মাহে রমজানঃ পুজিবাদী তথা বস্তুবাদী সংস্কৃতির মোকাবেলায় ইসলামী সংস্কৃতির বিপ্লবী ভূমিকা(পার্ট-৩)
লিখেছেন লিখেছেন সুজন মাহমুদ ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:০৭:৫৭ রাত
রোজা সম্পর্কে সমাজের গতানুগতিক ধ্যান ধারনাঃ প্রচলিত সমাজের মানুষ মনেকরে রোজা হল- সোবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ও স্বামী স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। কেন এইসব থেকে বিরত থাকা? কারণ, মানুষ যদি কষ্ট করে না খেয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ মানুষের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। আর আল্লাহ যার প্রতি সন্তুষ্ট হবে তার প্রতি রহমত বর্ষিত হবে। এই রহমত হল রোজার বিনিময়ে রোজাদারদের জন্য জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দিবেন এবং আল্লাহ মানুষকে জান্নাত দান করবেন। রমজান মাসে নামাজ রোজা ও অন্যান্য ইবাদাত বন্দেগী করলে ৭০ গুন সওয়াব বেশি দিবেন। কারো কারো মতে, লক্ষ লক্ষ নেকি তার আমল নামাই জমা হবে। হাশরের ময়দানে যার আমলনামা বেশী হবে তাকে বেহেস্ত দান করবেন। আবার কারো মতে, কেউ যদি সহীহ সালামতে রোজার ফায়দা হাসিল করে পারেন, তাহলে তাকে বিনা হিসেবে জান্নাত দান করা হবে বলেন, সুবাহানাল্লাহ। আবার অনেক হুজুরকে বলতে শুনা যায়, রমজান মাসে শয়তান শিকল দিয়ে বাধা থাকে, তাই এই মাসে যে যত বেশি খাবার খাইতে পারে আল্লাহ এর কোন হিসাব নিবেন না। ইত্যাদি ইত্যাদি কথা প্রচলিত আছে। এতে বুঝা যায় এই রোজা,নামাজের সাথে সমাজ, সংসার, পৃথিবীর কোন সম্পর্ক নাই।
বান্দা যদি কষ্ট করে না খেয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ মানুষের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। আর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে ,বিনিময়ে বেহেস্ত দান করবেন।
তার মানে আল্লাহ কখন বেহেস্ত দিবেন যখন বান্দা কষ্ট করে আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করবে। এই যে সন্তুষ্টির বিনিময়ে বেহেস্ত এটি হল Exchange system. এটি just give and take. তাহলে আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক Exchange System এর উপর নির্ভর করে । ফলে এখানেও আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে স্বার্থ প্রতিফলিত হয়। আল্লাহ দরকার সন্তুষ্টি আর মানুষের দরকার বেহেস্ত। এখানে আল্লাহকে সন্তুষ্টির মুখাপেক্ষী করে অভাবগ্রস্থ দুর্বল সত্ত্বায় পরিণত করা হয়েছে। অথচ মানুষের প্রসংশা পাওয়ার খায়েশ আল্লাহর নেই। আল্লাহ অভাবহীন (self sufficient) সত্ত্বা। রোজা সম্পর্কে এই ধরনের প্রচলিত ধারণা ভুল এবং ইসলাম বিরোধী।
উল্লেখ্য যে, নামাজ বেহেস্তের চাবী, রোজা রাখলে বেহেস্ত, জাকাত প্রদান করলে প্রচুর নেকী, শহিহ সালামতে হজ্জ করতে পারলে বিনা হিসেবে বেহেস্ত নসীব হবে। অর্থাৎ যা কিছু আমল আছে সবই শুধু পাপ- পুন্য, আখিরাত- পরকাল, জান্নাত- জাহান্নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এতে ইসলামের মূল ভিত্তি গুলোর সাথে সমাজ সংস্কার, ব্যক্তির জীবন,সংসার,সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বের সাথে কোন সম্পর্ক নাই। যারা সমাজ সংস্কারকে অস্বীকার করে, দূরে থেকে আল্লাহর রহমত অনুসন্ধান করে থাকে তারা সুফিবাদী চিন্তা চেতনা লালন করে। এটি সুফিবাদী মতবাদ, ইসলামী মতবাদ নই। এই সম্পর্কে ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন-“সুফিবাদী জীবন পদ্ধতি এক ধরনের বস্তুবাদ এবং তা ভোগবাদী বস্তুবাদের চেয়ে কোন অংশে কম না। কারণ ভোগবাদী বস্তুবাদ এখনই ভোগ করতে চায়, আর সুফিবাদী বস্তুবাদ পরকালে ভোগের লোভে বর্তমানে সংযম পালন করে। পরকালের ভোগটাই মূল লক্ষ্য”।
আবার আরেক ধরনের সুবিধাবাদী দল আছে। যারা ইসলামের মূল ভিত্তিগুলোর (কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত,ইত্যাদি ) শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালন করে অন্যদিকে নিজেদের সমাজ সংস্কার থেকে দূরে রেখে অর্থ উপার্জন, চাকরি-বাকরি, এবং নিজের পরিবার নিয়েই ব্যস্থ থাকে। তারা দুনিয়াতেও নির্ঝঞ্ঝাট জীবন চায় আবার আখিরাতেও জান্নাত পেতে চায়। এই শ্রেণীর মানুষও চরম বস্তুবাদী। অথচ ইসলামের মূল ভিত্তি গুলোর(কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত, অন্যায়ের উচ্ছেদ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ) প্রকৃত আহবান হচ্ছে, আত্মসংস্কার, সমাজসংস্কার ও বিশ্বের মানুষের কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে পরকালীন।এই প্রসঙ্গে ইমাম খোমেইনী (রঃ)বলেছেন- পৃথিবীতে নবী রাসুলগণ (আ) এসেছিলেন সমাজ সংস্কার ও মানুষের মুক্তির জন্য। আবার ডঃ আলী শরীয়তী বলেছেন- “আল্লাহ পথ = মানুষের জন্য জীবন ও জগতকে বিসর্জন দেওয়ার পথ” অন্য একটি হাদিসে রাসুল (সঃ) বলেছেন- যদি সমাজের কল্যাণ চিন্তা না করে বা কল্যাণের জন্য কোন রূপ চেষ্টা না করে কেউ একটা দিনও অতিবাহিত করে তাহলে ঐ ব্যক্তি মুসলমান নয়।
প্রচলিত সমাজে পুঁজিবাদী ধ্যান ধারনার মোকাবেলায় রোজা তথা ইসলামী সংস্কৃতির বিপ্লবী ভুমিকাঃ আমাদের সমাজে মানুষের দুটি শ্রেণীর কথা আগেই উল্লেখ করেছি। এক শ্রেণী,যারা ধর্মের নামে সমাজ সংস্কার থেকে নিজেদের দূরে রেখে শুধু আখিরাত- পরকাল নিয়ে আছে। ফলে তাদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সমাজে বিজাতীয় পুঁজিবাদী স্যাকুলার ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আল্লাহ ইসলামের অনুসারীদের দায়িত্ব দিয়েছেন যে, তারা তার প্রতিনিধি হিসেবে সমাজ সংস্কার ও মানব কল্যাণ সাধন করবে। অথচ ইসলামের অনুসারী দাবীদাররা সমাজ সংস্কার থেকে বিচ্যুত। ফলে তারা তাদের অজান্তেই সমাজে বিজাতীয় স্যাকুলার দর্শন ও সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করছে। তাতে দীর্ঘদিনে বিজাতীয় চিন্তা দর্শন আমাদের সমাজে জেকে বসেছে। পশ্চিমা চিন্তা দর্শনে মানুষ অতিমাত্রাই আত্মাকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, ভোগবাদী জীবন যাপন করছে। ফলে রমজান মাসে যেখানে সবদিক থেকে মানুষ সংযম করবে। অন্যের জন্য সেক্রিফাইস করবে। মানুষ ক্ষুধা তৃষ্ণার উরধে উঠে পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে কল্যাণমূলক সমাজ গড়ে তুলবে। অথচ এই সংযমের মাসে যতসব ভোগবাদীতার মহড়া চলছে। এর ফলে এই ভোগবাদী চাহিদাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর পুজিপতি কালোবাজারিরা সিন্ডিকেট করে কৃত্তিম সংকট তৈরি করে বিশাল পরিমানে মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
ক্লাসিক্যাল ইকনমিস্ট এডামস্মিথ এর থিওরী অনুযায়ী মানুষ যত বেশী আত্মস্বার্থের (Self Interest) চর্চা করবে ততবেশি পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটবে। মানুষের এই আত্মস্বার্থের (Self Interest) চর্চার ফলে রমজানের আগে থেকেই দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করেছে।
প্রথমত, ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা লুটে নিয়ে তারা তাদের আত্মস্বার্থ পূরণ করছে।
দ্বিতীয়ত, যারা বিত্তশালী তারা বেশী দামে হলেও ভোগ্য পণ্য, পোশাক-আশাক কিনে বিলাসিতায় ব্যস্থ হয়ে আত্মস্বার্থ পূরণ করছে।
তৃতীয়ত, বিত্তশালীরা যখন আত্মকেন্দ্রিকতায় ব্যস্থ থাকে তখন তারা গরিবের সাহায্য- সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারে না।তখন এক শ্রেণী বিত্তশালীদের ছিনতাই, ডাকাতি করে আত্মস্বার্থ পূরণ করে।
চতুর্থত, একশ্রেণী ধর্মীয় লেবাস ধারী রোজা সম্পর্কে এমন সব ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে তাতে রোজার প্রকৃত আদর্শ ও আহবানকে অবলুপ্ত করে। তারা সমাজের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সন্তুষ্টি করে বক্তৃতা দিয়ে সেলফ ইন্টারেস্ট পূরণ করে, যেটা রমজান মাসে টিভি চ্যানেল গুলোতেও হুজুরদের সেলফ ইন্টারেস্ট পূরণ করার মহড়া দেখা যায়।
পঞ্চমত, সব রাজনৈতিক দল দুর্নীতির টাকা দিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালু রাখে। বিজাতীয় কূটনীতিবিদদের নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করে যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে।
অন্যদিকে সংখ্যা গরিষ্ঠ জনসাধারণ যারা দ্রব্যমুল্য বেড়ে যাওয়ায় অর্ধহারে,অনাহারে জীবন যাপন করে। তাতে ইংরেজ দার্শনিক হারবারট স্পেন্সার “Survival of the fittest” অর্থাৎ “যোগ্যতমের টিকে থাকা” তত্ত্ব অনুযায়ী এদের বেঁচে থাকার প্রয়োজন নাই। এভাবে রোজার মাস যার যার সেলফ ইন্টারেস্ট পূরণ করতে ব্যবহৃত হয়। ফলে সমাজে দ্বন্দ্ব,সংঘাত, নৈরাজ্য দিনের পর দিন বেড়েই চলছে।
ইসলামে সোবহে সাদিক থেকে রাত্রি ঘনিয়ে আশা পর্যন্ত পানাহার ও স্বামী স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে প্রকৃত পক্ষে “প্রতীকী অর্থে সংযম” করতে বলা হয়েছে। এই সংযমের গভীরতম অর্থ রয়েছে। আর তা হল - মানুষ সারা বছর যে আত্মস্বার্থ পূরণ করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, ধন সম্পদ অর্জন মানুষকে মোহগ্রস্থ করে ফেলে, মানুষের অভাবের শেষ নেই, এই অভাব পূরণ করতে দিনের পর দিন মুল্যবান সময় নষ্ট করে চলে, অতি মাত্রাই আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর হয়ে পড়ে। এই সকল আত্মিক ব্যাধি থাকে উদ্ধার পেতে মূলত আত্মস্বার্থের (Self Interest) লাগাম টেনে ধরতে রোজার মত সিস্টেম দেওয়া হয়েছে। এটিই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে রোজার সংযম। পুঁজিবাদী মতাদর্শের আত্মস্বার্থের (Self Interest) চর্চায় যত নৈরাজ্য,অস্থিরতার কারণ। এটাকে নিয়ন্ত্রন করে আত্মাকে সংশোধন করার জন্য এক মাসের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই জন্য রোজা হচ্ছে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের মাস।
পরিশোধিত আত্মার দাবী হল , মানুষ আল্লাহর রঙে রঙ্গিন হবে। অর্থাৎ আল্লাহর দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ আল্লাহর কিছু কিছু মানবীয় গুণাবলি ধারণ করবে। রমজান মাসে মানুষ বস্তুগত ও জৈবিক চাহিদা নিয়ন্ত্রন বা কমিয়ে ফেলে যে সকল গুণাবলি অর্জনের প্রচেষ্টা করবেঃ
• রমজান মাস মানুষের দিশারী, সত্যাসত্যের পার্থক্য কারী কোরআন নাজিলের মাস। শবে কদরকে কেন্দ্র করে সারা মাস ব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে, এই মাসকে কেন্দ্র করে কোরআন থেকে বেশী বেশী আত্মিক খাবার অনুসন্ধান করতে হবে যাতে কোরআন অনুযায়ী সারাজীবন চলার ক্ষমতা অর্জিত হয়।
• আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা বিসর্জন দিতে হবে।
• সত্যের জ্ঞান (Knowledge of Truth) অর্জনে একনিষ্ঠ হতে হবে।
• সমাজের সামস্টিক কল্যাণ নিয়ে চিন্তা করবে।
• অভাব অনটনে বঞ্চনায় থাকা, নিঃস্ব, অসহায়, মানুষের অধিকার না পাওয়ার অনুভুতি উপলদ্ধি করতে হবে এবং দূর করতে কর্মসূচি গ্রহন করতে হবে।
• চরিত্র সংশোধন ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে।
• রোজার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে শয়তান যেন মহৎ লক্ষ্য( উন্নত,মানবীয় সমাজ গঠন) পুরনে বাধা দিতে না পারে। কারণ সমস্ত ইবাদাতের একটা মহৎ উদ্দেশ্য হল সামাজিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠা। যুগে যুগে নবী রাসুলগণ উন্নত ও মানবীয় সমাজ গঠনের প্রচেষ্টায় ছিলেন।
• নিঃস্ব,অভাবী,বঞ্চিত মানুষের এই বঞ্চনার মূলে দুর্নীতিগ্রস্থ রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র কাঠামোয় দায়ী,তাই রোজার মাধ্যমে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে সচেতন হয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্বশীল হতে হবে।
• জাকাত, সাদাকা, ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করার প্রচেস্টা করতে হবে। ইত্যাদি
এই সকল কর্মসূচি একজন মুমিনকে মুত্তাকী পর্যায়ে উপনীত করে।এভাবে রোজা তথা ইসলাম পুঁজিবাদী ও সমাজতন্ত্রের মোকাবেলায় উন্নত মানবীয় সংস্কৃতি সম্পন্ন সমাজ গঠন করতে চায়।
রোজা কাদের জন্য ফরজঃ কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন- “হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হল। যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগনকে দেওয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো”(সুরা বাকারাঃ১৮৩) উক্ত আয়াতটিতে বুঝা যাচ্ছে সিয়ামের বিধান সবার জন্য দেওয়া হয় নাই। যারা মুমিন তাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের সমাজে সিয়াম যতটা না রিলিজিয়াস তার চেয়ে বেশী সোশাল। এই কারনে ইমানদার, বেঈমানদার, ঘুষখোর , দুর্নীতিবাজ, বেহায়া নারী যারা হিজাব মেইন্টেইন করে না,তারাও রোজা রাখে। ফলে এই রোজা সমাজের জন্য কোন উন্নয়ন বয়ে আনে না। রোজা এমনি এক বিধান একমাত্র মুমিনরাই উন্নতি লাভ করতে পারবে। অন্য কেউ উন্নতি লাভ করতে পারবেনা।
মুত্তাকীঃ যারা তাকওয়া সম্পন্ন তাদেরকে বলা হয় মুত্তাকী। নাহজ আল বালাঘা অনুসারে, “তাকওয়া মানে হৃদয় ও মন আল্লাহর মহিমা ও মহত্তে আপ্লুত হওয়া। আত্মাকে সংস্কার করে ও চেতনাকে পরিশুদ্ধ করা”। এমন পর্যায়ে উপনীত হওয়া,মুমিনকে মহৎ উদ্দেশ্য( উন্নত ও মানবীয় সমাজ গঠন) অর্জনে দায়িত্বশীল করে যাতে শয়তান কোন ভাবেই প্ররোচনা দিতে পারবে না। অর্থাৎ শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে সর্বদা সতর্ক ও নিজেকে হেফাজতে রাখা। মুমিনের উচ্চতম পর্যায় হল মুত্তাকী। মুত্তাকীর পর্যায়ে উপনীত হতে পারলেই সিয়াম সাধনা সফল। কারণ সিয়ামের উদ্দেশ্য মুমিন মুত্তাকী হবে।
ঈদুল ফিতরঃ “ঈদ” মানে “এমন উৎসব যা বারবার ফিরে আসে” আর “ফিতর” মানে “বিজয় লাভ করা”। অর্থাৎ একমাসের সাধনায় যারা আত্মিক সমৃদ্ধি লাভ করে মুত্তাকী হতে পেরেছে। তারাই বিজয় লাভ করেছে। এই বিজয়ীদের সংবর্ধনা স্বরূপ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তাকে বলা হয় ঈদুল ফিতর। অথচ আমাদের সমাজে ঈদ মানে আনন্দ,ঈদ মানে খুশি ইত্যাদি ইনজেনারেল প্রচারণা চালিয়ে কালোবাজারি পুঁজিপতিদের দেশি- বিদেশী পণ্যের রমরমা বানিজ্যের উৎসবে পরিণত করা হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
রোজা কাদের জন্য ফরজঃ কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন- “হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হল। যেমন বিধান তোমাদের পরবর্তীগনকে দেওয়া হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো”(সুরা বাকারাঃ১৮৩)
ইসলাম বিরোধী হওয়ার ব্যাপারটা হয়তো আমি বুঝতে পারছিনা
অথবা
ইবাদাত বিষয়ে আমার বুঝ সঠিক নয়-
আমি যা বুঝি-
দ্বীনের হাকিকত ব্যক্তির আকলের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত! আর কোন মানুষকে কোন ফিতরাতে সৃষ্টি করা হয়েছে তা আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন! তাই সাধারণের জন্য give and take... রীতিই উচ্চারিত হয়েছে এবং আকলের উন্নয়নের জন্য অবিরত তাগিদ দেয়া হয়েছে!
আবার উন্নত আকলওয়ালাদের জন্য "রবের আদেশ/নিষেধের আনুগত্য"কেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং সবকিছুই "রবের সন্তুষ্টির জন্য" নির্দিষ্ট করতে বলা হয়েছে!
তাই সাধারণ/নিম্নবুঝের মানুষ "জাহান্নামের ভয়ে" নিষিদ্ধ বিষয় বা আদেশলংঘণ থেকে বিরত থাকবে; কিন্তু আত্মিক ক্রমোন্নতির সাথে সাথে তার লক্ষ্যও পরিবর্তিত হতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে "জাহান্নামের ভয়" থেকে "রবের সন্তুষ্টি"তে নিবিষ্ট হয়ে যাবে!
তাই "গানীমাত ও জিহাদ" "কর্জেহাসানা/ইনফাক্ব-ফী সাবিলিল্লাহ ও মাগ্বফিরাত+জান্নাত" বিষয়গুলো পাশাপাশি এসেছে! যাঁরা উন্নত আকলে পৌঁছেছেন তাঁরা এসবের বিনিময়ের দিকে তাকাননি, কিন্তু সাধারণেরা তো এসব নিয়ে রাসুলের ﷺ সামনেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন
সুতরাং বলা যায় যে, ওটা "ভুল" নয়, বরং একেবারেই প্রাথমিক ধাপ- যেখান থেকে উপরে ওঠার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য!
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!
কারণ বিষয়টি তো আকল ও আকলের রবের সাথে সম্পর্কিত- চূড়ান্ত কথা আমরা বলতে পারিনা!
কারণ বিষয়টি তো আকল ও আকলের রবের সাথে সম্পর্কিত- চূড়ান্ত কথা আমরা বলতে পারিনা!
দেখুন,আকল ও আকলওয়ালা বিচ্ছিন্ন কিছু না। যেটা আপনি বিচ্ছিন্ন করে দেখেছেন।
চূড়ান্ত কথা আমরা বলতে পারিনা
মানে কি আপনি ভেবেছেন আপনি আকল ছাড়া? আকল বা বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ রাই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়। তারাই চূড়ান্ত কথা সহ অনেক কিছুই বলতে পারে। হেরাগুহার দর্শনই ছিল সমাজের প্রচলিত ধ্যান ধারণা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে নিজ আকলের বিকাশ সাধন করা এবং সত্যকে উদ্ঘাতন করা। রাসুল সঃ নিজের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন জ্ঞান থেকে অনেক চূড়ান্ত কথা বলেছেন যা বাস্তব রূপ ধারণ করেছে। বিস্তারিত আর বললাম না। আপনাকে সালাম।
আপনার মন্তব্যের উদ্ধৃতি-নিজেকে আপনি সংশোধন করতে না পারলে আপনি ব্যর্থ।
আপনার পোস্টের উদ্ধৃতি- নাহজুল বালাগা থেকে
আল্লাহতায়ালা বলেন-
"লা তুজাক্কু আনফুসাকুম,বালিল্লাহু ইউজাক্কি মাইঁইয়াশায়ু..
আমি তো চেষ্টা করেই চলেছি-
কিন্তু সাফল্যের চাবি যাঁর হাতে-
অন্তরের স্টিয়ারিং যাঁর হাতে-
তাঁর অনুমোদনের ব্যাপার আছেনা? (মাইঁইয়াশায়ু..)
আকল ও আকলওয়ালা বিচ্ছিন্ন কিছু না।
কিন্তু আকলের প্রয়োগ সম্ভব নয় রবের অনুগ্রহ ছাড়া-
"মুমিন জ্বিনা করতে পারেনা.. যখন জ্বিনা করে তখন ঈমান+আকল তার থেকে আলাদা হয়ে যায়, আবার কাজ শেষ হলে ফিরে আসে- তখন বান্দা অনুতপ্ত হয়, অনুশোচনা করে- এসব কবুল হলে তওবার তাওফীক পায়!
"আর যারা মূর্খতাবশতঃ গুণাহ করে.." আয়াতের তাফসীর দেখুন
আমার মনে হয় একই বিষয় আমরা দুজনে হয়তো পরস্পরের বিপরীত দিক থেকে দেখছি
আকল বা বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ রাই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়। একথা ঠিক
কিন্তু-
তারাই চূড়ান্ত কথা সহ অনেক কিছুই বলতে পারে।
অনেক কিছুই বলতে পারে ঠিকই, তবে এটা ঠিক নয় যে চূড়ান্ত কথা বলতে পারে -
নবী-রাসুলদেরওﷺ চূড়ান্ত কথা বলার ক্ষমতা/ইখতিয়ার ছিলনা- ইল্লা মা শাআল্লাহ
"নবী-রাসুলদেরওﷺ চূড়ান্ত কথা বলার ক্ষমতা/ইখতিয়ার ছিলনা"।
আমি জানতাম ছিল, তবে আপনাকে স্বাগতম। আপনার কথাটি আমি স্টাডি করে দেখবো। কারণ আমার তো ভুল হতে পারে। স্টাডি করে আমি সমস্যা থাকলে সংশোধন করে নিব।
"মা ইয়ান্তিকু আনিল হাওয়া ইন হুয়া ইল্লা ওয়াহঈইঁ ইউহা" এটাও সাথে রাখুন, স্টাডি করতে সহায়ক হবে!
**
আমি আপনার লেখা থেকেই কোট করেছিলাম- হয়তো বুঝাতে পারিনি-
দ্বীনের জটিল বিষয় আলোচনা করতে আমার ভালো লাগে!
রব্বানা লা তুঝিগ্ব ক্বুলুবিনা বা'দা ইজ হাদায়তানা..
মন্তব্য করতে লগইন করুন