লালন শাইজী নিজস্ব কোন মতবাদ প্রচার করেন নি। লালন পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন পাতা বাহার ২০ আগস্ট, ২০১৪, ১১:১৯:২০ রাত
বাউল মতে লালন ঘরাণার লোকেরা মনে করেন লালন কোরাণ, নবী রাসুল ও আল্লাহকে বাদ দিয়ে, আলাদা ধর্মীয় নীতি প্রচলন করে গেছেন। কিন্তু তাদের এ ধারণাটি সঠিক নয়। কারণ লালন তার গানের মধ্যে বলেছেন-
পারে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়।
আবার আরেক যায়গায় বলেছেন-
রাসুল রাসুল বলে ডাকি। সে নাম নিলেই বড় সুখে থাকি।
এর থেকেই বুঝা যাই যে- লালন তার অনুসারিদের নতুন কোন মতবাদ দেয় নি। সে মূলত সকলকে নবি ও রাসুলের দ্বীণেই দাওয়াত দিয়েছেন।আবার আরেক যায়গায় লালন বলেছে-
মুখে পড়রে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আইন ভেজিলেন রাসুলাল্লাহ।
তার মানে লালন কোরাণের বাণী লাইলাহার প্রতিই সকলকে দাওয়াত দিয়েছেন। এতে ইহাই প্রমাণ হয় যে- লালন আল্লাহ, নবি রাসুল ও কোরান মানতেই সকলকে আহবান করেছেন। তিনি নতুন কোন মতবাদ প্রচার করেন নি।
লালন শাইজী কোরাণের অনেক বিষয় নিয়ে গান লিখেছেন। তবে তিনি কোরাণের সেই বাণী সমুহকে নিজের মত সাংকেতিক ভাষায় বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। আজ আমি লালন শাঁইজির গানে ব্যাবহৃত সাংকেতিক শব্দ চরণ ও চরণ ধুলি নিয়ে আলোচনা করবো। কেন না লালন শাঁইজি তার অনেক গানের মধ্যে কয়েক প্রকার চরণের কথা উল্লেখ করেছেন।যেমন-
সাধু চরণ, গুরু চরণ, শ্রী চরণ, রাঙ্গা চরণ,যুগল চরণ, শিতল চরণ, উভয় চরণ ও অভয় চরণ।
আসুন- প্রথমে আমরা জেনে নিই চরণ শব্দের অর্থ কি?
আপনারা জানেন চরণ মানে পা। তাই যখন লালনের গান-
১। কবে সাধুর চরণ ধুলি মোর লাগবে গায়। আমি বসে আছি আশা সিন্ধু কুলেতে সদায়।
তখন লালন পন্থিরা বলেন। চরণ মানে পা। আর গুরুর চরণ আশায় শিষ্য আশা সিন্ধু কুলে বসে থাকে। আবার এই গানের ই শেষ লাইনে লেখা আছে-
আমি শুনেছি সাধুর করুণা, সাধু চরণ পরশিলে লোহা হয়গো সোনা।
তাহলে দেখা গেলো সাধু চরণ স্পর্শ হলে লোহা সোনা হয়ে যায়। কিন্তু চরণ মানে পা হলে, এই পায়ের পরশে কিছুই সোনা হওয়া সম্ভব নয়। গুরুর মুখ নিসৃত বাণীতে হয়তো খারাপ ভালো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু চরণ ধুলিতে নয়।
আবার লালন শাঁইজি তার গানের মধ্যে বলেছেন-
২। রাঙ্গা চরণ পাবো বলে, বাঞ্ছা সদায় হৃদ কমলে।
৩। সার করো মন গুরুর চরণ। পারে যাওয়ার থাকলে আশা।
৪। রেখো মোরে শ্রী চরণে, চরণ ছাড়া করো না।
৫। যুগলো চরণের ধুলি লাগবে কবে পাপির গায়। আশা সিন্ধু কুলে বসে আছি গো সদায়।
আবার বলেছেন-
ধরো চরণ ছেড়ো না, নিতাই কাওরে ফেলে যাবে না।
এই চরণের মাহাত্ম কি? কি বলতে চেয়েছেন লালন এই চরণকে। আসুন আজ আমরা জেনে নিই চরণ বলতে লালন কাকে বুঝিয়েছেন, এবং চরণের সাধনা কি।
মূলতঃ চরণ শব্দের অর্থ পঠিত। অর্থাৎ যাহা পাঠ করা হয় তাহাকেই চরণ বলে। যেমন কোরান অর্থ পঠিত। এই কোরানকেই লালন তার ভাষায় চরণ বলেছেন। অর্থাৎ কোরান মানেও পঠিত, চরণ মানেও পঠিত। এখন কোরানের মধ্যে পাঁচটি কিতাব বর্তমান, ঠিক তেমনি লালনও চরণকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন-
১। শ্রী-চরণ, ২। রাঙ্গা-চরণ, ৩। শাধু-চরণ, একে শীতল চরণও বলা হয়, ৩। গুরু-চরণ, একে অভয় চরনও বলা হয়, ৫। যুগল-চরণ, একে উভয় চরণও বলা হয়।
এবার আসুন এই পাঁচ চরণের সাথে পরিচিত হই।
১। শ্রী-চরণ-= যার অর্থ পুরুষ লিঙ্গ। আর শ্রী-চরণের ধুলি হলো শুক্রাণু।
২। রাঙ্গা-চরণ-=যার অর্থ স্ত্রী-লিঙ্গ। আর রাঙ্গা চরণের ধুলি ডিম্বাণু ও রজঃ।
৩। সাধু-চরণ-=যার অর্থ নারীর ডান স্তন। সাধু চরণ ধুলি ডান স্তনের দুধ। একে শিতল চরণও বলা হয়েছে। কারণ এই চরণের ধুলি গ্রহন করলে জীব ধিরে ধিরে শান্ত ও শিতল হয়ে যায়।
৪। গুরু-চরণ-=যার অর্থ নারীর বাম স্তন। আর গুরু চরণ ধুলি বাম স্তনের দুধ। একে অভয় চরণও বলা হয়। কারণ এই চরণের ধুলি গ্রচন করলে জীব অভয় প্রাপ্ত হয়।
৫। যুগল-চরণ-=যার অর্থ নারীর ডান ও বাম স্তন। আর যুগল চরণ ধুলি ডান ও বাম স্তনের সম্মিলিত দুধ। একে উভয় চরণ ও বলা হয়েছে। কেন না, যুগল মানে উভয় বা জোড়া।
সার কথা- লালন তার নিজস্ব গবেষনার ফসল হিসাবে কোন মতবাদই প্রচার করেন নি। মূলতঃ তিনি যাহা প্রচার করেছেন, তাহা হলো- বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থের নীতি। তবে লালন তার নিজস্ব কিছু ভ্রান্ত মতবাদ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্ম গ্রন্থের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। ধীরে ধীরে আমি সে সকল বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। আর ও জানতে পড়ুন-
এই লেখাটি আমার নয়, লিখেছেন গুরুজী। আমি তার অনুমতি সাপেক্ষে এখানে পোষ্ট করলাম। মূল পোষ্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বিষয়: বিবিধ
৩০৮৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন