চরণ ধরতে বলেছেন, অবতারের সহচর নিতাই এর চরণ ধরতে। আর এটা তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার জন্যই করেছেন।

এবার আসুন- আমরা এই গানের দ্বিতীয় কলিটির প্রতি দৃষ্টি দিই। এই কলিতে লালন বলেছেন-

হরি নামের তরী লয়ে, ফিরছে নিতাই নেয়ে হয়ে। এমন দয়াল চাঁদকে পেয়ে, স্মরণ কেন নিলে না।।

এখানে লালনের বক্তব্য হলো- হরি নামের তরী নিয়ে নিতাই সে তরীর মাঝি হয়ে জীব উদ্ধারের জন্য এসেছেন। একথা অনেক বড় ভুল কথা। হরি নামের তরী নিয়ে এসেছেন যুগে যুগে অবতারেরা, আর সেই তরীর মাঝিও অবতারেরা, কোন সহচর নয়। অবতারের সহচর নিতাইকে হরি নামক তরীর মাঝি বলে- লালন নিজেকে একেবারে বর্তমান যুগের সাধারণ একজন বাউল শিল্পীর কাতারে পৌঁছে গেছেন। কারণ বর্তমান যুগে যে সকল বাউল শিল্পীরা বাউল গান পরিবেশন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তারাও কিন্তু কিছু কিছু গান রচনা করেছেন। সে সকল গানের কথা সমুহ, যে রকম কম বুদ্ধিসম্পন্নতায় ভরা, লালনের গান তার থেকে একটুও বুদ্ধিহীনতায় কম যায় না। কারণ- লালনও ছিল সে সময়ের একজন বাউল গান করে জীবিকা নির্বাহকারী মাত্র।

আপনি বর্তমান বাউল শিল্পীদের দিকে তাকালে দেখবেন- তারা ধর্ম বিষয়ে যে সকল কথা বলে, তার বারো আনা ই বানোয়াট, তাদের নিজস্ব মন গড়া কথা। যা ধর্ম গ্রন্থের সাথে কোনই মিল নাই। আবার তারা প্রতিষ্ঠিত সকল সম্প্রদায়ের ধর্ম গ্রন্থের কথা বলে, ধর্ম প্রচারের নামে অনেক ভালো কথা বলেন। কিন্তু এই বাউল শিল্পীরাই, এত ভালো ভালো ধর্ম কথা বলার পরেও, প্রায় ৯৫% নারী ও পুরুষ বাউল শিল্পি মদ, গাঁজা হেরোইন খোর ও বহুগামিতায় নিমগ্ন। এমন কি এই বাউল শিল্পীর মেয়েরা অধিকাংশই পতিতা বৃত্তির সাথে জড়িত। এ বিষয়ে আমি বর্তমান বাউল বিষয়ে যখন লিখবো, তখন বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো। আসুন আমরা লালনের বিষয়ে জানার চেষ্টা করি।

এই লালন ও মুখে যতই বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থের কথা বলে আসর মাতিয়ে রাখুক না কেন- সেও কিন্তু এই বর্তমান বাউলদের মতই নেশাখোর ছিলেন। তবে সে সময় এত এত মদ হেরোইন ছিল না, তাই হয়তো এগুলি তিনি পান করেন নি। তখনকার সহজ লোভ্য নেশা উপাদান ছিল গাাঁজা, আর তিনি ছিলেন সেই গাঁজায় আশক্ত।

এবার আসুন- আমরা এই গানের শেষ কলিটি দেখে নিই। এই কলিতে লালন বলেছেন-

কলির জীবে হয়ে সদয়, পারে যেতে ডাকছে নিতাই। লালন বলে মন চলো যায়, এমন বান্ধব মিলবে না।।

এই কলিটিতেও লালন সেই একই ভুল করেছেন- এখানেও তিনি বলেছেন, যে- কলির জীবে সদয় হয়ে নিতাই পারে যেতে ডাকছেন। কিন্তু না। মূল কথা হলো- কলির জীবে সদয় হয়ে নিমাই পারে যেতে ডাকছে, নিতাই ডাকছে নয়।

এই গানটি পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে- লালন- হয নিমাই ও নিতাই কে এক জনই ভেবেছে। অথবা বুঝাতে চেয়েছে- নিমাই অবতার-আর নিতাই হলো গুরু। গুরুরা অবতারের তরী নিয়ে ভক্ত পারের জন্য ভূবণে ঘুরছেন, তাই নিতাই বা গুরুর চরণ ধরো যদি পার হওয়ার বাসনা থাকে। কেন না- সেই আগের গানটির মত- যেই মুর্ষীদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল, খোদাও সেই হয় এর মত, যে- যে নিতাই, সেই নিমাই, সেই হরি অর্থাৎ গুরু, অবতার ও হরি একই জন। তার মানে- এই হিন্দু শাস্ত্র প্রচার করতে এসেও লালন, এখানে তার ভ্রান্ত মতবাদ হিন্দু মতবাদ বলে চালাতে অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

সর্বপরি আগের বা তৃতীয় পর্বের গান ও এই পর্বের গান বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয় যে- লালন ধর্মীয় গ্রন্থের বাইরে নিজস্ব কোন মতবাদ প্রচার করেন নি। বরং নিজের কিছু ভ্রান্ত মতবাদ বিভিন্ন সম্প্রায়ের ধর্মীয় মতবাদের নামে চালিয়েছেন। যা অনেক বড় অন্যায়।

এই লেখাটি আমার নয়। লিখেছেন গুরুজী।মূল লেখাটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

বিষয়: বিবিধ

৩১০৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257040
২২ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ঘৃণিত Bee
২২ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৩৮
200733
পাতা বাহার লিখেছেন : বুঝতে পারার জন্য, অনেক অনেক ধন্যবাদ।
257049
২২ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : ঐ লালন নামের গাজাখোরের কথা বলে কি লাভ
২২ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
200724
পাতা বাহার লিখেছেন : মিথ্যা কে উপস্থাপন না করলে, সত্য যাচায় করে নেওয়া যায় না, তাই।
257058
২২ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:০২
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : খুবই দরকারী পোস্ট।অশেষ ধন্যবাদ।
২২ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৩৭
200732
পাতা বাহার লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File