বিবিসির তথ্য সন্ত্রাস ও ইহুদীবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন
লিখেছেন লিখেছেন সুজন মাহমুদ ১২ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:৩৬:৫১ রাত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক কেনেথ পাই তার “দ্যা মিডিয়া এজ এন ইন্সট্রুমেন্ট অফ ওয়ার”প্রবন্ধটিতে বলেছেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ করে সেই দেশের গণমাধ্যম। আর এই পররাষ্ট্র নীতির ফসল হল আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন। তিনি আরও বলেছেন- “যুদ্ধ অস্ত্র যখন যুদ্ধের ময়দানে রক্ত ঝরিয়ে মারে,গণমাধ্যম তখন প্রতিপক্ষকে তথ্য দিয়ে মারে। ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনী যতটা না সামরিক ক্ষেত্রে জয় লাভ করেছে তার চেয়ে বেশী অর্জন করেছে গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে। কারণ গণমাধ্যম এক পক্ষের মন ভাঙতে,পারে আবার আরেক পক্ষের মনবল চাঙা করতে পারে”। যদি হামলার আগে প্রতিপক্ষকে সামরিক শক্তির ভীতি দেখিয়ে মনবল ভেঙ্গে দেওয়া যায়, তবে প্রতিপক্ষ অনেকটায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা যায়। গণমাধ্যম এমনি এক যুদ্ধের অস্ত্র। অবশ্য ইরাকে হামলার আগে সর্বপ্রথম গনবিধংসী মিথ্যা প্রপগান্ডায় গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বিশ্ব জনমত তৈরি করে ছিল। জাতিসংঘের তৎকালীন অস্ত্র পরিদর্শক হ্যান্স ব্লিক্স বলেছেন-”আমরা ইরাকের তথা কথিত জীবাণুর সারগ্রস্থ সম্পর্কে যে তথ্য দিয়ে ছিলাম গণমাধ্যম সেই প্রতিবেদনকে বিকৃত ভাবে তুলে ধরেছে”। ইরাকে হামলার আগে আমেরিকা জানত যে ইরাকে কোন গনবিধংসী নেই, এটি ছিল অজু হাত মাত্র। প্রথমে গণমাধ্যম তারপর সামরিক শক্তি ব্যবহার করে ইরাকে হামলা করেছিল। কেনেথ পাই- আরও একটি কথা বলেছেন-“পশ্চিমা দুনিয়ায় যুদ্ধ এখন ভিডিও গেমসে পরিণত হয়েছে”। ঠিক এমনটাই আমরা দেখলাম ইজরায়েলে বসবাসরত পশ্চিমা ইহুদীদের ক্ষেত্রে, ইজরায়েল যখন ফিলিস্তিনে বিমান হামলা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তখন ইজ্রায়েলীরা পাহাড়ের উপর চেয়ার,সোফা বসিয়ে ভিডিও গেমসের মত ধ্বংসযজ্ঞ উপভোগ করে আর বসে বসে পপকর্ণ খায়।
আজকের সারাবিশ্বের গণমাধ্যমগুলো টাইম ওয়ারনার, ডিজনি, নিউজ কর্পোরেশনের মত বহুজাতিক কোম্পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মালিকানা ইউরোপ আমেরিকার ইহুদীরা। ফলে বৈশ্বিক গণমাধ্যম ব্যবস্থা ইহুদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স এসব ইহুদীদের নিউজ এজেন্সি। যুদ্ধের সময় গণমাধ্যম থাকে সামরিক ইউনিটের ছত্রছায়ায়। ফলে সাংবাদিকরা সামরিক বাহিনীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে। তাদের পছন্দ অনুযায়ী সংবাদের কাহিনী সাজানো হয়। এতে সামরিক বাহিনীর সিদ্ধান্তই হচ্ছে গণমাধ্যমের সিদ্ধান্ত।
চলতি ইজরায়েল- ফিলিস্তিন যুদ্ধে বিবিসিসহ ইউরোপ- আমেরিকার নিউজ এজেন্সি গুলো ইহুদীবাদী এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমেরিকা ইজরায়েল- আমেরিকার তথা পশ্চিমা বিরোধী ইরানের নিউজ এজেন্সি( আইআরআইবি, প্রেস টিভি, ইরনা, রেডিও তেহরান ইত্যাদি)গুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের স্থানীয় পত্রিকা গুলো যাতে ইরানের নিউজ এজেন্সি এজেন্সি থেকে সংবাদ পরিবেশন না করে সেই জন্য প্রতিটি দেশের সরকারকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ফলে পশ্চিমা গণমাধ্যম গুলো অবাধে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
ফিলিস্তিন তথা হামাস প্রশ্নে বিবিসির তথ্য সন্ত্রাস,বাংলাদেশের ইজরায়েলপন্থী পত্রিকা প্রথমআলো ও বুদ্ধিজীবীদের ইহুদীবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নঃ
প্রথমত, প্রথমআলোর আন্তর্জাতিক পাতায় ২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে প্রকাশিত হামাস সম্পর্কে শিরোনাম ছিল- “হামাস কারা? কি চাই তারা?” সেখানে বিবিসির বরাত দিয়ে প্রথম আলো প্রকাশ করেছে-“ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থী সংগঠন গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হামাস। সংগঠনটির সনদ অনুযায়ী তারা ইজরায়েলকে ধ্বংস করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ”। এই প্রেক্ষাপটে আমরা দেখব ইজরায়েল ফিলিস্তিন তথা আরবদের ধ্বংস করতে কি অঙ্গীকারাবদ্ধ নয় ?
উল্লেখ্য যে, ইজরায়েল এবারের গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে কয়েকটি মৌলিক লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছিল। এক. হামাস- ফাতাহর ঐক্য মত্য সরকারকে ব্যর্থ করা। দুই, হামাসের টানেল ও রকেট, মিসাইলসহ অস্ত্র তৈরির সক্ষমতাকে গুড়িয়ে দেওয়া। তিন, মিসর- ইজরায়েলের আরোপিত অবরোধকে অধিকতর কার্যকর করা। চার, ধুমধাড়াক্কা আক্রমণ করে নিপীড়িত জনগণকে ভীত সন্তস্ত্র করা, যাতে তারা বসতভিটা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।এই জন্য বিমান থেকে লিফলেট ফেলে জনগণকে ভূমি ছেড়ে যেতে আহবান করেছিল। পাঁচ, গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত করে গাজা দখল করা।
এখন প্রশ্ন হল, ইজরায়েল কি হামাস তথা ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ নয়? বা ধ্বংস কি করছে না? ইউরোপ থেকে “উড়ে এসে জুড়ে বসা” ইহুদীরা ভুমিপত্র ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংস করবে। আর হামাস নিরস্ত্র হয়ে চুরি আর ঘুমটা পরে বসে থাকবে!! এডলফ হিটলার বলেছিল- “ ইহুদীরা যাযাবর নয় তারা পরগাছা, পরজীবী”। এই পরগাছাদের ভুমিপুত্র হামাস কি ধ্বংস করবে না? আমেরিকা বলেছে- “হামাস কেন রকেট ছুড়ে”? তার মানে আমেরিকা চায়, হামাস শুধু বর্বর বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র ও ট্যাংকের গোলা দ্বারা বিধ্বস্তই হবে তারা কেন পটকার মত রকেট ছুড়ে!!এটি কেমন যুক্তি? আপনাকে যদি নিরস্ত্র করে ট্যাংকের গোলা ছুড়ে আপনার বুক বিদীর্ণ করে দেওয়া হয়। তবুও আপনার কিছু না থাকলেও আপনার হাত দুটি প্রতিরক্ষার জন্য ট্যাংকের সামনে এগিয়ে দিবেন। যদিও আপনি জানেন যে, ট্যাংকের সামনে আপনার হাত দুটি কিছুই না। তারপরেও। কারণ এটাই মানুষের প্রকৃতি। এতটুকুও পশ্চিমা সন্ত্রাসী গুষ্ঠি মেনে নিতে রাজি না।অথচ এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রগুলোই,যারা মুক্তির আন্দলনে জীবন বিসর্জন দিচ্ছে তাদেরকেই সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে। আর বারবার হামাসকে সন্ত্রাসী বলে প্রচার করছে ইজরায়েলপন্থী পত্রিকা প্রথমআলোসহ পশ্চিমা সন্ত্রাসীদের মদদদাতা গণমাধ্যম গুলো। বাঁদর যখন নাচে তখন বাঁদরের ঘুঙ্গুর গুলোও নাচে সমান তালে। এমনটায় হচ্ছে ইউরোপ- আমেরিকার পালিত কুত্তা বিবিসি ও প্রথম আলোর বৈশ্বিক অবস্থা।
দ্বিতীয়ত, একই শিরোনামের অধীনে বিবিসির বরাত দিয়ে বলেছে-“হামাস সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার বিরোধী বিদ্রোহীদের সমর্থন করাই ইরান হামাসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে”
অথচ বিশ্বের একটি মাত্র দেশ যে হামাসকে গঠন করেছে।ফিলিস্তিনের জনগন যখন পিএলও( প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন)এর আপোষকামী নীতির কারনে পিএলও উপর আস্থা রাখতে পারছিল না তখন ১৯৮৭ সালে ইরান ফিলিস্তিনের নেতা শেখ আহমদ ইয়াসিনকে ডেকে তার নেতৃত্বে হামাসকে গঠন করে। জায়নবাদী ইজরায়েলের আগ্রাসন থেকে ফিলিস্তিন ও আলআকসা মুক্ত করতে প্রতি রমজান মাসের শেষ শুক্রবারে বিশ্ব আলকুদস মুক্তি দিবস ঘোষণা করে ইরান।এবং ইরান আলআকসা ও ফিলিস্তিনের মুক্তির স্বার্থে একটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করে। যা মুসলিম বিশ্বের অন্য কোন দেশ আজ পর্যন্ত গঠন করে নি। ইরান হামাসকে অস্ত্র ও অস্ত্রের প্রযুক্তি দিয়ে অনেকটায় স্বাবলম্বী করেছে যাতে এখন হামাস নিজেই রকেট,মিসাইল তৈরি করে ব্যবহার করতে পারে। ফিলিস্তিনের জন্য প্রতিবছর পার্লামেন্টে বিল পাস করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য করছে। এবার যুদ্ধেও আমেরিকা যখন ইজরায়েলকে আইরন ডোম উন্নয়নে আর্থিক সাহায্য করতে সিনেটে বিলিয়ন ডলারের বিল পাস করে। তখন পাল্টা ফিলিস্তিনের আর্থিক সাহায্যার্থে ইরান পার্লামেন্টে বিল পাস করে। প্রতিটি যুদ্ধে ইরান হামাসকে আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামরিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে যার কারনে হামাস বিশ্বের ষষ্ঠ তম সামরিক শক্তি ইজরায়েলকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করতে সক্ষম। ইজরায়েল গাজা সীমান্ত থেকে চার-পাঁচশ মিটার গাজার ভিতরে ঢোকার পর মরন ফাদ হিসেবে দেখতে পায় শত শত টানেল। এই মরন ফাঁদে পরে একদিনেই ইজরায়েলের আটটি ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ফলে তাদের গাজা দখলের স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় এবং তারা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই ধরনের যুদ্ধ কৌশল ছিল ইরানের। ভূমধ্য সাগরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রবের মাঝে অস্ত্রের চালানসহ একটা জাহাজ পাঠালে ইজরায়েল জাহাজ টিকে আটক করে। মিসরের রাফা ক্রসিং দিয়ে চিকিৎসা সামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য, ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য পাঠালে ইজরায়েলপন্থী মিসরের সিসি সরকার ঢুকতে না দিয়ে রাফাতে আটকে রেখে দেয়। ইরান সরকার সব সময়ের জন্য ফিলিস্তিনের সাহায্য- সহযোগিতা ও সমর্থন করবে বলে অঙ্গীকার করেছে। ইরান ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি তো দেয়নাই বরং মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইজরায়েলের উচ্ছেদ কামনা করে। কোন সময়ের জন্যেও ইরান হামাসকে পরিত্যাগ করেনি। তবে হামাসের একটা ক্ষুদ্রাংশ সিরিয়া ও মিসর ইস্যুতে ভুল করেছিল। এই ক্ষুদ্র অংশটি এখন ভুল বুঝতে পেরেছে এবং ইরান ও হিজবুল্লাহ তাদের ক্ষমা করেছে। সেই দিকে আর যাচ্ছি না।
অন্যদিকে তুরস্ক ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। কাতার ও তুরস্ক দেশ দুটি ফিলিস্তিনের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আমেরিকা ইজরায়েল সৌদির সাথে জোট করে আসাদ বিরোধী সন্ত্রাসীদের সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। সর্বশেষ গাজা হামলায় তুরস্কের বিমান ইজারেয়েলের জঙ্গি বিমানের ফুয়েল বহনের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। গাজায় ধ্বংস যজ্ঞের পরেও তুরস্কের এরদগান সরকার ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে ইজরায়েল বিরোধী ফাকা বাক্য ছুড়ছে। এরদগান সরকারের সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই এই নির্বাচনে জনসমর্থন পেতে এরদগান ইজরায়েল বিরোধী ভূমিকা নিয়েছে। তাতেই বাংলাদেশের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবি ঘোষণা করেছে এক মাত্র তুরস্ক ছাড়া আর কোন দেশ ফিলিস্তিনকে সহায়তা করছে না। এরদগানের ফাঁকা বুলেট বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে কিন্তু ইরানের ভূমিকা প্রচার হচ্ছে না।
অন্যদিকে একই তারিখে বিবিসি আবার বলেছে, বিশ্লেষকদের একটি অংশ মনে করেন, হামাস গাজায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়া ও ইরানের কাছ থেকে সহায়তা কমে যাওয়া, মিসরে সমমনা সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের পতন এবং মিসর-ইসরায়েলের অবরোধে গাজার অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেও জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে হামাস। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানো শুরু করে তারা। তাদের প্রত্যাশা, এতে করে হয়তো হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়া যাবে এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েলের অবরোধ প্রত্যাহারের পথ তৈরি হবে এবং বাংলাদেশের প্রথম আলোর বুদ্ধিজীবী যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক জনাব আলী রীয়াজ “ইজরায়েল কি চায়?”প্রবন্ধে লিখেছেন-এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াতান সেন্টার ফর স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের করা জনমত জরিপে দেখা যায় যে হামাসের জনপ্রিয়তা কমছে।তিনি আবার বলেছেন, হামাসের নেতারা সম্ভবত মনে করেন যে বারবার যুদ্ধে জড়িত হয়ে ইসরায়েলের সামরিক ক্ষতি না হলেও রাজনৈতিক ক্ষতি এতটাই হবে যে তারা হামাসের দাবি মানতে বাধ্য হবে। সামরিক ক্ষতি কেন হবে না তার বিস্তারিত বলা অনাবশ্যক। এ ধরনের কৌশলে ইসরায়েল যেমন হামাসকে ধ্বংস করতে পারবে না; তেমনি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার হামাসের লক্ষ্যও অর্জিত হওয়ার কারণ নেই। এই পথে সাফল্য অর্জনের চেষ্টায় নিরীহ গাজাবাসীকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তাহলে সমাধান কোথায়? আমরা সবাই তা জানি। ফিলিপ গর্ডনের ভাষায় বলি, ইসরায়েল কী করে শান্তিতে থাকবে যদি না সে সীমান্ত নির্ধারণ করতে চায়, যদি না সে দখলের অবসান ঘটায় এবং যদি না সে ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং মর্যাদা দেয়?
এতে তিনি বুঝিয়েছেন- হামাসের জনপ্রিয়তা নেই। উদ্দেশ্য মূলক ভাবে দলীয় রাজনৈতিক কারনে হামাস বার বার ইজরায়েলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে।ফলে হামাসের কারনে নিরীহ গাজাবাসীকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এবং ফিলিপ গর্ডনের ভাষায় সমাধান দিয়েছেন–দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান( Two State Solution) এর মধ্যে।
০০০# প্রথমত, এই যুদ্ধে ইজরায়েলই আগ্রাসী ভাবে জড়িয়ে পড়েছে, হামাস নয়। হামাস–ফাতাহর ঐক্য মত্যের সরকারকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য তিন কিশোর আটকের অজুহাতে ইজরায়েল গাজায় হামলা করেছে। পরবর্তীতে স্বয়ং ইজরায়েলের একটি পত্রিকায় প্রকাশ করেছে- ঐ তিন কিশোর হামাসের হাতে নয়, ইজরায়েলেই রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে।
০০০# বর্তমানে ফিলিতিস্তিনের স্বাধীনতা ও মুক্তির কাণ্ডারি হচ্ছে হামাস। এই হামাসকেই যদি আপনি একতরফা ভাবে অজনপ্রিয় বা গাজাবাসীকে রাজনৈতিক স্বার্থে গাজাবাসীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে বিবেচনা করেন। তাহলে আপনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও মুক্তির বিরুদ্ধেই অবস্থান করছেন। যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন দিচ্ছে তাদেরকেই কৌশলে দাবিয়ে রাখছেন অতএব আপনি মূলত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা বিরোধী। কারণ হামাস ছাড়া ফিলিস্তিনে স্বাধীনতার পতাকাবাহী আর কোন নির্ভরযোগ্য দল নেই। আর ফিলিস্তিনের জন্য আপনার যে হাহাকার তা মায়াকান্না ছাড়া আর কিছু না এবং কৌশলে হামাসকে অজনপ্রিয় দল বলে ইহুদীবাদী এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন। প্রকৃত পক্ষে, মধ্য প্রাচ্যে কোন ইসলামী দলই অজনপ্রিয় নয়। যেটা আমরা দেখেছি, কুয়েত, আলজেরিয়া, মিসরে এমনকি ২০০৬ সালেও হামাস নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেছিল কিন্তু ইজরায়েল ও পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকারীরা হামাসকে সরকার গঠন করতে দেই নি।
০০০# দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান( Two State Solution) এর মধ্যে আসলেই কি ইজরায়েল- ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান আছে? কিনা? একটু পরে আলোচনা করছি।
বিবিসি প্রপগান্ডা মূলক তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে কি লক্ষ্য অর্জন করতে চায় ?
প্রথমত, হামাসকে জনবিচ্ছিন্ন বা অজনপ্রিয় একটা দল হিসেবে পরিচিত করিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনকে দুর্বল করা। যাতে ইজরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাপী নিন্দা, ক্ষোভ ও আন্দোলনকে প্রশমিত কর যায়।
দ্বিতীয়ত, মুসলিম বিশ্বের একটি মাত্র দেশ যেদেশ যুগ যুগ ধরে নিপীড়িত,নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ইরানের ভুমিকাকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গোপন রাখা।
উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর যেখানেই সাম্রাজ্যবাদী,সন্ত্রাসীদের আগ্রাসনে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে । সেখানেই ইরান সাম্রাজ্যবাদী, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মজলুমের অভিভাবক হিসেবে জালিমকে প্রতিরোধ করেছে এবং জালিমের দল অনেক ক্ষেত্রে পরাজিত হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী গণমাধ্যম এই বিপ্লবী আদর্শকে প্রচার করতে দিচ্ছে না। ইরানের প্রচার মাধ্যমে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। বিশ্ব মানব যেন ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল না হয় এবং সমর্থন না করে তার জন্য বিবিসি প্রচার করছে ইরান হামাস তথা ফিলিস্তিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
অন্যদিকে হামাসের সমর্থনকারী দেশ হিসেবে কাতার ও তুরস্ককে দাঁড় করিয়েছে। যারা ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দালাল এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার অযোগ্য।
তৃতীয়ত, ইউরোপ আমেরিকা হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে হামাস সম্পর্কে পশ্চিমা ও বিশ্ব জনমতে নেতিবাচক ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা এবং ইজরায়েলের হামলা চালানোর জন্য জনসমর্থন আদায় করা যায়। মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যকে প্রলম্বিত করা এবং ইজরায়েলের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়া যায়।
উল্লেখ্য যে, ফিলিস্তিনের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল খালেদ মিশালের নেতৃত্বে হামাস ও মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ। ফাতাহ আপোষকামী স্যাকুলার পশ্চিমাপন্থী দল। অনেক বিশ্লেষক এই দলটিকে আমেরিকা ইজরায়েলের এজেন্ট বলে উল্লেখ করে থাকে। ফাতাহ নামে এই দলটি ইজরায়েল আমেরিকা তথা পশ্চিমা সন্ত্রাসী দেশগুলোর কাছে জনপ্রিয়। এই মাহমুদ আব্বাস ও তার ফাতাহ দলটিকে দীর্ঘদিন থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের ৪৪ শতাংশ ভূমি সংখ্যা গরিষ্ঠ ফিলিস্তিনিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সেইটুকুও ইজরায়েল ধীরে ধীরে দখল করে নিয়েছে।ফাতাহর আপোষকামীতার কারনে এখনো ইজরায়েল বসতি নির্মাণ করে ভূমি দখল করে নিচ্ছে। ফলে শুরু হয় হামাসের নেতৃত্বে গেরিলা যুদ্ধ।এতে ফাতাহ সরকার শাসিত পশ্চিম তীর ছাড়া ইজরায়েল আর ভূমি দখল করতে পারছে না। ইজরায়েলের বৃহতর ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। এদিকে-
• ফাতাহ ইজরায়েল –ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ( Two State Solution) মেনে নিয়েছে এবং চায় ইজরায়েল–ফিলিস্তিন দুটি রাষ্ট্র হোক।
• ইজরায়েল চায় ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব বিনাশ করে মিসর, সৌদি, জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক, লেবাননের বিশাল অংশ দখল করে বৃহতর ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে , যেটা তাদের প্রতিশ্রুত ভূমি (Promised Land) বলে দাবী করে।
• হামাস চায় ফিলিস্তিনিরাই এই ভুমির মালিক, ইউরোপের ইহুদীরা নয়। অতএব ভুমিপুত্র ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে,কোন ইহুদী রাষ্ট্র থাকবে না। ইহুদীরা যেখান থেকে এসেছে সেখানেই চলে যেতে হবে।
এখানে ফিলিস্তিনিদের সমস্যা সমাধানে দুইটা পথ রয়েছে,এক. হয় আরবদের লড়াই করে ইউরোপের ইহুদীদের সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে। দুই, নয়তো ইহুদীদের দ্বারা উচ্ছেদ হয়ে নিজেদের আদিম সভ্যতা ও ভূমি ছেড়ে অন্যদেশে শরণার্থী শিবিরে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে।
আবার অনেকেই যুক্তি দেখায়তে পারেন, ইজরায়েল ও হামাসের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে ফাতাহর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহন করলেই সমস্যার সমাধান হবে। অর্থাৎ দুই রাষ্ট্র( Two State Solution) করলে সমস্যার সমাধান হবে। এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। ফাতাহর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে কোনদিনই সমস্যা সমাধান হবে না। কারণ সন্ত্রাসী এই ইহুদী জাতি যদি মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই বিশাল ভূখণ্ড নিয়ে একক পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকতে হবে। নয়লে মুসলমানদের রক্ত পান করে,মুসলমানদের ভূখণ্ডে এই ছোট্ট রাষ্ট্রটি কোন ভাবেই টিকে থাকতে পারবে না। এই কথা ইহুদীরা ভালোভাবেই জানে। এই জন্য বিশ্বের একটি মাত্র দেশ ইজরায়েল যার কোন নির্দিষ্ট সীমানা নেই, কারণ তাদের জবর দখল করে বৃহতর ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ফলে ভুমিপুত্র হামাস অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে প্রথম প্রদক্ষেপটিই গ্রহন করেছে। ইহুদীরা যেখান থেকে এসেছে সেখানেই চলে যেতে হবে। প্রকৃত পক্ষে হামাসের গৃহীত পদক্ষেপটিতেই বৈশ্বিক এই সমস্যার সমাধান রয়েছে। এই জন্য হামাস ইজরায়েলের জন্মদাতা আমেরিকা ও ইউরোপের কাছে সন্ত্রাসী। এইভাবে পশ্চিমারা হামাসের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবিসি ও পশ্চিমা গনমাধ্যমের মিথ্যা প্রপগান্ডা ও তথ্য সন্ত্রাসের বিপরীতে হামাসের জনপ্রিয়তার কয়েকটি দৃশ্যপট তুলে ধরা হলঃ
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার মূখপত্র DEBKA এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য ফাঁস করেছে- এতে দেখা যায় আরব দেশগুলোর অগনতান্ত্রিক শাসকরা হামাস, বিশেষ করে কাসসাম ব্রিগেডের কর্মকাণ্ড এবং এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় প্রচণ্ড ভীত।এইসব শাসকরা চায় না হামাসের এই সাহসী কর্মকাণ্ড, তাদের রকেট প্রযুক্তি, তাদের গ্রেনেড প্রযুক্তি ঐ সব আরব দেশে গনতান্ত্রিক বিপ্লবীদের রোল মডেল হয়ে উঠুক। এমন কী তারা এটাও আশঙ্কা করে যে হামাস হয়তো এক সময় আরব বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে চাইবে। তারা তাই হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার ইসরাইলী পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ও রাজনীতিক সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। খবরের উৎস: http://goo.gl/ZIdH7q
ইজ্রায়েলী লেখক ইউরি আভনেরি বলেছেন- আসুন স্বীকার করি, ইসরায়েলের শত্রু হামাস প্রচণ্ড সাহসের সঙ্গে কার্যকর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্ব এখনো ভালোই কাজ করে যাচ্ছে, এটা এক দৈবাৎ ঘটনাই বটে। বেসামরিক মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠলেও তাদের প্রায় সবাই হামাসকে সমর্থন করছে। দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা চার সপ্তাহ ধরে লড়েও টিকে আছে, এটাই বা কম কী!! তিনি আরও বলেন - হামাস একটি দেশপ্রেমিক সংগঠন, তারা অমিত সাহস নিয়ে বিপুল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা কোনো বিদেশি শক্তি নয়, বরং এ মাটিরই সন্তান তারা। ফলে স্থানীয় জনগণের সমস্যা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। এদের আত্মীয়স্বজন বিপুল হারে মারা পড়ছে, বাড়িঘর ধ্বংস হচ্ছে। তাদের মা-বোনেরা জাতিসংঘের শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে, তাঁরা না পাচ্ছে পানি, না পাচ্ছে বিদ্যুৎ। শরীরটুকু ঢাকার কাপড় ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই বললে চলে। অনেক ফিলিস্তিনিই এখন আব্বাসকে ঘৃণার চোখে দেখছেন, কিন্তু হামাসের প্রশংসা করছেন—তাঁরাই এখন আরব মর্যাদার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এ ছাড়াও খোদ ইজরায়েলের ভিতরে যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন চললেও, ফিলিস্তিন, জর্ডান ,ইরান ,লেবাননে হামাসের সমর্থনে লক্ষ্য লক্ষ্য জনগণের মিছিল বের হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইহুদীদেরকে তারা যেখান থেকে এসেছিল সেখানে (ইউরোপে) ফিরে যেতে হবে । ইউরোপিয়ানদের জন্জাল এশিয়াতে (মধ্যপ্রাচ্যে)কেন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন