বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাস্তব প্রেক্ষাপট
লিখেছেন লিখেছেন সুজন মাহমুদ ১১ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:২২:৪৩ রাত
মুক্তবাজার অর্থনীতি ও রাজনৈতিক গণতন্ত্র বর্তমানে দুটোই প্রধান আলোচ্য বিষয়। ষষ্ঠ দশ শতকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে মতবাদ দুটি পরিপূর্ণতা লাভ করছে। ব্যক্তির মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা,গণতন্ত্রের মাধ্যমে পুজিপুত্রদের নির্বাচন,নিয়ন্ত্রণহীন অর্থনীতি,ব্যবসা – বাণিজ্যের অবাধ প্রতিযোগিতা এবং David Ricardo’s “Comparative Advantage Theory” এই মতবাদবাদ গুলো যাদেরকে Core state বলা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও Periphery state গুলোর ক্ষেত্রে মতবাদ গুলি সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার। Periphery State গুলোর ক্ষেত্রে মুক্তবাজার অর্থনীতি হচ্ছে Trade related barrier বিলোপ করা, দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলো Privatization করা, ব্যবসা ও অর্থনীতি সরকার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করার মাধ্যমে একটা প্রযুক্তি উন্নত দেশের জন্য প্রযুক্তি অনুন্নত দেশের বাজার উন্মুক্ত করা। এতে করে প্রযুক্তি উন্নতদেশ উন্নত প্রযুক্তির দাপটে প্রযুক্তি অনুন্নত দেশের বাজার দখল করতে পারে এবং অর্থ সম্পদ লুটপাটের সুযোগ পায়। অন্যদিকে গণতন্ত্রের মাধ্যমে পুজিপতিদের নির্বাচিত করে যারা জনগণের সরকার তথা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত বলা হলেও পুঁজিবাদীদের তথা সাম্রাজ্যবাদীদের তোয়াজ করা ছাড়া ক্ষমতায় আসতে পারেনা এবং তাবেদারী দাসে পরিণত হওয়া ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। অর্থাৎ সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে দুর্বল দেশ গুলোর সরকারকে জিম্মি করে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে দুর্বল দেশ গুলোর স্বাধীনতা হরণ করে। সাম্রাজ্যবাদীরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে একটা দেশের অভ্যন্তরে জনগণকে বিভিন্ন দলে ভাগ করে জাতিয় ঐক্য ভেঙে ফেলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুদূর প্রসারী কৌশল প্রণয়ন করে এবং নয়া উপনিবেশে অন্তর্ভুক্ত করে।
গত বছর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডি ডি মজিনা বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারণ করতে দীর্ঘ সফরে দিল্লীতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক শঙ্কট এটা এই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং অভ্যন্তরীণ ভাবেই সমাধান করতে হবে। প্রশ্ন হল, এই দেশের অভ্যন্তরীণ শঙ্কট ঢাকায় সমাধান না হয়ে দিল্লীতে হবে কেন ? তাছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডি ডি মজিনা ভারতের সাথে আলোচনা করে সমাধান করার কে ? নিজেদের ব্লকে অন্তর্ভুক্ত বলে খবরদারী করার সাহস পাচ্ছে? আবার বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের বিদেশি প্রভুদের তোয়াজ করতে বিদেশ সফর শুরু করেছিল । প্রশ্ন হল, গণতন্ত্রে যদি জনগণই ক্ষমতার অধিকারী হয় তাহলে কেন মার্কিন –ভারতের নিকট তোষণনীতির অনুসরণ করা হয়? যদি জনগণের স্বাধীন মতামতই গণতন্ত্রের চরিত্র হয় তাহলে কেন জনগণের মতামত নেয়া হচ্ছে না? কেন সেই সঙ্কট কালে জনগণের মতামত না নিয়ে দিল্লীতে বসে নির্বাচন পদ্ধতি গঠন করা হয়েছিলো। আসলে কি জনমত না বিদেশী প্রভুদের মতামত? প্রকৃত পক্ষে জনমত না বিদেশী প্রভুদের মতামত ছাড়া কোন দল ক্ষমতায় আসতে পারেনা।
সেই তোষণনীতির একটা প্রকৃত রূপ উঠে এসেছিল গত ১৪ই জানুয়ারি ২০১১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিন্টন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন আলাপ হয়েছিল। গত ২রা ফেব্রুয়ারি ২০১১ ঢাকার একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ ভাষ্য মোতাবেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিন্টন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, “ম্যাডাম প্রাইম মিনিস্টার, আমি ভেবেছিলাম আমাকে এত দূরে যেতে হবে না। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি ভুল ভেবেছিলাম। আপনি জানেন এবং আমরাও জানি কিভাবে আপনার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ভুলে যাবেন না, নির্বাচনের পর আমরা বলেছিলাম, সেটা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে এবং আপনাকে সাহায্য করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন, দিল্লিতে আমাদের বন্ধুদের নির্দেশে কিভাবে ফলাফল আগেই ঠিক করা হয়েছিলো। তারা যেভাবে চেয়েছিল সেভাবেই আমরা চলেছিলাম। প্লিজ, আপনি এটা ভুলে যাবেন না যে, জেনারেল মইন, যিনি আপনাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন, তিনি এখন আমেরিকাতে আছেন এবং আপনি যতখানি কল্পনা করতে পারেন, তার চেয়েও বেশি এখন আমরা জানি। আমি বলছিনা যে, আমরা এখনই আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাব। আমি শুধু ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরছি।হিলারীর এই কড়া কথায় হাসিনা দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “আমরা আপনার সমর্থন ও সাহায্য বিষয়ে জানি। আপনাকে খুশি রাখার চেষ্টা করব। দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনার কথাগুলো মনে রাখব। এখন বলুন, কবে আমাদের দেশ সফর করতে আসবেন।” একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন অন্য একটা দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট সাবমিসিভ আলাপ আলোচনা করে তাতে কি বুঝা যায় না দেশের স্বাধীনতা কোথায়। এদেশের সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থভুগী একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবি স্বাধীনতার বানী প্রচার করলেও আসলে কি বাংলাদেশ স্বাধীন?
বিষয়: বিবিধ
১১৬১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের অলীক-আকাঙ্খায় অর্থের মোহে আমরাই আমাদের খাবার বাজার, সংস্কৃতির বাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয়ের বাজার, শিক্ষার বাজার, শিল্পের বাজার, বিলাসীতার বাজার ইত্যাদী সমস্ত বাজার-ই তো পাশের দেশ এবং অন্যান্য দেশের কাছে ইজারা দিয়ে সামান্য ইজারা-মূল্য পেয়ে, পাইকারী লাভ তাদের দিয়ে খুচরা লাভ নিজেরা করে অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে গিয়েছি – অর্থের জোরে চলে গিয়েছি য়ার যাচ্ছি দেশ থেকে দেশান্তরে! এসব বাজারের উৎপাদন-বিপনন যেসব দেশ করে সেসবের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করলে বা তাদের কথা না শুনলে কি চলতে পারবো আমরা স্বাধীন ভাবে?
অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে তো দেশ একটা বাজার, আর সে বাজার নিজেরাই অন্যদের কাছে তুলে দিয়ে আমরা স্বাধীন - না-কি আমরা তাদের বাজারের রক্ষণাবেক্ষণকল্পে দিন-মজুর হিসেবে কেউ মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষক, নাপিত, কলু?
সেসব দেশ-ই স্বাধীন আমরা নিজেরাই পরাধীনতা গ্রহণ করেছি এসব বাজার তাদের হাতে তুলে দিয়ে এবং নির্বিকার চিত্তে মত্ত রয়েছি ভিন্ন কোন আকাঙ্ক্ষায়!
মন্তব্য করতে লগইন করুন