পবিত্র হজ্জঃ বিশ্ব বিপ্লবের নাটক মঞ্চায়ন (পার্ট–১)
লিখেছেন লিখেছেন সুজন মাহমুদ ০২ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:০৪:২৫ বিকাল
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ ইলাহ (বিধানদাতা) হিসেবে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানিনা। এই বাক্যটিই ইসলামের সারকথা। ইসলামে কালিমা, নামাজ,রোজা,হজ্জ,জাকাত,অন্যায়ের উচ্ছেদ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এই মূলভিত্তি গুলোর মূলেও রয়েছে এই বাণীটি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দ্বারা পুঁজিবাদ ,সমাজতন্ত্র, মানবতাবাদ, অস্তিত্ববাদ, ব্যক্তিসাতন্ত্রবাদসহ যত মানুষের তৈরি মতবাদ রয়েছে সব মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং উচ্ছেদের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। ইসলাম এমনি একটি বিপ্লবী মতবাদ। ইসলামে নামাজ,রোজা,হজ্জ এই মূলভিত্তি গুলোর যেমন রয়েছে প্রতীকী অর্থে আচার অনুষ্ঠান তেমনি রয়েছে জ্ঞানগত ভিত্তি।এইজন্য ইসলামে জ্ঞানচর্চার উপর সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে বলেছে “ ইকরা বিস্মি রাব্বি কাল্লাজি” অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন কর তোমার প্রতিপালকের নামে।রাসুল (সঃ) বলেছেন- জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নরনারীর জন্য বাদ্ধ্যতামুলক।এখানে “প্রতিপালকের নাম” বলতে বুঝানো হয়েছে আল্লাহর নিদর্শন বা Sign of God। আকাশমণ্ডলী, সৌরজগৎ, পৃথিবী ও পৃথিবীতে বসবাসরত প্রানীজগত এই সবই আল্লাহর নিদর্শন। মানুষ নিজে এক খোদা প্রদত্ত অপূর্ব নিদর্শন। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, এই সকল নিদর্শন থেকেই প্রথম জ্ঞান অর্জন করতে বলা হয়েছে। তাই সর্বপ্রথম মানুষ তারপর আকাশ মণ্ডলী, সৌরজগৎ ও পৃথিবী (শৃঙ্খলা ও কার্যকারণ) সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর মত শক্তিশালী বিপ্লবী বাণীটি উপলব্ধি করা যাবে। আর জ্ঞান না থাকলে নামাজ,রোজা, হজ্জ শুধু আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। এই সুযোগটি গ্রহন করে ইসলামের শত্রুরা ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারনা ও মন্তব্য করে থাকে। যেমন গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে পবিত্র হজ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামায়াতের বেশি বিরোধী।’ তিনি বলেন, ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।’
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article
ইরানের দার্শনিক ডঃ আলী শরীয়তী তার “ হজ্জ আমাদের কি শিখায়” বইতে অত্যন্ত চমৎকার ভাবে হজের বিপ্লবী শিক্ষাকে তুলে ধরেছেন। সাধারণত হজ্জ বিশ্ব মানবের সম্মীলন কেন্দ্র। বিশ্বের সকল তৌহিদী জনতার শফত অনুষ্ঠান। ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন- হজ্জের সার কথা হল আল্লাহর উদ্দ্যেশে মানুষের অভিযাত্রা। আদমকে সৃষ্টি করার পেছনে যে দর্শন কাজ করেছে হজ হল তার প্রতীকী বহিঃপ্রকাশ। আরও বিশদ ভাবে বললে হজ্জ পালনের পুরা অনুষ্ঠানটা হল একই সঙ্গে অনেক কিছুর মঞ্চায়ন বা প্রতীক স্বরূপ। যেমন “সৃষ্টির মঞ্চায়ন”, ইতিহাসের মঞ্চায়ন”, “ ইসলামী আদর্শের মঞ্চায়ন”, এবং সমগ্র উম্মার মঞ্চায়ন”। হজ্জ অনুস্থানের এই মঞ্চায়নে আল্লাহ রয়েছেন মঞ্চ ব্যবস্থাপকের ভুমিকায়। আদম (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ) ও হাজার (আ) যেন এই নাটকের মূল চরিত্র। দৃশ্যপট হল মসজিদুল হারাম, কাবার পরিপার্শ্ব, মাসা, আরাফাতের ময়দান মাসআর এবং মীনা। মূল প্রতীক গুলো যেন কাবা সাফা, মারওয়া, দিন, রাত্রি, সূর্য উদয়, সূর্যাস্ত, মূর্তি এবং কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা। নাটকের সাজ পোশাক যেন ইহরাম , হালগ ও তাকসির । আর এই নাটকের বিভিন্ন ভুমিকায় যে অভিনয় করে সে মাত্র একজন। হজ্জের নিয়তে যিনি দাঁড়িয়েছেন অর্থাৎ আপনি নিজেই। আপনি নারী হন বা পুরুষ হন, যুবক বা বৃদ্ধ, সাদা কিংবা কালো আপনি হলেন এই অনুষ্ঠানের মূল। আল্লাহ তালা ও শয়তানের দন্দের পরিপেক্ষিতে আদম (আ), ইব্রাহীম (আ) ও হাজর (আ) এর যে ভুমিকা সেইটিই আপনাকে অভিনয় করতে হবে। তাই ব্যক্তি হিসেবে আপনাকে এই নাটকের নায়ক বলা যায়।
পাঠক, মহান হজ্জের প্রত্যেকটি আনুষ্ঠানিকটাকে গভীর দর্শন, বুদ্ধিবৃত্তির আলোকে গভীর ও বিস্তৃত ভাবে ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করা সম্ভব। মানুষের জ্ঞানগত মাত্রা যত সুগভীর হবে তত বেশী হজ্জের তাৎপর্য উপলব্ধি করা যাবে । আমরা এখানে মাত্র একটা আনুস্থানিকতার তাৎপর্য আলোচনা করার চেষ্টা করব।
যখন আরাফাত থেকে জনতা দলে দলে মাশআরে আসে এবং তারা দ্রুত গতিতে পাহাড় বেয়ে উঠে এবং সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় পাথর। জামারাহ নামে একধরনের কংকর পাথর। পাহাড়ে রাতের অন্ধকারে সকলে মিলে পাথর সংগ্রহ করে। কারন এর পরবর্তী পর্যায় হল মিনা (যুদ্ধক্ষেত্র) । মিনা হল সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সর্বশেষ স্তর। এই মিনাতেই পৃথিবীতে শয়তানের সবচেয়ে বড় আশ্রয় কেন্দ্রটি ধ্বংস করা হবে। কিংস স্ট্রীট বরাবর অবস্থিত তিন শয়তানের তিনটি প্রতীকী মূর্তি একশ মিটার দূরে দূরে অবস্থিত। শয়তানের এই তিন মূর্তিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করা হবে। প্রথমেই তৃতীয় মূর্তিটিকে আঘাত করতে হবে এরপর প্রথম ও দ্বিতীয় মূর্তিগুলোকে পরপর আঘাত করতে হবে। কারন তৃতীয় মূর্তিটির শক্তিতেই প্রথম ও দ্বিতীয় মূর্তিগুলো টিকে আছে। এই প্রতীকী নাটক টুকুকে আমরা বাস্তবতার আলোকে ব্যাখ্যা করব।
এখানে ডঃ আলী শরীয়তী উল্লেখ করেছেন- পাথর গুলো হল যুদ্ধের অস্ত্র অর্থাৎ বুলেট, শেষ মূর্তিটি হল ফেরাউন, প্রথম ও দ্বিতীয় মূর্তিটি হল বালাম ও কারুনের প্রতীক। আর মিনা হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র । যে ব্যক্তি পাথর নিক্ষেপ করবেন তিনি থাকবেন ইব্রাহিম(আ) এর ভুমিকায়।তিনি প্রতীকী ফেরাউন, কারুন ও বালামকে বুলেট নিক্ষেপ করে পরাজিত করবেন। এবং বিজয়ী বেশে ঈদ উদযাপন করবেন।
উল্লেখ্য যে, ফেরাউন হচ্ছে অত্যচার, জুলুম নির্যাতনের প্রতীক। এর কাজ স্বৈরাচার, রাজনীতি, বল ও শক্তি প্রয়োগ করা।
কারুন হচ্ছে,ধন ও ধনতন্ত্রের প্রতীক। এর কাজ শোষণ, সম্পদ লুণ্ঠন, বানিজ্য ও রক্তপাত করা।
বালাম হচ্ছে চাতুরী ও ভণ্ডামির প্রতীক। এর কাজ হল পথভ্রষ্ট করা, মগজ ধোলাই, ইমান নষ্ট ও প্রতারনা করা।
আগেই বলে রাখছি, ফেরাউন, কারুন ও বালাম এখন শুধু ব্যক্তি না। তারা এখন একেকটি দর্শন (Philosophy),একেকটি কাঠামো(Structure) এই তিনটি হতে পারে একেকটি প্রতিষ্ঠান (Organization) এবং প্রশাসন কিংবা হতে পারে কোন দেশ বা জাতি । অর্থাৎ যে বা যারাই এই তিনটি ব্যক্তির রূপ ধারন করে তাদের ভুমিকা পালন করে তারাই এই ফেরাউন, কারুন ও বালাম কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত।
এরপর ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন- “হজ্জের যিনি স্রষ্টা তিনি নিশ্চয় জানেন যে, যেকোনো সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে, সমাজে ও সমাজ কাঠামোতে সর্বকালেই এই তিন শয়তানী শক্তি রাজত্ব করে এবং এর একটি থাকে মূল ভুমিকায়। আর অপর দুটি থাকে সহযোগী হিসেবে”। যেহেতু এই তিন সমাজ কাঠামোতে সর্বকালেই এই তিন শয়তানী শক্তি রাজত্ব করে। তাই এবার আমরা বিশ্লেষণ করে বের করবো বর্তমানে বিশ্ব সমাজ ও সমাজ কাঠামোতে এই তিন শয়তানী শক্তি( ফেরাউন, কারুন ও বালাম) কোন কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ফেরাউন, কারুন ও বালাম স্ট্রাকচারঃ
জাতিসঙ্ঘ ও ফেরাউন কাঠামোঃ আমরা ফেরাউনকে জানি স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে,যে অত্যচার, জুলুম নির্যাতনের প্রতীক।
সেই সময় ফেরাউনের পরিষদবর্গ বা পুরো প্রশাসনই ছিল স্বৈরাচারী। তারা জনগনকে দাশে পরিনত করেছিল। জুলুম নির্যাতনের স্ট্রিম রোল চালাত বনী ইজরাইলের উপর। পুরুষদেরকে হত্যা করত নারীদেরকে জীবিত রেখে নির্যাতন করত, জনগণকে রাজনৈতিক দমন, নিপীড়ন, শোষণ চালিয়ে দারিদ্র ও বঞ্চিত করে রাখতো যাতে তারা শক্তিশালী হয়ে স্বৈরাচারী প্রশাসনের বিরুদ্ধে না দাঁড়াতে পারে। জনগনের কোন স্বাধীনতা ছিল না। ছিল আজকের সাম্রাজ্যবাদীতা, আধিপত্তবাদীতা, জায়নবাদীতা, যুদ্ধ দখলদারিত্ব ও ক্ষমতা আরোহণের প্রতিযোগিতা (যদিও তখন সিম্পল সোসাইটি হওয়াতে সাম্রাজ্যবাদীতা, আধিপত্তবাদীতা, জায়নবাদীতা, যুদ্ধ দখলদারিত্ব সল্প পরিসরের এবং ভিন্ন ধাঁচের ছিল)।এখন জ্ঞান বিজ্ঞান বিকশিত হওয়াতে ফেরাউন কাঠামো অনেক সূক্ষ্ম ও জটিল রূপ ধারন করেছে। ফেরাউন এখন আর কোন ব্যক্তি না , ফেরাউন এখন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। আর সেটি হল জাতিসঙ্ঘ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করা যায়, এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য (যাদের ভেটো প্রদানের ক্ষমতা আছে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া,এবং গণচীন । নিরাপত্তা পরিষদের শান্তিরক্ষা অপারেশন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন মাধ্যমে সামরিক অভিযানের ক্ষমতা রয়েছে আছে, এটি জাতিসংঘের এমন একটি অঙ্গ, যেটি থেকে জারি করা রেজুলেশন সদস্য দেশগুলোর জন্য মানা বাধ্যতামূলক।
বলা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের নাম বিভিন্ন জাতিদের সঙ্ঘ। অত্যন্ত সুন্দর মুখরোচক নাম জাতিসঙ্ঘ। আসলে এটি বিশ্বের বিভিন্ন জাতিদের সঙ্ঘ না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে এটি মুলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক পাঁচটি দেশ নিয়ে । যারা সকলেই সাম্রাজ্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী চেতনা লালন করে। এদের রয়েছে ভেটো ক্ষমতা। যে ক্ষমতা পেয়ে তারা হয়েছে চরম স্বৈরাচারী। মানবতাবিরোধীদের মুখে মানবতার জয়গান। স্বৈরাচারীরাই আজকের গনতন্ত্রের জয়গান গাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী
পশ্চিমাদের গনতন্ত্রের আলোড়ন অথচ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোন গনতন্ত্র নেই।নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশের ভেটো ক্ষমতা (Absolute Power) আছে সবাই নিজের স্বার্থে স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু কোন গনতন্ত্র নেই। নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশের মধ্যে ভোটাভুটি মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়না। ফলে আমেরিকার স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের কারনে ফিলিস্তিন আজো বিশ্বের ১৩৫ টি দেশের স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও স্বাধীন হতে পারছে না।
ফেরাউন অত্যন্ত উদ্ধত সহকারে নিজেকে আল্লাহ দাবী করতো। আর এই পাঁচটি দেশ এখন চাতুরতার সঙ্গে , কৌশলে নিজেদের আল্লাহ দাবী করে, কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এরা আল্লাহর অবস্থানে অবস্থিত হতে চায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রয়েছে সার্বভৌম ক্ষমতা (ভেটো পাওয়ার)। অথচ একমাত্র আল্লাহই সার্বভৌম ক্ষমতা মালিক। বর্তমান বিশ্বের তিনটি আদর্শ বিদ্যমান( ইসলাম, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র)। অথচ এই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশের মধ্যে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র( যদিও সমাজতন্ত্র আদর্শের কোন অস্তিত্ব নেই এমনকি বিলুপ্তির পথে, কার্যত রাশিয়া ও চীন পুজিবাদের দিকে ধাবিত ) আদর্শের প্রতিনিধি রয়েছে কিন্তু ইসলামী আদর্শের কোন প্রতিনিধি নাই। মিশরীয় ফেরাউনের সময় ইজারায়েল বংশের কোন ব্যক্তির ফেরাউন প্রশাসনের দায়িত্ব দিত না, তাদের কোন ধরনের পোস্ট দেওয়া হতনা। পদমর্যাদাহীন,বঞ্চিত ও অবহেলিত করে রাখত। যাতে তারা( বনী ইজরায়েল) শক্তিশালী হয়ে ফেরাউনের প্রশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারে। ঠিক একমাত্র পুঁজিবাদী বিশ্বের বিশ্বশাসন টিকিয়ে রাখার জন্য জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদে মুসলিম বিশ্বের কোন দেশকে ক্ষমতা বা শক্তিশালী পদ দেওয়া হয়নি। কারন একটায় বিশ্বব্যাপী ইসলামী শক্তির উত্থান ঘটলে বৈশ্বিক ফেরাউন কাঠামোর পতন ঘণ্টা বেজে উঠবে। যার কারনে মুসলিম বিশ্বকে অবনত করে রাখতেই দেশগুলোকে ভেঙ্গে খন্ড খন্ড করে দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, আগ্রাসন চালিয়ে সভ্যতার নিদর্শন গুলো ধ্বংস করেছে। মুসলিম দেশ গুলো যেন জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত না হতে পারে সেই জন্য মিত্থ্যা অজুহাতে অবরোধ আরোপ করছে। যুদ্ধ, গনহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ করে উন্নয়ন কে বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।
তাই আপনারা যারা প্রতীকী ফেরাউনের মূর্তিটিকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছেন, অবশ্যয় আপনাদের সচেতন থাকতে হবে যে ঐ মূর্তিটিই হচ্ছে আজকের জাতিসঙ্ঘ অর্থাৎ ঐ পাঁচটি পরাশক্তি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া,এবং গণচীন) যারা ফিলিস্তিন, কাস্মির, রোহিঙ্গা, চেচনিয়া, বসনিয়া, তাতার, উইঘুর, সোমালিয়াসহ বিশ্বব্যাপী মজলুম জনতাকে জুলুম নির্যাতন করে আসছে। আপনি এখন ইব্রাহীম(আঃ) এর মত বিদ্রোহী ও বিপ্লবী, মজলুম জনতার বিপ্লবী নেতা। আপনার উপর দায়িত্ব পড়েছে জনগণকে স্বৈরাচারী জাতিসংঘের কবল থাকে মুক্ত করা। অতএব আপনি গুলি করুন, যেন আপনার গুলিটি জাতিসঙ্ঘকে ভেদ করে চলে এবং বিপর্যস্ত হয় জাতিসঙ্ঘ। আপনি যখনি জাতিসংঘের দিকে গুলি ছুড়বেন, তারমানে তখন আপনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” অর্থাৎ ইলাহ (বিধানদাতা) হিসেবে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানিনা এই শক্তিশালী বাণীটি বাস্তবায়ন করছেন। অবশ্যই আপনাকে বিশ্বের মজলুম জনতাকে সঙ্গে নিয়ে লড়তে হবে। আমি বলছিনা যে আপনি এখনই জাতিসংঘের সদর দপ্তরে গিয়ে বোমা হামলা করুন (আইএস ও আলকায়েদার মত)। প্রথমে আপনাকে অসচেতন জনগণকে সচেতন করতে হবে, এই জন্য আপনাকে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করতে হবে। বিশ্বব্যাপী জনগন সচেতন হলেই জাতিসংঘের পতন ঘটবে। জালিম শাসকেরা তখনই শাসন ক্ষমতা চালাতে পারে যখন জনগন থাকে অসচেতন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৭১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসাধারণ বিশ্লেষণ-
স্মরণ করিয়ে দিলেন
অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
বাস্তবতা হলো- এবারে যে বিশলাখ মানুষ হজ্জ করছেন তার হয়তো বড়জোর ১-২% মূলবিষয়ে সচেতন-
বাকিদের কথা না বলাই উত্তম, সবাই আল্লাহর মেহমান
অগ্রীম শুভেচ্ছা- কুরবানী ও ঈদ মোবারক
ব্যক্তি ও সমাজ জীবন ত্যাগের আলোকে উদ্ভাসিত হোক
মন্তব্য করতে লগইন করুন