লালন তার নিজের তৈরী কিছু ভুল মতবাদ, কোরাণের নামে চালানোর অপচেষ্টা করেছে।লালন পর্ব=৩
লিখেছেন লিখেছেন পাতা বাহার ২১ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:২৬:৪৩ রাত
এবার আমি লালনের একটি গান নিয়ে আলোচনায় আসার চেষ্টা করি। আর দেখাতে চেষ্টা করি যে- লালন তার গানে মূলতঃ কি বলতে চেষ্টা করেছেন। লালনের গান-
পারে কে যাবি নবির নৌকাতে আয়। রুপ কাঠের ই নৌকাখানি নাই ডুবার ভয়।।
১।
বে-শরার নেয়ে যারা, তুফানে যাবে মারা, একই ধাক্কায়।
কি করবে তার বদর গাঁজী থাকবে কোথায়।।
২।
নবি না মানে যারা, মোয়াহেদ কাফের তারা, এই দুনিয়ায়।
ভজনে তার নাই মজুরি সাফ লেখা রয়।।
৩।
যে মুর্ষিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল, খোদাও সে হয়।
লালন কয় না এমন কথা কোরাণে কয়।
এবার আসুন- এই গানটির মূখোবন্ধ পারে কে যাবি নবির নৌকাতে আয়। রুপ কাঠের ই নৌকাখানি নাই ডুবার ভয়।। নিয়ে আলোকপাত করি-
আমরা যদি লালনের এই গানটির মূখোবন্ধের দিকে দৃষ্টি দেই, তাহলে পরিস্কার বুঝতে পারি যে- লালন এই গানে তার নিজস্ব দেওয়া বা নিজের গড়া ধর্মীয় নীতির প্রতি মানুষকে আহবান করে নাই। এখানে লালন সকল মানুষকে আহবান করেছেন নবীর নৌকা বা নবির দেওয়া আইনে আসার জন্য। তার মানে- লালন অনুসারি যারা বলেন লালন কোন কেতাবের আইন মানেন নাই, বরং লালন নিজেই আইন তৈরী করে গেছেন, ও তার অনুসারিদের সে আইন মানতে বলেছেন, তারা মূলতঃ মিথ্যা বলে। আসল সত্য হলো- লালন নিজে কোন আইন তৈরী করেন নি, তিনি নবির আইন মানতেই সকলকে আহবান করেছেন।
এবার এই গানটির প্রথম কলিতে কি বলেছে তা দেখেন- বে-শরার নেয়ে যারা, তুফানে যাবে মারা, একই ধাক্কায়। কি করবে তার বদর গাঁজী থাকবে কোথায়।।
এখানে লালন তার অনুসারিদের আরও পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে- যারা নবির দেওয়া শরা বা শরিয়াত পালন না করবে, তারা এক ধাক্কাতেই তুফাণে পড়ে মারা যাবে। তার মানে লালন সকলকে নবির দেওয়া শরা পালনের জন্য বলেছেন, নিজের গড়া কোন আইন মানতে বলে নাই। তার মানে এখানেও লালন পন্থী যারা বলেন লালন নিজেই আইন গড়ে তা মানতে বলেছেন, তারা মিথ্যা বলেন।
এবার আসুন- এই গানের দ্বিতীয় কলিতে কি বলেছে, তা দেখে নিই- নবি না মানে যারা, মোয়াহেদ কাফের তারা, এই দুনিয়ায়। ভজনে তার নাই মজুরি সাফ লেখা রয়।।
এখানে লালন তার অনুসারিদের আরও পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছেন যে- যারা নবিকে মানবে না তারা মোয়াহেদ বা নাস্তিক ও কাফের বলে এই দুনিয়াতে বিবেচিত হবে। আর এই নাস্তিক ও কাফেরদের কোন ভজন বা উপাসনাই কাজে দেবে না, কারণ এ সকল উপাসনার আদেশ স্রষ্টার না, তাই স্রষ্টা এ সকল উপাসনার জন্য কোন মজুরি দিবেন না।
এবার আসুন এই গানের শেষ কলিটি একবার দেখে নিই- যে মুর্ষিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল, খোদাও সে হয়। লালন কয় না এমন কথা কোরাণে কয়।
এই শেষ কলির দিকে তাকালে দেখা যাবে, লালন অনেক বড় বাটপারি করেছে। যে মুর্ষিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল, খোদাও সে হয়। লালন কয় না এমন কথা কোরাণে কয়।
উক্তিটি কিন্তু কোরাণের নয়। এই উক্তিটি লালনের নিজের উক্তি। এখানে দেখা যায়-মূর্ষিদ, রাসুল এগুলি কোরাণের কথা হলেও- মুর্ষিদ, রাসুল ও খোদা যে একই জন একথা কিন্তু কোরাণের কোথাও বলে নাই। অথচ লালন বলেছে-মুর্ষিদ, রাসুল ও খোদা একই জন। আর তার এই নিজের বলা উক্তিকে কোরাণের উক্তি বলে চালানোর অপচেষ্টা করেছেন। এটা লালন গুরুতর অন্যায় করেছে।
এখন আপনারা যারা দাবি করেন যে- আপনারা লালনের অনুসারি, তারা বলুন- লালন নিজে কোন কোন আইন তৈরী করেছেন, যাহা ধর্মীয় কোন কেতাবে নাই। আর নিজের উক্তি কোরাণের বলে চালানোটা লালনের ঠিক হয়েছে কি না? এ ক্ষেত্রে লালনকে আপনারা জ্ঞানী না বাটপার বলবেন?
এই লেখাটি আমার নয়। এই লেখাটি গুরুজীর। মূল পোষ্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিষয়: বিবিধ
৪৬৫০ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেটা আমার ধারণা ভুল পদ্ধতি, ব্যাপারগুলো এমন, দুইটা আঙগুল নাড়ানো তার মধ্যে একটা ধরা এমন টাইপ, সমাধ্যান দুই আঙগুল এর বাইরে থাকতে পারে তার আর পথ খোলা থাকেনা,
এভাবে ইসলাম দিয়ে যদি নজরুল কে ও ব্যাখ্যা করা হয় তাহলেও ভুল হবে, সে নাতে রাসূল লিখেছে তাই খুশীতে গদ গদ হয়ে বলা হয় মুসলিম তাই রবীন্দ্রনাথ এর গুরুত্ব বেশী, কিন্তু সে তো শ্যামা সংগীত ও লিখেছে, তখন তো আর মুসলমানিত্ব থাকেনা,
উদাহরণটা এজন্য দিলাম যে, একজন কবি বা শিল্পী যখন কোন একটা বিষয় নিয়ে লিখে বা ভাবে তখন সে তার মধ্যে ঢুকে যায়, এবঙ তা প্রকাশ করে, আপনি একজন হিন্দু কবিকে যদি অনুরোধ করেন যে সুরা ফাতেহা নিয়ে একটা কবিতা লিখেন, তখন সে একটা কবিতা লিখে দিতে পারবে, যেখানে আল্লাহকে একক এবং সরল পথ পাবার জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ চাওয়া হবে, তাই হিন্দু কবি মুসলিম হয়ে যাবেনা, সে আল্লহকে স্বীকার করেছে সেটাও বলা যাবেনা, যেটা করা যাবে সেটা হল তার কবিতাটা কবিতার বিচারে কতটা সফল,
আমার মন্তব্যটা যদি যথাযথ না হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমাপ্রার্থী, আমি চাইলেও এর চাইতে খোলসা করো বলার সামর্থ আমার নাই
আশা করি বুঝাতে পেরেছি?
এটাতেই আমি বুঝাতে চেয়েছি, লালন কোন ধর্ম নই, এটা একটা মতবাদ এবঙ সেটা বিভিন্ন ধর্মের সম্মিলিত হতে পারে,
দেখুন যারা ধর্মকে অস্বীকার করে তারা নতুন কোন একটা পদ্ধতি নিজেরাই বের করে ফেলতে পারে মনের তৃপ্তির জন্য, লালন যেটা করেছেন, সে তার মনের তৃপ্তির জন্য একটা পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, এবং নতুন কিছুই করেনি, ধর্মকেই উলোট পালট করে করেছে,
দেখুন আজকে এসে লালনকে এভাবে ধর্ম দিয়ে বিচার করা খুব একটা প্রয়োজন নেই, আর কিছুদিন পর তার অনুসারীরা এমনিতেই নি:সেস হয়ে যাবে, কিছু নাস্তিক থাকবে তাকে জাস্ট লালন দর্শন হিসেবে চর্চা করবে, আজকে আমি আপনি বা আমাদের চারপাশের কেউকি খুঁজে পাবেন লালনকে ধর্ম হিসেবে মেনে নেবার? প্রসঙগ সেই সময়ে যতটা না প্রাসংগিক ছিল আজকের সময়ে এসে তেমন আর প্রাসঙ্গীক নেই,
ভবিষ্যতি এটা টিকে থাকবে শুধু সঙ্গীত চর্চা হিসেবে
রবীন্দ্রনাথরা্ও চেষ্টা করেছিল, একট ধর্ম দাঁড় করাতে, ব্রাম্ম সমাজ নাম দিয়ে, যেখানে ইসলাম এর হিন্দু ধর্ম থেকে বেছে বেছে কিছু নিয়ম ঢুকানো হবে এবঙ চর্চা করা হবে, পরে হালে পানি পাইনি
লালন যখন তার মতবাদ চর্চা করেছে তখন শিক্ষা আর টেকনলজি আজকের মতো ছিলনা, তাই একজন অশিক্ষিত খুব সহজেই তাকে ফলো করতে পারেন, ঘটনাটা তেমনটাই হয়েছে, যারা লালন চর্চা করেছে তারা স্কুল কলেজে যায়নি,
আজকের ভন্ড পীর রা যা করে থাকেন, কিছু অশিক্ষিত লোক চারপাশে রাখে আর লোক ঠকায়
আর একটা ব্যাপার হল, হিন্দু ধর্ম খুব প্রভাব ফেলে ভারত বর্ষে, প্রভাটা হলো যারা ধর্ম নিযে ভাবে আর যদি সে হিন্দু হয়ে থাকে তাহলে খুব সহজেই বুঝে ফেলে যে হিন্দু ধর্ম বলতে আসলে কিছু নেই, তার চাইতে ইসলাম ধর্ম অনেক যুক্তিপূর্ণ, কিন্তু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাটা ছোট হওয়া এবঙ এতো বড় বিসর্জন দিতে চাইনা ইগোর জন্য, তখন তারা একটা এভারেজ ধর্ম চর্চার দিকে ছুটে, সেটা হল ডালচাল মিক্স, তারা তখন মধ্যপন্থা ধরে আর তখন লালনরা উঠে আসে, যারা না হিন্দু না মুসলিম, এভাবে তারা সত্যটাকে অর্ধসত্য দিয়ে চর্চা করার চেষ্টা করে কারন ইসলাম এর তলে আসলে জাগতিক পরাজয় মনে করে
লালন এর ব্যাপারটা তার ভক্তরা আরো রঙচটা করতে পারে, সেটা হল তাকে দেবতার পর্যায়ে নিয়ে আসা, এবঙ এটা হিন্দু ধর্মের ও প্রভাব যেমন ধরুণ হিন্দুদের একটা অভ্যাস হলো অবতার হিসেবে চিন্তা করা এবঙ চর্চা করা, ধরুন কোন ব্যাক্তি যদি একটা ব্যাতক্রম কিছু করে তাহল তাকে ভগবান এর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া, হিন্দি সিনেমায় ডায়ালগটা খুব ব্যাবহার হয়, আপ আদমি নেইয়ে, ভগবান হে ভগবান,তারা রবীন্দ্রনাথকে অবতার হিসেবে চর্চা করে ফেলে, আমাদের কিছু নাস্তিক যেমন সকালে উঠে রবীন্দ্রসঙগীত করে তাকে ধর্ম বানিযে ফেলে , তারা এমনকি মুসলমানের মাজারে গিয়ে পীর দরবেশদের পর্যন্ত অবতার জ্ঞানে গিযে সিজদা করে,
লালন এর অনুসারীরা তাকে তেমন ভগবান এর স্থানে বসিয়ে চিন্তা করতে পারে যেটা হয়তো সে নিজেও বলেনি, যিশুকে যেমন গড বানিয়ে ফেলছে,
আধুনিক যুগে এসে লালনকে কেউ আর অবতার বা ভগবান হিসেবে ফলো করবেনা তাই তাকে সাহিত্য দিয়ে বিচার করবে আর কেউ কেউ তাকে নিয়ে পলিটিক্স করে ইসলামকে খোচাতে পারে,
আগে পরে লালন চর্চা হবে একটা মতবাদ হিসেবে যেটা বই খাতায় থাকবে শুধু
তখন বুঝতে পারবেন, আসলে গুরুজী কি বলতে চেয়েছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
তার একটি গানের কথা দেখুন সেখানে বলেছে “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে।“ এখানেই সে বলেছে তার কোন জাত নাই। সে এই গানে আরও বলেছে : কেউ মালা কেউ তশবি গোলে তায় দেখি জাত ভিন্ন বলে, লালন বলে জাতের খাতা বিকায়ছি হাট বাজারে--।
আবার আরেক গানে সে বলেছে সুন্নাত দিলে হয় মুসলমান নারী লোকের কি হয় বিধান--পইতার গুনে বাক্ষ্মন চিনি বাম্নি চিনি কিসেরে--- এমন অনেক গান পাবেন। দুই কলম পড়ে লালন বোঝা মূর্খতা বয়তো নয়। লালনকে বুঝতে হলে লালনের জন্য নিজেকে আগে উৎসর্গ করুন; তারপর লালনকে নিয়ে সমালোচনা করুন। আপনার লিখায় তিন নম্বারে লালনের একটি গানকে তুলে ধরেছেন:
৩।
যে মুর্ষিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল, খোদাও সে হয়।
আপনি এই লিখা নিয়ে বলেছেন:
এই শেষ কলির দিকে তাকালে দেখা যাবে, লালন অনেক বড় বাটপারি করেছে। যে মুর্ষিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল, খোদাও সে হয়। লালন কয় না এমন কথা কোরাণে কয়।
আপনি বলেছেন
উক্তিটি কিন্তু কোরাণের নয়। এই উক্তিটি লালনের নিজের উক্তি।
পাতা বাহার লালনকে বোঝার মত জ্ঞান আপনার নাই। লালন কখনো বাটপারী করেনী। লালন কনো কথায় ভুল বলেনী এটা আপনার বোঝবার ভুল।
লালন কোন অর্থে কথা বলেছে তাহলে? লালন বলেছে কোরআন থেকেই। দেখুন কোরআনে একজায়গায় আল্লাহ্ বলছে: যে আমার রাসুলের হাতে হাত রাখলো সে আমার হাতেই হাত রাখলো। : আমার হাতে হাত রাখার কথা অনুসারেতো আল্লাহর হাতেই হাত রাখাই আল্লাহ্ বোঝাচ্ছে। যে রাসুলকে দেখলো সেতো আমাকেই দেখলো। রাসুলকে দেখলে যদি আল্লাহ দেখাহয় তাহলে তার কথার গভীরতা বুঝতে হবে। এই কথাগুলো অর্থ এইনয় যে রাসুলই আল্লাহ্। এ্রই কথার ভেক আপনি বুঝবেন না। এই জায়গাটা নিয়ে সে বলেছে ঐ অর্থে।
যেমন দেখুন শ্রীকৃষ্ণ একই কথা একটু ডাইরেক্ট বলেছে যে, আমি‘ই স্বয়ং ভগবান। মুহাম্মাদ সো) সে কথাটাই একটু ঘুরিয়ে বলেছে। একই কথা ঈশা (আ) বলেছে আমি‘ই সত্য আমি‘ই পথ। আপনি লালনকে নিয়ে যা বলেছেন আর কাউকে বলে জ্ঞানি হবার চেষ্টা করেন না।
আপনি
এক নম্বার গানে যে বলেছন: কি করবে তার বদর গাঁজী থাকবে কোথায়।। এই জায়গাটা আপনি কিনতু ভাংতে পারেন নাই। একটা কথা জেনে রাখুন লালন এত সহজ বিয়ষ নয় যতটা সহজ একজন হাফেজ হওয়া, একজন আলেম হওয়া, একজন মুফতি হওয়া, একজন, মুহাদ্দেশ হওয়া। লালকে বুঝতে হলে আগে তাকে জানতে হবে। তাকে দেহে ধারন করতে হবে এবং তারপর তাকে ভাংতে হবে, তবেই লালনের তত্ব বুঝবেন। সাধারন স্কুলে কিংবা মাদ্রাসায় পড়ে লালন বোঝা যাবে না। আশা করি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন।
এই কথাটি কোরাণের কোন সূরার কত নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, তা বলবেন কি?
আর আপনি লালনের হয়ে যে সকল কথা বলেছেন তার সকল কথাই প্রচলিত কোরাণে আজ থেকে ১৪ শত বছর আগে মহাম্মদ উল্লেখ করে গেছেন। আর লালন সেই কথাকেই শুধু মাত্র তার মত করে বলে গেছেন। তাহলে অর্থ দাঁড়ালো- লালন যাহা বলেছেন, তার সবই প্রচলিত কোরাণ অথবা বেদ এর কথা লালনের গানে, লালনের নিজস্ব কোন কথা বলা নাই। তাই লালনের গানের জন্য লালনকে ধন্যবাদ দেওয়া যায়, পূর্ব কথা নতুন ভাবে প্রচার করার জন্য। কিন্তু যখন বলা হয়, লালন নিজস্ব মতবাদ প্রচার করেছেন, তখন লালন কে আর ধন্যবাদ দেওয়া যায় না, বরং বাটপার বলা যায়।
আপনি বলেছেন:
[b]আর আপনি লালনের হয়ে যে সকল কথা বলেছেন তার সকল কথাই প্রচলিত কোরাণে আজ থেকে ১৪ শত বছর আগে মহাম্মদ উল্লেখ করে গেছেন।[/b
মুহাম্মাদ (সা) ১৪ বসর আগে যে কথাগুলো বেলেছে বলছেন সে কথাগুলোতো নূহ,সালেহ,মুসা, ঈশা এরাও বলেগেছে মুহাম্মাদেরও অনেক আগে; তাতে কি হয়েছে। লালন একজন দার্শনিক সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। আজ লালন কে নিয়ে থিসিস হয়, লালনের কথাকে ধরে ধর্মের তত্বকথা খোজা হয়। ধর্মের আলোকিত পথের অনেক ইংগিত লালন দিয়ে গেছে।
সে তার একটিন গানে বলেছে: এক কানা কই আরেক কানারে চলো মোরা যায় ভবোপারে, নিজে কানা পথ চিনেনা অন্যকে দেখায় বারে বার--এসব দেখি কানার হাট বাজার। যে লোকটি মোল্লা, মৌলভী, আলেম, পুরোহিত ঠাকুর ও ফাদারদেরকে উল্লেখ করে বলেছে এরা হলো মদনা কানা। নিজেরা পথ চেনেনা অন্যকে পথ দেখায়। একথা বলার যে ক্ষমতা রাখে সে নিশ্চয় মাবুদকে পাওয়ার কোন একটি পথের ঠিকানা জানতেন। মাবুদেই ভালো জানেন। আমরা তাকে ভালো করে জেনেই তার সমালোচনা করি। পাতাবাহার মনে কিছু নিবেন না। আপনাদের মুখে ধর্মের কথা মানায় না। কেন? আপনারা ছদ্দ নামে লিখেন, মানে মিথ্যা নামে লিখেন। যারা সত্য নাম গোপন করে মিথ্যা নামে চলে তাদের মূখে ধর্মের কথা মানায় না।
আর আপনি যে লালনের গান উপস্থাপন করছেন, লালনের কতটা গান আপনার সংগ্রহে আছে? আমাদের গুরুজী, মহাম্মদ মুনসুর উদ্দিনের সংগৃহিত ও প্রকাশিত হারামনি নামের বই, যার খণ্ড মোট বারোটি। আর প্রত্যেক খণ্ডে কয়েক হাজার করে গান আছে। আর সে সকল বইয়ে লালন পূর্ব ও লালন সমসাময়ীক কালের বাউলদের লেখা সকল গান স্থান পেয়েছে। আর গুরুজী সেই বারো খণ্ড বই ই সংগ্রহ করেছেন, পড়েছেন, ও তা থেকেই লেখা উপস্থাপন করছেন।
মূলতঃ লালন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিপক্ষে কথা বলে, নিজেই আরেকটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। যে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বলছে, সে আরেকটা সম্প্রদায় কিভাবে সৃষ্টি করে? এটা কি ভণ্ডামীর আওতায পড়ে না?
এমন অনেক কথা বলা যায়। আসুন লালনকে নিয়ে তর্ক না করে লালনকে ভালো করে জানি। মানা না মানা আপনার ব্যাপার কিন্তু একজন সাধককে নিয়ে এমন ভাবে লিখা উচিত নয়। আপনার তাকে ভালো নাও লাগতে পারে তায় বলে অন্যের ভালো লাগায় বি-মূখ করতে পারি না।
না! আমি তা বলি নাই। আমি বলেছি, লালন নিজস্ব কোন মতবাদ প্রচার করেন নি। তিনি যাহা প্রচার করেছেন, তাহা প্রতিষ্ঠিত সম্প্রদায় সমুহের ধর্ম গ্রন্থের নীতি সমুহ।
সেই সাথে তিনি নিজের গড়া কিছু ভ্রান্ত মতবাদ, প্রতিষ্ঠিত ধর্ম গ্রন্থ সমুহের নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
সেই সাথে আমি আরও বলছি যে- লালন ঘরাণার যারা বলেন যে- লালন সকল ধর্ম গ্রন্থের বাইরে নতুন মতবাদ প্রচার করেছেন, তারা মিথ্যা বলেছেন।
আজকের পোষ্টটি পড়ে দেখুন, লালন বিষয়ের পর্ব চার, তাতে গুরুজী কি বলেছেন, আর লালন পর্ব এক ও দুই পড়ে দেখতে পারেন।
আমার ৬ নং কমেন্টে উপরে আপনার লিখায় আপনি বলেছেন:
মূলতঃ লালন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিপক্ষে কথা বলে, নিজেই আরেকটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। যে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বলছে, সে আরেকটা সম্প্রদায় কিভাবে সৃষ্টি করে? এটা কি ভণ্ডামীর আওতায পড়ে না?
অর্থাৎ যিনি জাতির বিরুদ্ধে কথ্ বললেন, তিনি আরেকটি জাতি সৃষ্টি করে কি, স্ব-বিরোধীর পরিচয় দেন নি?
আপনার কথার সাথে আবারো আমি দ্বিমত পোষন করছি। কেন সেটাই জানার দরকার। লালন তার জিবদ্দশায় কখনোই বলেন নাই নতুন কোন বাউল জাতির কথা বা বাউল জাতি তৈরীর কথা। এটা এখন কেউ বলতে‘ই পারে। আর লালন সে কখনো নতুন কনো জাতের কথা বলেনি এটা আপনার দৃষ্টিভ্রম। তর্ক করার জন্য তর্ক নয় জানার চেষ্টা করুন। দেখুন লালন তার একটি গানে বলেছে:“ আসবার কালে কি জাত ছিলে-- এসে তুমি কিজাত নিলে? কি জাত রবে যাবার কালে সে কথা ভেবে বলনা-- জাত গেলো জাত গেলো বলে---। মুলত লালন সকলকে বোঝাতে চেয়েছে তোমরা মানব জাতী। এই মানুষের মাঝে বিভাজন করো না। এই সহজ সরল কথা সয়ং বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজ কানে শুনে লালনকে দেখতে আসে এবং তার গানে মুগ্ধ হয়। কবি রবিন্দ্রনাথ বলেন আমি যে গান গুলো লিখে তার কথা গুলো অনেক জলিট সংস্কৃতিক ভাষা। যেমন “যখনো মগনো ছিলেম গগনো-- এমন অনেক গান কবির আছে। সে লালনের গান শুনে বলেছে লালন খুব সহজ সরল ভাষায় গান লিখে এবং মানুষ তাতে মুগ্ধ হয়। আমিও তার গানে মুগ্ধ। দেখুন কবি রবিন্দ্রনাথ লালনের গানের সুরে লালনের মত করে কয়েকটা গানও রচনা করেন। যেমন: আমার মনের মানুষ থাকে মনে তায় হেরী তায় সঙ্গোপনে-- দেখি তার নয়ন তারা, আলোক ধারা--। এই গানের মত লালনেরও একটি গান আছে যেমন: বেঁধেছে এমনো ঘর শূণ্যের ওপর পোচতা করে--ধন্য ধন্য বলি তারে----। আবার রবিন্দ্রনাথ লিখেছেন: আমায় হিয়ার মাথে লুকিয়ে ছিলে দেখতে তোমায় পাইন আমি দেখতে তোমায় পাইনি--আমি বাহির প্রাণে চোখ মেলেছি--তোমারী গান গাইনি আমি---। এই গান গুলোতে রবিন্দ্রনাথ আল্লাহ্ র কথা মিন করেছে। যেমন মিন করেছে লালন। লালন কে জানতে হলে দু-একটি বই পড়ে জানা সম্ভব নয়। লালনকে জানতে হলে তাকে দেহে ধারন করুন। তার পর লালন নিয়ে সমালোচনা করুন মানাবে। লালন কখনোই বলেননি যে জাতি ভেদ ঠিক নাই। সে সকল জাতীকে বোঝাতে চেয়েছে সবার ওপর মানুষ সত্য। এই মানুষ ধর এবং মানুষ ভজো। লালন কখনো কোন সম্প্রদায় বা নতুন কোন জাতি গঠন করতে চাইনি। তিনি কেবলী বলেছেন মানুষকে ভালো বাসো। রাসুল (সা)ও একই কথা বলেছে। পাক কোরআনও একই কথা বলেছে: সূরা ইমরান ৩:১০ আয়াত:
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
অর্থ: তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি (মানুষ), মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।
লালনের আরও একটি গানে দেখুন সেখানে বলছে: :মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই কুল হারাবি--মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। এমন অনেক বলা যায়। কিনতু তর্কের জন্য তর্ক আর না করে আসুন লালকে শ্রদ্ধা করি, লালনকে বুজতে শিখি।
তো আমিতো সে কথাই বলেছি যে- লালন নিজস্ব কোন মতবাদ প্রচার করেন নি। লালন যাহা প্রচার করেছে তারা প্রতিষ্ঠিত ধর্ম গ্রন্থ সমুহের মতবাদ, বা নীতি।
আমার মূল বক্তব্য হলো- লালন ঘরাণার যারা বলেন যে, লালন ধর্ম গ্রন্থ সমুহের বাইরে নিজস্ব মতবাদ প্রচার করেছেন, এটা মিথ্যা।
আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি লালন মানুষের কথাই বলেছে। কিনতু আপনি খুব দেরীতে বুঝলেন।
তাহলে কবিদের ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?
কবিদের কথাগুলো তাদের নিজের চেতনা থেকে বলেছে নাকি ধর্ম গ্রন্থ সমুহের আলোকে বলেছে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন